আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

বিজয়ের কৃতিত্ব ছিনতাই

মাহবুব উল্লাহ
বিজয়ের কৃতিত্ব ছিনতাই

আজ ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ভারতের সামরিক বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে রমনার রেসকোর্স (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে। বাহিনী দুটির পক্ষে আত্মসমর্পণ দলিলে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর পক্ষে স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি এবং ভারতের পক্ষে স্বাক্ষর করেন ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী নিয়ে যৌথ কমান্ড গঠিত হলেও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পক্ষভুক্ত করা হয়নি। এ থেকেই প্রবল শক্তিধর ভারতীয় বাহিনী প্রমাণ করতে চেয়েছিল যুদ্ধটা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। পাকিস্তানি বাহিনীও মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে কিছুতেই রাজি ছিল না। তারা ভেবেছিল মুক্তিবাহিনীকে যদি আত্মসমর্পণের পক্ষভুক্ত করা হয়, তাহলে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে। শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ মঞ্চস্থ হলো ভারত ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অসম সাহসিকতা নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। দেশমাতৃকার প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতাই ছিল তাদের পরম ও চরম লক্ষ্য। এই বীরেরা চরম প্রতিকূলতার মধ্যে যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। যতই দিন গড়িয়েছে ততই তাদের সাফল্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শত্রু হননও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা প্রধানত গেরিলা কায়দায় যুদ্ধ করেছে। তাদের কৌশল ছিল—‘Hit and run.’ এই কৌশল প্রয়োগের ফলে শত্রুবাহিনীর অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়েছিল। ১৬ ডিসেম্বরের পর আমি বিভিন্নজনের সঙ্গে আলাপ করে এমন ঘটনার পক্ষে তর্কাতীত সাক্ষ্য পেয়েছি। মুক্তিযোদ্ধারা নিজস্বভাবে যদি আরো বছর খানেক যুদ্ধ করতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানি বাহিনী ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত। এই অবস্থায় ভারত বাংলাদেশের বিজয়ের জন্য তার অবদানের বড় অংশটি দাবি করতে পারত না। মুক্তিযোদ্ধারা যে অস্ত্র ব্যবহার করেছেন তার মধ্যে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া অস্ত্র, ২৫ মার্চের পর বিভিন্ন জেলার ট্রেজারি এবং থানা ফাঁড়ি থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র এবং সর্বশেষে ভারতের দেওয়া অস্ত্র। ভারত মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাস ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রে সজ্জিত করে তুলতে দৃষ্টিকটুভাবে কার্পণ্য করেছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এভাবে চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ওপর তাদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে এবং বাংলাদেশ যদি স্বাধীনও হয়, সেই স্বাধীনতা হবে নিম-সার্বভৌমত্বের বাংলাদেশ।

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের যে দৃশ্যটি সব বাংলাদেশিকে পীড়া দিয়েছে এবং মর্মাহত করেছে, সেটা হলো এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মুক্তিফৌজের কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল এমএজি ওসমানীর অনুপস্থিতি। তাকে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে ভারতীয়রা চরমভাবে বাধা দিয়েছিল। তিনি মেজর জেনারেল রব, ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী, শেখ কামালসহ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হেলিকপ্টারযোগে সিলেট হয়ে ঢাকার পথে আসছিলেন। হঠাৎ করে তাদের হেলিকপ্টারটিকে গুলি করা হয়। হেলিকপ্টারে গুলির ফলে হেলিকপ্টারটি জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। হেলিকপ্টারের অয়েল ট্যাংকারে গুলি লাগায় জ্বালানি তেল দ্রুত নিঃসরিত হচ্ছিল। ফলে এর উড্ডয়ন ক্ষমতা ফুরিয়ে যায়। হেলিকপ্টার গুলিবিদ্ধ হওয়ায় অন্যতম আরোহী মেজর জেনারেল রব কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হন। ডাক্তার জাফরুল্লাহ তাকে হার্ট ম্যাসাজ দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। তা না হলে তার মৃত্যু ছিল অবধারিত। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিশদভাবে ঘটনাটির বর্ণনা করেছেন তার এক লেখায়। এই ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয়, ভারতীয় বাহিনী যুদ্ধজয়ের গৌরব থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করার এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল। জেনারেল ওসমানীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারার কাহিনিটি আজ অবধি বাংলাদেশের মানুষকে বিষণ্ণ করে তোলে, ক্ষুব্ধ করে তোলে ভারতীয় চাণক্যনীতির বিরুদ্ধে।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ করার জন্য কয়েক হাজার ঢাকাবাসী উপস্থিত হয়েছিল। তবে যে পরিমাণ জনারণ্য আশা করা হয়েছিল তদনুরূপ হয়নি। কারণ ঢাকা ছিল তখন প্রায় জনশূন্য। যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে ঢাকা দখল নিয়ে প্রচণ্ড যুদ্ধ হবে এবং এই যুদ্ধে অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ যাবে—এমন ভয়ে ঢাকাবাসীর বিরাট একটি অংশ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য গ্রামের দিকে চলে গিয়েছিল। সে কারণেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নামেনি।

১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনে আমি বন্দি ছিলাম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। আমাকে ‘স্বাধীন গণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা’র কর্মসূচি উত্থাপনের অপরাধে ১৯৭০ সালের ২২ মার্চ গ্রেপ্তার করে বন্দি রাখা হয়। সেই থেকে পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমি ও অন্য রাজবন্দিরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলাম। ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করা সত্ত্বেও জেলার নির্মল রায় আমাদের মুক্তি দিতে রাজি ছিলেন না মুক্তিযোদ্ধাদের চাপ সত্ত্বেও। তার বক্তব্য ছিল, দেশে নতুন রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছে। তাদের অনুমতি ছাড়া তিনি রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে পারেন না। এদিকে জেল হাসপাতালের কম্পাউন্ডার ঢাকা শহরের নানা জায়গায় ছোটাছুটি করেও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাউকে খুঁজে পেলেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি জেনারেল অরোরার শরণাপন্ন হতেই জেনারেল অরোরা একটি স্লিপের ওপর এক লাইনে লিখে দিলেন—‘Rt. all prisoners imprisoned by the Marshal law authority of Pakistan.’ পরদিন ১৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে সব রাজবন্দি মুক্তি পেল। আমিও মুক্তি পেলাম। একইসঙ্গে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার সব আসামি জেল ছেড়ে চলে গেল। আমার মনে দুঃখ রইল, আমাকে মুক্ত হতে হয়েছে ভারতীয় জেনারেলের আদেশে। আমার মুক্তির আদেশে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের কোনো স্বাক্ষর ছিল না, যেমন ছিল না আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে জেনারেল এমএজি ওসমানীর উপস্থিতি। এ থেকেই বোঝা যায়, কীভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বেহাত হয়ে যায়। বোঝা যায়, কীভাবে বীরের রক্তস্রোত ও মায়ের অশ্রুধারার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল।

ভারত সরাসরি বাংলাদেশ যুদ্ধ শুরু করার আগে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের সঙ্গে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে এক লিখিত চুক্তিতে প্যাক্ট নয়, এগ্রিমেন্টে আসে। এ ব্যাপারে মাসুদুল হক তার ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে র’ এবং সিআইএ’ গ্রন্থে হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর সাক্ষাৎকার সংযোজন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ সরকারের দিল্লি মিশন প্রধান, স্বাধীনতার পর দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনার, পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং একসময় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ছিলেন হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী। তিনি শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে জাতীয় সংসদের স্পিকারও ছিলেন। এই সংযোজনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাত দফা গোপন চুক্তি।

‘‘মাসুদুল হকের প্রশ্ন : অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার ভারতের সঙ্গে যে গোপন সাত দফা চুক্তি করে—প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা কি সেই সাত দফার মধ্যেই একটি? রক্ষীবাহিনী কি সেই প্যারামিলিশিয়া বাহিনী? এই প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে ভারত সরকারের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার এবং লিখিত চুক্তিতে প্যাক্ট নয়, এগ্রিমেন্টে আসেন। ওই চুক্তি বা এগ্রিমেন্ট অনুসারে দু’পক্ষ কিছু প্রশাসনিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক সমঝোতায় আসেন। প্রশাসনিক বিষয়ে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার ভারতের যে প্রস্তাবে রাজি হয়, তা হলো: যারা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, শুধু তারাই প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োজিত থাকতে পারবে। বাকিদের চাকরিচ্যুত করা হবে এবং সেই শূন্য জায়গা পূরণ করবে ভারতীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

স্বাধীনতার পর বেশ কিছু ভারতীয় কর্মকর্তা বাংলাদেশে এসেও গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু (শেখ মুজিব) এসে তাদের বের করে দেন।

সামরিক সমঝোতা হলো: বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করবে (কতদিন অবস্থান করবে, তার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় না)। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাস থেকে আরম্ভ করে প্রতি বছর এ সম্পর্কে দু’দেশের মধ্যে পুনরীক্ষণের জন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী থাকবে না।

অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মুক্তিবাহিনীকে কেন্দ্র করে একটি প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হবে।

ওই লিখিত সমঝোতাই হচ্ছে বাংলাদেশে রক্ষীবাহিনীর উৎস। আর ভারত-পাকিস্তান সর্বাত্মক যুদ্ধবিষয়ক সমঝোতাটি হলো: সম্ভাব্য ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অধিনায়কত্ব দেবেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নন। যুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর অধিনায়কত্বে থাকবে।

চুক্তির এই অনুচ্ছেদটির কথা মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে জানানো হলে তিনি তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর প্রতিবাদে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকেননি।’’

দেখা যাচ্ছে, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে জেনারেল ওসমানীর অনুপস্থিত থাকার দুটি ব্যাখ্যা রয়েছে। এর একটি হলো তাকে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অপরটি হলো তিনি নিজেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে বিরত থাকেন। কারণ বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীকে ভারতীয় বাহিনীর অধীনস্থ করা হয়। জেনারেল ওসমানীর মতো একজন স্বাধীনচেতা সৈনিকের এমন অধস্তন অবস্থা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ যা-ই হোক, বাস্তব সত্যটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। জেনারেল ওসমানী আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে সংগত কারণেই থাকতে পারেননি। এই ভয়াবহ ঘটনা থেকেই প্রতীয়মান হয়, আমাদের বিজয় কতটা সার্থক বিজয় ছিল আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই সত্ত্বেও।

উপরোল্লিখিত ঘটনাবলি ছাড়াও আরেকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়। মিস্টার এ কে রায় নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের এক কর্মকর্তাকে কলকাতার আট থিয়েটার রোডে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের দপ্তরে নিয়োগ দেয় ভারত সরকার। উদ্দেশ্য ছিল প্রবাসী সরকারের সব কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ করা। এ ঘটনা প্রমাণ করে, বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার ভারতীয় চক্ষুর নজরে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। সব মিলিয়ে একটি কথা বলা যায়, বাংলাদেশ-উত্তরকালে বাংলাদেশে যত রাষ্ট্রীয় সংকট দেখা দেয় তার মূলে ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ওপর এবং বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের ওপর ভারতের অবাঞ্ছিত নিয়ন্ত্রণ। আমরা কি তাই বলতে পারি—‘বিজয় দেখেছি?’

লেখক : অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবেত্তা ও রাষ্ট্রচিন্তক

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন