জবিতে বই পড়ার গুরুত্ব নিয়ে পাঠকমেলার আলোচনা সভা

আকরাম খান
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ১০

ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এই স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমার দেশ পত্রিকার পাঠকমেলার সদস্যদের নিয়ে বই পড়ায় গুরুত্বারোপ করে এক বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

উপস্থিত সবাই পুরোটা সময় আলোচকদের বক্তব্য শোনেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আমার দেশ পাঠকমেলার সভাপতি ফাহিম হাসনাত এবং সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন পাঠকমেলার সাধারণ সম্পাদক আকরাম খান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি আবু সায়েম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহানা চৌধুরী ও তাহসিনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুল বাশার সুমন, দপ্তর সম্পাদক হেনা শিকদার, সহ-দপ্তর সম্পাদক ঊর্মি আক্তার ঝিনুক, প্রচার ও প্রকাশনা-বিষয়ক সম্পাদক নুসরাত জাহান অর্পিতা, অর্থ সম্পাদক তানজিল মিয়া, সমাজসেবা-বিষয়ক সম্পাদক সেজু আক্তার, সাহিত্য সম্পাদক জয়া রানী পাল প্রমুখ। এছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে ছিলেন রাহুল শেখ, ইফাত হাসান ও সবুর কাজী।

বিজ্ঞাপন

আকরাম খান বলেন, জ্ঞান অর্জন কখনোই কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি এমন একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা মানুষের জীবনব্যাপী চলে। একজন ব্যক্তি যদি মনেপ্রাণে আগ্রহী হন, কঠোর পরিশ্রম করতে প্রস্তুত থাকেন এবং সচেতনতার সঙ্গে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন, তবে তিনি সমাজ, পরিবেশ, প্রকৃতি এমনকি মানুষের আচরণ থেকেও জ্ঞান আহরণ করতে পারেন। তবুও মানুষের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করার অন্যতম কার্যকর মাধ্যম হলো বই পড়ার অভ্যাস।

বই হলো জ্ঞানের সমুদ্র। এটি মানুষের চিন্তার খোরাক জোগায় এবং তাকে ভাবতে শেখায়। নানা বিষয়ের বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানতে পারে, যা তার সাধারণ জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে। একই সঙ্গে বই পড়া মানুষের চিন্তাধারা পরিষ্কার ও সুবিন্যস্ত করতে সহায়ক হয়। এতে তথ্য অনুসন্ধানের স্বভাব তৈরি হয়, যা তাকে অনুসন্ধানী ও বিশ্লেষণী করে তোলে।

বই পাঠের মাধ্যমে ভাষার দক্ষতা বাড়ে। সুন্দর ও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা এবং লেখা শিখতে হলে বই পড়ার বিকল্প নেই। বইয়ের সংস্পর্শে থেকে একজন পাঠকের প্রকাশভঙ্গি উন্নত হয়, বাকপ্রতিভা বিকশিত হয় এবং শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। ফলে নিজেকে প্রকাশ করতে সক্ষম হওয়া যায় দক্ষতার সঙ্গে।

বই মানুষের কল্পনাশক্তিকে প্রসারিত করে। বিশেষ করে গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি, জীবনী, কিংবা কল্পবিজ্ঞান পাঠ মানুষকে নতুন জগতের সঙ্গে পরিচিত করায়। এতে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং নতুন কিছু ভাবার প্রেরণা জাগে। একজন ব্যক্তি যখন নানা বিষয় পড়েন, তখন তার মনে নানামুখী চিন্তার দ্বার উন্মুক্ত হয়।

বই পড়া আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সহায়ক। জ্ঞানসমৃদ্ধ মানুষ সবসময় আত্মবিশ্বাসী থাকেন। কারণ তিনি জানেন—তার জানা আছে, বোঝা আছে, যা তাকে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে রাখবে। বিভিন্ন বিষয়ে জানা থাকার ফলে আলোচনা, বিতর্ক বা উপস্থাপনায় তিনি সহজেই নিজের মত প্রকাশ করতে পারেন। এসব বিষয় আলোচনায় উঠে আসে বই পড়ার নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক।

এ বিষয়ে আমার দেশ পাঠকমেলার সভাপতি ফাহিম বলেন, ‘বই শুধু তথ্য বা গল্প নয়—এটি একজন মানুষের চরিত্র, চিন্তাশক্তি ও দৃষ্টিভঙ্গি গঠনের ভিত্তি। জীবনের কঠিন সময়ে যখন কেউ পাশে ছিল না, তখন একটি বই-ই আমার একমাত্র সহচর ছিল। আত্মোন্নয়নমূলক বইগুলো আমাদের চিন্তার জগতে নতুন আলো জ্বালে। আমি বিশ্বাস করি, প্রতিদিন মাত্র ২০ মিনিট বই পড়ার অভ্যাস একজন মানুষের জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে। একজন প্রকৃত পাঠক কখনো থেমে যায় না, পিছিয়ে পড়ে না।’

সংগঠনটির সহসভাপতি আবু সায়েম বলেন, ‘একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে সেই জাতির পাঠ্যাভ্যাসের ওপর। যদি শৈশব থেকেই আমরা বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলি, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা শুধু চাকরি খুঁজব না, চাকরি তৈরির সক্ষমতাও অর্জন করব। বইয়ের পাতায় লুকিয়ে থাকা জ্ঞানের আলো প্রযুক্তির ঝলকানির চেয়েও বেশি টেকসই ও প্রভাবশালী। বইয়ের গন্ধ ও কাগজের উষ্ণতা আমাদের শেকড়ের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত করে।’

সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন বলেন, ‘বই পড়া মানেই কেবল কল্পনার জগতে হারিয়ে যাওয়া নয়, এটি আমাদের শেকড়ে ফেরার একটি পথ। বাংলা সাহিত্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি জানার জন্য বইয়ের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক থাকা জরুরি। আমি যখন শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ কিংবা হ‍ুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়ি, তখন বুঝি—আমাদের সাহিত্যই আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রতিচ্ছবি। তরুণরা যদি সাহিত্যকে ভালোবাসে, তাহলে একটি মানবিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।’

পাঠকমেলার কার্যনির্বাহী সদস্য অনিমা ফেরদৌসী বলেন, ‘একজন নারী যখন বই পড়েন, তখন তার আলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ছোটবেলায় আমি নিজের অধিকার ও সম্ভাবনা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না—একটি বই-ই প্রথম আমার চোখ খুলে দিয়েছিল। আজ আমি বিশ্বাস করি, বই একজন নারীকে আত্মবিশ্বাসী, চিন্তাশীল ও সমাজে পরিবর্তন আনতে সক্ষম করে তোলে। নারীদের হাতে বই তুলে দেওয়াই এখন সময়ের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই পাঠকমেলার আলোচনা সভা বই পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন করে সচেতনতা তৈরি করেছে। জ্ঞান অর্জন, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, সৃজনশীলতার বিকাশ এবং সমাজের উন্নয়নে বইয়ের যে অপরিহার্য ভূমিকা রয়েছে, তা এই সেমিনারের মধ্য দিয়ে আরো একবার স্পষ্ট হয়েছে। এ ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের বইমুখী করে তোলার পাশাপাশি একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত