খাজা মাঈন উদ্দিন
শয়তানি কারবার ও কুকীর্তি অর্জনে পরিশ্রম এবং সেজন্য দুষ্ট লোকবল জোগাড়—এসব উদ্যোগে ঘাটতি দেখা যায় না, যখন ন্যায়বিচার ও জনস্বার্থ নিশ্চিতে সমাজ ও রাষ্ট্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়।
আমাদের প্রেক্ষিতে অভিজ্ঞতা বলে, দুঃশাসনের উচ্ছিষ্টভোগীরা রাজত্ব শেষ হলেও ক্ষমতার আশপাশে ঘাপটি মেরে থাকে; অতঃপর ‘সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ’-এর নীরব স্লোগান দিয়ে ‘অর্বাচীন’ শুভ শক্তিকে ঘায়েল করে, ক্ষমতাবলয়ের সামনে চলে আসারও সুযোগ পায়।
আজকের বাংলাদেশেও ক্ষমতা কেন্দ্রের রক্তনালিতে পুরোনো ধারাই যে বলবৎ থাকবে, তা ভাবা ছিল কঠিন; অন্তত এক বছর আগের ভাবনায়। দেড় দশকের ভয়াবহ রাজনৈতিক দুর্ভোগের ক্ষোভ, ভোটাধিকার হারানোর গণ-প্রতিক্রিয়া এবং চব্বিশের জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অত্যাচারী শাসকদের লজ্জাজনক পরাজয় ও পলায়ন এবং হাসিনা-লালিত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পর পরিবর্তন আসার আশা করাটা বোধ হয় অযৌক্তিক ছিল না।
বিপ্লবের এক বছর যেতে না যেতেই সরকারি যন্ত্র, কথিত চতুর্থ স্তম্ভ বা গণমাধ্যম এবং অর্থ, ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির অন্যান্য ভারকেন্দ্রে বিগত সরকারের বেশ কিছু উপকারভোগী ও সমর্থকেরা বসে বসে মুচকি হাসার অবকাশ পেয়েছেন। উল্টো দিক থেকে দেখলে বিপ্লবের পক্ষগুলোর পরস্পরের মধ্যে কোন্দল ও কিছু ক্ষেত্রে আপসকামিতা ফ্যাসিবাদের দোসরদের নির্ভার হওয়ার ফুরসত এনে দিয়েছে।
এই বাস্তবতার কেন্দ্রে রয়েছে জনপ্রশাসন, যে যন্ত্রকে গত এক বছরেও ভালোভাবে শোধিত ও সুসংগঠিত করা সম্ভব হয়নি। অবস্থাটি এমন যে, প্রায় এক মাস লেগে যায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জন্য একজন উপযুক্ত সচিব খুঁজে পেতে, তাও আবার কর্তৃপক্ষের প্রচুর ঘাম ঝরিয়ে।
এটাই যখন অবস্থা তখন দেশ নির্বাচন থেকে চার মাসেরও কম দূরত্বে, যদি প্রফেসর ইউনূস সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা করা যায় এর মধ্যে। ততদিনেও যদি জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ও আত্মবিশ্বাস প্রতিষ্ঠা বাকি থাকে, তাহলে কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে ‘ইতিহাসের সেরা নির্বাচন’, তা বোধগম্য হচ্ছে না।
সর্বসম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গুম-খুনের অভিযোগে সশস্ত্র বাহিনীর বেশ কিছু অফিসারকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে এবং অনেককে হেফাজতেও নেওয়া হয়েছে বলে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এসেছে। ফ্যাসিবাদে সহযোগিতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু বেসামরিক প্রশাসনে সেই ধরনের শুদ্ধি অভিযানের খবর জনপরিসরে সেভাবে দেখা যায়নি।
অথচ প্রশাসন আওয়ামীকরণ-পরবর্তী যুগেও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বিএনপি ও জামায়াত ট্যাগ দিয়ে বিভক্ত করা বা রাখার হিড়িক চলছে কী অবলীলায়!
প্রশ্ন করুন তো প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে দলাদলি ও অস্থিরতা সৃষ্টি কি সাবোটাজের শামিল নয় এবং এতে লাভবান হয় কারা? হাজারো খুন-দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হাসিনার দেশে ফেরার মিথ্যা ঘোষণা এবং তার দু-একজন নেতার গৃহযুদ্ধের হুমকির সঙ্গে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্পর্ক কি উড়িয়ে দেওয়া যাবে?
আওয়ামী আমলে ছড়ি ঘোরানো আমলাদের কেউ কেউ হয়তো গোপনে আশার প্রতিকূলে আশা করছেন—যদি সাবেক ক্ষমতাসীনরা একবার ‘আইস্যা’ যায়, তাহলে তাদের সঙ্গে কিয়ামত পর্যন্ত আর পারে কে! তবে আমলাতন্ত্রের ভেতর থেকে যে বা যারা আওয়ামী পুনর্বাসনে পরোক্ষ অবদান রাখছেন, অথবা ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে লিপ্ত, তারা বুঝতে পারছেন না, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যেতে পারে জনতাও। প্রিয় ভাই-বোনেরা, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেখেছেন তো, সমাজের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য শক্তি একদা ক্ষমতাধর পরাজিতের পক্ষে দাঁড়ায় না।
আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী বড় দুটি দল বিএনপি ও জামায়াত—জনপ্রশাসন ও আমলাদের কিছু কার্যকলাপ থেকে নিজেদের দলীয় নাম আলাদা করতে পারেনি। বরং কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত সমালোচনা হজম করতে হচ্ছে তাদের। উভয়ের নেতা-কর্মীরা আবার প্রশাসনিক ও বিচারিক অবিচারেরও শিকার হয়েছেন ফ্যাসিবাদী আমলে।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে পরিচয় করিয়ে দিলে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ যে বন্ধ হয় বা করা যায়—নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা তা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে হাতে-কলমে পরীক্ষা করে দেখিয়ে দিয়েছেন।
এই ‘বিএনপি-জামায়াত’ ট্যাগ ব্যবহার করেই তার অবৈধ সরকার অনেক কর্মকর্তাকে বলির পাঁঠা বানিয়েছে এবং আওয়ামী ক্যাডারদের পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছে। ওই কায়দায় ভোটারবিহীন নির্বাচন করা ছাড়াও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন করা হয়েছে যথেচ্ছাচারে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে জনপ্রশাসনে আগের দলীয়করণ সংস্কৃতির ধারাবাহিকতার শঙ্কা রয়েই গেছে, যদি না রাজনৈতিক নেতৃত্ব সাবধানে তা মোকাবিলা করে। কিছু কিছু আমলা ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রভুদের অগ্রিম সেবায় আত্মনিয়োগের ভান করেন, যাতে যথাসময়ে এমপি, মন্ত্রীদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সুবিধা নেওয়া যায়।
যেহেতু দেশ এখন এক ঐতিহাসিক বাঁক অতিক্রম করছে, সে অবস্থায় একটি নৈরাজ্যময় জনপ্রশাসন পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে সুখকর কোনো অভিজ্ঞতা উপহার দিতে পারবে না।
সুতরাং সিভিল সার্ভিসকে ফ্যাসিবাদ ও অন্যায় সংস্কৃতির কলঙ্ক থেকে মুক্ত করতে কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একই সঙ্গে কারো বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বা গোপনে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হলে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মকর্তার উপযুক্ত প্রতিকার প্রাপ্য। একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান আমলার অধিকার ও সম্মান রক্ষায় বিভাগীয় মুখপাত্রের মাধ্যমে মিডিয়াতে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ রাখা দরকার।
আমলাতন্ত্রের অপেশাদার ভূমিকায় দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রের চর্চা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চূড়ান্ত প্রমাণ হাসিনার শাসনকাল। ১৯৯৬ সালেও মহিউদ্দিন খান আলমগীরের নেতৃত্বে তথাকথিত জনতার মঞ্চে যোগদানের নামে আমলা বিদ্রোহ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের বিএনপি-বিরোধী ও আওয়ামীমুখী অবস্থান প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি আনুগত্যের বরখেলাপ করেছে।
সে ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কার্যকলাপের জন্য বিচ্ছিন্ন কিছু শাস্তির ঘটনা ছাড়া বোধগম্য সুষ্ঠু বিচার হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আগামী নির্বাচনে ক্ষমতার দাবিদার বিএনপি অতীতে বারবার প্রাসাদ-ষড়যন্ত্র বা আমলাতান্ত্রিক কুটনামির শিকার হয়েছে; যেমন ২০০১ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এলেও আমলাদের অতি-উৎসাহ এবং দলাদলি সরকারকে বিপাকে ফেলে দেয়।
২০২৪ সালের বিপ্লবের অন্যতম চেতনা ছিল অন্যায়-অবিচারের রাজত্বের অবসান। তাই বিদায়ের আগে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমলাতন্ত্রকে ঠিকঠাক করা। প্রস্তাবিত প্রশাসনিক সংস্কার সাধন এবং আজকের দূরদর্শী পদক্ষেপ নির্ধারণ করে দিতে পারে—জাতীয় পরিবর্তনে কতটা অনুঘটক হবে আমলাতন্ত্র।
তাহলে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে আমলাদের ব্যক্তিত্ব ও কাজের মানদণ্ড কী হবে—যোগ্যতা নাকি দলবাজি, পেশাদারত্ব নাকি তেলবাজি, সততা নাকি নীতিহীনতা, গণমুখিতা নাকি গোষ্ঠীপ্রীতি, জাতীয় স্বার্থের প্রাধান্য নাকি বিদেশি প্রভুদের তোষণ?
১৫ মাস আগেও এ-জাতীয় প্রশ্ন উত্থাপনের পরিবেশ ছিল না। ভবিষ্যতে হয়তো এ প্রশ্ন তোলা যাবে সহজেই, কিন্তু পরিবর্তনের ঐতিহাসিক সুযোগ খুব বেশি সময় থাকবে না, থাকেও না।
লেখক : সাংবাদিক
শয়তানি কারবার ও কুকীর্তি অর্জনে পরিশ্রম এবং সেজন্য দুষ্ট লোকবল জোগাড়—এসব উদ্যোগে ঘাটতি দেখা যায় না, যখন ন্যায়বিচার ও জনস্বার্থ নিশ্চিতে সমাজ ও রাষ্ট্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়।
আমাদের প্রেক্ষিতে অভিজ্ঞতা বলে, দুঃশাসনের উচ্ছিষ্টভোগীরা রাজত্ব শেষ হলেও ক্ষমতার আশপাশে ঘাপটি মেরে থাকে; অতঃপর ‘সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ’-এর নীরব স্লোগান দিয়ে ‘অর্বাচীন’ শুভ শক্তিকে ঘায়েল করে, ক্ষমতাবলয়ের সামনে চলে আসারও সুযোগ পায়।
আজকের বাংলাদেশেও ক্ষমতা কেন্দ্রের রক্তনালিতে পুরোনো ধারাই যে বলবৎ থাকবে, তা ভাবা ছিল কঠিন; অন্তত এক বছর আগের ভাবনায়। দেড় দশকের ভয়াবহ রাজনৈতিক দুর্ভোগের ক্ষোভ, ভোটাধিকার হারানোর গণ-প্রতিক্রিয়া এবং চব্বিশের জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অত্যাচারী শাসকদের লজ্জাজনক পরাজয় ও পলায়ন এবং হাসিনা-লালিত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পর পরিবর্তন আসার আশা করাটা বোধ হয় অযৌক্তিক ছিল না।
বিপ্লবের এক বছর যেতে না যেতেই সরকারি যন্ত্র, কথিত চতুর্থ স্তম্ভ বা গণমাধ্যম এবং অর্থ, ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির অন্যান্য ভারকেন্দ্রে বিগত সরকারের বেশ কিছু উপকারভোগী ও সমর্থকেরা বসে বসে মুচকি হাসার অবকাশ পেয়েছেন। উল্টো দিক থেকে দেখলে বিপ্লবের পক্ষগুলোর পরস্পরের মধ্যে কোন্দল ও কিছু ক্ষেত্রে আপসকামিতা ফ্যাসিবাদের দোসরদের নির্ভার হওয়ার ফুরসত এনে দিয়েছে।
এই বাস্তবতার কেন্দ্রে রয়েছে জনপ্রশাসন, যে যন্ত্রকে গত এক বছরেও ভালোভাবে শোধিত ও সুসংগঠিত করা সম্ভব হয়নি। অবস্থাটি এমন যে, প্রায় এক মাস লেগে যায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জন্য একজন উপযুক্ত সচিব খুঁজে পেতে, তাও আবার কর্তৃপক্ষের প্রচুর ঘাম ঝরিয়ে।
এটাই যখন অবস্থা তখন দেশ নির্বাচন থেকে চার মাসেরও কম দূরত্বে, যদি প্রফেসর ইউনূস সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা করা যায় এর মধ্যে। ততদিনেও যদি জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ও আত্মবিশ্বাস প্রতিষ্ঠা বাকি থাকে, তাহলে কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে ‘ইতিহাসের সেরা নির্বাচন’, তা বোধগম্য হচ্ছে না।
সর্বসম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গুম-খুনের অভিযোগে সশস্ত্র বাহিনীর বেশ কিছু অফিসারকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে এবং অনেককে হেফাজতেও নেওয়া হয়েছে বলে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এসেছে। ফ্যাসিবাদে সহযোগিতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু বেসামরিক প্রশাসনে সেই ধরনের শুদ্ধি অভিযানের খবর জনপরিসরে সেভাবে দেখা যায়নি।
অথচ প্রশাসন আওয়ামীকরণ-পরবর্তী যুগেও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বিএনপি ও জামায়াত ট্যাগ দিয়ে বিভক্ত করা বা রাখার হিড়িক চলছে কী অবলীলায়!
প্রশ্ন করুন তো প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে দলাদলি ও অস্থিরতা সৃষ্টি কি সাবোটাজের শামিল নয় এবং এতে লাভবান হয় কারা? হাজারো খুন-দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হাসিনার দেশে ফেরার মিথ্যা ঘোষণা এবং তার দু-একজন নেতার গৃহযুদ্ধের হুমকির সঙ্গে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্পর্ক কি উড়িয়ে দেওয়া যাবে?
আওয়ামী আমলে ছড়ি ঘোরানো আমলাদের কেউ কেউ হয়তো গোপনে আশার প্রতিকূলে আশা করছেন—যদি সাবেক ক্ষমতাসীনরা একবার ‘আইস্যা’ যায়, তাহলে তাদের সঙ্গে কিয়ামত পর্যন্ত আর পারে কে! তবে আমলাতন্ত্রের ভেতর থেকে যে বা যারা আওয়ামী পুনর্বাসনে পরোক্ষ অবদান রাখছেন, অথবা ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে লিপ্ত, তারা বুঝতে পারছেন না, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যেতে পারে জনতাও। প্রিয় ভাই-বোনেরা, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেখেছেন তো, সমাজের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য শক্তি একদা ক্ষমতাধর পরাজিতের পক্ষে দাঁড়ায় না।
আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী বড় দুটি দল বিএনপি ও জামায়াত—জনপ্রশাসন ও আমলাদের কিছু কার্যকলাপ থেকে নিজেদের দলীয় নাম আলাদা করতে পারেনি। বরং কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত সমালোচনা হজম করতে হচ্ছে তাদের। উভয়ের নেতা-কর্মীরা আবার প্রশাসনিক ও বিচারিক অবিচারেরও শিকার হয়েছেন ফ্যাসিবাদী আমলে।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে পরিচয় করিয়ে দিলে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ যে বন্ধ হয় বা করা যায়—নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা তা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে হাতে-কলমে পরীক্ষা করে দেখিয়ে দিয়েছেন।
এই ‘বিএনপি-জামায়াত’ ট্যাগ ব্যবহার করেই তার অবৈধ সরকার অনেক কর্মকর্তাকে বলির পাঁঠা বানিয়েছে এবং আওয়ামী ক্যাডারদের পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছে। ওই কায়দায় ভোটারবিহীন নির্বাচন করা ছাড়াও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন করা হয়েছে যথেচ্ছাচারে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে জনপ্রশাসনে আগের দলীয়করণ সংস্কৃতির ধারাবাহিকতার শঙ্কা রয়েই গেছে, যদি না রাজনৈতিক নেতৃত্ব সাবধানে তা মোকাবিলা করে। কিছু কিছু আমলা ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রভুদের অগ্রিম সেবায় আত্মনিয়োগের ভান করেন, যাতে যথাসময়ে এমপি, মন্ত্রীদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সুবিধা নেওয়া যায়।
যেহেতু দেশ এখন এক ঐতিহাসিক বাঁক অতিক্রম করছে, সে অবস্থায় একটি নৈরাজ্যময় জনপ্রশাসন পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে সুখকর কোনো অভিজ্ঞতা উপহার দিতে পারবে না।
সুতরাং সিভিল সার্ভিসকে ফ্যাসিবাদ ও অন্যায় সংস্কৃতির কলঙ্ক থেকে মুক্ত করতে কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একই সঙ্গে কারো বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বা গোপনে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হলে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মকর্তার উপযুক্ত প্রতিকার প্রাপ্য। একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান আমলার অধিকার ও সম্মান রক্ষায় বিভাগীয় মুখপাত্রের মাধ্যমে মিডিয়াতে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ রাখা দরকার।
আমলাতন্ত্রের অপেশাদার ভূমিকায় দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রের চর্চা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চূড়ান্ত প্রমাণ হাসিনার শাসনকাল। ১৯৯৬ সালেও মহিউদ্দিন খান আলমগীরের নেতৃত্বে তথাকথিত জনতার মঞ্চে যোগদানের নামে আমলা বিদ্রোহ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের বিএনপি-বিরোধী ও আওয়ামীমুখী অবস্থান প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি আনুগত্যের বরখেলাপ করেছে।
সে ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কার্যকলাপের জন্য বিচ্ছিন্ন কিছু শাস্তির ঘটনা ছাড়া বোধগম্য সুষ্ঠু বিচার হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আগামী নির্বাচনে ক্ষমতার দাবিদার বিএনপি অতীতে বারবার প্রাসাদ-ষড়যন্ত্র বা আমলাতান্ত্রিক কুটনামির শিকার হয়েছে; যেমন ২০০১ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এলেও আমলাদের অতি-উৎসাহ এবং দলাদলি সরকারকে বিপাকে ফেলে দেয়।
২০২৪ সালের বিপ্লবের অন্যতম চেতনা ছিল অন্যায়-অবিচারের রাজত্বের অবসান। তাই বিদায়ের আগে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমলাতন্ত্রকে ঠিকঠাক করা। প্রস্তাবিত প্রশাসনিক সংস্কার সাধন এবং আজকের দূরদর্শী পদক্ষেপ নির্ধারণ করে দিতে পারে—জাতীয় পরিবর্তনে কতটা অনুঘটক হবে আমলাতন্ত্র।
তাহলে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে আমলাদের ব্যক্তিত্ব ও কাজের মানদণ্ড কী হবে—যোগ্যতা নাকি দলবাজি, পেশাদারত্ব নাকি তেলবাজি, সততা নাকি নীতিহীনতা, গণমুখিতা নাকি গোষ্ঠীপ্রীতি, জাতীয় স্বার্থের প্রাধান্য নাকি বিদেশি প্রভুদের তোষণ?
১৫ মাস আগেও এ-জাতীয় প্রশ্ন উত্থাপনের পরিবেশ ছিল না। ভবিষ্যতে হয়তো এ প্রশ্ন তোলা যাবে সহজেই, কিন্তু পরিবর্তনের ঐতিহাসিক সুযোগ খুব বেশি সময় থাকবে না, থাকেও না।
লেখক : সাংবাদিক
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১৯ ঘণ্টা আগেযখন অনুন্নত দেশের যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবী ব্যক্তিরা উন্নত দেশে স্থানান্তরিত হন, তখন এ ঘটনাকে ‘মেধা পাচার’ বা ‘ব্রেইন ড্রেন’ বলা হয়। নানা কারণে দেশ ত্যাগ করার বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের মতো একটি দেশের ক্ষেত্রে। অথচ জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের ‘বিশ্ব জনসংখ্যার অবস্থা প্রতিবেদন-২০২৫’-এ বাংলাদেশকে বর্তমান
১৯ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের অনেক গুণ থাকলেও, যে গুণটির বড্ড অভাব, তা হলো আত্মপর্যালোচনার অভ্যাস। কিন্তু এর জন্য পুরোপুরি তাদের দায়ী করা চলে না। কারণ, তাদের কর্মকাণ্ডের যারা দর্শক-শ্রোতা তথা (সু)ফলভোগী, অর্থাৎ আমাদের মতো আমজনতা, আমরা তাদের কাজকে সেটা ভুল হোক, ভালো হোক হাততালি দিয়ে আর প্রশংসায় ভ
১৯ ঘণ্টা আগেভারতও এই নিয়মের বাইরে নয়। তাই আমি আবার সেই প্রশ্নে ফিরে যাই : আমরা কি মুসলিম, নাকি মুজরিম (অপরাধী)? কেন আমাদের প্রতিদিন আসামির মতো বাঁচতে হবে, যখন খুনিরা অবাধে ঘুরে বেড়ায়? কেন আমাদের শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা মিডিয়া থেকে গায়েব করে ফেলা হয়, অথচ রাষ্ট্র স্বাধীনতার ‘অমৃতকাল’ উদযাপন করে?
১৯ ঘণ্টা আগে