বিশ্লেষণ

বিসিবির নির্বাচন : কিছু প্রশ্ন, অস্পষ্টতা ও অনিশ্চয়তা

মোহাম্মদ ইসাম
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ০০

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) ব্যাপক রদবদল ও সংস্কার আশা করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো দিক দিয়েই সেটা হলো না। বিসিবির তৎকালীন সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পদ ছাড়ার পর বোর্ডে এলেন সাবেক ক্রিকেটার ও নির্বাচক ফারুক আহমেদ, দুঃখজনকভাবে তার স্থায়িত্ব হলো ৯ মাস। চলতি বছরের জুনে তার স্থলাভিষিক্ত হন আরেক সাবেক ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ফারুকের বিদায় ছিল হতাশাজনক এবং তার জায়গা এসে সীমিত সময়সীমার মধ্যে ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছেন আমিনুল। তবুও কিছু জায়গায় থেকে গেছে আক্ষেপ।

বিজ্ঞাপন

বিসিবির নির্বাচন চলতি বছরের ৯ অক্টোবর। দেড় মাসের মতো সময় বাকি, অথচ এখনো প্রার্থীদের ব্যাপারে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। এর কারণ চলতি বছরের শুরুতে বিসিবি গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগ। নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে প্রধান করে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে বিসিবি। আর এই কমিটির করা গঠনতন্ত্র সংশোধনের একটি খসড়ায় সিসিডিএম বা ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট থেকে বিসিবিতে ১২ জনের পরিবর্তে মাত্র চারজন পরিচালক নির্বাচিত করার প্রস্তাব দেখে আপত্তি তুলেছিল ঢাকার ক্লাবগুলো। তাদের দাবি মেনে সেই সংশোধন খসড়া চূড়ান্ত রূপ দিতে পারেনি বিসিবি। এখানেই জট পাকিয়ে আছে।

সংস্কারের অংশ হিসেবে বিসিবি পাপন যুগের বিতর্ক ও কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল। তারা যথাযথভাবে তদন্ত কাজ এগোতে পারেনি। ফলে পাপনের বোর্ডের কেলেঙ্কারি বাদ দিয়ে এগিয়েছে চলতি বছরে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ পাতানো ঘটনার তদন্ত। যদিও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পাপনের অধীনস্থ বিসিবিতে আর্থিক অপব্যবহার এবং নানা অন্যায়ের বিস্তৃত অভিযোগ তদন্ত করছে। তবে বিসিবি নিজ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো তদন্ত শুরু করেনি। তাতে প্রশ্ন দাঁড়ায়, দুদকের তদন্তের ওপর ভর করে বিসিবি কি নিজেদের আড়াল করতে চাইছে?

আগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যদি বিসিবির নির্বাচন হয় তাহলে পরিবর্তনের কোনো আশা করা যাচ্ছে না। পূর্ববর্তী যুগের মতো একই নিয়মে চলার পথেই হয়তো থাকবে বোর্ড, যেখানে ঢাকার ক্লাবগুলোর দৌরাত্ম্য আর দাপট বজায় থাকবে। তাতে দেশের ক্রিকেটে ঢাকার বাইরের অঞ্চলগুলো চিরকালীন অবহেলিত ধারাতেই চলবে। এক অর্থে, বিসিবির ছোট আঙিনায় ঘুরেফিরে রাজধানীর ক্লাবগুলোই রাজাধিরাজ। তারাই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেট চালায় এবং অনেকেই মনে করেন, এ কারণে ক্রিকেট পরিচালনায় রাজনৈতিক প্রভাব চলতেই থাকবে।

বিসিবির নির্বাচনকে ঘিরে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের আশা করছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা। তবে কার হাত ধরে হবে তা নিয়েই আলোচনা, অর্থাৎ কে হবেন বিসিবির নতুন সভাপতি। এই তালিকায় বর্তমান সভাপতি বুলবুলও আছেন। দায়িত্ব নিয়ে তিন মাসেই আস্থা অর্জন করেছেন তিনি। শতভাগ আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে কাজের মেলবন্ধনে নিজেকে প্রমাণ করেছেন বুলবুল। তবে নিজ থেকে সভাপতি হওয়ার দিকে যাবেন না বলেই জানালেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমার নেই। আমি ঢাকার কোনো ক্লাব কিংবা জেলা থেকেই আসিনি। বোর্ড পরিচালকরা নির্বাচিত করলেই কেবল আমি সভাপতি হতে পারি। যাই হোক, যোগ্য ব্যক্তিই বিসিবির সভাপতি হবেন। আমি মনে করি ক্রিকেটার, কোচ কিংবা প্রশাসক হিসেবে আমার সেই যোগ্যতা আছে। কিন্তু আমি প্রার্থী কি না জানি না।’

নির্বাচন যদি ঠিক সময়ে হয় তাহলে বুলবুলই পূর্ণ মেয়াদে নির্বাচিত বোর্ডপ্রধান হতে পারেন বলে আভাস মিলেছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মনোনয়ন পেলে এবং নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হলে বুলবুল বোর্ড পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়ে সভাপতির পদে বসার সুযোগ পেতে পারেন। বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এনএসসি মনোনীত দুজন পরিচালক পদে থাকতে পারেন। তারা চাইলে নির্বাচিত পরিচালকদের ভোটে সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে পারেন। এদিক থেকেই বুলবুলের সামনে রয়েছে মোক্ষম সুযোগ। সুযোগ রয়েছে সাবেক ক্রিকেটার তামিম ইকবালের সামনেও। তবে এদের বাইরে নতুন কাউকে যদি আপনি দেখতে পান তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিসিবি প্রায়শ অবাক করার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়!

মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে যা ঘটে তা মাঠের ক্রিকেটকেও প্রভাবিত করে। সাম্প্রতিক সময়ে পুরুষ দলের পারফরম্যান্সেই তা স্পষ্ট। তারা যেন ক্রিকেট বোর্ডেরই কার্যকারিতার প্রতিচ্ছবি। আশা করা হচ্ছে, অক্টোবরের নির্বাচন বোর্ডে এবং দেশের ক্রিকেটে আরো স্থিতিশীলতা নিয়ে আসবে। কিন্তু এই স্থিতিশীলতা কত দিন স্থায়ী হয় এবং দেশের ক্রিকেটের দৃশ্যপট কতটা পরিবর্তন করতে পারে সেটাই বড় প্রশ্ন।

মোহাম্মদ ইসাম, ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত