রকীবুল হক
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ ছিল পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের ইসলামবিরোধী সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ। একদিকে শাহবাগে নাস্তিক্য ব্লগারদের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চের নামে ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় সংস্কৃতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলে, অন্যদিকে এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যাতে কেউ দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য শাপলা চত্বরের সেই নৃশংসতা চালানো হয়।
এমনই মন্তব্য করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব (তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক) মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের নামে একটা হিন্দুস্তানি, আগ্রাসনবাদী, হিন্দুত্ববাদী একটি চক্র দেশের মুসলমানদের তাহজিব-তমদ্দুন, সভ্যতা-সংস্কৃতি, সামাজিক বন্ধন এবং দেশের অখণ্ডতা বিনষ্ট করার সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত নিয়ে মাঠে নামে। সারাদেশে মঞ্চ কায়েম করে ইসলাম, মুসলমান এবং আবহমানকাল থেকে যে সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বন্ধনকে বিনষ্ট করতে নানা ষড়যন্ত্র করে তারা। শাহবাগ থেকে আল্লাহ, আল্লাহর কোরআন এবং নবীর শানে কটূক্তি করে ব্লগাররা। তারাই শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম নেতৃত্বে ছিলেন। তাদের সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে দেশের আলেমদের মুরব্বি, হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লাহ শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে গর্জে ওঠার আহ্বান জানানো হয়। তার ডাকে সাড়া দিয়ে আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা ৬ এপ্রিল ঢাকায় লংমার্চ ও সমাবেশ করেন। কিন্তু সরকার এটাকে ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় সর্বশক্তি ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, শাপলা চত্বরের সেই সমাবেশ থেকেই আল্লাহ ও রাসুলের কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন, নাস্তিকদের বিচার ও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ সরিয়ে দেওয়াসহ ১৩ দফা দাবি আদায়ে এক মাসের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। দাবি না মানলে ৫ মে ঢাকা অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ। ঢাকার প্রবেশপথের ছয়টি স্পটে অবরোধের পক্ষে দেশের আপামর জনগণ একাত্মতা ঘোষণা করেন। অবরোধ শেষে সুনির্দিষ্ট কিছু কর্মসূচি নিয়ে আমরা শাপলা চত্বরে জমায়েত হয়েছিলাম। সেখানে আহমদ শফী কিছু কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার আল্লামা শফীকে স্টেজেই আসতে দেয়নি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার হেফাজতকে ধ্বংস করার নীলনকশা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়।
সেদিনের বিভীষিকাময় চিত্র তুলে ধরে আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ঢাকা অবরোধকে ঘিরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের পাশাপাশি পুলিশ-র্যাব হামলা চালিয়ে অসংখ্য হেফাজত নেতাকর্মীকে আহত করে। বিকালে আহমদ শফী শাপলা চত্বরে আসার পথে রমনা কালী মন্দিরের কাছ থেকে তৎকালীন লালবাগ জোনের ডিসি হারুন তাকে ফিরিয়ে দেন। তাকে লালবাগ মাদরাসায় নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। এটা ছিল সরকারের একটা ষড়যন্ত্র।
তিনি বলেন, হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে আমরা শাপলা চত্বরের মঞ্চে অবস্থান করছিলাম। মাগরিবের সময় চতুর্পাশ থেকে হামলা শুরু হয়। পল্টন, দৈনিক বাংলা, বিজয়নগর, ইত্তেফাক মোড়সহ বিভিন্ন দিক থেকে র্যাব-পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকরা যৌথ আক্রমণ করে। এ সময় অসংখ্য মানুষ হতাহত হন। মাগরিবের সময় সব হাসপাতালে রক্তাক্ত মানুষে ভরে গিয়েছিল। চিকিৎসা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেকায়দায় পড়ে যায়। এ সময় বায়তুল মোকাররম লাইব্রেরিতে আগুন দিয়ে সেই দায়ভার আমাদের ওপর চাপায়। যুবলীগ নেতা দেবাশীষ রায় টুপি পরে এই আগুন দেয়।
তিনি বলেন, আমরা হেফাজত নেতাকর্মীরা ছিলাম সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। আমাদের হাতে ছিল তসবিহ ও জায়নামাজ। অন্যদিকে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সশস্ত্র হামলা চালায়। শাপলা চত্বরে সমাবেশ চলাকালে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমরা লালবাগে অবরুদ্ধ আল্লামা শফীর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। এরই মধ্যে মাগরিবের সময় হয়ে যায়। বিভিন্ন দিক থেকে হেফাজত নেতাকর্মীদের লাশ আসা শুরু হয়। স্টেজের কাছে অসংখ্য লাশ আসে। এতে সবার মাঝে চরম ক্ষোভ, আতঙ্ক ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। অন্ধকার রাতে সবাইকে ছেড়ে দিলে আরো আক্রমণ হতে পারে- এমন আশঙ্কায় শাপলা চত্বরেই অবস্থান নিয়ে আহমদ শফীর বার্তার অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। মঞ্চ থেকে বারবার ঘোষণা দিচ্ছিলাম, আমরা রাতে অবস্থান নিয়ে সকালে সেখান থেকে চলে যাব। কিন্তু প্রশাসন আমাদের দমনের প্রস্তুতি নেয়। আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো আলাপ-আলোচনা না হলেও রাত ১২টার দিকে টেলিভিশনে আমাদের উচ্ছেদের ঘোষণা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে গভীর রাতে যৌথবাহিনী দিয়ে নির্মম ও চূড়ান্ত আক্রমণ চালানো হয়। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেয়নি। তাদের ওপরও আক্রমণ করা হয়েছে।
সেদিন আসরের পর থেকেই শাপলা চত্বরের সমাবেশের মঞ্চে ছিলেন আজিজুল হক ইসলামাবাদী। দিনভর চতুর্মুখী আক্রমণের সাক্ষী তিনি। এমনই এক নির্মম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, রাত ১২টার দিকে মঞ্চ থেকে নেমে নটর ডেম কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। এ সময় দেখি রক্তাক্ত একজনকে ভ্যানে করে আনছিলেন দুজন। এমন সময় ৮/১০ জন আওয়ামী যুবলীগ ক্যাডার এসে তাদের ওপর বর্বর হামলা চালায়। পরে তাদের কী হয়েছে আর জানতে পারিনি। ভয়ংকর সেই পরিস্থিতিতে আমি নয়াদিগন্তের প্রেস এলাকায় নিরাপদ একটি স্থানে অবস্থান নিই। আরো অনেকে সেখানে ছিলেন। সারারাত সেখানে কাটিয়ে ফজরের সময় অন্যত্র চলে যাই।
তিনি বলেন, রাত ২টার পর র্যাব-বিজিবি ও পুলিশের তিনস্তরের ব্যাপকসংখ্যক বাহিনী চারদিকের সব রাস্তা ও অলিগলি দিয়ে আক্রমণ চালাতে শুরু করে। বিকট আওয়াজে আতঙ্কিত হেফাজত নেতাকর্মীরা ছোটাছুটি শুরু করেন। বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় অন্ধকারে মানুষের কান্নার রোল পড়ে যায়। চোখে না দেখলে সেই দৃশ্য কেউ বুঝতে পারবে না। গরম পানি, টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে যৌথবাহিনী। সব পথ ছিল বন্ধ। শুধু কমলাপুরের দিকের একটি রাস্তা খোলা ছিল। সেদিক থেকেই হেফাজতের নেতাকর্মীরা সরে পড়ার চেষ্টা চালান। ইত্তেফাক মোড় দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানেও আক্রমণের শিকার হন তারা। প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে শাপলা চত্বর এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। এ সময় অসংখ্য মানুষ হতাহত হন। আলামত নষ্ট করতে সকাল হওয়ার আগেই সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার গাড়ি এসে পানি দিয়ে রাস্তার রক্ত পরিষ্কার করা হয়।
হেফাজতের এই নেতা বলেন, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সরকার একটা আতঙ্ক তৈরি করতে চেয়েছিল। ইসলামপন্থিরা যাতে দাঁড়াতে না পারে এবং ধর্মীয় অধিকার বন্ধ করে এদেশ থেকে ধর্মকে নির্মূল করার জন্য ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল সরকার।
ইসলামাবাদী বলেন, শুধু ৫ তারিখের হত্যাযজ্ঞই নয়, পরদিন ৬ তারিখেও হেফাজত নেতাকর্মীদের যেখানেই পেয়েছে, গণহত্যা চালানো হয়েছে। চিটাগাং রোডে একদিনে ২৩ জনকে হত্যা করা হয়। সেখানে হিন্দিভাষী ইন্ডিয়ান বাহিনীও গুলি চালিয়েছে বলে জেনেছি। একইভাবে চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন এলাকায় আমাদের অসংখ্য ভাইকে হত্যা ও আহত করেছে। ৫ ও ৬ মে হেফাজতের শত শত নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
তিনি বলেন, শাপলা চত্বরের স্টেজে অবস্থানকালে আহত হন হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। পরদিন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর আল্লামা আহমদ শফীকে বিমানে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পর থেকে দীর্ঘদিন আর কোনো কার্যক্রম চালাতে পারেনি হেফাজতে ইসলাম। নেতাকর্মীদের নামে হত্যা, সন্ত্রাস, ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিন শতাধিক মামলা দেওয়া হয়। এতে সাত হাজারের বেশি নামধারীসহ আসামি দুই-আড়াই লাখ। সহস্রাধিক নেতাকর্মী কারাবন্দি হন, আবার অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থাকেন। অনেককে হয়রানি করা হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর জ্বালানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, আমি প্রায় দুই বছর বাড়িতে থাকতে পারিনি। আমার বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালানো হয়। তখন আমি হেফাজতের সাংগঠনিক ছিলাম, মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বেশি। এ জন্য হয়তো আমার ওপর আক্রোশও বেশি ছিল।আমার বিরুদ্ধে মামলা ছিল ১২৪টা।
আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে ফ্যাসিবাদের করা তিন শতাধিক মামলা প্রত্যাহারের জন্য গত ডিসেম্বরে আবেদন করেছি। এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
শাপলা চত্বরের ঘটনায় শহীদদের তালিকা এখনো করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে ইসলামাবাদী বলেন, আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু সরকারের ভয়ে অনেক শহীদ পরিবার কথা বলতে পারেনি। এমনকি অনেকের জানাজাও পড়তে দেয়নি। লাশ গুম করা হয়েছে। সে সময় বিভিন্ন গোরস্তানে এবং আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের অস্বাভাবিক লাশ দাফনের ঘটনায় ব্যাপকসংখ্যক মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া যায়। শহীদদের তালিকা করতে আমরা কোথাও বসতে পারিনি। একটি স্মারক তৈরির উদ্যোগ নিলেও কম্পিউটারসহ সব তথ্য নিয়ে যায় পুলিশ। আমরা নতুনভাবে আবার তদন্ত শুরু করেছি।
এদিকে শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হেফাজতের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাসহ ৫৪ জনের নামে এবং কয়েক শ অজ্ঞাতনামা আসামি করে গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। এ মামলার বাদী আজিজুল হক ইসলামাবাদী। এরই মধ্যে মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ ছিল পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের ইসলামবিরোধী সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ। একদিকে শাহবাগে নাস্তিক্য ব্লগারদের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চের নামে ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় সংস্কৃতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলে, অন্যদিকে এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যাতে কেউ দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য শাপলা চত্বরের সেই নৃশংসতা চালানো হয়।
এমনই মন্তব্য করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব (তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক) মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের নামে একটা হিন্দুস্তানি, আগ্রাসনবাদী, হিন্দুত্ববাদী একটি চক্র দেশের মুসলমানদের তাহজিব-তমদ্দুন, সভ্যতা-সংস্কৃতি, সামাজিক বন্ধন এবং দেশের অখণ্ডতা বিনষ্ট করার সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত নিয়ে মাঠে নামে। সারাদেশে মঞ্চ কায়েম করে ইসলাম, মুসলমান এবং আবহমানকাল থেকে যে সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বন্ধনকে বিনষ্ট করতে নানা ষড়যন্ত্র করে তারা। শাহবাগ থেকে আল্লাহ, আল্লাহর কোরআন এবং নবীর শানে কটূক্তি করে ব্লগাররা। তারাই শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম নেতৃত্বে ছিলেন। তাদের সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে দেশের আলেমদের মুরব্বি, হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লাহ শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে গর্জে ওঠার আহ্বান জানানো হয়। তার ডাকে সাড়া দিয়ে আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা ৬ এপ্রিল ঢাকায় লংমার্চ ও সমাবেশ করেন। কিন্তু সরকার এটাকে ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় সর্বশক্তি ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, শাপলা চত্বরের সেই সমাবেশ থেকেই আল্লাহ ও রাসুলের কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন, নাস্তিকদের বিচার ও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ সরিয়ে দেওয়াসহ ১৩ দফা দাবি আদায়ে এক মাসের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। দাবি না মানলে ৫ মে ঢাকা অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ। ঢাকার প্রবেশপথের ছয়টি স্পটে অবরোধের পক্ষে দেশের আপামর জনগণ একাত্মতা ঘোষণা করেন। অবরোধ শেষে সুনির্দিষ্ট কিছু কর্মসূচি নিয়ে আমরা শাপলা চত্বরে জমায়েত হয়েছিলাম। সেখানে আহমদ শফী কিছু কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার আল্লামা শফীকে স্টেজেই আসতে দেয়নি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার হেফাজতকে ধ্বংস করার নীলনকশা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়।
সেদিনের বিভীষিকাময় চিত্র তুলে ধরে আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ঢাকা অবরোধকে ঘিরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের পাশাপাশি পুলিশ-র্যাব হামলা চালিয়ে অসংখ্য হেফাজত নেতাকর্মীকে আহত করে। বিকালে আহমদ শফী শাপলা চত্বরে আসার পথে রমনা কালী মন্দিরের কাছ থেকে তৎকালীন লালবাগ জোনের ডিসি হারুন তাকে ফিরিয়ে দেন। তাকে লালবাগ মাদরাসায় নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। এটা ছিল সরকারের একটা ষড়যন্ত্র।
তিনি বলেন, হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে আমরা শাপলা চত্বরের মঞ্চে অবস্থান করছিলাম। মাগরিবের সময় চতুর্পাশ থেকে হামলা শুরু হয়। পল্টন, দৈনিক বাংলা, বিজয়নগর, ইত্তেফাক মোড়সহ বিভিন্ন দিক থেকে র্যাব-পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকরা যৌথ আক্রমণ করে। এ সময় অসংখ্য মানুষ হতাহত হন। মাগরিবের সময় সব হাসপাতালে রক্তাক্ত মানুষে ভরে গিয়েছিল। চিকিৎসা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেকায়দায় পড়ে যায়। এ সময় বায়তুল মোকাররম লাইব্রেরিতে আগুন দিয়ে সেই দায়ভার আমাদের ওপর চাপায়। যুবলীগ নেতা দেবাশীষ রায় টুপি পরে এই আগুন দেয়।
তিনি বলেন, আমরা হেফাজত নেতাকর্মীরা ছিলাম সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। আমাদের হাতে ছিল তসবিহ ও জায়নামাজ। অন্যদিকে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সশস্ত্র হামলা চালায়। শাপলা চত্বরে সমাবেশ চলাকালে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমরা লালবাগে অবরুদ্ধ আল্লামা শফীর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। এরই মধ্যে মাগরিবের সময় হয়ে যায়। বিভিন্ন দিক থেকে হেফাজত নেতাকর্মীদের লাশ আসা শুরু হয়। স্টেজের কাছে অসংখ্য লাশ আসে। এতে সবার মাঝে চরম ক্ষোভ, আতঙ্ক ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। অন্ধকার রাতে সবাইকে ছেড়ে দিলে আরো আক্রমণ হতে পারে- এমন আশঙ্কায় শাপলা চত্বরেই অবস্থান নিয়ে আহমদ শফীর বার্তার অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। মঞ্চ থেকে বারবার ঘোষণা দিচ্ছিলাম, আমরা রাতে অবস্থান নিয়ে সকালে সেখান থেকে চলে যাব। কিন্তু প্রশাসন আমাদের দমনের প্রস্তুতি নেয়। আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো আলাপ-আলোচনা না হলেও রাত ১২টার দিকে টেলিভিশনে আমাদের উচ্ছেদের ঘোষণা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে গভীর রাতে যৌথবাহিনী দিয়ে নির্মম ও চূড়ান্ত আক্রমণ চালানো হয়। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেয়নি। তাদের ওপরও আক্রমণ করা হয়েছে।
সেদিন আসরের পর থেকেই শাপলা চত্বরের সমাবেশের মঞ্চে ছিলেন আজিজুল হক ইসলামাবাদী। দিনভর চতুর্মুখী আক্রমণের সাক্ষী তিনি। এমনই এক নির্মম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, রাত ১২টার দিকে মঞ্চ থেকে নেমে নটর ডেম কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। এ সময় দেখি রক্তাক্ত একজনকে ভ্যানে করে আনছিলেন দুজন। এমন সময় ৮/১০ জন আওয়ামী যুবলীগ ক্যাডার এসে তাদের ওপর বর্বর হামলা চালায়। পরে তাদের কী হয়েছে আর জানতে পারিনি। ভয়ংকর সেই পরিস্থিতিতে আমি নয়াদিগন্তের প্রেস এলাকায় নিরাপদ একটি স্থানে অবস্থান নিই। আরো অনেকে সেখানে ছিলেন। সারারাত সেখানে কাটিয়ে ফজরের সময় অন্যত্র চলে যাই।
তিনি বলেন, রাত ২টার পর র্যাব-বিজিবি ও পুলিশের তিনস্তরের ব্যাপকসংখ্যক বাহিনী চারদিকের সব রাস্তা ও অলিগলি দিয়ে আক্রমণ চালাতে শুরু করে। বিকট আওয়াজে আতঙ্কিত হেফাজত নেতাকর্মীরা ছোটাছুটি শুরু করেন। বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় অন্ধকারে মানুষের কান্নার রোল পড়ে যায়। চোখে না দেখলে সেই দৃশ্য কেউ বুঝতে পারবে না। গরম পানি, টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে যৌথবাহিনী। সব পথ ছিল বন্ধ। শুধু কমলাপুরের দিকের একটি রাস্তা খোলা ছিল। সেদিক থেকেই হেফাজতের নেতাকর্মীরা সরে পড়ার চেষ্টা চালান। ইত্তেফাক মোড় দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানেও আক্রমণের শিকার হন তারা। প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে শাপলা চত্বর এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। এ সময় অসংখ্য মানুষ হতাহত হন। আলামত নষ্ট করতে সকাল হওয়ার আগেই সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার গাড়ি এসে পানি দিয়ে রাস্তার রক্ত পরিষ্কার করা হয়।
হেফাজতের এই নেতা বলেন, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সরকার একটা আতঙ্ক তৈরি করতে চেয়েছিল। ইসলামপন্থিরা যাতে দাঁড়াতে না পারে এবং ধর্মীয় অধিকার বন্ধ করে এদেশ থেকে ধর্মকে নির্মূল করার জন্য ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল সরকার।
ইসলামাবাদী বলেন, শুধু ৫ তারিখের হত্যাযজ্ঞই নয়, পরদিন ৬ তারিখেও হেফাজত নেতাকর্মীদের যেখানেই পেয়েছে, গণহত্যা চালানো হয়েছে। চিটাগাং রোডে একদিনে ২৩ জনকে হত্যা করা হয়। সেখানে হিন্দিভাষী ইন্ডিয়ান বাহিনীও গুলি চালিয়েছে বলে জেনেছি। একইভাবে চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন এলাকায় আমাদের অসংখ্য ভাইকে হত্যা ও আহত করেছে। ৫ ও ৬ মে হেফাজতের শত শত নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
তিনি বলেন, শাপলা চত্বরের স্টেজে অবস্থানকালে আহত হন হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। পরদিন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর আল্লামা আহমদ শফীকে বিমানে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পর থেকে দীর্ঘদিন আর কোনো কার্যক্রম চালাতে পারেনি হেফাজতে ইসলাম। নেতাকর্মীদের নামে হত্যা, সন্ত্রাস, ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিন শতাধিক মামলা দেওয়া হয়। এতে সাত হাজারের বেশি নামধারীসহ আসামি দুই-আড়াই লাখ। সহস্রাধিক নেতাকর্মী কারাবন্দি হন, আবার অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থাকেন। অনেককে হয়রানি করা হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর জ্বালানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, আমি প্রায় দুই বছর বাড়িতে থাকতে পারিনি। আমার বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালানো হয়। তখন আমি হেফাজতের সাংগঠনিক ছিলাম, মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বেশি। এ জন্য হয়তো আমার ওপর আক্রোশও বেশি ছিল।আমার বিরুদ্ধে মামলা ছিল ১২৪টা।
আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে ফ্যাসিবাদের করা তিন শতাধিক মামলা প্রত্যাহারের জন্য গত ডিসেম্বরে আবেদন করেছি। এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
শাপলা চত্বরের ঘটনায় শহীদদের তালিকা এখনো করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে ইসলামাবাদী বলেন, আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু সরকারের ভয়ে অনেক শহীদ পরিবার কথা বলতে পারেনি। এমনকি অনেকের জানাজাও পড়তে দেয়নি। লাশ গুম করা হয়েছে। সে সময় বিভিন্ন গোরস্তানে এবং আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের অস্বাভাবিক লাশ দাফনের ঘটনায় ব্যাপকসংখ্যক মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া যায়। শহীদদের তালিকা করতে আমরা কোথাও বসতে পারিনি। একটি স্মারক তৈরির উদ্যোগ নিলেও কম্পিউটারসহ সব তথ্য নিয়ে যায় পুলিশ। আমরা নতুনভাবে আবার তদন্ত শুরু করেছি।
এদিকে শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হেফাজতের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাসহ ৫৪ জনের নামে এবং কয়েক শ অজ্ঞাতনামা আসামি করে গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। এ মামলার বাদী আজিজুল হক ইসলামাবাদী। এরই মধ্যে মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে