ব্রি জে (অব.) এইচ আর এম রোকন উদ্দিন
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি নদী হচ্ছে ফেনী নদী। এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত। নদীতীরের সংকীর্ণ অঞ্চল বাংলাদেশে জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে এক গুরুতর কৌশলগত বিষয় হয়ে উঠেছে। ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলায় নদীর গতিপথ ও সীমান্ত লাইন এমনভাবে গঠিত হয়েছে, যেক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছু স্থানে জমির প্রস্থ মাত্র কয়েকশ মিটার, যা একদিকে ফেনী নদী, অপরদিকে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে সীমাবদ্ধ।
এই এলাকাটি স্পর্শকাতর, কিন্তু তার চেয়েও বেশি কৌশলগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। ভারতের দিক থেকে এই এলাকাটিকে সুরক্ষা দেওয়ার অজুহাতে নানা অবকাঠামো নির্মাণ, সীমান্তের নিকটবর্তী রাস্তা সম্প্রসারণ এবং পানি নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা স্পষ্টভাবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলছে।
কৌশলগত গুরুত্ব : একপাশে ফেনী নদী ও অন্যপাশে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, যা নিছক একটি সীমান্ত অঞ্চল মনে করলেই মারাত্মক ভুল হবে। এটি আসলে ‘প্রাকৃতিক কৌশলগত করিডোর’, যা একাধারে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা ও অর্থনৈতিক স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ।
এই করিডোর এমনভাবে গঠিত যে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের প্রস্থ কিছু স্থানে মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার। যেখান থেকে সহজেই চোরাচালান, অস্ত্রপাচার, অনুপ্রবেশ বা ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর আগ্রাসী তৎপরতা পরিচালনা করা যায়। সীমান্ত সুরক্ষায় জওয়ান মোতায়েন, নজরদারি ও টহল ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে, যদি সেখানে স্থায়ী উপস্থিতি না থাকে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বাংলাদেশের সামরিক, বাণিজ্যিক ও কৌশলগত দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই করিডোর ব্যবহার করা যেতে পারে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যেকোনো বাহিনী পুনঃমোতায়েন, রিজার্ভ মোবিলাইজেশন ও প্রতিরক্ষা পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে বিকল্প রুট হিসেবে যুদ্ধ বা দ্বন্দ্ব চলাকালে শক্তি পুনর্বিন্যাস ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য। ভারত যদি এই এলাকা কোনোভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়, তা হলে তারা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৌশলগত চাপ সৃষ্টি করতে পারবে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও যুদ্ধকালীন গতিশীলতা ব্যাহত করতে পারে।
ফেনী নদী শুধু একটি সীমানা নদী নয়, এটি পার্বত্য ও সমতল এলাকার সেচ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, স্থানীয় কৃষি উৎপাদনের প্রাণভোমরা এবং পানিপ্রবাহ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে একটি প্রাকৃতিক চ্যানেল। এই নদীসংলগ্ন জমি ভারত নিয়ন্ত্রণে নিলে তারা নদীর জলপ্রবাহ নিজেদের দিকে ফিরিয়ে নিতে পারে। এতে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ও পানির প্রাকৃতিক অধিকার ব্যাহত হবে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হবে, বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে পানির সংকট ও বর্ষাকালে প্লাবনের ঝুঁকি বাড়বে।
ত্রিপুরা রাজ্য হচ্ছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার। বাংলাদেশের এই করিডোরে একটি কার্যকর গোয়েন্দা নজরদারি ও মনিটরিং ব্যবস্থা স্থাপন করলে ত্রিপুরা ও এর সামরিক কার্যক্রমের ওপর বাংলাদেশ নজরদারি রাখতে পারে। এটি এমন একটি প্রাকৃতিক এলিভেটেড ভিউ পয়েন্ট প্রদান করে, যেখান থেকে ত্রিপুরার গুরুত্বপূর্ণ রেল, রাস্তা ও সামরিক ঘাঁটিগুলো নজরে রাখা যায়। কিন্তু যদি এই এলাকা ভারতীয় নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তাহলে সেই গোয়েন্দা সুবিধাটিও হারিয়ে যাবে এবং উল্টো বাংলাদেশকেই নজরদারির আওতায় আনা হবে।
এই করিডোর যদি ভারতীয় প্রভাবাধীন হয়ে যায় বা কোনো চুক্তির মাধ্যমে ভারতের ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ তার নিজস্ব ভূখণ্ডে আত্মরক্ষামূলক অবস্থান হারাবে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কৌশলগত ভারসাম্য পুরোপুরি ভারতের পক্ষে চলে যাবে এবং ভবিষ্যতে ভারত সহজেই বাণিজ্যিক বা সামরিক চাপে বাংলাদেশকে কোণঠাসা করতে পারবে। এটি কেবল একটি ভূমি নয়, এটি হচ্ছে বাংলাদেশের কৌশলগত সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ।
এই সংকীর্ণ করিডোর শুধু মানচিত্রের একটি রেখা নয়, এটি বাংলাদেশের আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, জল অধিকার ও কৌশলগত অবস্থানের কেন্দ্রবিন্দু। সময় এসেছে এই অঞ্চলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামরিক, কূটনৈতিক ও অবকাঠামোগত পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসা। একবার যদি এ জমি হাতছাড়া হয়, তবে কৌশলগতভাবে বাংলাদেশ দীর্ঘ মেয়াদে একতরফাভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে।
ভারতের কৌশলগত আগ্রহ : ভারত বিগত দুই দশকে ধারাবাহিক কৌশল অনুসরণ করে দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, প্রভাব বিস্তার ও আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ নিয়ন্ত্রণের একটি বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত, বিশেষত ফেনী নদীসংলগ্ন করিডোর এই বৃহৎ কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ভারতের জন্য এই এলাকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তার ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে মূল ভারত ভূখণ্ডের সংযোগ ও নিয়ন্ত্রণ রক্ষার দিক থেকে। ভারত ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় নিজস্ব অবকাঠামো নির্মাণে একতরফাভাবে অগ্রসর হচ্ছে। সড়ক নির্মাণ, ব্রিজ স্থাপন এবং বাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণের একটি অংশ রয়েছে সরাসরি বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে। এগুলোর মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতে চাইলে সামরিক সরঞ্জাম স্থানান্তর, সেনা মোতায়েন বা দ্রুত মোবিলাইজেশনের সুবিধা নিতে পারবে।
নদীসংলগ্ন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে একটি নিঃশব্দ অথচ শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ কৌশল। এই অবস্থান ভারতকে শুধু ভৌগোলিক সুবিধা নয়, বরং কৌশলগত প্রাধান্যও দেবে।
ফেনী করিডোর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য আদর্শ একটি এলাকা। ভারত চাইছে এই অঞ্চলকে একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বা মনিটরিং পোস্ট হিসেবে ব্যবহার করতে। এখানে স্থাপিত নজরদারি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তারা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সামরিক ঘাঁটি, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং লোকাল মুভমেন্ট পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। বেতার সংকেত (radio frequency), স্যাটেলাইট ফিড ও ইউএভি বা ড্রোন সার্ভিলিয়েন্স—সবই এই অঞ্চলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। এভাবে ভারত ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সক্রিয় উপস্থিতি বজায় রেখেছে। এই প্রেক্ষাপটে ফেনী করিডোর একটি আদর্শ ‘ফরওয়ার্ড অপারেটিং বেস (FOB)’ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এখান থেকে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজাতীয় গোষ্ঠী, নিপীড়িত জনগোষ্ঠী বা চোরাচালান চক্রকে টার্গেট করে রিক্রুটমেন্ট ও সন্ত্রাসে প্ররোচনা দিতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং বিভিন্ন এলাকায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। অতীতেও পার্বত্য চট্টগ্রামে জেএসএস, ইউপিডিএফ ও অন্যান্য গোষ্ঠীকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় সংস্থার বিরুদ্ধে।
পানি রাজনীতি : ২০১৯ সালে ভারতকে ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার সাব্রুম শহরের জন্য উত্তোলনের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ। এ ধরনের চুক্তি ভারতের পানি আধিপত্য নীতির অংশ, যেখানে তারা নদীর উজানে বাঁধ ও পানি প্রত্যাহারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পানিনির্ভরতায় ফেলছে।
ফেনী নদী নিয়ন্ত্রণে পেলে ভারত শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশে কৃত্রিম পানি সংকট, আর বর্ষায় প্লাবনের ঝুঁকি তৈরি করতে সক্ষম হবে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত চাইলে বাংলাদেশের ওপর পানি নিয়ন্ত্রণকে রাজনৈতিক চাপে রূপান্তর করতে পারে। এটি শুধুই হাইড্রোলজিক ইস্যু নয়, বরং একটি পূর্ণমাত্রার কৌশলগত অস্ত্র।
ভারতের ফেনী করিডোর নিয়ে আগ্রহ শুধু ভৌগোলিক নিরাপত্তা বা সীমান্ত স্থিতিশীলতার প্রশ্ন নয়, এটি একটি গভীরতর কৌশলগত পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে ভারত সীমান্ত অঞ্চলে সামরিক আধিপত্য, গোয়েন্দা নিয়ন্ত্রণ ও জল রাজনীতির সুবিধা একত্রে নিশ্চিত করতে চায়। বাংলাদেশ যদি তাৎক্ষণিকভাবে এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি, নজরদারি ও কূটনৈতিক প্রতিরোধ নিশ্চিত না করে, তাহলে ভবিষ্যতে এই করিডোর থেকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক ভারসাম্যকে সরাসরি হুমকির মুখে পড়তে হতে পারে।
বাংলাদেশের করণীয় : ফেনী নদীসংলগ্ন সংকীর্ণ সীমান্তভূমিতে বাংলাদেশকে ‘স্থায়ী ও দৃশ্যমান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা’ করতে হবে। এর আওতায় সেনাবাহিনীর একটি ফরোয়ার্ড কোম্পানি বা অন্তত প্লাটুন আকারের ঘাঁটি স্থাপন করা উচিত। এখানে নিয়োজিত বাহিনী শুধু প্রতিরক্ষা নয়, জাতীয় পতাকা ও সার্বভৌমত্বের স্থায়ী প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।
সীমান্ত ফ্ল্যাগ টাওয়ার, টহলপথ এবং নদীর পাড়ে মোবাইল চেকপোস্ট ও বাংকার নির্মাণ করতে হবে, যাতে অনুপ্রবেশ প্রতিহত করা ও তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেওয়া সম্ভব হয়। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সমন্বিত টহল ইউনিট গঠন করে সাপ্তাহিক রোটেশন চালু করা উচিত। এই এলাকায় শুধু বাহ্যিক উপস্থিতি নয়, গভীর গোয়েন্দা উপস্থিতি থাকা অপরিহার্য। স্থানীয় জনগোষ্ঠী (বিশেষত কৃষক, মাঝি ও সীমান্তবাসী) ও প্রশাসনের মাধ্যমে মানব গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। ড্রোন, থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা ও মোবাইল নজরদারি টাওয়ার দিয়ে নদীর গতিপথ, ভারতীয় সীমানা ও সন্দেহজনক স্থানে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালু করা উচিত।
সেনাবাহিনীর অধীনে একটি ‘ফেনী করিডোর ইন্টেলিজেন্স সেল’ গঠন করে সেখানে ডিজিটাল মনিটরিং, সামাজিক মিডিয়া ট্র্যাকিং ও স্থানীয় তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। সীমান্ত সুরক্ষা শুধু বাহিনী মোতায়েন নয়, বরং প্রতিরক্ষা-উপযোগী অবকাঠামো গড়ে তোলাও অপরিহার্য। নদীর পাশে আধুনিক কাঁচা-পাকা সড়ক, সেতু ও জরুরি রুট তৈরি করতে হবে, যাতে যুদ্ধকালীন বা দুর্যোগকালে দ্রুত বাহিনী মোতায়েন ও লোকজন স্থানান্তর করা যায়। স্থায়ী হেলিপ্যাড, মোবাইল মেডিকেল ইউনিট ও জ্বালানি বা রসদ সরবরাহ কেন্দ্র তৈরি করতে হবে, যা যুদ্ধকালীন জরুরি প্রয়োজন মেটাতে পারবে। স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে, যাতে চরম উত্তেজনার সময়েও শান্তিপূর্ণভাবে সরে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।
একতরফাভাবে ভারতের নির্মাণকাজ ও উপস্থিতি বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক আইন এবং দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত সম্মতির লঙ্ঘন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদপত্র দেওয়া উচিত। দুই দেশের সীমান্ত রক্ষা সমন্বয় কমিটির (BGB-BSF Coordination) নিয়মিত বৈঠকে এই বিষয়গুলো তোলা উচিত, যাতে পরবর্তী সময়ে অজুহাত দেওয়া না যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারসাম্য চায়, এমন রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে এই ইস্যুতে স্ট্র্যাটেজিক আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে কৌশলগত অবস্থান তৈরি করতে না পারলে ভারত এই অনুপ্রবেশকে ভবিষ্যতের ‘নর্মালাইজড রিয়েলিটি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলবে।
ফেনী নদীসংলগ্ন সীমান্তবর্তী সংকীর্ণ করিডোরটি আপাতদৃষ্টিতে ছোট একটি সীমান্ত অঞ্চল হলেও এর কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধু সীমান্ত রক্ষা নয়, বরং বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব ও প্রতিরক্ষা নিরাপত্তার এক স্পর্শকাতর মূলচাবি। ভারতের ক্রমাগত আগ্রাসী কৌশল, একতরফা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও গোয়েন্দা তৎপরতা এই অঞ্চলটিকে এক নতুন হুমকিতে পরিণত করেছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি নদী হচ্ছে ফেনী নদী। এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত। নদীতীরের সংকীর্ণ অঞ্চল বাংলাদেশে জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে এক গুরুতর কৌশলগত বিষয় হয়ে উঠেছে। ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলায় নদীর গতিপথ ও সীমান্ত লাইন এমনভাবে গঠিত হয়েছে, যেক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছু স্থানে জমির প্রস্থ মাত্র কয়েকশ মিটার, যা একদিকে ফেনী নদী, অপরদিকে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে সীমাবদ্ধ।
এই এলাকাটি স্পর্শকাতর, কিন্তু তার চেয়েও বেশি কৌশলগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। ভারতের দিক থেকে এই এলাকাটিকে সুরক্ষা দেওয়ার অজুহাতে নানা অবকাঠামো নির্মাণ, সীমান্তের নিকটবর্তী রাস্তা সম্প্রসারণ এবং পানি নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা স্পষ্টভাবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলছে।
কৌশলগত গুরুত্ব : একপাশে ফেনী নদী ও অন্যপাশে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, যা নিছক একটি সীমান্ত অঞ্চল মনে করলেই মারাত্মক ভুল হবে। এটি আসলে ‘প্রাকৃতিক কৌশলগত করিডোর’, যা একাধারে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা ও অর্থনৈতিক স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ।
এই করিডোর এমনভাবে গঠিত যে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের প্রস্থ কিছু স্থানে মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার। যেখান থেকে সহজেই চোরাচালান, অস্ত্রপাচার, অনুপ্রবেশ বা ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর আগ্রাসী তৎপরতা পরিচালনা করা যায়। সীমান্ত সুরক্ষায় জওয়ান মোতায়েন, নজরদারি ও টহল ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে, যদি সেখানে স্থায়ী উপস্থিতি না থাকে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বাংলাদেশের সামরিক, বাণিজ্যিক ও কৌশলগত দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই করিডোর ব্যবহার করা যেতে পারে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যেকোনো বাহিনী পুনঃমোতায়েন, রিজার্ভ মোবিলাইজেশন ও প্রতিরক্ষা পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে বিকল্প রুট হিসেবে যুদ্ধ বা দ্বন্দ্ব চলাকালে শক্তি পুনর্বিন্যাস ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য। ভারত যদি এই এলাকা কোনোভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়, তা হলে তারা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৌশলগত চাপ সৃষ্টি করতে পারবে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও যুদ্ধকালীন গতিশীলতা ব্যাহত করতে পারে।
ফেনী নদী শুধু একটি সীমানা নদী নয়, এটি পার্বত্য ও সমতল এলাকার সেচ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, স্থানীয় কৃষি উৎপাদনের প্রাণভোমরা এবং পানিপ্রবাহ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে একটি প্রাকৃতিক চ্যানেল। এই নদীসংলগ্ন জমি ভারত নিয়ন্ত্রণে নিলে তারা নদীর জলপ্রবাহ নিজেদের দিকে ফিরিয়ে নিতে পারে। এতে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ও পানির প্রাকৃতিক অধিকার ব্যাহত হবে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হবে, বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে পানির সংকট ও বর্ষাকালে প্লাবনের ঝুঁকি বাড়বে।
ত্রিপুরা রাজ্য হচ্ছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার। বাংলাদেশের এই করিডোরে একটি কার্যকর গোয়েন্দা নজরদারি ও মনিটরিং ব্যবস্থা স্থাপন করলে ত্রিপুরা ও এর সামরিক কার্যক্রমের ওপর বাংলাদেশ নজরদারি রাখতে পারে। এটি এমন একটি প্রাকৃতিক এলিভেটেড ভিউ পয়েন্ট প্রদান করে, যেখান থেকে ত্রিপুরার গুরুত্বপূর্ণ রেল, রাস্তা ও সামরিক ঘাঁটিগুলো নজরে রাখা যায়। কিন্তু যদি এই এলাকা ভারতীয় নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তাহলে সেই গোয়েন্দা সুবিধাটিও হারিয়ে যাবে এবং উল্টো বাংলাদেশকেই নজরদারির আওতায় আনা হবে।
এই করিডোর যদি ভারতীয় প্রভাবাধীন হয়ে যায় বা কোনো চুক্তির মাধ্যমে ভারতের ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ তার নিজস্ব ভূখণ্ডে আত্মরক্ষামূলক অবস্থান হারাবে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কৌশলগত ভারসাম্য পুরোপুরি ভারতের পক্ষে চলে যাবে এবং ভবিষ্যতে ভারত সহজেই বাণিজ্যিক বা সামরিক চাপে বাংলাদেশকে কোণঠাসা করতে পারবে। এটি কেবল একটি ভূমি নয়, এটি হচ্ছে বাংলাদেশের কৌশলগত সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ।
এই সংকীর্ণ করিডোর শুধু মানচিত্রের একটি রেখা নয়, এটি বাংলাদেশের আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, জল অধিকার ও কৌশলগত অবস্থানের কেন্দ্রবিন্দু। সময় এসেছে এই অঞ্চলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামরিক, কূটনৈতিক ও অবকাঠামোগত পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসা। একবার যদি এ জমি হাতছাড়া হয়, তবে কৌশলগতভাবে বাংলাদেশ দীর্ঘ মেয়াদে একতরফাভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে।
ভারতের কৌশলগত আগ্রহ : ভারত বিগত দুই দশকে ধারাবাহিক কৌশল অনুসরণ করে দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, প্রভাব বিস্তার ও আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ নিয়ন্ত্রণের একটি বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত, বিশেষত ফেনী নদীসংলগ্ন করিডোর এই বৃহৎ কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ভারতের জন্য এই এলাকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তার ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে মূল ভারত ভূখণ্ডের সংযোগ ও নিয়ন্ত্রণ রক্ষার দিক থেকে। ভারত ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় নিজস্ব অবকাঠামো নির্মাণে একতরফাভাবে অগ্রসর হচ্ছে। সড়ক নির্মাণ, ব্রিজ স্থাপন এবং বাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণের একটি অংশ রয়েছে সরাসরি বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে। এগুলোর মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতে চাইলে সামরিক সরঞ্জাম স্থানান্তর, সেনা মোতায়েন বা দ্রুত মোবিলাইজেশনের সুবিধা নিতে পারবে।
নদীসংলগ্ন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে একটি নিঃশব্দ অথচ শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ কৌশল। এই অবস্থান ভারতকে শুধু ভৌগোলিক সুবিধা নয়, বরং কৌশলগত প্রাধান্যও দেবে।
ফেনী করিডোর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য আদর্শ একটি এলাকা। ভারত চাইছে এই অঞ্চলকে একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বা মনিটরিং পোস্ট হিসেবে ব্যবহার করতে। এখানে স্থাপিত নজরদারি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তারা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সামরিক ঘাঁটি, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং লোকাল মুভমেন্ট পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। বেতার সংকেত (radio frequency), স্যাটেলাইট ফিড ও ইউএভি বা ড্রোন সার্ভিলিয়েন্স—সবই এই অঞ্চলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। এভাবে ভারত ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সক্রিয় উপস্থিতি বজায় রেখেছে। এই প্রেক্ষাপটে ফেনী করিডোর একটি আদর্শ ‘ফরওয়ার্ড অপারেটিং বেস (FOB)’ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এখান থেকে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজাতীয় গোষ্ঠী, নিপীড়িত জনগোষ্ঠী বা চোরাচালান চক্রকে টার্গেট করে রিক্রুটমেন্ট ও সন্ত্রাসে প্ররোচনা দিতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং বিভিন্ন এলাকায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। অতীতেও পার্বত্য চট্টগ্রামে জেএসএস, ইউপিডিএফ ও অন্যান্য গোষ্ঠীকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় সংস্থার বিরুদ্ধে।
পানি রাজনীতি : ২০১৯ সালে ভারতকে ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার সাব্রুম শহরের জন্য উত্তোলনের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ। এ ধরনের চুক্তি ভারতের পানি আধিপত্য নীতির অংশ, যেখানে তারা নদীর উজানে বাঁধ ও পানি প্রত্যাহারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পানিনির্ভরতায় ফেলছে।
ফেনী নদী নিয়ন্ত্রণে পেলে ভারত শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশে কৃত্রিম পানি সংকট, আর বর্ষায় প্লাবনের ঝুঁকি তৈরি করতে সক্ষম হবে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত চাইলে বাংলাদেশের ওপর পানি নিয়ন্ত্রণকে রাজনৈতিক চাপে রূপান্তর করতে পারে। এটি শুধুই হাইড্রোলজিক ইস্যু নয়, বরং একটি পূর্ণমাত্রার কৌশলগত অস্ত্র।
ভারতের ফেনী করিডোর নিয়ে আগ্রহ শুধু ভৌগোলিক নিরাপত্তা বা সীমান্ত স্থিতিশীলতার প্রশ্ন নয়, এটি একটি গভীরতর কৌশলগত পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে ভারত সীমান্ত অঞ্চলে সামরিক আধিপত্য, গোয়েন্দা নিয়ন্ত্রণ ও জল রাজনীতির সুবিধা একত্রে নিশ্চিত করতে চায়। বাংলাদেশ যদি তাৎক্ষণিকভাবে এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি, নজরদারি ও কূটনৈতিক প্রতিরোধ নিশ্চিত না করে, তাহলে ভবিষ্যতে এই করিডোর থেকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক ভারসাম্যকে সরাসরি হুমকির মুখে পড়তে হতে পারে।
বাংলাদেশের করণীয় : ফেনী নদীসংলগ্ন সংকীর্ণ সীমান্তভূমিতে বাংলাদেশকে ‘স্থায়ী ও দৃশ্যমান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা’ করতে হবে। এর আওতায় সেনাবাহিনীর একটি ফরোয়ার্ড কোম্পানি বা অন্তত প্লাটুন আকারের ঘাঁটি স্থাপন করা উচিত। এখানে নিয়োজিত বাহিনী শুধু প্রতিরক্ষা নয়, জাতীয় পতাকা ও সার্বভৌমত্বের স্থায়ী প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।
সীমান্ত ফ্ল্যাগ টাওয়ার, টহলপথ এবং নদীর পাড়ে মোবাইল চেকপোস্ট ও বাংকার নির্মাণ করতে হবে, যাতে অনুপ্রবেশ প্রতিহত করা ও তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেওয়া সম্ভব হয়। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সমন্বিত টহল ইউনিট গঠন করে সাপ্তাহিক রোটেশন চালু করা উচিত। এই এলাকায় শুধু বাহ্যিক উপস্থিতি নয়, গভীর গোয়েন্দা উপস্থিতি থাকা অপরিহার্য। স্থানীয় জনগোষ্ঠী (বিশেষত কৃষক, মাঝি ও সীমান্তবাসী) ও প্রশাসনের মাধ্যমে মানব গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। ড্রোন, থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা ও মোবাইল নজরদারি টাওয়ার দিয়ে নদীর গতিপথ, ভারতীয় সীমানা ও সন্দেহজনক স্থানে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালু করা উচিত।
সেনাবাহিনীর অধীনে একটি ‘ফেনী করিডোর ইন্টেলিজেন্স সেল’ গঠন করে সেখানে ডিজিটাল মনিটরিং, সামাজিক মিডিয়া ট্র্যাকিং ও স্থানীয় তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। সীমান্ত সুরক্ষা শুধু বাহিনী মোতায়েন নয়, বরং প্রতিরক্ষা-উপযোগী অবকাঠামো গড়ে তোলাও অপরিহার্য। নদীর পাশে আধুনিক কাঁচা-পাকা সড়ক, সেতু ও জরুরি রুট তৈরি করতে হবে, যাতে যুদ্ধকালীন বা দুর্যোগকালে দ্রুত বাহিনী মোতায়েন ও লোকজন স্থানান্তর করা যায়। স্থায়ী হেলিপ্যাড, মোবাইল মেডিকেল ইউনিট ও জ্বালানি বা রসদ সরবরাহ কেন্দ্র তৈরি করতে হবে, যা যুদ্ধকালীন জরুরি প্রয়োজন মেটাতে পারবে। স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে, যাতে চরম উত্তেজনার সময়েও শান্তিপূর্ণভাবে সরে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।
একতরফাভাবে ভারতের নির্মাণকাজ ও উপস্থিতি বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক আইন এবং দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত সম্মতির লঙ্ঘন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদপত্র দেওয়া উচিত। দুই দেশের সীমান্ত রক্ষা সমন্বয় কমিটির (BGB-BSF Coordination) নিয়মিত বৈঠকে এই বিষয়গুলো তোলা উচিত, যাতে পরবর্তী সময়ে অজুহাত দেওয়া না যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারসাম্য চায়, এমন রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে এই ইস্যুতে স্ট্র্যাটেজিক আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে কৌশলগত অবস্থান তৈরি করতে না পারলে ভারত এই অনুপ্রবেশকে ভবিষ্যতের ‘নর্মালাইজড রিয়েলিটি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলবে।
ফেনী নদীসংলগ্ন সীমান্তবর্তী সংকীর্ণ করিডোরটি আপাতদৃষ্টিতে ছোট একটি সীমান্ত অঞ্চল হলেও এর কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধু সীমান্ত রক্ষা নয়, বরং বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব ও প্রতিরক্ষা নিরাপত্তার এক স্পর্শকাতর মূলচাবি। ভারতের ক্রমাগত আগ্রাসী কৌশল, একতরফা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও গোয়েন্দা তৎপরতা এই অঞ্চলটিকে এক নতুন হুমকিতে পরিণত করেছে।
এই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশে দুটি নাম বোধ করি স্বাধীনতাকামী প্রতিটি মানুষের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত। এর একটি নামের মানুষের লোভ ও বিশ্বাসঘাতকতায় আঠারো শতকে বাংলা-বিহার-ওড়িশার স্বাধীনতা সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার থেকে আসা ব্রিটিশ বেনিয়াদের করতলগত হয়।
১৪ ঘণ্টা আগেগণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরাজিত হয়ে গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা পালিয়ে যাওয়ার পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বরেণ্য ব্যক্তি বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ব্যক্তি ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ১/১১-খ্যাত বিশেষ সরকারের দুই বছর এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের
১৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের বর্ষা বিপ্লব ফ্যাসিবাদবিরোধী এক ঐতিহাসিক জাতীয় ঐক্যের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। সহস্রাধিক তরুণ ছাত্র-জনতার শাহাদতের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় হেজেমনির মিলিত জোয়াল থেকে স্বদেশভূমিকে মুক্ত করতে পেরেছিলাম। জনগণের প্রত্যাশা ছিল, প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষের সমন্বয়ে গঠিত
১৫ ঘণ্টা আগেছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এখন বছর অতিক্রান্ত হয়নি। এর মধ্যে ফ্যাসিবাদের সফট পাওয়ারগুলো সরব হয়ে উঠেছে।
২ দিন আগে