পাগড়িতে নবীজির (সা.) চুল সংরক্ষণ করেছিলেন যে সাহাবি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৩৮

বিখ্যাত সাহাবি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) সম্পর্কে একটি ঘটনা প্রচলিত আছে তিনি মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাথার চুলের কিছু অংশ নিজের পাগড়িতে সংরক্ষণ করেছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে একবার পাগড়িটি হারিয়ে ফেললে তিনি সেটি খুঁজে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।

পরবর্তীতে যখন কেউ তাকে এ নিয়ে ভর্ৎসনা করে, তখন তিনি জানান, এটি কোনো সাধারণ পাগড়ি নয়, এতে নবীজি (সা.)-এর বরকতময় চুল আছে।

বিজ্ঞাপন

ঘটনাটির সূত্র ও বর্ণনা

ইমাম ইবন কাসির তার বিখ্যাত গ্রন্থ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে এই ঘটনা উল্লেখ করেছেন।

ইয়ারমুকের যুদ্ধে খালিদ ইবনে ওয়ালিদের পাগড়ি পড়ে গেলে তিনি সৈন্যদের সেটি খুঁজে আনতে অনুরোধ করেন। পরে কেউ তাকে এ কাজের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এ পাগড়ির ভেতর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাথার সামনের দিকের কিছু চুল আছে। প্রতিবার যখন আমি এটি সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ করেছি, আল্লাহ আমাকে বিজয় দান করেছেন।’

তবে ইবন কাসির এই ঘটনা উল্লেখ করলেও সনদ (সূত্র) উল্লেখ করেননি। একমাত্র যিনি এ গল্পটি বর্ণনা করেছেন তিনি হলেন মুহাম্মাদ ইবন উমর আল-ওয়াকিদি, যিনি হাদিসবিদদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত দুর্বল বর্ণনাকারী হিসেবে পরিচিত। ইমাম আহমদসহ অনেকে তাকে অবিশ্বস্ত বর্ণনাকারীও বলেছেন। ওয়াকিদি তার গ্রন্থ ফুতূহুশ শামে এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

ওয়াকিদির বর্ণনা অনুযায়ী

খালিদ ইবনে ওয়ালিদের পাগড়ি যুদ্ধের সময় পড়ে যায়। তিনি তখন চিৎকার করে বলেন, ‘আমার পাগড়ি! আমার পাগড়ি!’ তার এক আত্মীয় তা উদ্ধার করে এনে দেন। পরে তিনি বলেন, ‘বিদায় হজের সময় নবীজি যখন মাথা মুড়াচ্ছিলেন, আমি তার কিছু চুল নিই। নবীজি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওগুলো নিয়ে কী করবে, খালিদ?’ আমি বলি, ‘এর বরকত সঙ্গে নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ব।’ তখন তিনি বলেন, ‘যতদিন এগুলো তোমার সঙ্গে থাকবে, তুমি বিজয়ী হবে।’ তাই আমি ওগুলো পাগড়ির সামনের দিকে রেখে দিয়েছি।’

হাদিস নাকি আছার?

বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এই ঘটনাটি কোনো হাদিস নয় বরং আছার—অর্থাৎ সাহাবি বা তাবেঈদের উক্তি বা কাজ সম্পর্কিত বর্ণনা। হাদিস শুধু মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর উক্তি, কাজ বা অনুমোদনের সঙ্গে সম্পর্কি, কিন্তু আছারের মধ্যে সাহাবিদের কর্মকাণ্ডও অন্তর্ভুক্ত করে।

নবীজির নিদর্শন থেকে বরকত নেওয়ার অনুমতি

  • নবীজির চুল, ঘাম, অজুর পানি কিংবা কাপড় থেকে বরকত নেওয়া সহিহ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত।
  • যেমন— আবু জুহাইফা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজির অজুর পর যে পানি অবশিষ্ট থাকত, মানুষ সেটি নিজেদের গায়ে মাখতেন।
  • আবু মুসা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি তার হাত-মুখ ধুয়ে সেই পানি তাদের পান করতে ও গায়ে লাগাতে বলেন। (সহিহ বুখারি)
  • খায়বার যুদ্ধের দিনে নবীজি হজরত আলী (রা.)-এর চোখে থুথু দিয়ে দোয়া করলে তার চোখ সঙ্গে সঙ্গে ভালো হয়ে যায়। (বুখারি ও মুসলিম)
  • আনাস (রা.) বলেন, নবীজি একবার তাদের বাড়িতে বিশ্রাম নিলে তার ঘাম সংগ্রহ করে উম্মু সুলায়ম বলেন, আমরা এটি সুগন্ধিতে মিশিয়ে ব্যবহার করি, এতে সবচেয়ে সুন্দর ঘ্রাণ হয়। (মুসলিম)

সাহাবিদের জন্য নবীজির দেহাবশেষ ও ব্যবহার্য জিনিস থেকে বরকত নেওয়া বৈধ ছিল। তবে নবীজি ছাড়া অন্য কোনো ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির দেহাবশেষ বা নিদর্শন থেকে বরকত নেওয়ার অনুমতি দেয় না ইসলাম।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত