অর্থনৈতিক সেক্টরে সরকারের ৩৬৫ দিন

ড. মো. মিজানুর রহমান
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১০: ১৩

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটার পর ৩৬৫ দিন অতিবাহিত হলো। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, ডলারের চড়া দর, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক সহায়তা ও বিনিয়োগে ভাটার টান, দেশি-বিদেশি ঋণের জালে জড়িয়ে পড়া, পুঁজিবাজার ও ব্যাংকিং সেক্টর দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম, অর্থ পাচার প্রভৃতি বিষয় মিলিয়ে এ সময়ে অর্থনীতি ছিল চরম চাপের মুখে।

বিজ্ঞাপন

এক বছরের মেয়াদে অন্তর্বর্তী সরকার একদিকে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি, রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, ডলার সংকট মোকাবিলা, বিদেশি ঋণ পরিশোধ, রিজার্ভ বৃদ্ধি ও বৈদেশিক ঋণ প্রাপ্তি এবং সর্বোপরি বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে সাফল্য দেখিয়েছে। তবে সফলতার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়, উৎপাদন বৃদ্ধি, পুঁজিবাজার স্বাভাবিককরণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো মৌলিক খাতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন হয়নি। এই প্রবন্ধে বিভিন্ন অর্জন নিয়ে আলোচনা করা হলো।

অন্তর্বর্তী সরকারের আগে বিগত ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি বাহ্যিকভাবে চমকপ্রদ কল্পিত উন্নয়নের আড়ালে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তথ্য ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধি শুরুতে সাত-আট শতাংশে উঠলেও বাস্তব ছিল অনেক কম। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একসময় ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৪ সালে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান ব্যাপকভাবে পড়ে যায়। ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায়। গার্মেন্ট খাত রপ্তানিতে মুখ্য ভূমিকা রাখলেও খাতটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। কৃষি খাতে প্রণোদনার ঘোষণা থাকলেও বাস্তবায়ন দুর্বল ছিল। কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়লেও ফসলের ন্যায্য দাম মেলেনি।

সরকার মেগা প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যেগুলোর অধিকাংশই সময় ও বাজেট অতিক্রম করে বাস্তবায়িত হয় এবং দুর্নীতির অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এদিকে ব্যাপক অর্থপাচার এবং দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি দেশের আর্থিক খাতের ভিত্তিকে দুর্বল করে তোলে। এনবিআর কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব সংগ্রহে ব্যর্থ হয়, ফলে বাজেট ঘাটতি পূরণে ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ে। বিগত ১৫ বছরে অর্থনীতির কিছু পরিসংখ্যান চমকপ্রদ মনে হলেও তার ভিত ছিল মারাত্মক দুর্বল। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, প্রশাসনিক রাজনৈতিকীকরণ ও দমনমূলক নীতির কারণে অর্থনীতির প্রকৃত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই হাত দেয় প্রবাসীদের আয় বৃদ্ধির ওপর। গত অর্থবছর ব্যাংকিং চ্যানেলে রেকর্ড ৩ হাজার ৩৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৭৭ কোটি পাঁচ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি। ২০২৪-২০২৭ মেয়াদি নতুন রপ্তানি নীতি প্রণয়ন করেছে, যার লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে বার্ষিক রপ্তানি আয় ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা।

২০২৫ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী ৩৭ শতাংশ শুল্কের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস। এই চুক্তি বাংলাদেশের ৪০ বিলিয়ন ডলারের পোশাকশিল্পের জন্য একটি কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত। প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫ সালের মার্চে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উভয় দেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশ সরকার চীনের নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক বাণিজ্য জোট RCEP-এ যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছে, যা বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

অনেক বছর পর ডলারের বিপরীতে টাকার মান বাড়ছে। ব্যালান্স অব পেমেন্টে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত রয়েছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা জিডিপির প্রায় ৩৬ শতাংশ। গত ১১ মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। আগের বকেয়া দায় পরিশোধের পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।

মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল এই সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রথমে ভঙ্গুর অর্থনীতি ও বন্যার কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল প্রায় ১৪ পার্সেন্ট। এখন সেটা ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। জুলাই শেষে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৮২০ ডলার, যা এযাবৎকালের রেকর্ড। মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলার জন্য টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি ৫৬ লাখ পরিবারকে ট্রাক সেল ও স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৮৬ শতাংশ তালিকাভুক্ত পরিবার একাধিকবার পণ্য পেয়েছে, কিন্তু ১৪ শতাংশ পরিবার বারবার বঞ্চিত হয়েছে।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি, শ্রমিক অসন্তোষ ও বৈদেশিক অর্ডার হ্রাসের ফলে বর্তমান সরকারের প্রথম ছয় মাসে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়েনি, বরং কিছুটা কমেছে। তবে ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে দেশে এফডিআই ৭৬ শতাংশ বেড়েছে; আগের বছরের ব্যবধানে নিট এফডিআই বেড়েছে ১১৪ শতাংশ।

কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে ডিজেল ও সারের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ১২ হাজার কোটি টাকার কৃষি ভর্তুকি অনুমোদন করা হয়। এছাড়া ৭৪ লাখ কৃষককে সরাসরি ডিজিটাল কৃষি কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি প্রদান করা হয়। ফলে চাল উৎপাদন পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে কিছু ক্ষেত্রে বেশি হয়েছে।

সরকারি খাতের কর্মীদের জন্য ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নবম পে-স্কেল কার্যকর করা হয়, যার ফলে ২০-২৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি হয়। তবে বেসরকারি খাত, বিশেষ করে পোশাকশিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় মজুরি বাড়েনি, বরং কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অন্তত ১ দশমিক ২ লাখ পোশাকশ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। পাশাপাশি ২০২৫ সালের মধ্যে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৫ লাখ, যেখানে প্রতিবছর ২০-২৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান প্রয়োজন। ফলে বেকারত্বের হার বেড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ-এ পৌঁছেছে, যার ফলে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ব্যাংকিং আইন সংশোধন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ স্বাধীনতা এবং ডলার সংকট দূরীকরণ করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের জন্য তিনটি পৃথক টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। বিভিন্ন সময় তিনটি ধাপে রেপো রেট সাড়ে আট থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

২০২৫ সালের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ভারতের বাংলাদেশের কাছ থেকে আমদানি ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ কমেছে এবং জুন মাসে ১১ শতাংশের বেশি পতন হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি আমদানিতে ৪২ শতাংশ পণ্যের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৭৭০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশও কিছু পণ্যে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রতিক্রিয়া দেখায়। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা, রপ্তানিতে পতন ও ট্রানজিট সুবিধা বন্ধে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আয় ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ৩ হাজার ৪৮০ কোটি কমে গেছে। জুলাই-এপ্রিল পর্যায়ে রাজস্ব আয় গড়ে মাত্র ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজস্ব সংগ্রহে আট শতাংশ ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত দীর্ঘ সময়ে রয়ে গেছে এবং আয়করের সঞ্চালনায় বিঘ্ন সৃষ্টি রাজস্ব সক্ষমতা সীমিত করে। এনবিআর বিলুপ্তি ও পুনর্গঠনের ব্যাপারে আধিকারিকদের আন্দোলন ও ধর্মঘট রাজস্ব সংগ্রহে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ, রাজস্বনীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ তৈরি করা হয়েছে, যা রাজস্ব ব্যবস্থার অঞ্চলভিত্তিক দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করবে।

গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯-২০২৪ সময়কালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ দুর্নীতির ধারণা সূচকে ২০২৪ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে ১৮০ দেশের মধ্যে ১৪৯তম স্থানে অবস্থান করছে। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট কয়েকটি বিদেশি ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের সেকেন্ড হোমের তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০২৫ সালের মে মাসে সরকার জাতিসংঘের ‘Stolen Asset Recovery Initiative’ কর্মসূচির আওতায় যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করে; তবে এখনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উচ্চস্বর ও আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ নিলেও বাস্তবায়নে ছিল সীমাবদ্ধতা ও দ্বিধা।

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতির এক সংকটকালে প্রশাসনিক ও নীতিগত হাল ধরে। অর্থনীতির বহুমাত্রিক সংকটে সরকার সীমিত সময়ের মধ্যে নীতিগত কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়। ব্যাংক খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ জোরদার হলেও সুশাসনের ঘাটতি ও ঋণখেলাপিদের বিষয়ে আরো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যে অগ্রগতি থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। রেমিট্যান্স প্রণোদনা ও করছাড় প্রবর্তনের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ ফিরে এলেও হুন্ডির হার আরো দমন করা প্রয়োজন।

দুর্নীতি দমন ও বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরানোর ক্ষেত্রে সরকারি ঘোষণার তুলনায় বাস্তব অগ্রগতি কম। অন্তর্বর্তী সরকারের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যৎ প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা—অর্থনীতির গভীর সংকট রোধ করতে হলে নীতিগত ঘোষণার পাশাপাশি শক্তিশালী বাস্তবায়ন ও কাঠামোগত সংস্কার আবশ্যক। আগামী নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব হবে এই শূন্যতাগুলো পূরণ করে একটি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গঠন করা।

লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট

Mizan12bd@yahoo.com

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত