পূর্ববর্তী নবীদের রোজা

ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন রব্বানী
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৫, ১১: ০৫

মহান আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী পূর্ববর্তী উম্মতসমূহের ওপরও রোজা ফরজ ছিল। তিনি বলেন, ‘তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর।’ (সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৩)

মানবজাতির পিতা আদম (আ.) থেকে মূলত রোজার সূচনা । তাঁর রোজা সম্পর্কে বিশিষ্ট হাদিসবেত্তা ইবন হাজর আল-আসকালানি উল্লেখ করেন, আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে জান্নাতে একটি গাছের নিকটবর্তী হতে নিষেধ করেন। কিন্তু তিনি শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে ওই গাছের ফল খেয়ে ফেলেন। ফলে তাঁর দেহের রঙ পাল্টে কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে।

বিজ্ঞাপন

আল্লাহ তাঁকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেন। বিষয়টি আদম (আ.)-কে বিচলিত করে। তখন আল্লাহ জিবরাইল (আ.)-কে প্রেরণ করেন। তিনি তাঁকে তাঁর দেহের শুভ্রতা ফিরে পাওয়ার জন্য প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতে বলেন। রোজা রাখা শুরু করলে প্রথম দিনে তাঁর শরীরের এক-তৃতীয়াংশ শুভ্র হয়ে যায়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন একই পরিমাণ শুভ্রতা ফিরে পান। তখন থেকেই তিনি এ রোজা রাখতে শুরু করেন। এ রোজার নাম রাখা হয় ‘আইয়ামে বিজ’ বা শুভ্রতার দিনের রোজা। (ফতহুল বারি : ৪/১২৩)

মুফাসসিরগণের বক্তব্য অনুযায়ী নূহ (আ.)-এর সময় এসে এ রোজা ফরজ করা হয় এবং পরবর্তী সব শরিয়তে তা জারি রাখা হয়। অবশ্য হাদিসে কোনো কোনো নবীর বিশেষ বিশেষ রোজার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন নূহ (আ.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ছাড়া সারা বছরই রোজা রাখতেন (ইবন মাজাহ : ১৭১৪)। দাউদ (আ.) একদিন রোজা রাখতেন ও একদিন বিরতি দিতেন।’ (বুখারি : ৩৪২০)

সুলাইমান (আ.) প্রতি মাসে প্রথম, মধ্য ও শেষ দশকে তিনটি করে মোট ৯টি রোজা রাখতেন (কানজুল উম্মাল : ২৪৬২৪)। এ ছাড়া ইহুদিদের আশুরার রোজার বিষয়ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। (মুসলিম : ২৫২৭)

বিধানগত দিক থেকে প্রত্যেক উম্মতের ওপর রোজা ফরজ থাকলেও এর সময়, ধরন, ব্যাপ্তি, পদ্ধতি ইত্যাদি দিক থেকে পূর্ববর্তীদের ও আমাদের রোজার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

পূর্ববর্তীদের ওপর কয়টি রোজা ফরজ ছিল সে সম্পর্কে দুটি অভিমত পাওয়া যায়। প্রথমত, আতিয়াহ সূত্রে ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, তাদের ওপর প্রতি মাসে তিনটি রোজা আবশ্যক ছিল। দ্বিতীয়ত, হাসান বসরি সূত্রে ইবন আব্বাস (রা.)-এর বক্তব্য অনুযায়ী তাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ ছিল। কিন্তু নাসারারা রমজানের আগের ও পরের দিন এতে যুক্ত করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় বিকৃতি সাধন করে তারা বার্ষিক ৫০ দিনে উন্নীত করে। (তাফসির ইবনুল জাওযি : ১/১৮৪)

পদ্ধতিগত দিক থেকেও তাদের রোজার সঙ্গে আমাদের রোজার পার্থক্য রয়েছে। সাঈদ ইবন জুবাইর (রাহ.) বলেন, তারা রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলে ওই রাতে আর তার জন্য খাওয়া বৈধ ছিল না। রোজার রাতেও তাদের জন্য স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ ছিল।

দাহহাক বলেন, তাদের রোজার ব্যাপ্তি ছিল রাতে ঘুমানো থেকে নিয়ে পরবর্তী দিনের রাত অন্ধকার হয়ে তারকা উদিত হওয়া পর্যন্ত। (তাফসির ইবনে কাসির : ১/২১৩)

মুফাসসিরগণের ঐকমত্য অনুযায়ী, পূর্ববর্তীরা রোজা দ্বারা খাবার, পানীয় ও দাম্পত্য সম্পর্ক থেকে বিরত থাকাকে বোঝাতন। তা ছাড়া জাকারিয়া ও মারইয়াম (আ.)-এর ক্ষেত্রে কথা পরিত্যাগ করাকেও রোজা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান : ৪১ ও সূরা মারইয়াম : ২৬)

অতএব রোজা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত, মহান আল্লাহ প্রত্যেক উম্মতের ওপর যা ফরজ করেছিলেন। ফলে প্রত্যেক নবীর সুন্নত হিসেবে এ আমল বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত। তাওহিদে বিশ্বাসী সবার উচিত যথানিয়মে রোজা পালন করা।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত