মিডিয়ার নৈতিক দায়িত্ব

মুহাম্মাদ আবদুল কাহহার সিদ্দিকী
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ০৪
স্বজাতির পক্ষে লড়াকু যোদ্ধা ইসরাইলের বর্বর হামলায় সদ্য শহীদ আল-জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ

এই শতাব্দী আধুনিক মিডিয়ার। মিডিয়ার মাধ্যমে সত্য-মিথ্যা তুলে ধরা যায়। মিডিয়া হলো জনসাধারণের কাছে তথ্য প্রচারের মাধ্যম। এটি শুধু মাধ্যমই নয়, বরং মিডিয়া শক্তিশালী একটি বড় মাধ্যম। মহানবী (সা.) সাফা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়ার এটি বড় কারণ, তাঁর কথাগুলো যেন সবার কাছে পৌঁছে যায়। উঁচু স্থান থেকে ঘোষণা বেশি লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ওই সময়ে এটাই ছিল বড় মিডিয়া। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবিষ্কৃত হয়েছে নানা মাধ্যম। তাই পত্রিকা, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ যেখানেই আমরা বিচরণ করি না কেন মিডিয়াকর্মী হিসেবে আমাদের কাজ হবে ভালো বিষয়গুলো মানুষের সামনে ভালোভাবে উপস্থাপন করা।

  • তথ্য সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকুন

তথ্য ও সন্ত্রাস করে যেভাবে মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করার হীন চেষ্টা যারা করে, তাদের সঙ্গে আমরা ভিন্নমত পোষণ করি। আমাদের ফিল্ম, আমাদের নাটক ও আমাদের সিরিজ মানুষকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতে শেখাবে না। মিথ্যা, অনৈতিকতা, হিংসা, অহংকার, আল্লাহবিরোধী চিন্তা প্রভৃতি কুচিন্তা ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের কাজ নয়। মানুষকে ভালো পরামর্শ দিয়ে প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করে অন্যায়ের পথ থেকে ফিরিয়ে ন্যায়ের পথে নিয়ে আসা আমাদের কাজ।

  • মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন

বর্তমান বিশ্বে যে যত বেশি মিডিয়াকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবে, তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অল্প সময়ে অধিক কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে। মিডিয়া শুধুই বিনোদনের জন্য নয়। এর বহুমাত্রিক কল্যাণ তাদের জানাতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে মিডিয়ার অপব্যবহার যেন না হয়। মিডিয়া যাতে সন্তানদের বিপথগামী করতে না পারে, সেজন্য যথাযথ গাইডলাইন দিতে হবে। যদি সন্তানদের সেভাবে পরিচালনা না করি, তাহলে তারা ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যেতে পারে। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।

  • ইতিবাচক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকুন

মিডিয়া অঙ্গনে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তার কারণ জন্মের আগে থেকেই এই লড়াই শুরু হয়েছে, যা অদ্যাবধি চলছে এবং এটি চলবে মৃত্যু পর্যন্ত। কে কার চেয়ে এগিয়ে যেতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়। তবে আমাদের প্রতিযোগিতা যেন হয় মানবতা, সত্য, ন্যায়-ইনসাফ তথা মুসলমানদের পক্ষে।

  • সাংবাদিকতায় জীবনের ঝুঁকি

সাংবাদিক কিংবা মিডিয়াকর্মীরা সাধারণত পেশাগতভাবেই চৌকস। সততার মানদণ্ডে আপস করা যাবে না। প্রতিটি কথা বা লেখা মানবতার কল্যাণে হতে হবে। এখানে জীবনের ঝুঁকি আছে, যা অন্য দশটি পেশার মতো নয়। এখানে অর্থের কমতি আছে। এই পথ কাঁটাবিছানো পথ। জুলুম, শোষণ, নিপীড়ন, এমনকি রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে কাজ করতে হয়। তা জেনেও আমরা কেন এ পেশাকে বেছে নিলাম? কী জবাব আছে আমাদের কাছে! এর জবাব বা প্রতিদান সেটাই হতে পারে, যা কেবল আল্লাহর কাছেই রয়েছে।

  • কী করা দরকার, কী করছি?

আমি চাইলে একটা ফেক নিউজ মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারি। আবার আমি চাইলে একজন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কান্না বা একজন নির্যাতিত মানুষের কান্নাকে বিবেকবান মানুষের কাছেও পৌঁছে দিতে পারি। অত্যাচারিত কিংবা মজলুমদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারি। কিন্তু আমরা কি সেটা করছি—এই প্রশ্ন আমি আমাকে রাখলাম, এই প্রশ্ন আপনি আপনাকে রাখতে পারেন।

  • আমাদের সতর্ক থাকা দরকার

ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার ছড়াছড়িতে আমরা যেন বিভ্রান্ত না হই, অমানুষের ভিড়ে হারিয়ে না যাই। বিপথগামী না হই, সেটা বড়ই চিন্তার বিষয়। মিডিয়া যেন অপপ্রচারের মাধ্যম না হয় বা আমি যেন অপপ্রচারের একজন কর্মী না হই। প্রিন্টিং কিংবা ইলেকট্রনিক উভয় মিডিয়াই শক্তিশালী। কেউ চাইলে ইতিবাচক কাজে সে শক্তি কাজে লাগাতে পারে। অপরদিকে কেউ চাইলে নেতিবাচক কাজেও সেই শক্তি ব্যবহার করতে পারে। পশ্চিমা মিডিয়ার ছোবলে মুসলিম উম্মাহ যখন নানা জুলুম বা সন্ত্রাসের শিকার, ঠিক সেই মুহূর্তে মুসলিম হিসেবে গণমাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্যকে তুলে ধরা ঈমানের দাবি।

  • আমাদের স্বপ্ন যেমন হবে

চিরন্তন সত্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত থাকে। একটি সময় আমরা পৃথিবী থেকে চলে যাব। আমাদের কাজগুলো ভালো স্মৃতি হয়ে থাকুক, সেটাই চাই। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এমন হবে, যারা আমাদের জন্য দোয়া করবে। আমাদের চেয়েও নীতি-নৈতিকতা যোগ্যতায় এগিয়ে যাবে। তারা মানবতার কল্যাণে কাজ করবে। তাদের মেধা ও শক্তি যেন সমাজ ও দেশ গড়ার কাজে লাগে, অপরের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকে। অশ্লীলতা ও নগ্নতাকে যেন উৎসাহিত বা সহযোগিতা না করে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত