ড. এম এন আলম
সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত তিন মাসে প্রায় ১১০ শতাংশ পর্যন্ত ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসসহ বিভিন্ন ইউটিলিটির মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্ববাজারে কাঁচামাল, মার্কেটিং খরচসহ ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছে।
দেশে ওষুধের বাজার প্রায় ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকার। ৩১০টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ৪ হাজার ১৮০টি জেনেরিকের ৩৫ হাজার ২৯০টি ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন করে থাকে। এর মধ্যে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের ১১৭টি জেনেরিকের ওষুধের দাম ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাকি সব ওষুধের মূল্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো নির্ধারণ করে ভ্যাট প্রদানের নিমিত্তে অধিদপ্তরে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে থাকে।
ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২ মোতাবেক এত দিন পর্যন্ত সব ওষুধের দাম সরকার নিয়ন্ত্রণ করত। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ কোম্পানিগুলোর চাহিদা মোতাবেক যুগান্তকারী ওষুধ আইনটি পরিবর্তন করে সংসদে ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩ পাস করে। ওই আইনের ৩০(১)(২) ধারার বিধান মোতাবেক শুধু গেজেটে প্রকাশিত তালিকাভুক্ত ওষুধগুলোর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ফলে তালিকাভুক্ত ১১৭টি জেরেনিকের বাইরে থাকা অ্যান্টিবায়োটিকসহ বাকি হাজার হাজার মূল্যবান ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা হারায় সরকার। এতে কোম্পানিগুলোর মনোপলি বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং তারা প্রতিদিন ইচ্ছামতো ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা করে আসছে। তাই বর্তমান বিপ্লবী সরকারের অনতিবিলম্বে আইনের ৩০(১)(২) ধারা স্থগিত করা উচিত।
ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল, লেবেল কার্টুন, মোড়কসামগ্রী এবং মার্কেটিং খাতে উল্লেখযোগ্য অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে। কোম্পানিগুলো গেটআপ আকর্ষণীয় করতে চকচকে মোড়কে ওষুধ বাজারজাত করে থাকে। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে মোড়কসামগ্রীর চাকচিক্য পরিহার করে দাম কমাতে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছিলেনÑ‘মানুষ প্যাকেট খাবে নাকি ওষুধ খাবে?’ তাই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালসহ বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ১০০ ওষুধের বক্সের পরিবর্তে এক হাজার ট্যাবলেট/ক্যাপসুলের টিন বা প্লাস্টিক কনটেইনারে সরবরাহ করা হলে প্যাকেজিং খাতে খরচ অনেকাংশে কমে যাবে।
প্রায় সব কোম্পানি মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের (এমআর) মাধ্যমে মার্কেটিং করে থাকে। শুধু জেলা বা উপজেলা নয়, এমনকি গ্রামের বড় বাজারে পর্যন্ত কোম্পানির মার্কেটিং নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। যার সংখ্যা কয়েক লাখ। এসব জনবলের বেতন-ভাতা, মোটরসাইকেলের জ্বালানি উৎপাদিত ওষুধের মূল্যের সঙ্গে মার্কেটিং খরচ হিসেবে সমন্বয় করা হয়ে থাকে।
আধুনিক প্রযুক্তির এআইয়ের যুগে এখন বিয়ের দাওয়াত কার্ড ও ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো হয়। তাই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসকদের নিকট কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত ওষুধের প্রচার-প্রচারণা সহজেই করতে পারে। ফলে মার্কেটিং খরচের বিরাট অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় হতে পারে, যা ওষুধের দাম বহুলাংশে কমাতে সহায়ক হবে।
ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারদের ফ্ল্যাট, গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণসহ নানা ধরনের উপহারসামগ্রী দিয়ে তাদের ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন বলে দীর্ঘদিনের পুরোনো অভিযোগ রয়েছে। যার ব্যয়ভার ভোক্তাকে উচ্চমূল্যে কেনার মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। উপঢৌকন দেওয়ার এই প্রথা বন্ধ করা গেলে দাম ৩০ শতাংশ কমে যাবে বলে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানা যায়। উন্নতবিশ্বের মতো ট্রেডনামের পরিবর্তে জেনেরিক নাম (সব কোম্পানির ওষুধের একই নাম হবে যেমন প্যারাসিটামল) প্রেসক্রিপশন করার বিধান করা যেতে পারে। ফলে কোম্পানিগুলোয় মার্কেটিংয়ের অসুস্থ প্রতিযোগিতা (আনিথিক্যাল প্র্যাক্টিস) বন্ধ হবে এবং ওষুধের দাম অনেকাংশে কমে আসবে।
বিগত আওয়ামী সরকারের খুন, গুম, অন্যায়-দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে পুলিশ সংস্কার কমিশন, গুম কমিশনসহ বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হলেও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বর্তমান বিপ্লবী সরকারের দৃশ্যমান কার্যকর কোনো ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাই ওষুধের বাজারে নৈরাজ্য চলছেই। এমতাবস্থায় অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে প্রণীত ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩-এর ৩০(১)(২) ধারা স্থগিত করে সব অংশীজন ও খাত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উন্নত বিশ্বের আদলে মূল্য নির্ধারণ কমিশন গঠন করে জনসাধারণের জন্য ন্যায্যমূল্যে মানসম্মত ওষুধপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা হোক।
লেখক : সাবেক উপপরিচালক ও আইন কর্মকর্তা, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর
সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত তিন মাসে প্রায় ১১০ শতাংশ পর্যন্ত ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসসহ বিভিন্ন ইউটিলিটির মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্ববাজারে কাঁচামাল, মার্কেটিং খরচসহ ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছে।
দেশে ওষুধের বাজার প্রায় ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকার। ৩১০টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ৪ হাজার ১৮০টি জেনেরিকের ৩৫ হাজার ২৯০টি ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন করে থাকে। এর মধ্যে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের ১১৭টি জেনেরিকের ওষুধের দাম ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাকি সব ওষুধের মূল্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো নির্ধারণ করে ভ্যাট প্রদানের নিমিত্তে অধিদপ্তরে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে থাকে।
ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২ মোতাবেক এত দিন পর্যন্ত সব ওষুধের দাম সরকার নিয়ন্ত্রণ করত। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ কোম্পানিগুলোর চাহিদা মোতাবেক যুগান্তকারী ওষুধ আইনটি পরিবর্তন করে সংসদে ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩ পাস করে। ওই আইনের ৩০(১)(২) ধারার বিধান মোতাবেক শুধু গেজেটে প্রকাশিত তালিকাভুক্ত ওষুধগুলোর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ফলে তালিকাভুক্ত ১১৭টি জেরেনিকের বাইরে থাকা অ্যান্টিবায়োটিকসহ বাকি হাজার হাজার মূল্যবান ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা হারায় সরকার। এতে কোম্পানিগুলোর মনোপলি বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং তারা প্রতিদিন ইচ্ছামতো ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা করে আসছে। তাই বর্তমান বিপ্লবী সরকারের অনতিবিলম্বে আইনের ৩০(১)(২) ধারা স্থগিত করা উচিত।
ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল, লেবেল কার্টুন, মোড়কসামগ্রী এবং মার্কেটিং খাতে উল্লেখযোগ্য অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে। কোম্পানিগুলো গেটআপ আকর্ষণীয় করতে চকচকে মোড়কে ওষুধ বাজারজাত করে থাকে। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে মোড়কসামগ্রীর চাকচিক্য পরিহার করে দাম কমাতে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছিলেনÑ‘মানুষ প্যাকেট খাবে নাকি ওষুধ খাবে?’ তাই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালসহ বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ১০০ ওষুধের বক্সের পরিবর্তে এক হাজার ট্যাবলেট/ক্যাপসুলের টিন বা প্লাস্টিক কনটেইনারে সরবরাহ করা হলে প্যাকেজিং খাতে খরচ অনেকাংশে কমে যাবে।
প্রায় সব কোম্পানি মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের (এমআর) মাধ্যমে মার্কেটিং করে থাকে। শুধু জেলা বা উপজেলা নয়, এমনকি গ্রামের বড় বাজারে পর্যন্ত কোম্পানির মার্কেটিং নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। যার সংখ্যা কয়েক লাখ। এসব জনবলের বেতন-ভাতা, মোটরসাইকেলের জ্বালানি উৎপাদিত ওষুধের মূল্যের সঙ্গে মার্কেটিং খরচ হিসেবে সমন্বয় করা হয়ে থাকে।
আধুনিক প্রযুক্তির এআইয়ের যুগে এখন বিয়ের দাওয়াত কার্ড ও ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো হয়। তাই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসকদের নিকট কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত ওষুধের প্রচার-প্রচারণা সহজেই করতে পারে। ফলে মার্কেটিং খরচের বিরাট অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় হতে পারে, যা ওষুধের দাম বহুলাংশে কমাতে সহায়ক হবে।
ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারদের ফ্ল্যাট, গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণসহ নানা ধরনের উপহারসামগ্রী দিয়ে তাদের ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন বলে দীর্ঘদিনের পুরোনো অভিযোগ রয়েছে। যার ব্যয়ভার ভোক্তাকে উচ্চমূল্যে কেনার মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। উপঢৌকন দেওয়ার এই প্রথা বন্ধ করা গেলে দাম ৩০ শতাংশ কমে যাবে বলে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানা যায়। উন্নতবিশ্বের মতো ট্রেডনামের পরিবর্তে জেনেরিক নাম (সব কোম্পানির ওষুধের একই নাম হবে যেমন প্যারাসিটামল) প্রেসক্রিপশন করার বিধান করা যেতে পারে। ফলে কোম্পানিগুলোয় মার্কেটিংয়ের অসুস্থ প্রতিযোগিতা (আনিথিক্যাল প্র্যাক্টিস) বন্ধ হবে এবং ওষুধের দাম অনেকাংশে কমে আসবে।
বিগত আওয়ামী সরকারের খুন, গুম, অন্যায়-দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে পুলিশ সংস্কার কমিশন, গুম কমিশনসহ বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হলেও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বর্তমান বিপ্লবী সরকারের দৃশ্যমান কার্যকর কোনো ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাই ওষুধের বাজারে নৈরাজ্য চলছেই। এমতাবস্থায় অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে প্রণীত ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩-এর ৩০(১)(২) ধারা স্থগিত করে সব অংশীজন ও খাত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উন্নত বিশ্বের আদলে মূল্য নির্ধারণ কমিশন গঠন করে জনসাধারণের জন্য ন্যায্যমূল্যে মানসম্মত ওষুধপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা হোক।
লেখক : সাবেক উপপরিচালক ও আইন কর্মকর্তা, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে