২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা, যা শুধু একটি স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটায়নি; বরং সমাজ, রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক ইসলামের চর্চার ক্ষেত্রে একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। দীর্ঘ দমন-পীড়ন, রাজনৈতিক নিষিদ্ধকরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রীয় বয়ানে ইসলামপন্থিদের ব্যাপক স্টিগমাটাইজেশনের পর বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে ইসলামপন্থি রাজনীতি একটি নতুন পুনর্বিন্যাস ও পুনরুত্থানের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এই নিবন্ধে জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইসলামপন্থি দলের ভূমিকা, রাজনৈতিক সুযোগ, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা, নীতিগত চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইসলামের ইতিহাস ঔপনিবেশিক যুগ থেকে শুরু হলেও মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে এর রূপ, লক্ষ্য এবং কাঠামোর পরিবর্তন স্পষ্ট। বিশেষত, ২০০৯-২৪ সালের মধ্যে আওয়ামী লীগের হাইব্রিড-অথরিটেরিয়ান এবং চোরতান্ত্রিক শাসনামলে ইসলামপন্থি দলগুলোকে রাষ্ট্রযন্ত্র, মিডিয়া এবং গ্লোবাল জিও পলিটিকসকে ব্যবহার করে কঠোরভাবে দমন করা হয়। নির্মূল প্রচারণা, জঙ্গি বানানো, গণগ্রেপ্তার, নিষিদ্ধকরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং মিডিয়ায় ধারাবাহিক নেতিবাচক প্রচার ইত্যাদি ছিল যত্রতত্র। হাসিনার শাসনামলে লগি-বইঠা তাণ্ডব, পিলখানা, শাপলা চত্বর, সাতক্ষীরা এবং সাঈদীর রায়-পরবর্তী ম্যাসাকারসহ যে গোটা দশেক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশ ভিকটিম ছিলেন ইসলামপন্থিরা। ২০০৯-২১ সালের মধ্যে জামায়াত তার শীর্ষ ১১ নেতাসহ জামায়াত-শিবির হারিয়েছে ৩৫০-এর বেশি নেতাকর্মী; পঙ্গু এবং আহত হয়েছে লক্ষাধিক।
কিন্তু জুলাই বিপ্লবের গণ-অংশগ্রহণ, ইসলামী ছাত্র সংগঠনগুলোর আত্মত্যাগ এবং নৈতিক নেতৃত্বের কারণে ইসলামপন্থি সংগঠনগুলো নতুন বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। তবে তাদের সামনে চ্যালেঞ্জও অনেক।
আঁধার কেটে আলোর প্রভাত
জুলাই বিপ্লব ইসলামপন্থিদের জন্য নিকষকালো আঁধার কেটে এক সম্ভাবনার আলো এনে দেয়। প্রথমত, শেখ হাসিনাসহ পুরো ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক টিমকে জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশ থেকে খেদিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রীয় দমনযন্ত্র ভেঙে দেয়। দ্বিতীয়ত, ইসলামপন্থি দল রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় ফিরে আসার সাংবিধানিক সুযোগ পায়। তৃতীয়ত, জুলাই বিপ্লব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নতুন সংজ্ঞায়নে ‘দিল্লি না, ঢাকা’য় পরিবর্তন করে ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন জাগিয়ে দেয়, যা ইসলামপন্থি রাজনীতিতে এক নতুন সঞ্জীবনী ধারা যোগ করে। চতুর্থত, বিপ্লবকালে ইসলামি সংগঠনের ‘মরাল ফ্রেম’, ‘ন্যায়বিচার ফ্রেম’ ও ‘শহীদ ন্যারেটিভ’ তরুণ সমাজে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে। একই সঙ্গে সংগঠনের নেটওয়ার্ক, ক্যাডার বেস এবং শৃঙ্খলা তাদের রাজনৈতিক বৈধতাকে শক্তিশালী করে। এটা শিবিরের ক্ষেত্রে অনেকটা লক্ষণীয়। ফলে, ডাকসু, জাকসু, চাকসু এবং রাকসুতে শিবিরের ভূমিধস-বিজয় এবং চরম গ্রহণযোগ্যতা এনে দেয়। সারা দেশে এগুলোর প্রভাব রয়েছে সুদূরপ্রসারী। পঞ্চমত, জুলাই-পরবর্তী বাস্তবতায় দেখা যায়, জনগণের একটি অংশ ‘পোস্ট-ইসলামিস্ট’ নীতি ও প্রগতিশীলতা গ্রহণে আগ্রহী; আবার বৃহত্তর অংশ ‘নিউ-ইসলামিজম’—অর্থাৎ গণতান্ত্রিক, নৈতিক, দুর্নীতিবিরোধী রাজনৈতিক ইসলামের দিকে অগ্রসর হয়। সব মিলিয়ে, জুলাই বিপ্লবের বাস্তবতায় ইসলামপন্থি রাজনীতি এখন অনেকটা ফ্রন্টলাইনে। ফলে, তাদের নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন ডিসকোর্স ও মূল্যায়ন।
ইসলামপন্থিদের ভূমিকার নতুন মূল্যায়ন
রাষ্ট্রীয় দমন ও দীর্ঘ স্টিগমাটাইজেশনের অংশ হিসেবে ফ্যাসিস্ট আমলে শিবির, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলকে রাষ্ট্রীয় বয়ানে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বা ‘রাজাকারপন্থি’ প্রচার করা হয়। মিডিয়া ও আমলাতন্ত্র—উভয়ই এ বয়ানকে পুনরুৎপাদন করেছে। শহীদ আবু সাঈদের আত্মাহুতি আন্দোলনের নৈতিক কেন্দ্র সৃষ্টি করে। পুরো জুলাই ইসলামী ছাত্র সংগঠনগুলোর মিছিল, চিকিৎসা সহায়তা, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং জনমত তৈরি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিপ্লব-পরবর্তী সরকারি তদন্ত, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং একাডেমিক কমিউনিটি নতুনভাবে ইসলামপন্থিদের ভূমিকা মূল্যায়ন করতে শুরু করে। এই মূল্যায়নে ইসলামপন্থিদের ব্যাপারে অন্তত সাত ধরনের থিম বেরিয়ে এসেছে।
১.
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ইসলামপন্থিদের ধারাবাহিক সম্পৃক্ততা : জামায়াত, শিবির, ইসলামী আন্দোলন—এরা একাধিক সময় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়েছেÑ
২০০৬–২০০৮ : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি।
২০১৩-২০১৫ : বিরোধী শক্তির রাজপথ আন্দোলন।
২০২৪ : স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র-যুব আন্দোলনে অংশগ্রহণ।
জুলাই বিপ্লব যদিও ছিল আপামর জনসাধারণের; এতে ইসলামপন্থিদের নেতৃত্ব, অংশগ্রহণ এবং কোরবানি ছিল সীমাহীন। আলিয়া-কওমি উভয় ধারার মাদরাসার ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
২.
ইসলামপন্থিদের সামাজিক, শিক্ষা ও সেবামূলক কার্যক্রম : অনেক ইসলামপন্থি সংগঠন বিশেষ করে শিবির এবং জামায়াত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, হাসপাতাল পরিচালনা; রক্তদান, দুর্যোগ ত্রাণ, পরোপকার; ছাত্রদের নৈতিক মেন্টরিং—এসব ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে। এথনোগ্রাফিক স্টাডি দেখায় যে এসব সংগঠন সমাজে একটি গণতান্ত্রিক ও নৈতিক নাগরিকবোধ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে।
৩.
চরমপন্থার বিরুদ্ধে ইসলামপন্থিদের বাস্তব অবস্থান : ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ইসলামপন্থিদের ‘বিপজ্জনক’ বা ‘সন্ত্রাসী’ লেবেল করলেও স্বাধীন গবেষণা ও আন্তর্জাতিক রিপোর্টে জামায়াত-শিবির বা নামকরা ইসলামি সংগঠনগুলো সহিংস জঙ্গিবাদে জড়িত পাওয়া যায়নি। বরং এরাই বহু ক্ষেত্রে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান থেকে প্রচারণা চালিয়েছে এবং অনলাইন চরমপন্থা থেকে তরুণদের দূরে রাখার কাজে সক্রিয় ছিল।
৪.
ইসলামপন্থিদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণের অধিকার : গণতান্ত্রিক কাঠামোতে বহুমতের সহাবস্থান অত্যাবশ্যক। ইসলামপন্থি দলগুলো স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হলে সমাজে বিভাজন, ভুল বোঝাবুঝি ও অপপ্রপাগান্ডা আরো বাড়ে। নতুন বাস্তবতায় এসব দলের পুনর্গঠন ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ স্বীকৃত করা শুধু জরুরিই নয়; বরং দুর্নীতিমুক্ত এবং সামাজিক সুবিচারপূর্ণ গণতান্ত্রিক সমাজকাঠামো বিনির্মাণে ইসলামপন্থিদের ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে এক নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
৫.
বিপ্লব-পরবর্তী ইসলামপন্থি রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস : মোটা দাগে, ইসলামপন্থিরা বৈধতা সংকট কাটিয়ে এক ধরনের নৈতিক পুঁজি অর্জনে সক্ষম হয়েছে এবং জনগণের বড় একটা অংশের মধ্যে একটা শক্তিশালী নৈতিক অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। জামায়াত ও শিবির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করছে এবং জুলাই স্পিরিটের আলোকে তরুণ নেতৃত্বের ওপর জোর দিয়েছে। জামায়াত রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে আবার প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে। দক্ষিণ, উত্তর এবং মফস্বলের মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে ইসলামপন্থিদের বাড়তি গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। তারা তরুণদের মধ্যে ‘নৈতিক রাজনীতি’, ‘দুর্নীতি-বিরোধিতা’ এবং ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ ন্যারেটিভ জনপ্রিয় করতে সক্ষম হয়েছে।
৬.
ইসলামপন্থিদের ব্যাপারে রাষ্ট্র, সিভিল সোসাইটি ও কূটনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন : অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা ন্যারেটিভে ইসলামপন্থিদের প্রতি শত্রুভাব কমে এসেছে। মানবাধিকার সংস্থার চাপ ও গনিমতের পরিবর্তনও লক্ষণীয়। বিপ্লব-পরবর্তী মিডিয়া ইসলামপন্থি সংগঠনের প্রতি আরো নিরপেক্ষ কাভারেজ দিচ্ছে। একাডেমিক মহলে গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন ইতিবাচক প্রবণতা ‘ইসলামপন্থিদের ভূমিকা পুনর্মূল্যায়ন’ দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমা কূটনীতিও আগের মতো ইসলামপন্থিদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে নেই, বরং স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এতে ইসলামপন্থিদের মধ্যপন্থি অংশের সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা বাড়ছে।
৭.
ইসলামপন্থিদের চ্যালেঞ্জগুলো : যদিও জামায়াতের নেতৃত্বে আটদলীয় জোট গঠিত হয়েছে, ইসলামপন্থিদের অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ অনেক। ইসলামপন্থি অনেক আলেমের মধ্যে দ্বীনি ইলম থাকলেও দ্বীনি খাসলত এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা কম। পরিচিত সব ইসলামপন্থি এখনো এক কাতারে আসেনি; বরং অনেক মামুলি বিষয় নিয়ে তারা বাহাস, ফতোয়া চালাচালি এবং মতবিরোধে লিপ্ত। তাদের রাজনৈতিক ভাষা ও কৌশলের আধুনিকায়ন প্রয়োজন। পুরোনো বনাম নতুন নেতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রজন্মগত দ্বন্দ্ব তো আছেই।
ইসলামপন্থিদের নিয়ে আমলাতান্ত্রিক মহলের কিছু অংশ এখনো ‘সিকিউরিটি রিস্ক’ ন্যারেটিভ ধারণ করে। অন্যদিকে, প্রশাসনিক বৈষম্য এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি। পাশের দেশ ইসলামপন্থিদের উত্থানকে দেখছে থ্রেট হিসেবে। ২০০১-২০০৬ ও পরবর্তী সময়ের সন্ত্রাসবাদ-সম্পর্কিত বৈশ্বিক বয়ান এখনো কার্যকর। এই বৈরী পরিবেশে ইসলামপন্থিরা এত সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কীভাবে গণতান্ত্রিক ধারায় একটা ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র গঠন করবেÑসেটাই এখন দেখার বিষয়।
উপসংহার : সব মিলে বলা যায়, জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে; যেখানে ইসলামপন্থি রাজনীতি আর প্রান্তিক বা নিষিদ্ধ রাজনীতি নয়, বরং নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান। দীর্ঘ দমন-পীড়নের পর তাদের রাজনৈতিক পুনর্জন্ম নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, সাংগঠনিক শক্তি ও শহীদের আত্মত্যাগের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতি গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল এবং সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক ধারায় বিকশিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি ও বহুত্ববাদের জন্য ইতিবাচক।
জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থার উত্থান সুস্পষ্ট হলেও তাদের রাজনৈতিক বিজয় এবং সেটা টেকসই হওয়ার বিষয়টা এখনো অপরিষ্কার। তবে এতটুকু বলা যায়, বাংলাদেশে মধ্যপন্থি, নীতিনিষ্ঠ, জবাবদিহিমূলক ইসলামি রাজনীতি জোরদার হবে, যেখানে সামাজিক কল্যাণ, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন, ন্যায়বিচার—এগুলোই হবে মূল অঙ্গীকার। ইসলামপন্থিরা কেন্দ্র-বাম ও কেন্দ্র-ডান উভয়ের সঙ্গে ইস্যুভিত্তিক জোট গঠনে সক্ষম হতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক, সামাজিক মিডিয়া দক্ষতা এবং নৈতিক নেতৃত্ব তাদের শক্তিশালী করবে।
লেখক : অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নানইয়াং টেকনোলোজিক্যাল ইউনিভার্সিটি সিঙ্গাপুর
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

