আবদুল লতিফ মাসুম
বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের জন্য অবশেষে যথার্থ অর্থেই একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ যাত্রা শুরু করেছে। জুলাই বিপ্লবের ফলে যে সামগ্রিক রাষ্ট্র সংস্কারের জন-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়, তারই প্রথম ধাপ হিসেবে এটি চিহ্নিত হয়েছে। এ উদ্যোগকে সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস। অপর দিকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সংস্কারের পথে প্রারম্ভিক পর্ব বলে গ্রহণ করেছে। এত দিন ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিপক্ষে ক্ষমতার খায়েসের যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল, এখন এই কমিশনের শুভ যাত্রাকে তারা শুভ সূচনা বলেই গ্রহণ করছেন। প্রধান উপদেষ্টা গত শনিবার প্রায় সব রাজনৈতিক দলগুলোর উপস্থিতিতে ঐকমত্য সংলাপের প্রাথমিক বৈঠকটি করেন। এতে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৈঠকে ছিলেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ ২৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম অধ্যায় বা প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছে। প্রথম পর্ব ছিল প্রস্তুতি পর্ব, আজ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক সংলাপ শুরুর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুভ সূচনা হলো। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় ঐকমত্যে যে প্রয়াস শুরু করেছে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তার একটি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য (National Consensus) হলো একটি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক গোষ্ঠী ও নাগরিকদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুগুলোর ওপর সাধারণভাবে সম্মত মতামত বা নীতির ভিত্তি তৈরি হওয়া। এটি সাধারণত বৃহত্তর স্বার্থে বিভাজন ও মতপার্থক্য ভুলে গিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি বোঝায়। প্রকৃত অর্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সেই কাজটিই শুরু করেছেন। যদিও বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র (Nation State) হিসেবে ভাগ্যবান এই কারণে যে, এখানে সমগোত্রীয়তাবোধ (Homogeneousness) এতটাই প্রবল যে, স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র শক্তপোক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু অস্বাভাবিক ঘটনা এই যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল তথা রাজনৈতিক এলিটরা তাদের নিজ নিজ ক্ষমতার স্বার্থে কৃত্রিম এমন বিভাজন সৃষ্টি করেছেন যে, যা কখনো কখনো রক্তক্ষরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭১ সালে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ, সার্থক ও সফল করার জন্য মওলানা ভাসানী জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ভেদাভেদ, দল ও স্বার্থসুবিধা ভুলে গিয়ে সব মত ও পথের মানুষকে একত্র করে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। কিন্তু ক্ষমতালোভী আওয়ামী লীগ এবং এর আত্মম্ভরী নেতৃত্ব জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকে নাকচ করে দেয়। এরপর যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। অনৈক্য, অরাজকতা ও অবিশ্বাসের পরিণামে দেশ হয়েছে বিভক্ত। তারা বানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি ও বিপক্ষ শক্তি। তারা আমলাতন্ত্রকে বিভাজন করেছে ‘মুজিব নগরীয়’ বনাম ‘অমুজিব নগরীয়’ হিসেবে। সেনাবাহিনীকে বিভক্ত করেছে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তান ফেরত বাহিনী হিসেবে। অবশেষে আরোপিত হয়েছে ‘এক নেতা এক দেশ’-এর কাহিনি। এরপর নিপাতনে সিদ্ধ ঘটনার মতো একজন সৈনিক রাজনীতিবিদ জিয়াউর রহমান জাতীয় ঐকমত্যের লক্ষ্যে সব ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিয়ে জাতিকে এক ও অভিন্ন সোপানে দাঁড় করিয়েছেন। সেই অর্জনটি আবারও ভূলুণ্ঠিত হয়েছে জাতীয়তাবাদী শক্তি ও ইসলামি শক্তির বিভাজনে।
১৯৯৬ সালে ষড়যন্ত্র ও প্রতারণার মাধ্যমে তারা প্রতিষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্যকে বিনষ্ট করে দেয়। ২০০১ সালে জাতীয় ঐকমত্যের প্রতিফলন দেখা গেলেও থেমে যায়নি আওয়ামী ষড়যন্ত্র। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে ১/১১-র নাটকীয় ঘটনাবলি ঘটে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় আসেনি, বরং একটি প্যাকেজ ডিলের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় আনা হয়েছে। ক্ষমতায় আসার শুরু থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তারা জাতীয় ঐকমত্যকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছে। জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে সৃষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে এই কারণে যে, তারা জানত মানুষের ভোটে কোনোকালে, কোনোভাবে তাদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান জাতীয় ঐক্যের যে সাধারণ সূত্র প্রতিষ্ঠিত করেন, তারা তা বিতর্কিত বাঙালি জাতিসত্তায় বিলীন করে দেয়। অবশেষে এর অনিবার্য ফলেই আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় গোটা জাতির বুকে থাকা জগদ্দল পাথর অপসারিত হয়। অর্জিত হয় ১৯৭১ সালে অর্জিত স্বাধীনতার মতো জাতীয় ঐক্য। বাংলাদেশের সব মানুষ—ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, কর্মচারী-কর্মকর্তা, কুলি-মজুর, কিশোর-যুবা ও পরিবার-পরিজন সবাই একসঙ্গে নেমে আসে রাজপথে। সমসাময়িক পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের জাতীয় ঐক্যের ঘটনা বিরল। জুলাই বিপ্লবের এই দৃঢ় জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই জাতির একজন পুরোধা পুরুষ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে দাঁড়ান। আপামর জনসাধারণ তাকে আন্তরিক সমর্থন জানায়। সময় যতই বয়ে যায় ততই শিথিল হতে থাকে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি।
বাংলাদেশের জনচরিত্র সম্পর্কে অতীতের ইতিহাস সুখকর কথা বলে না। যারা এরই মধ্যে আকবর আলি খানের সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘অবাক বাংলাদেশ : বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি’ পড়েছেন তারা এ সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা দিতে পারবেন। সম্রাট বাবর তার আত্মজীবনী ‘তোজক-ই বাবর’-এ লিখেছেন, ‘বাঙ্গাল নামে একটি দেশ আছে। সেখানে একজন পাগলও যদি লাফ দিয়ে বলে, আমি রাজা, তাহলে তার কিছু সমর্থক জুটে যায়।’ প্রাচীন এ বাংলার আরেকটি নাম ‘বুলখগ নগর’ অর্থাৎ চিরবিদ্রোহের দেশ। বাংলার সুবেদার সায়েস্তা খান নাকি ভাটা-জোয়ারের তামাশা দেখে লালবাগ দুর্গ অসমাপ্ত রেখেই দিল্লিতে প্রস্থান করেন। অর্থাৎ অতীতে ও বর্তমানে বাংলাদেশের বিচিত্র বিষয়-বৈশিষ্ট্যের রাজনীতিবিদদের একত্রিত করা—সে এক কঠিন কাজ। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘সেই কঠিনেরে’ ভালোবাসিলেন। অনেকেরই ধারণা সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরকার কিছুদিন নানাভাবে চেষ্টা করবে, শেষ পর্যন্ত সব বিষয়ে হয়তো ঐকমত্য হবে না। তখন সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে; কিন্তু অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্ট বললেন, অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারের প্রস্তাব চাপিয়ে দেওয়া হবে না। এই সরকার শুধু বোঝাবে—এমন সংস্কার কেন প্রয়োজন ও কীভাবে তা করা যায়। বাকি কাজটা করবে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সংস্কারটা যেন এমনভাবে হয়, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকে...। এমন মজবুতভাবে আইন-কানুন করব, যাতে সবাই মেনে চলে এবং এর মাধ্যমে একটা সুন্দর সমাজ তৈরি করা যায়।’
বাংলাদেশের জনচরিত্র সম্পর্কে আমরা দেখেছি, এরা শতধাবিভক্ত। রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যা বিবেচনা করলেই জনচরিত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এদেশে এমন অনেক রাজনৈতিক দল আছে, যারা শুধুই ব্যক্তিনির্ভর। স্বামী বিবেকানন্দের ‘যত মত তত পথে’ এরা বিশ্বাস করে, কিন্তু ‘শতফুল ফুটতে দিতে’ এরা নারাজ। এক ফুলের রূপে রসেই তারা আকুল-ব্যাকুল। গণতন্ত্রের অনিবার্য ভিত্তি যে বিভাজনের মধ্যে ঐক্য (Unity in Diversity), তা তারা ভুলে যায়। বাংলাদেশের কোন জাতীয় সংকট কোন রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে সমাধান হয়েছে, এমন নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্মরণ করা যেতে পারে, একজন দেশি রফিকুল হক ও বিদেশি কমনওয়েলথ প্রতিনিধি, কিংবা জাতিসংঘ মহাসচিব আমাদের দুই দলকে এক করতে পারেননি। সব সময়ই সব দল ও সব নেতৃত্ব ষড়যন্ত্রের কথা বলে আসছে। বলা হয়, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য অর্জন ‘সোনা ব্যাং এক পাল্লায় মাপা’র মতো অসম্ভব কাজ। তবুও আমাদের ব্যর্থ হলে চলবে না। রাজনৈতিক নেতারা জোর দিয়েই বলছেন, বিপ্লবোত্তর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থ হওয়ার মানেই হচ্ছে গোটা জাতির ব্যর্থতা। প্রথম সভা শেষে প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্ব আশার কথা বলেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা আশা করি খুব দ্রুত এই সরকারের যে ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি হবে, সেটার ওপর ভিত্তি করে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি এবং সব ইতিবাচক সিদ্ধান্তে জামায়াতে ইসলামী সমর্থন জানাবে। আমরা বলেছি, সংস্কার প্রয়োজন, সেই সংস্কারে আমরা একমত হই, তারপর যথাশীঘ্র সম্ভব নির্বাচন হবে।’ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জেনায়েদ সাকী বাস্তবতাকে স্বীকার করে বলেন, ‘মতপার্থক্য আছে বলেই ঐকমত্য তৈরি করতে হবে।’
আগেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র একটি সমগোত্রীয় বা সমজাতীয়তার দেশ। জাতি ও জাতীয়তা গঠনের জন্য যেসব অনিবার্য উপাদান ক্রীয়াশীল, যেমন—ভাষা, ধর্ম, নৃতত্ত্ব, রাজনীতি, অর্থনীতি, ভূগোল, ইতিহাস ও ভূমিরূপের মতো উপাদান। সেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রাকৃতিকভাবে ও জনবৈশিষ্ট্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ বাংলায় কথা বলে। ধর্মে এরা নিরঙ্কুশ, সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে মুসলিম। নৃতাত্ত্বিকভাবে তারা প্রায় সমগোত্রীয়। দু-চারজন পার্বত্য বা উপজাতির লোক আছে মাত্র। আমাদের রয়েছে বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি। সুজলা-সুফলা শস্যশ্যামলা এই সোনার বাংলা। আল্লাহর দেওয়া এই নেয়ামতকে অস্বীকার করে মতলববাজ রাজনীতিবিদরা আমাদের বিভাজিত করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে ইসলাম, জাতীয়তাবাদ ও বাম ধারাভিত্তিক ভাবাদর্শের সংঘাত। আওয়ামী আমলে এটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। বিএনপি আমলে সমঝোতা ও সংহতির পরিবেশ গড়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যে জাতীয় ঐকমত্যের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করছেন, সেটির পরিপূরক হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করবে, এটাই জনপ্রত্যাশা। আর জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের মর্মার্থও তাই। সুতরাং পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের ভাষায় বলি, ‘একতাই বল, ঐক্যই জীবন; সবার মাঝে বিভেদ নয়, চাই সম্মিলন।’
বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের জন্য অবশেষে যথার্থ অর্থেই একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ যাত্রা শুরু করেছে। জুলাই বিপ্লবের ফলে যে সামগ্রিক রাষ্ট্র সংস্কারের জন-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়, তারই প্রথম ধাপ হিসেবে এটি চিহ্নিত হয়েছে। এ উদ্যোগকে সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস। অপর দিকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সংস্কারের পথে প্রারম্ভিক পর্ব বলে গ্রহণ করেছে। এত দিন ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিপক্ষে ক্ষমতার খায়েসের যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল, এখন এই কমিশনের শুভ যাত্রাকে তারা শুভ সূচনা বলেই গ্রহণ করছেন। প্রধান উপদেষ্টা গত শনিবার প্রায় সব রাজনৈতিক দলগুলোর উপস্থিতিতে ঐকমত্য সংলাপের প্রাথমিক বৈঠকটি করেন। এতে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৈঠকে ছিলেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ ২৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম অধ্যায় বা প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছে। প্রথম পর্ব ছিল প্রস্তুতি পর্ব, আজ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক সংলাপ শুরুর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুভ সূচনা হলো। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় ঐকমত্যে যে প্রয়াস শুরু করেছে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তার একটি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য (National Consensus) হলো একটি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক গোষ্ঠী ও নাগরিকদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুগুলোর ওপর সাধারণভাবে সম্মত মতামত বা নীতির ভিত্তি তৈরি হওয়া। এটি সাধারণত বৃহত্তর স্বার্থে বিভাজন ও মতপার্থক্য ভুলে গিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি বোঝায়। প্রকৃত অর্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সেই কাজটিই শুরু করেছেন। যদিও বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র (Nation State) হিসেবে ভাগ্যবান এই কারণে যে, এখানে সমগোত্রীয়তাবোধ (Homogeneousness) এতটাই প্রবল যে, স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র শক্তপোক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু অস্বাভাবিক ঘটনা এই যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল তথা রাজনৈতিক এলিটরা তাদের নিজ নিজ ক্ষমতার স্বার্থে কৃত্রিম এমন বিভাজন সৃষ্টি করেছেন যে, যা কখনো কখনো রক্তক্ষরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭১ সালে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ, সার্থক ও সফল করার জন্য মওলানা ভাসানী জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ভেদাভেদ, দল ও স্বার্থসুবিধা ভুলে গিয়ে সব মত ও পথের মানুষকে একত্র করে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। কিন্তু ক্ষমতালোভী আওয়ামী লীগ এবং এর আত্মম্ভরী নেতৃত্ব জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকে নাকচ করে দেয়। এরপর যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। অনৈক্য, অরাজকতা ও অবিশ্বাসের পরিণামে দেশ হয়েছে বিভক্ত। তারা বানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি ও বিপক্ষ শক্তি। তারা আমলাতন্ত্রকে বিভাজন করেছে ‘মুজিব নগরীয়’ বনাম ‘অমুজিব নগরীয়’ হিসেবে। সেনাবাহিনীকে বিভক্ত করেছে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তান ফেরত বাহিনী হিসেবে। অবশেষে আরোপিত হয়েছে ‘এক নেতা এক দেশ’-এর কাহিনি। এরপর নিপাতনে সিদ্ধ ঘটনার মতো একজন সৈনিক রাজনীতিবিদ জিয়াউর রহমান জাতীয় ঐকমত্যের লক্ষ্যে সব ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিয়ে জাতিকে এক ও অভিন্ন সোপানে দাঁড় করিয়েছেন। সেই অর্জনটি আবারও ভূলুণ্ঠিত হয়েছে জাতীয়তাবাদী শক্তি ও ইসলামি শক্তির বিভাজনে।
১৯৯৬ সালে ষড়যন্ত্র ও প্রতারণার মাধ্যমে তারা প্রতিষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্যকে বিনষ্ট করে দেয়। ২০০১ সালে জাতীয় ঐকমত্যের প্রতিফলন দেখা গেলেও থেমে যায়নি আওয়ামী ষড়যন্ত্র। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে ১/১১-র নাটকীয় ঘটনাবলি ঘটে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় আসেনি, বরং একটি প্যাকেজ ডিলের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় আনা হয়েছে। ক্ষমতায় আসার শুরু থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তারা জাতীয় ঐকমত্যকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছে। জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে সৃষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে এই কারণে যে, তারা জানত মানুষের ভোটে কোনোকালে, কোনোভাবে তাদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান জাতীয় ঐক্যের যে সাধারণ সূত্র প্রতিষ্ঠিত করেন, তারা তা বিতর্কিত বাঙালি জাতিসত্তায় বিলীন করে দেয়। অবশেষে এর অনিবার্য ফলেই আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় গোটা জাতির বুকে থাকা জগদ্দল পাথর অপসারিত হয়। অর্জিত হয় ১৯৭১ সালে অর্জিত স্বাধীনতার মতো জাতীয় ঐক্য। বাংলাদেশের সব মানুষ—ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, কর্মচারী-কর্মকর্তা, কুলি-মজুর, কিশোর-যুবা ও পরিবার-পরিজন সবাই একসঙ্গে নেমে আসে রাজপথে। সমসাময়িক পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের জাতীয় ঐক্যের ঘটনা বিরল। জুলাই বিপ্লবের এই দৃঢ় জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই জাতির একজন পুরোধা পুরুষ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে দাঁড়ান। আপামর জনসাধারণ তাকে আন্তরিক সমর্থন জানায়। সময় যতই বয়ে যায় ততই শিথিল হতে থাকে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি।
বাংলাদেশের জনচরিত্র সম্পর্কে অতীতের ইতিহাস সুখকর কথা বলে না। যারা এরই মধ্যে আকবর আলি খানের সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘অবাক বাংলাদেশ : বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি’ পড়েছেন তারা এ সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা দিতে পারবেন। সম্রাট বাবর তার আত্মজীবনী ‘তোজক-ই বাবর’-এ লিখেছেন, ‘বাঙ্গাল নামে একটি দেশ আছে। সেখানে একজন পাগলও যদি লাফ দিয়ে বলে, আমি রাজা, তাহলে তার কিছু সমর্থক জুটে যায়।’ প্রাচীন এ বাংলার আরেকটি নাম ‘বুলখগ নগর’ অর্থাৎ চিরবিদ্রোহের দেশ। বাংলার সুবেদার সায়েস্তা খান নাকি ভাটা-জোয়ারের তামাশা দেখে লালবাগ দুর্গ অসমাপ্ত রেখেই দিল্লিতে প্রস্থান করেন। অর্থাৎ অতীতে ও বর্তমানে বাংলাদেশের বিচিত্র বিষয়-বৈশিষ্ট্যের রাজনীতিবিদদের একত্রিত করা—সে এক কঠিন কাজ। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘সেই কঠিনেরে’ ভালোবাসিলেন। অনেকেরই ধারণা সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরকার কিছুদিন নানাভাবে চেষ্টা করবে, শেষ পর্যন্ত সব বিষয়ে হয়তো ঐকমত্য হবে না। তখন সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে; কিন্তু অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্ট বললেন, অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারের প্রস্তাব চাপিয়ে দেওয়া হবে না। এই সরকার শুধু বোঝাবে—এমন সংস্কার কেন প্রয়োজন ও কীভাবে তা করা যায়। বাকি কাজটা করবে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সংস্কারটা যেন এমনভাবে হয়, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকে...। এমন মজবুতভাবে আইন-কানুন করব, যাতে সবাই মেনে চলে এবং এর মাধ্যমে একটা সুন্দর সমাজ তৈরি করা যায়।’
বাংলাদেশের জনচরিত্র সম্পর্কে আমরা দেখেছি, এরা শতধাবিভক্ত। রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যা বিবেচনা করলেই জনচরিত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এদেশে এমন অনেক রাজনৈতিক দল আছে, যারা শুধুই ব্যক্তিনির্ভর। স্বামী বিবেকানন্দের ‘যত মত তত পথে’ এরা বিশ্বাস করে, কিন্তু ‘শতফুল ফুটতে দিতে’ এরা নারাজ। এক ফুলের রূপে রসেই তারা আকুল-ব্যাকুল। গণতন্ত্রের অনিবার্য ভিত্তি যে বিভাজনের মধ্যে ঐক্য (Unity in Diversity), তা তারা ভুলে যায়। বাংলাদেশের কোন জাতীয় সংকট কোন রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে সমাধান হয়েছে, এমন নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্মরণ করা যেতে পারে, একজন দেশি রফিকুল হক ও বিদেশি কমনওয়েলথ প্রতিনিধি, কিংবা জাতিসংঘ মহাসচিব আমাদের দুই দলকে এক করতে পারেননি। সব সময়ই সব দল ও সব নেতৃত্ব ষড়যন্ত্রের কথা বলে আসছে। বলা হয়, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য অর্জন ‘সোনা ব্যাং এক পাল্লায় মাপা’র মতো অসম্ভব কাজ। তবুও আমাদের ব্যর্থ হলে চলবে না। রাজনৈতিক নেতারা জোর দিয়েই বলছেন, বিপ্লবোত্তর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থ হওয়ার মানেই হচ্ছে গোটা জাতির ব্যর্থতা। প্রথম সভা শেষে প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্ব আশার কথা বলেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা আশা করি খুব দ্রুত এই সরকারের যে ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি হবে, সেটার ওপর ভিত্তি করে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি এবং সব ইতিবাচক সিদ্ধান্তে জামায়াতে ইসলামী সমর্থন জানাবে। আমরা বলেছি, সংস্কার প্রয়োজন, সেই সংস্কারে আমরা একমত হই, তারপর যথাশীঘ্র সম্ভব নির্বাচন হবে।’ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জেনায়েদ সাকী বাস্তবতাকে স্বীকার করে বলেন, ‘মতপার্থক্য আছে বলেই ঐকমত্য তৈরি করতে হবে।’
আগেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র একটি সমগোত্রীয় বা সমজাতীয়তার দেশ। জাতি ও জাতীয়তা গঠনের জন্য যেসব অনিবার্য উপাদান ক্রীয়াশীল, যেমন—ভাষা, ধর্ম, নৃতত্ত্ব, রাজনীতি, অর্থনীতি, ভূগোল, ইতিহাস ও ভূমিরূপের মতো উপাদান। সেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রাকৃতিকভাবে ও জনবৈশিষ্ট্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ বাংলায় কথা বলে। ধর্মে এরা নিরঙ্কুশ, সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে মুসলিম। নৃতাত্ত্বিকভাবে তারা প্রায় সমগোত্রীয়। দু-চারজন পার্বত্য বা উপজাতির লোক আছে মাত্র। আমাদের রয়েছে বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি। সুজলা-সুফলা শস্যশ্যামলা এই সোনার বাংলা। আল্লাহর দেওয়া এই নেয়ামতকে অস্বীকার করে মতলববাজ রাজনীতিবিদরা আমাদের বিভাজিত করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে ইসলাম, জাতীয়তাবাদ ও বাম ধারাভিত্তিক ভাবাদর্শের সংঘাত। আওয়ামী আমলে এটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। বিএনপি আমলে সমঝোতা ও সংহতির পরিবেশ গড়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যে জাতীয় ঐকমত্যের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করছেন, সেটির পরিপূরক হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করবে, এটাই জনপ্রত্যাশা। আর জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের মর্মার্থও তাই। সুতরাং পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের ভাষায় বলি, ‘একতাই বল, ঐক্যই জীবন; সবার মাঝে বিভেদ নয়, চাই সম্মিলন।’
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৪ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৪ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৪ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে