আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

হাদি হত্যাচেষ্টা

আ.লীগ ও র-এর এজেন্ডায় পা দিল বিএনপি-জামায়াত

কেফায়েত শাকিল
আ.লীগ ও র-এর এজেন্ডায় পা দিল বিএনপি-জামায়াত

ওসমান হাদিকে টার্গেট করার ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং তাদের এজেন্ট আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। হ্যা আপনারাই সফল করেছেন। বিএনপি-জামায়াত এখন যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে আওয়ামী এজেন্ডা।

আওয়ামী লীগ দেশকে অস্থিতিশীল করতেই যখন চায় অন্য কাউকেওতো টার্গেট করতে পারতো। হাদিকে কেন টার্গেট করলো বলতে পারেন? আমার হাইপোথিসিস বলছে, হাদিকে টার্গেট করে আওয়ামী লীগ ও র একঢালে দুই পাখি মারতে চেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তাদের প্রথম উদ্দেশ্য দেশের বিদ্যমান শক্তিগুলোর মধ্যে বিভক্তি তৈরি। যতদিন দেশের সব রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রশ্নে ঐক্য থাকবে ততদিন ‘র’ এবং তাদের এজেন্ট আওয়ামী লীগ এখানে তাদের আধিপত্যবাদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। তাই তাদের প্রথম এসাইনমেন্ট হলো ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষের মধ্যে বিভক্তি তৈরি। পরে এক এক করে ঘাড় মটকানো। তারা হাদিকে টার্গেট করার মূল লক্ষ্যই হলো এই বিভক্তি তৈরি।

হাদিকে যে স্টাইলে গুলি করা হয়েছে একই স্টাইলে চাইলে বিএনপি-জামায়াত বা অন্য কোনো দলের কোনো শীর্ষ নেতাকেও তারা গুলি করতে পারতো। কিন্তু অন্য কাউকে গুলি করলে তাদের উদ্দেশ্য পুরোপুরি হাসিল হতো না। কারণ কোনো একটি দলের নেতাকে মারলে তারা বিপরীত দলের দিকে সবাই আঙ্গুল তুলতো। এতে বহু পক্ষের কাদা ছোড়াছুড়ি তেমন একটা হতো না। তারাতো চায় কাদা ছোড়াছুড়ি এবং বিভক্তি।

হাদিকে টার্গেটের মূল কারণ হাদি নিরপেক্ষ। তাকে মারলে বিএনপি-জামায়াত উভয়ের দিকে আঙ্গুল তোলা যায়। একদল আরেক দলের দিকে আঙ্গুল তুললেই বাড়বে বিভক্তি। সফল হবে ভারতীয় এজেন্ডা।

হয়েছে তাই। ওসমান হাদিকে গুলি করা হলো। ঘটনার কিছুক্ষণ পরই আজকের কণ্ঠ নামে আওয়ামী লীগ পরিচালিত একটি পেজ থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে দায়ী করা হলো। তারপর ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম ফেসবুকে পোস্ট করলেন চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে আবারও অভ্যুত্থানের ডাক দিয়ে। সেই পোস্টের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু করলো বিএনপি সমর্থকরা। যদিও সাদিক কায়েমের পোস্টে কোথাও বিএনপিকে মেনশন করা হয়নি তবে নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, তিনি চাঁদাবাজ বলতে মূলত মির্জা আব্বাসকে ইঙ্গিত করেছেন। যার কারণে তার এই পোস্টে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন বিএনপি সমর্থকরা।

এদিকে হাদি যে আসন থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছেন সেই আসনের বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস। বিভিন্ন সময় নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে হাদিকে হেয় করেছেন আব্বাস সমর্থকরা। যার কারণে হাদির সমর্থকদের অনেকে ক্ষুব্ধ ছিলেন আব্বাসের প্রতি। যার বহিপ্রকাশ হয়েছে হাদিকে দেখতে মির্জা আব্বাস ঢাকা মেডিকেলে গেলে। হাদির সমর্থকতদের বড় একটি অংশ আবার জামায়াতপন্থি। যাকে ঘিরে বিরোধ বেড়েছে বিএনপি-জামায়াতে।

এই বিরোধে ঘি ঢেলেছে সন্দেহভাজন হত্যাকারীর সঙ্গে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমের এআই নির্মিত একটি ছবি ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের নামে প্রচারিত কিছু ভুয়া ফটোকার্ড। যাকে রেফারেন্স করে বক্তব্য দিয়েছেন খোদ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীও। রিজভীর এই বক্তব্য আরো উত্তাপ বাড়িয়েছে রাজনীতিতে। কারণ এর প্রতিক্রিয়ায় জামায়াত-শিবির সমর্থকরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরুপ মন্তব্য করছিলেন রিজভীকে নিয়ে।

এসব নিয়ে যখন বিএনপি-জামায়াত মুখোমুখি তখন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উভয় পক্ষকে বিরোধে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি হাদির চরিত্র হননে ব্যস্ত দেখা গেছে আওয়ামী সমর্থকদের। বিডি নিউজ টোয়োন্টিফোর ডটকমসহ কিছু গণমাধ্যমও চেষ্টা করেছে উল্টো হাদিকে জঙ্গি বানাতে। যদিও দিন শেষে শনাক্তকৃত আততায়ীরা আওয়ামী লীগের বলে চিহ্নিত হয়েছে। বেরিয়েছে দেশকে অস্থিতিশীল করতে আওয়ামী চক্রান্তের অডিও রেকর্ডও।

অন্য কাউকে টার্গেট না করে হাদিকে হত্যা চেষ্টার দুটি কারণের আরেকটি হলো- ভারত বিরোধীতা। হাদী একজন চরম ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী এক্টিভিস্ট। কালচারাল ফ্যাসিজমবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে হাদি প্রতিষ্ঠা করেছেন ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার। ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং আওয়ামী ফ্যাসিজম প্রশ্নে বক্তব্য-বিবৃতিতেও বেশ সরব ছিলেন ওসমান হাদি। ভারতবিরোধী অবস্থানে হাদি যতটা সরব ততটা সরব ছিল না, কোনো রাজনৈতিক দলও। হাদি তৎপর জুলাই গণহত্যার বিচার প্রসঙ্গেও। এ কারণে হাদির প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল ভারত এবং আওয়ামী লীগ। তাই তারা হাদিকে হত্যার মাধ্যমে একঢালে দুই পাখি মারার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্র না বুঝে বিএনপি-জামায়াত নিজেদের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি করে আওয়ামী সেই এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছে।

আওয়ামী লীগ চাচ্ছে যে কোনোভাবে হোক নির্বাচন বানচাল করতে। এজন্য দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারা। আর দেশকে অস্থিতিশীল করতে হলে বিএনপি ও জামায়াতকে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই তাদের কাছে। এজন্য তার বারবারই চেষ্টা করবে এই দুই পক্ষের মধ্যে বিভক্তি তৈরির। আদর্শগত মতবিরোধ থাকতে পারে কিন্তু এ মুহূর্তে সুন্দর নির্বাচনের স্বার্থে এবং দেশের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে বিদ্যমাণ রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে। কোনোভাবেই পা দেওয়া যাবে না ভারত এবং তাদের এদেশীয় এজেন্ট আওয়ামী লীগের পাতা ফাঁদে।

লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, বাংলাভিশন

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন