নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সালাহউদ্দিন আহমদ

‘নোট অব ডিসেন্ট’ ছাড়া গণভোট নিয়ে আলোচনা হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৪
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫০

‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি) ছাড়া গণভোট আয়োজন করার কোনো বিষয়ই ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

বুধবার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে এ কথা বলেন তিনি। একই সঙ্গে জাতিকে বিভক্ত করে এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

এদিন জুলাই জাতীয় সনদ, সনদ বাস্তবায়নের উপায়, গণভোট নিয়ে সৃষ্ট জটিলতাসহ বিরাজমান পরিস্থিতি, নির্বাচন, বিএনপির জোটের হিসাব-নিকাশসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি)’ ছাড়া গণভোট আয়োজন করার কোনো বিষয়ই ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাবে তা নিয়ে জাতীয় সনদ হবে এবং পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সনদ বাস্তবায়ন করবে–এই বক্তব্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা সরে যেতে পারেন না।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ‘নিরপেক্ষ’ আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা আশা করি এমন কোনো পদক্ষেপ সরকার নেবে না, যার মধ্য দিয়ে জাতিতে বিভক্তি সৃষ্টি হবে, অনৈক্য সৃষ্টি হবে।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সালাহউদ্দিন আহমদ ছিলেন বিএনপির প্রতিনিধিদলের প্রধান। তার কাছে প্রশ্ন ছিল, গত এক বছর ধরে এই আলোচনা কতটুকু সফল হয়েছে?

সংস্কার কমিশন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তিন দফা আলোচনার দীর্ঘ যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আলোচনার শেষ পর্যায়ে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার দুই-এক দিন আগে প্রধান উপদেষ্টা সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বসলেন এবং আমরা সেখানে প্রস্তাব করেছি যে একটা ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সেই জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হোক এবং সেই সনদের বাস্তবায়নের জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হব।’

তিনি বলেন, ‘সেই হিসেবে সনদ প্রণীত হয়েছে এবং সেই সনদে প্রায় ৮৪টি দফা ছিল। সেই ৮৪টি দফার বিভিন্ন দফায়, সব দফায় নয়, আমাদের এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট ছিল। এই নোট অব ডিসেন্ট প্রথাগত নোট অব ডিসেন্ট নয়। সেই নোট অব ডিসেন্টের লেখা আছে যে এই দফাগুলো যে রাজনৈতিক দল অথবা জোট যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেটা তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে প্রকাশ করে যদি জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হয়, তাহলে তারা সেই মতে বাস্তবায়ন করতে পারবে।’

এর ভিত্তিতে ১৭ অক্টোবর ‘জুলাই জাতীয় সনদে’স্বাক্ষর করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘দুই-একটি রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করল না কিন্তু ২৪-২৫টা দল স্বাক্ষর করল ২৯-৩০টা দলের মধ্যে। স্বাক্ষরের পরে নির্ধারিত হলো, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে এই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করবে।

তিনি আরো বলেন, ‘এর কয়েক দিন পরে অর্থাৎ ৩১ অক্টোবরের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদের ভেতরেই তারা সরকারের কাছে সে সুপারিশ করলেন। সেই সুপারিশে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টাও স্বাক্ষর করলেন। অর্থাৎ সরকার হিসেবে বাস্তবায়ন করবেন, আবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে সুপারিশও তিনি দিলেন।’

প্রধান উপদেষ্টর এই দ্বৈত ভূমিকায় ‘ক্ল্যাশ অব ইন্টারেস্ট’ হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সেটা ওভারলুক করতাম যদি জুলাই জাতীয় সনদের অন্তর্ভুক্ত সব বিষয় যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেভাবে বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি তারা সুপারিশ করতেন। কিন্তু দেখা গেল সেই সুপারিশনামায় বাস্তবায়নের যে কয়েকটা পদক্ষেপ তারা সুপারিশ করলেন, তার মধ্যে এক নম্বর হচ্ছে একটি আদেশ জারি করবেন এবং সেই আদেশ কে জারি করবেন সেখানে উল্লেখ নেই।’

‘আর সনদের বাস্তবায়নের জন্য তারা দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিলেন। একটা বিকল্প প্রস্তাব হচ্ছে সনদ বাস্তবায়নের জন্য যে আদেশ জারি করা হবে, সেই আদেশে একটা তফসিল থাকবে। সেই তফসিলে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ৪৮টি দফা, যেগুলো সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত। অন্য যে বিষয়গুলো অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলো সরকারের হাত দিয়ে বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই’, বলেন তিনি।

এই সাবেক সংসদ সদস্য বলেন, ‘কিন্তু ৪৮টি দফা যেগুলো সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত, সেই বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে যে নোট অব ডিসেন্টগুলো দেওয়া হয়েছিল, যেভাবে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল, সেগুলো পুরোপুরি বাদ দেওয়া হলো এবং বলা হলো গণভোটে দেওয়া হবে ৪৮টি পয়েন্ট। গণভোটের প্রশ্ন কী হবে, সেটা ওখানে নির্ধারণ করা হলো না।’

বিএনপি কেন গণভোটে সায় দিয়েছিল, এর ব্যাখ্যায় সালাহউদ্দিন বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি নিয়ে যখন কথা উঠল, তখন ‘জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে’ জনগণের সম্মতি নেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়। জনগণ এই জুলাই জাতীয় সনদের পক্ষে না বিপক্ষে এবং সেটা একটা ব্যালটের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একই দিনে একটা ছোট্ট ব্যালটের মাধ্যমে সেই সম্মতিটা নেওয়া যায়। জনগণ যদি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ বলে, তাহলে তার একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা সংসদ সদস্যদের ওপরে আসবে। জাতীয় সংসদের ওপরে আরোপিত হবে।”

তবে গণভোটের মধ্য দিয়ে যে সংবিধান সংস্কার হয়ে যাবে না, সে বিষয়টি স্পষ্ট করে তিনি বলেন, “আইন প্রণয়নের জন্য, সংবিধান সংশোধনের জন্য জাতীয় সংসদকে ভূমিকাটা পালন করতে হবে।”

গণভোট কবে হবে, সেই প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মতপার্থক্যের বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “(গণভোট জাতীয় নির্বাচনের) আগে হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা এখন নেই। সময় নেই। এছাড়া প্রয়োজনও নেই। কারণ একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে যদি আমরা একটা ছোট্ট ব্যালটে এই গণসম্মতিটা নিতে পারি, সেটাই হবে সবচাইতে যৌক্তিক, প্রাসঙ্গিক, গ্রহণযোগ্য এবং অতিরিক্ত ব্যয় হবে না।”

ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, নভেম্বরেই গণভোট করার দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক আট দল যে আন্দোলন করছে, সে প্রসঙ্গ ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, “তাদের অধিকার আছে তারা (আন্দোলন) করছে। কিন্তু জনগণ কতটুকু গ্রহণ করবে না করবে, সেটা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে।”

তার মতে, “এখন গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি। তারা সেই গণতান্ত্রিক অধিকারে তাদের বক্তব্য দিতেই পারে। কিন্তু আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যেখানে একটা ঐকমত্যের ভিত্তিতে সনদ রচিত হয়েছে, স্বাক্ষরিত হয়েছে; সেই জায়গা থেকে না ঐকমত্য কমিশন সরতে পারে, সেই জায়গা থেকে না সরকার সরতে পারে, না আমরা কোনো রাজনৈতিক দল সরতে পারি। তো সুতরাং এটাই হচ্ছে আমাদের বর্তমান অবস্থান এবং যৌক্তিক অবস্থান।”

সালাহউদ্দিন আহমদ নিজেই কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ‘রেফারি হয়ে হাত দিয়ে একটা গোল দিয়ে দিয়েছে’। প্রশ্ন ছিল, তাহলে কি সরকারের ওপর থেকে বিএনপি আস্থা হারিয়েছে?

জবাবে তিনি বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে, তার থেকে (সরকার) বহুদূরে সরে গিয়েছে।”

এর ব্যাখ্যায় সালাহউদ্দিন বলেন, “সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ সদস্যরা সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবেও শপথ নেবেন। এরকম কোনো বিষয় নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে কখনো আলোচনা হয়নি।”

তিনি বলেন, “বলা হয়েছে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে তারা ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেবেন। অন্যথায় সেই দফাগুলো সংস্কার প্রস্তাবগুলো অটোমেটিক সংবিধানে সংযোজিত হয়ে যাবে। এটার মানে দাঁড়াচ্ছে যে, সার্বভৌম সংসদের এখতিয়ারটাকে অস্বীকার করা এবং জনগণের সার্বভৌমত্বটাকে অস্বীকার করা।”

তিনি বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য সবাই যেখানে অঙ্গীকারবদ্ধ, বাস্তবায়নের প্রধানতম ফোরাম হিসেবে একমাত্র ফোরাম হিসেবে জাতীয় সংসদকে আমরা স্বীকার করি। সেই জাতীয় সংসদের ওপরে কোনো বিষয়কে জবরদস্তি আরোপিত করা যায়? সংবিধান সংস্কার কমিশন নামে একটি নতুন আইডিয়া করে গণপরিষদের মতো কোনো আইডিয়া কি ইম্পোজ করা যায়, আরোপ করা যায় জনগণের ওপরে? এগুলোর এখতিয়ার না সংস্কার কমিশনের আছে, না জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আছে, না সরকারের আছে। তাহলে এতদিন আমরা আলোচনা করলাম কেন?”

সালাহউদ্দিন বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের সবাইকে কগনিজেন্সে নিতে হবে, আমলে নিতে হবে। এই জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে প্রণীত হয়েছে, রচিত হয়েছে, স্বাক্ষরিত হয়েছে সেটাই আমাদেরকে মানতে হবে।”

‘নিরপেক্ষ’ আচরণের আশা

এখন যদি সরকার নির্বাচনের আগে গণভোটের সিদ্ধান্ত নেয় কিংবা নোট অব ডিসেন্ট বাদ দিয়ে গণভোট দেয়, বিএনপি কী করবে?

এ প্রশ্নের উত্তরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “নোট অব ডিসেন্ট ছাড়া গণভোটের সম্মতি, গণভোট নেওয়া বা গণভোট আয়োজন করার কোনো বিষয়ই তো আলোচনা হয়নি।”

তিনি বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ প্রণীত হওয়ার আগে অনেকবার মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, যে সব রাজনৈতিক দল যে সব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাবে, সেগুলো সঙ্কলিত হয়ে জাতীয় সনদ প্রণীত হবে এবং পরবর্তী নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সেই সনদ বাস্তবায়ন করবে। এই বক্তব্য থেকে তো তিনি সরে যেতে পারেন না।”

সরকার যদি সরেই যায়, তাহলে বিএনপি গণভোট বর্জন করবে কি না, সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের কাছে।

উত্তরে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে, নিরপেক্ষ আচরণ করবে। সেই হিসেবে আমরা আশা করি, এমন কোনো পদক্ষেপ সরকার নেবে না যার মধ্য দিয়ে জাতিতে বিভক্তি সৃষ্টি হবে, অনৈক্য সৃষ্টি হবে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা ঐতিহাসিক জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। বিশ্ব স্বীকৃত যে (নির্বাচন) অনুষ্ঠান হবে, যে সংসদ হবে এবং যে নির্বাচন নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতার কোনো প্রশ্ন থাকবে না।”

সনদ বাস্তবায়ন আদেশের কী হবে?

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ কে জারি করবে সেই প্রশ্নের মীমাংসা হয়নি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “সাংবিধানিক আদেশ বলে কোনো আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা ‘কারো নেই’। বর্তমানে আমরা সাংবিধানিক সরকারের মধ্যে আছি, সাংবিধানিক ব্যবস্থার মধ্যে আছি। এই সরকার সাংবিধানিকভাবেই শপথ গ্রহণ করেছেন। সুতরাং আমরা আইনের মধ্যে দিয়ে চলছি, সাংবিধানিকতার মধ্যে দিয়ে চলছি। সুতরাং এখানে কন্সটিটিউশনাল অর্ডার অথবা এক্সট্রা কন্সটিটিউশনাল অর্ডার–এটা অনেক আগেই রিজেক্ট হয়ে গেছে এ সব প্রস্তাব। সেটা গ্রহণযোগ্য নয় এবং অসাংবিধানিক। সেটা করার কোনো প্রশ্নই আসে না।”

তিনি বলেন,“বাকি রইল আদেশ।… প্রেসিডেন্ট অর্ডার, পিও… এই রাষ্ট্রপতির আদেশ কখন জারি হয়েছিল? স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারির পরে যখন নিজেরা গণপরিষদ হিসেবে ঘোষণা করলেন তৎকালীন এই ভূখণ্ডের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একটি সংবিধান রচনার জন্য এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য। তখন রাষ্ট্রপতির আদেশ জারির বিধি ছিল এবং সেই প্রেসিডেন্ট অর্ডার জারি করার সময়টা কোন পর্যন্ত ছিল? যতদিন সংবিধান গৃহীত না হয়েছে।”

অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট অর্ডার দেওয়ার কোনো অবস্থা থাকে না মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন বলেন, “এখন যদি রাষ্ট্রপতির আদেশ জারির কোনো প্রশ্ন তোলে, সেটা অতীত, এটা ইতিহাস। এখন কোনো রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

তাহলে আদেশ নিয়ে বিএনপির অবস্থান কী? জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, “রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে বর্তমানে যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা হচ্ছে, সেটা সাংবিধানিক মতেই হচ্ছে। প্রায় এভরিডে অধ্যাদেশ জারি হচ্ছে, অনেকগুলো অধ্যাদেশ জারি হচ্ছে। তো এখন যদি এই জুলাই জাতীয় সনদ অধ্যাদেশ আকারে জারি করতে হয়, এখানে প্রশ্ন থাকে এটা কি আইন? এটা তো একটা রাজনৈতিক সমঝতার দলিল, ঐতিহাসিক দলিল। সেই সমঝোতা, সেই চুক্তিপত্র, সেই সামাজিক চুক্তি, সেই রাজনৈতিক চুক্তি, সেটা বাস্তবায়নের জন্য সরকার ইচ্ছা করলে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে, গ্যাজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এটাকে জারি করতে পারে।”

তিনি বলেন, “এটাকে এখন আমরা আইনের মর্যাদা দেব কি না, সেটা একটা প্রশ্ন। কিন্তু আমি মনে করি, জাতীয় ভিত্তিতে যে রাজনৈতিক সমঝতার দলিল হলো, এটা প্র্যাকটিক্যালি আইন না হলেও এর বাইরে আমরা কেউ যাব না। যেহেতু আমরা রাজনৈতিক সমঝতা করেছি এবং সেটা বাস্তবায়নের জন্য একটা গণভোট হবে জনগণের সম্মতির জন্য। যে প্রস্তাবটা করা হয়েছে, (জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে) একই দিনে সেটা হলে একটা বাধ্যবাধকতা বা একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা আসবে সংসদের ওপরে, সংসদ সদস্যদের ওপরে। এটাই হচ্ছে একমাত্র প্র্যাকটিক্যাল ওয়ে এই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য।”

আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেছেন, ভোটের হাওয়া শুরু হলে জুলাই সনদ গুরুত্ব হারাতে পারে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংস্কারের দাবিগুলো অনেক পুরনো এবং এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের জন্য তারা ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। এখানে দেশের যে কোনো ব্যক্তি, জনগণ, যে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষের যে কোনো রকমের প্রস্তাব, যেটা জাতির জন্য কল্যাণকর হবে, দেশের জন্য মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, সেটা আমরা স্বাগত জানাব, ধারণ করব। সুতরাং আমরা সংস্কারের মধ্য দিয়েই যেতে চাই। এই সনদ, এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো গুরুত্ব হারাবে বলে আমি অন্তত মনে করি না।”

এনসিপির সঙ্গে জোট হবে?

বিএনপি ইতোমধ্যে ২৩৬টি আসনে তাদের মনোনীত প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আমাদের সঙ্গে যারা, যুগপৎ আন্দোলন করেছেন, যে সমস্ত আসনে তারা আগ্রহী, সে সমস্ত আসনগুলোতে আমরা কোনো প্রার্থী দিইনি। আমরা আশা করছি তারা তাদের নাম ঘোষণা করবেন, তখন আমরা চূড়ান্ত করব।”

এদিকে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠিত নতুন দল এনসিপি বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির আলোচনা করছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, যদিও এনসিটি তা অস্বীকার করেছে।

সালাহউদ্দিন আহমদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে নির্বাচনি সমঝোতা হচ্ছে কি না।

জবাবে তিনি বলেন, “রাজনীতিতে এ সব বিষয়ে শেষ কথা তো বলা যায় না। তবে এখনো পর্যন্ত বিএনপির সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিল, এর বাইরে যারা গণতান্ত্রিক সংগ্রামে ছিল, কিছু ইসলামিক দলসহ আমরা আরো কিছু দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে চাই।”

এনসিপির সঙ্গে আলোচনার খবর অস্বীকার করলেও সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে চান না সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত এনসিপির সাথে জোটবদ্ধ হবো কি হবো না, বা তারা আমাদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ইলেকশন করবে কি করবে না, সেটার কোনো প্রস্তাব তাদের পক্ষ থেকেও আসেনি, আর আমাদের পক্ষ থেকেও যায়নি। তবে একদম সেই সমঝোতা বা সেই জোট হবে না–এটাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সে জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে।”

দশম ও দ্বাদশ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি বলে আসছে, সে দুটি নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না, সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল সালাহউদ্দিনের সামনে।

জবাবে আওয়ামী লীগের সময়ের প্রশ্নবিদ্ধ তিনটি নির্বাচনের পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “তখন যারা ভোট বর্জন করেছিল, তারা নিষিদ্ধ দল ছিল না, তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগও ছিল না। সুতরাং এখন আওয়ামী লীগের ভোট করতে না পারার সঙ্গে বিষয়টি তুলনা করা চলে না। সুতরাং আওয়ামী লীগ নির্বাচনে থাকবে না–ওই কারণে আগামী নির্বাচন অবৈধ হবে বা অংশগ্রহণমূলক হবে না, এই ধারণার সাথে আমরা একমত নই।”

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত