দিনের শেষ ওভার। সেঞ্চুরি করতে মুশফিকুর রহিমের দরকার ২ রান। ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে পুরো গ্যালারি প্রস্তুত মুশফিকের শততম টেস্টের সেঞ্চুরি উদযাপনে। গ্যাভিন হোয়ের করা পঞ্চম বলটা সজোরে স্লগ সুইপ করলেন মুশফিকুর। তবে ১ রানের বেশি এলো না। আর তাতেই নিজের শততম টেস্টে প্রথমদিন শেষে ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে গেলেন মুশফিকুর। ১ রানের আক্ষেপ নিয়ে শেষ হলো দিন। বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে ৯০ ওভারে ৪ উইকেটে ২৯২ রান নিয়ে। মুশফিকুরের সঙ্গে ৪৭ রানে অপরাজিত আছেন লিটন দাস। এছাড়াও ফিফটি করেছেন মুমিনুল। নাজমুল হোসেন শান্ত ছাড়া সবাই শুরুটা ভালো করেছেন। ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয় খেলেছেন সমান ৩৫ রানের ইনিংস।
আগামীকাল দ্বিতীয় দিন ১ রান করলেই বিশ্বের ১১তম ক্রিকেটার হিসেবে নিজের শততম টেস্টে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়বেন মুশফিক। এই তালিকায় বর্তমানে আছেন দশজন। শততম টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকানোর তালিকায় ইংল্যান্ডের আছেন সর্বোচ্চ তিনজন। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের দুজন করে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের একজন নাম লিখিয়েছেন এই তালিকায়।
ইংল্যান্ডের হয়ে শততম টেস্টে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়েছেন মিচেল কলিন কাউড্রে, অ্যালিচ স্টুয়ার্ট ও জো রুট। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন রিকি পন্টিং ও ডেভিড ওয়ার্নার। এর মধ্যে পন্টিং ম্যাচের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন গ্রায়েম স্মিথ ও হাশিম আমলা। পাকিস্তানের পক্ষে শতরান ছুঁয়েছেন ইনজামাম-উল-হক ও জাভেদ মিঁয়াদাদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে কীর্তিটি গর্ডন গ্রিনিজের।
মিরপুরে টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে দারুন শুরু করে বাংলাদেশ। ১৩.২ ওভারেউ তুলে ফেলে ৫২। অবশ্য খানিকবাদেই ফিরতে হয় সাদমানকে। ৩৫ রানের মাথায় রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরান অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন। এরপর ম্যাকব্রাইনের দ্বিতীয় শিকার হন আরেক ওপেনার জয়। বড় শট খেলতে গিয়ে ৩৪ রান করে ফিরেছেন জয়। একই বোলারের বলে উইকেটে এসে ছক্কা হাঁকিয়েই বোল্ড হয়ে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
দ্রুত ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে টেনে তোলেন মুমিনুল হক ও মুশফিকুর। তাতে প্রথম সেশনে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০০ রান স্পর্শ করে বাংলাদেশ। এরপর দুটি জীবন পান মুমিনুল ও মুশফিক। ২৩ রানের মাথায় মুমিনুলের ক্যাচ ফেলেন কারমাইকেল। ব্যক্তিগত ২২ রানের মাথায় অভিষিক্ত লেগ স্পিনার গ্যাভিন হোয়ের বল মুশফিকের ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটকিপার লরকান টাকারের কাছে যায়। সেটি গ্লাভসে আটকে রাখতে পারেননি টাকার।
এরপর আর কোনো সুযোগ না দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৪তম ফিফটি তুলে নেন মুমিনুল। দ্বিতীয় সেশন নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। এই সেশনে বাংলাদেশ কোনো উইকেট না হারিয়ে তুলেছে ৯২ রান। বিরতির পর এসে তৃতীয় সেশনের প্রথম বলেই চার মেরে ফিফটি তুলে নেন মুশফিক। একই ওভারে দলীয় রান ২০০ রান পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। মুশফিকের ফিফটির পরই ফিরে যান মুমিনুল। ম্যাকব্রাইনকে সুইপ করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন। ১২৮ বলে ৬৩ রানে আউট হন মুমিনুল।
এরপর নতুন ব্যাটার লিটন দাসকে নিয়ে বাকি সময়টা অনায়াসে পার করে দেন মুশফিক। এই ম্যাচটি মুশফিকের মতো লিটনের কাছেও ছিল ‘সেঞ্চুরি’র ম্যাচ মুশফিক আন্তর্জাতিক টেস্টে শততম ম্যাচে মাঠে নামলেও লিটন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে শততম ম্যাচে মাঠে নামেন। মাঠে নেমেই বাংলাদেশের ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে টেস্টে তিন হাজার রানের কীর্তি গড়েন লিটন। এরইমধ্যে টেস্টে বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে গেছেন লিটন। ছাড়িয়ে গেছেন হাবিবুল বাশারকে। এবার দেখার পালা আগামীকাল মুশফিক ও লিটন কত দূর যেতে পারেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৯২/৪ (মুশফিক ৯৯*, লিটন ৪৭*, মুমিনুল ৬৩, জয় ৩৪, সাদমান ৩৫, শান্ত ৮; ম্যাকব্রাইন ৪/৮২)

