আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)

জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ০২

​আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) শুধু ইসলামের সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গম্বর ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন মানবজাতির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব।

তিনি ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের আগেই বাবা আবদুল্লাহ মারা যান। এরপর তিনি তার মা আমিনার কাছে বড় হতে থাকেন। কিন্তু মাত্র ছয় বছর বয়সে মা আমিনাও মারা যান। এরপর হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁকে লালনপালনের দায়িত্ব নেন। দাদা মারা যাওয়ার পর চাচা আবু তালিব তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন।

বিজ্ঞাপন

​হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছোটবেলা থেকেই খুবই আত্মসম্মানসচেতন, বুদ্ধিমান, সত্যবাদী এবং শান্ত প্রকৃতির ছিলেন। তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলতেন না। এ কারণে সবাই তাঁকে এতটাই বিশ্বাস করত যে, তাঁকে ‘আল-আমিন’ বা ‘বিশ্বাসী’ উপাধি দিয়েছিল।

যুবক বয়সে হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কার সম্ভ্রান্ত এবং ঐশ্বর্যশালী পরিবারের মেয়ে বিবি খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে ব্যবসা শুরু করেন। সততা এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি খুব অল্প সময়েই সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। এই সততার জন্য তিনি বিবি খাদিজা (রা.)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং তাঁর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। যখন তাঁদের বিয়ে হয়, তখন মহানবী (সা.)-এর বয়স ছিল পঁচিশ এবং বিবি খাদিজা (রা.)-এর বয়স চল্লিশ বছর। বিবি খাদিজা (রা.) ছিলেন প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী।

​যখন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বয়স ৪০ বছর, তখন তিনি মক্কার হেরা গুহার ভেতর নির্জনে বসে ধ্যান করতেন। একদিন তিনি ধ্যান করছেন সে সময় আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) তাঁর কাছে ওহি, অর্থাৎ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বার্তা নিয়ে আসেন। সেটা ছিল আল্লাহর নবুয়ত দানের বার্তা। তখন থেকেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াত লাভ করেন। আল্লাহ মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদত করার পথে ডাকার জন্য হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নির্দেশ দেন । প্রথমে অত্যন্ত গোপনে নিকটজনদের ভেতর এবং পরে সবার মাঝে প্রকাশ্যে তিনি মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। তিনি মানুষকে শেখান যে, আল্লাহ একজন এবং তাঁর কোনো অংশীদার বা শরিক নেই। সে সময়কার মানুষ বিভিন্ন দেবদেবী বানিয়ে সেগুলো পূজা করত। আল্লাহর আদেশে তিনি আরববাসীদের মূর্তিপূজা বন্ধ করতে বলেন। এতে মক্কা ও এর আশপাশের অনেকে তাঁর শত্রু হয়ে যায়। তারা নবীজি (সা.)-কে অনেক কষ্ট দেয়, কিন্তু তিনি আল্লাহর নির্দেশিত সত্যের পথে অনড় থাকেন ।

​মক্কার কাফেরদের অত্যাচার যখন অনেক বেড়ে যায়, আল্লাহর নির্দেশে হজরত মুহাম্মদ (সা.) তখন মদিনায় চলে যান। এই যাওয়াকে হিজরত বলা হয়। এই হিজরত ছিল ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মদিনার লোকরা তাঁকে সাদরে গ্রহণ করে। সেখানে তিনি একটি ইসলামিক সমাজ গড়ে তোলেন। তিনি মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন তৈরি করেন। মদিনায় তিনি একটি মসজিদ তৈরি করেন, যা শুধু নামাজের জায়গা ছিল না, বরং তা ছিল মুসলমানদের জন্য একটি শিক্ষাকেন্দ্র এবং বিচার কেন্দ্রও। সেই মসজিদে বসে সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো।

​নবীজি (সা.) তার জীবনে অনেক যুদ্ধ করেছেন, কিন্তু সেগুলো ছিল শুধু ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য, নিজের জন্য নয়। তিনি সবসময় সব ধর্মের মানুষের প্রতি দয়া দেখিয়েছেন। তিনি শুধু মুসলিমদের জন্যই আদর্শ নন, বরং পুরো মানবজাতির জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না।’ তাঁর জীবন আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে সৎ হতে হয়, কীভাবে অন্যদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হয় এবং কীভাবে সবার সঙ্গে শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে হয়। তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে ইনশাআল্লহ আমরাও এক সুন্দর ও আলোকিত জীবন গড়ে তুলব ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত