সরকারকে জামায়াত আমির

স্টাফ রিপোর্টার

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া কোন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি জনগণের ভাষা বুঝে অতি শিগগির গণভোট আগে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানান।
মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন মোড়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও উক্ত আদেশের ওপর গণভোট আয়োজন’সহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত আট দল আয়োজিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা ভদ্র ভাষায় কথা বলছি, ভদ্র ভাষায়ই বলবো। কিন্তু দাবির ব্যাপারে হিমালয়ের মত অনড় থাকবো। এই দাবি কোন দলের নয়, জনগণের দাবি, জুলাই বিপ্লবের দাবি। এই দাবি ফ্যাসিবাদের দাবি নয়। অতএব ফ্যাসিবাদের দাবির কাছে দেশের জনগণ মাথানত করবে না। জনগণের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন দুর্বার গতিতে চলবে। পরবর্তী কর্মসূচি কর্মসূচি বাস্তবায়নের আহবান জানান তিনি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। এতে আট দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন। নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে সমাবেশের বিস্তৃতি আশ-পাশের সড়কে ছড়িয়ে মহাসমাবেশে রূপ নেয়। এ সময় পল্টন মোড় দিয়ে বিভিন্ন সড়কের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃংখলাবাহিনী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত আমির আরো বলেন, আমাদের দাবি কম, খুবই সুস্পষ্ট। প্রথম দাবি হলো-জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা জুলাই সনদ মানবেন না, তাদের জন্য ২০২৬ সালে কোন নির্বাচন নাই। ছাব্বিশের নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে। আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে সনদের আইনিভিত্তি দিতেই হবে। এই আইনি ভিত্তি ছাড়া কোন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, এদেশের মুক্তিকামী মানুষের একটাই কথা-জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। এ বিষয়ে সব দল একমত? তাহলে তারিখ নিয়ে এ ভাওতাবাজি কেন? একমত হয়ে যখন সবাই সনদে স্বাক্ষর করেছি, তখন গণভোট আগে হওয়াই যুক্তিযুক্ত। এরমধ্য দিয়েই আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ। এর ভিত্তিতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তখন আর কোন সংশয়-সন্দেহ থাকবে না।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা চাই আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এটা নিয়ে কোন ধুম্রজাল সৃষ্টির পায়তারা চালাবেন না। উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে ঠেলবেন না। আমরা ঐকমত্য কমিশনে আট দল ইতিবাচক মতামত দিয়েছি। পরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে একটা চার্টার তৈরি হয়েছে। গণতন্ত্রের প্রথা হলো-সংখ্যাগরিষ্ঠের মত মেনে নেয়া। কিন্তু কেউ কেউ তা মেনে নিতে রাজি নয়। জুলাই সনদেই যদি আপনি গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান, তাহলে জাতীয় নির্বাচনে দেখাবেন কিভাবে?
তিনি জুলাই শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর আহবান জানিয়ে বলেন, যারা পঙ্গু হয়ে হাসপাতালে ভুগছেন, তাদের মুখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন। তিনি মামুনুল হকের বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, লড়াই করে আমরা ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছি, লড়াই করেই জনতার দাবি আদায় করবো। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কোন দলের নয় জনতার বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, জনতা কি চায় তা কান পেতে শোনার চেষ্টা করুন। যদি এই ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হন তাহলে নিজের পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা দেশের জনগণকে কথা দিচ্ছি-আমাদের সহযোদ্ধারা প্রাথমিক যে পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছে, আমরা জনগণের মুক্তি আদায় করেই ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতনের কারণেই পল্টন মোড়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে পারছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে আইনি ভিত্তি দেয়ার ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেছে। অথচ দেশ পরিচালনাকারী অন্যতম দল বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোটের প্রস্তাব করেছে। গণভোট আগে না হলে জাতীয় নির্বাচন করবেন কোন আইনে? গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ আইনিভিত্তি পেলেই জাতীয় নির্বাচনও আইনীভিত্তি পাবে। নইলে এই নির্বাচন অবৈধ হবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ভারতে পালাতে পেরেছে। নতুন করে যারা ফ্যাসিবাদী হতে চাইছেন তারা পালাবেন কোথায়? বিএনপির কথায় একই দিনে গণভোট দেয়ার পাঁয়তারা যারা করছে তাদের উদ্দেশ্য ভাল নয়-দেশের মানুষ তা বুঝে গেছে।
চরমোনাই পীর সরকারকে বলেন, আমাদের আর কতবার রাস্তায় আসতে হবে? আমরা শান্ত ও নম্র ভাষায় আমাদের দাবি জানিয়ে গেলাম। এরপরেও যদি সরকারের বোধদয় না হয় তাহলে এমন কর্মসূচি আসবে যে আপনারা দাবি মানতে বাধ্য হবেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক বলেন, দেশের মানুষ এখন দুইভাগে বিভক্ত। একদল বাহাত্তরের বাকশালে আরেক দল জুলাইপন্থী। সবাই যার যার অবস্থান পরিস্কার করুন। তিনি বলেন, বাহাত্তরের বাকশালীরা ১৩ নভেম্বর লকডাউন ডেকেছে। কোন বাকশালীকে রাজপথে নামতে দেব না, মোকাবেলা করবো।
মামুনুল হক বলেন, জুলাই সনদকে আমরা কাগজে সনদ হিসেবে নয়, আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা হিসেবে দেখতে চাই। জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট দিতে হবে। এর কোন ব্যত্যয় আমরা মানবো না। জুলাই শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া কিছুই হতে দেব না।
তিনি বলেন, আগে গণভোট হতে সমস্যা কী জানতে চাই। এরপক্ষে কোন যুক্তি নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে দিয়ে তারা আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়। প্রয়োজনে আবার রক্ত দেব, তবু ফ্যাসিবাদ আর ফিরতে দেব না। আমাদের মুখোমুখি দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন না। রক্ত দিয়েই দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করবো। সরকার যদি আট দলের শান্তিপূর্ণ ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয় তাহলে যে ভাষা বুঝবে সেই ভাষায়ই কথা বলা হবে। যুদ্ধ করেই আমাদের অধিকার আদায় করে ছাড়বো।
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ বলেন, কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠার জন্য যারা আন্দোলন করছে তারা সবাই এক হয়েছে, এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে এদেশে কোরআনের বিধান কায়েম করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, আমরা আট দল এক হওয়ায় ইসলাম বিদ্বেষীরা ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একদিনে গণভোটের দাবি বিএনপির খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত। তিনি আরো বলেন, বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, আমরা শরিয়াহ আইনে বিশ্বাস করি না। এটা না মানলেতো ঈমান থাকে না। সেই বিএনপিকে যারা সাপোর্ট করবে-এ ধরণের মোনাফেক থেকে সতর্ক থাকতে হবে। আগামীতে ইসলামী দলগুলো সরকার গঠন করবে ইনশাআল্লাহ।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, যেসব বিষয় সংশোধন হচ্ছে, সেগুলোর আইনি ভিত্তি দিতে হবে। গণভোট আগে না হলে কিসেরে ভিত্তিতে জাথীয় নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, আট দলের জাতীয় নেতারা এক হয়েছেন। এই ঐক্যের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাবে। পল্টনের এই সমাবেশ আগামী দিনের মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজী বলেন, আমরা একহয়ে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করবো ইনশাআল্লাহ।
খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, জালেম সরকার পতনের পর মানুষে মাঝে প্রত্যাশা জেগেছে, তারা ইসলামী দলগুলোর সরকার দেখতে চায়।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বলেন, মানুষ আর আগের ধারায় ফিরে যেতে চায় না। ইসলামপ্রেমিক মানুষ ও দল এক হওয়ায় একটি গোষ্ঠীর গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। যারা পানি ঘোলা করতে চায় তাদের পরিণতি ভাল হবে না।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে মির্জা ফখরুল তার দলের কথা প্রকাশ করেছেন। ফ্যাসিবাদী পুনর্বাসন রূখে দাঁড়ানো হবে।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সংবিধানের দোহাই দিয়ে আপনারা নতুন ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠান করতে চান। দেশের মানুষ তা হতে দেবে না।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র প্রকৌশলী রাশেদ প্রধান বলেন, আলেমরা এক হয়েছে, জালেমদের দিন শেষ। বিএনপিকে মজলুম থেকে নতুন করে জালিম না হওয়ার আহবান জানান তিনি।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চান ও মহাসচিব নিজামুল হক নাঈম, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, জাগপা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ সাদেক হাক্কানী প্রমুখ।
যৌথভাবে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ইসলামী আন্দোলনের সহকারী অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাইয়ুম, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুল জলিল, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রমুখ।
পল্টনে মোড়ে ট্রাকের ওপর নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে দুপুর দুইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। তবে এর আগে থেকেই সেখানে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন আট দলের নেতাকর্মীরা।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া কোন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি জনগণের ভাষা বুঝে অতি শিগগির গণভোট আগে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানান।
মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন মোড়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও উক্ত আদেশের ওপর গণভোট আয়োজন’সহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত আট দল আয়োজিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা ভদ্র ভাষায় কথা বলছি, ভদ্র ভাষায়ই বলবো। কিন্তু দাবির ব্যাপারে হিমালয়ের মত অনড় থাকবো। এই দাবি কোন দলের নয়, জনগণের দাবি, জুলাই বিপ্লবের দাবি। এই দাবি ফ্যাসিবাদের দাবি নয়। অতএব ফ্যাসিবাদের দাবির কাছে দেশের জনগণ মাথানত করবে না। জনগণের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন দুর্বার গতিতে চলবে। পরবর্তী কর্মসূচি কর্মসূচি বাস্তবায়নের আহবান জানান তিনি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। এতে আট দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন। নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে সমাবেশের বিস্তৃতি আশ-পাশের সড়কে ছড়িয়ে মহাসমাবেশে রূপ নেয়। এ সময় পল্টন মোড় দিয়ে বিভিন্ন সড়কের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃংখলাবাহিনী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত আমির আরো বলেন, আমাদের দাবি কম, খুবই সুস্পষ্ট। প্রথম দাবি হলো-জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা জুলাই সনদ মানবেন না, তাদের জন্য ২০২৬ সালে কোন নির্বাচন নাই। ছাব্বিশের নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে। আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে সনদের আইনিভিত্তি দিতেই হবে। এই আইনি ভিত্তি ছাড়া কোন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, এদেশের মুক্তিকামী মানুষের একটাই কথা-জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। এ বিষয়ে সব দল একমত? তাহলে তারিখ নিয়ে এ ভাওতাবাজি কেন? একমত হয়ে যখন সবাই সনদে স্বাক্ষর করেছি, তখন গণভোট আগে হওয়াই যুক্তিযুক্ত। এরমধ্য দিয়েই আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ। এর ভিত্তিতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তখন আর কোন সংশয়-সন্দেহ থাকবে না।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা চাই আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এটা নিয়ে কোন ধুম্রজাল সৃষ্টির পায়তারা চালাবেন না। উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে ঠেলবেন না। আমরা ঐকমত্য কমিশনে আট দল ইতিবাচক মতামত দিয়েছি। পরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে একটা চার্টার তৈরি হয়েছে। গণতন্ত্রের প্রথা হলো-সংখ্যাগরিষ্ঠের মত মেনে নেয়া। কিন্তু কেউ কেউ তা মেনে নিতে রাজি নয়। জুলাই সনদেই যদি আপনি গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান, তাহলে জাতীয় নির্বাচনে দেখাবেন কিভাবে?
তিনি জুলাই শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর আহবান জানিয়ে বলেন, যারা পঙ্গু হয়ে হাসপাতালে ভুগছেন, তাদের মুখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন। তিনি মামুনুল হকের বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, লড়াই করে আমরা ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছি, লড়াই করেই জনতার দাবি আদায় করবো। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কোন দলের নয় জনতার বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, জনতা কি চায় তা কান পেতে শোনার চেষ্টা করুন। যদি এই ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হন তাহলে নিজের পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা দেশের জনগণকে কথা দিচ্ছি-আমাদের সহযোদ্ধারা প্রাথমিক যে পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছে, আমরা জনগণের মুক্তি আদায় করেই ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতনের কারণেই পল্টন মোড়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে পারছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে আইনি ভিত্তি দেয়ার ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেছে। অথচ দেশ পরিচালনাকারী অন্যতম দল বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোটের প্রস্তাব করেছে। গণভোট আগে না হলে জাতীয় নির্বাচন করবেন কোন আইনে? গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ আইনিভিত্তি পেলেই জাতীয় নির্বাচনও আইনীভিত্তি পাবে। নইলে এই নির্বাচন অবৈধ হবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ভারতে পালাতে পেরেছে। নতুন করে যারা ফ্যাসিবাদী হতে চাইছেন তারা পালাবেন কোথায়? বিএনপির কথায় একই দিনে গণভোট দেয়ার পাঁয়তারা যারা করছে তাদের উদ্দেশ্য ভাল নয়-দেশের মানুষ তা বুঝে গেছে।
চরমোনাই পীর সরকারকে বলেন, আমাদের আর কতবার রাস্তায় আসতে হবে? আমরা শান্ত ও নম্র ভাষায় আমাদের দাবি জানিয়ে গেলাম। এরপরেও যদি সরকারের বোধদয় না হয় তাহলে এমন কর্মসূচি আসবে যে আপনারা দাবি মানতে বাধ্য হবেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক বলেন, দেশের মানুষ এখন দুইভাগে বিভক্ত। একদল বাহাত্তরের বাকশালে আরেক দল জুলাইপন্থী। সবাই যার যার অবস্থান পরিস্কার করুন। তিনি বলেন, বাহাত্তরের বাকশালীরা ১৩ নভেম্বর লকডাউন ডেকেছে। কোন বাকশালীকে রাজপথে নামতে দেব না, মোকাবেলা করবো।
মামুনুল হক বলেন, জুলাই সনদকে আমরা কাগজে সনদ হিসেবে নয়, আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা হিসেবে দেখতে চাই। জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট দিতে হবে। এর কোন ব্যত্যয় আমরা মানবো না। জুলাই শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া কিছুই হতে দেব না।
তিনি বলেন, আগে গণভোট হতে সমস্যা কী জানতে চাই। এরপক্ষে কোন যুক্তি নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে দিয়ে তারা আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়। প্রয়োজনে আবার রক্ত দেব, তবু ফ্যাসিবাদ আর ফিরতে দেব না। আমাদের মুখোমুখি দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন না। রক্ত দিয়েই দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করবো। সরকার যদি আট দলের শান্তিপূর্ণ ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয় তাহলে যে ভাষা বুঝবে সেই ভাষায়ই কথা বলা হবে। যুদ্ধ করেই আমাদের অধিকার আদায় করে ছাড়বো।
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ বলেন, কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠার জন্য যারা আন্দোলন করছে তারা সবাই এক হয়েছে, এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে এদেশে কোরআনের বিধান কায়েম করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, আমরা আট দল এক হওয়ায় ইসলাম বিদ্বেষীরা ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একদিনে গণভোটের দাবি বিএনপির খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত। তিনি আরো বলেন, বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, আমরা শরিয়াহ আইনে বিশ্বাস করি না। এটা না মানলেতো ঈমান থাকে না। সেই বিএনপিকে যারা সাপোর্ট করবে-এ ধরণের মোনাফেক থেকে সতর্ক থাকতে হবে। আগামীতে ইসলামী দলগুলো সরকার গঠন করবে ইনশাআল্লাহ।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, যেসব বিষয় সংশোধন হচ্ছে, সেগুলোর আইনি ভিত্তি দিতে হবে। গণভোট আগে না হলে কিসেরে ভিত্তিতে জাথীয় নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, আট দলের জাতীয় নেতারা এক হয়েছেন। এই ঐক্যের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাবে। পল্টনের এই সমাবেশ আগামী দিনের মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজী বলেন, আমরা একহয়ে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করবো ইনশাআল্লাহ।
খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, জালেম সরকার পতনের পর মানুষে মাঝে প্রত্যাশা জেগেছে, তারা ইসলামী দলগুলোর সরকার দেখতে চায়।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বলেন, মানুষ আর আগের ধারায় ফিরে যেতে চায় না। ইসলামপ্রেমিক মানুষ ও দল এক হওয়ায় একটি গোষ্ঠীর গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। যারা পানি ঘোলা করতে চায় তাদের পরিণতি ভাল হবে না।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে মির্জা ফখরুল তার দলের কথা প্রকাশ করেছেন। ফ্যাসিবাদী পুনর্বাসন রূখে দাঁড়ানো হবে।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সংবিধানের দোহাই দিয়ে আপনারা নতুন ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠান করতে চান। দেশের মানুষ তা হতে দেবে না।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র প্রকৌশলী রাশেদ প্রধান বলেন, আলেমরা এক হয়েছে, জালেমদের দিন শেষ। বিএনপিকে মজলুম থেকে নতুন করে জালিম না হওয়ার আহবান জানান তিনি।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চান ও মহাসচিব নিজামুল হক নাঈম, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, জাগপা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ সাদেক হাক্কানী প্রমুখ।
যৌথভাবে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ইসলামী আন্দোলনের সহকারী অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাইয়ুম, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুল জলিল, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রমুখ।
পল্টনে মোড়ে ট্রাকের ওপর নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে দুপুর দুইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। তবে এর আগে থেকেই সেখানে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন আট দলের নেতাকর্মীরা।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মাধ্যমেই অতি দ্রুত আদেশ জারি করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
১ ঘণ্টা আগে
সদ্য বিএনপিতে যোগদান করা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত এই খুনি হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে দেশের মাটিতে ফাঁসির দড়িতে না ঝোলানো হচ্ছে, ততদিন সকাল-বিকেল, স্বজ্ঞানে কিংবা ঘুমের স্বপ্নেও এই হাসিনার নাম মাথায় ঘুরবে। যতবার এই নাম মুখে আসে, মনে রাখবেন— তা কেবল ঘৃণা থেকেই আসে।
১ ঘণ্টা আগে
বিবৃতিতে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল সকল গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক কাঠামো গঠন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতির এক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ। সেই কাঙ্ক্ষিত নতুন বাংলাদেশের
১ ঘণ্টা আগে
গত দুই দিনে রাজধানীতে বাসসহ গাড়িতে আগুন দেওয়া ও ককটেল ফুটানোর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ।
১ ঘণ্টা আগে