রোজায় নারীর জন্য বিশেষ বিধান

আলী হাসান তৈয়ব
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৯: ১৯

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপরÑযেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের (রমজান মাস) জন্য (এ রোজা ফরজ)।

অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাকে অন্য সময় সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩-১৮৪)। এ আয়াতে অসুস্থতা শব্দটি ব্যাপক। নারীর মাসিক ও প্রসব-পরবর্তী সময়ও এর অন্তর্ভুক্ত। সফরে থাকলে রোজা ঐচ্ছিক হলেও নারীর বিশেষ সময়ে রোজা নিষিদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঋতু অবস্থায় নারীকে নামাজ আদায় ও রোজা পালন করতে হয় না, এমন নয় কি?’ তারা বললেন, ‘হ্যাঁ।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটিই তাদের দ্বীন বিষয়ে অসম্পূর্ণতা।’ (বোখারি : ৪০৩; মুসলিম : ১৩২)।

পিরিয়ডকালে রোজা

রোজা পালনকারী নারীর যদি সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগেও পিরিয়ড দেখা দেয়, তাহলে তার ওই দিনের রোজা বাতিল হয়ে যাবে। পরে রোজাটি কাজা করতে হবে। প্রসঙ্গত, নফল রোজা হলে এর কাজাও নফল। যদি রমজানে দিনের মধ্যভাগে পিরিয়ড থেকে পবিত্র হওয়া যায়, তবে দিনের শুরুতে রোজা পালনের প্রতিবন্ধকতা থাকায় ওই দিনের বাকি অংশেও রোজা পালন সহিহ হবে না। যদি রমজানের রাতে সুবহি সাদিক উদয়ের সামান্য আগেও কোনো নারী পিরিয়ড থেকে পবিত্র হন, তবে তার ওপর রোজা পালন আবশ্যক। কারণ তিনি রোজা পালনে সক্ষমদের অন্তর্ভুক্ত। তার রোজা পালনে এখন কোনো অন্তরায় না থাকায় রোজা পালন ওয়াজিব।

এক্ষেত্রে তিনি পবিত্র হওয়ার গোসল সুবহি সাদিকের পর করলেও রোজা শুদ্ধ হবে। যেমনÑ গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি সুবহি সাদিকের পর গোসল করলে তার রোজা শুদ্ধ হয়। কারণ আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বপ্নদোষ ছাড়া সহবাসজনিত নাপাক অবস্থায় সুবহি সাদিকের পর পবিত্রতা অর্জন করতেন এবং রমজানের রোজা পালন করতেন।’ (বোখারি : ১৯৩১; মুসলিম : ১১০৯)।

পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোজা

আধুনিক যুগে ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা যায়। কোনো নারী যদি ওষুধ খেয়ে রোজা রাখতে চান, তাহলে তার রোজা হয়ে যাবে। তবে প্রাকৃতিক নিয়মে ব্যত্যয় ঘটানো অনেক সময় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। তাই আল্লাহর স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী চলা এবং ওষুধ গ্রহণ না করাই শ্রেয়।

প্রসবপরবর্তী সময়ে রোজা

নিফাস তথা সন্তান প্রসবকারী নারীর বিধান পূর্বোক্ত হায়েজ বা মাসিকগ্রস্ত নারীর বিধানের মতোই। তিনিও পবিত্র হওয়া পর্যন্ত রোজা করবেন না।

স্তন্যদানকারী বা অন্তঃসত্ত্বা নারীর রোজা

যে স্তন্যদানকারী কিংবা অন্তঃসত্ত্বা নারী রোজার কারণে নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করেন, তাহলে তিনি রোজা না রাখার ব্যাপারে ছাড় পাবেন। আনাস বিন মালেক আল কাবি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ মুসাফিরদের সালাত অর্ধেক করেছেন। আর গর্ভবতী, স্তন্যদানকারিণী ও মুসাফির থেকে রোজা শিথিল করেছেন।’ (আবু দাউদ : ২৪০৮)।

বাদপড়া রোজার কাজা

হায়েজ ও নিফাসের কারণে যে কয়দিন রোজা বাদ পড়বে, সে দিনগুলোর কাজা ওয়াজিব। কারণ আল্লাহ তায়ালা রোজাসম্পর্কিত দীর্ঘ আলোচনায় রমজানে সংগত কারণে বাদপড়া রোজা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তবে অন্যদিনে এগুলো গণনা (কাজা) করে নেবে।’ (সুরা আল-বাকারা : ১৮৪)। তেমনি রাসুলপত্নী আয়েশাকে (রা.) জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘ঋতুবতীর কী হলো যে, সে রোজা কাজা করে অথচ নামাজ কাজা করে না? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি কি হারুরি, তথা খারেজি সম্প্রদায়ভুক্ত? সে বলল, আমি হারুরি নই, বরং জানার জন্য জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমাদেরও এ অবস্থা হয়েছিল। তখন আমরা রোজা কাজা করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি; নামাজের জন্য নয়।’ (বোখারি : ৩২১; মুসলিম : ৩৩৫)।

স্তন্যদান কিংবা অন্তঃসত্ত্বাজনিত কারণে বাদপড়া রোজাগুলোও স্বাভাবিক সময়ে এসবের কাজা করে নিতে হবে।

লেখক : খতিব, আন-নূর জামে মসজিদ, টঙ্গী

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত