
আমার দেশ অনলাইন

দেশের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে ২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হয় সশস্ত্র সংঘাত।
দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান ওই সংঘাতে সুদানজুড়ে দেড় লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
সম্প্রতি উত্তর দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশের শহর আরএসএফ বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর সেখানে তারা গণহত্যা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘের ভাষ্য, বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট চলছে সুদানে।
সুদানে কেন এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো, তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
সুদানে কেন গৃহযুদ্ধ
সুদানে এখন যে গৃহযুদ্ধ চলছে, তার শুরুটা হয়েছিল ২০১৯ সালে। তিন দশক ধরে প্রেসিডেন্ট থাকা ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্য দিয়ে এর সূত্রপাত।
১৯৮৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সুদানের ক্ষমতায় আসা ওমর আল-বশিরকে পদ থেকে সরাতে ২০১৯ সালে সুদানে বিপুল মাত্রায় বিক্ষোভ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের পতন ঘটায়। দেশের ক্ষমতায় আসে সেনাবাহিনী। তবে সাধারণ মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে।
বিক্ষোভের মুখে সেনাবাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে সরকার প্রতিষ্ঠা হয়, কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবরে আরেকটি অভ্যুত্থানে ওই সরকারও ক্ষমতাচ্যুত হয়।
ওই অভ্যুত্থানের পেছনে মূলত যে দুজন ব্যক্তি ছিলেন, তারাই সুদানে চলমান সংঘাতের পেছনে রয়েছেন। তারা হলেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো।
জেনারেল আল-বুরহান সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং সে কারণে তিনিই দেশটির প্রেসিডেন্ট।
অন্যদিকে দেশটির উপ-নেতা জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো কুখ্যাত আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফের কমান্ডার। তিনি হেমেডটি নামেই বেশি পরিচিত।
অল্প কিছুদিন আগেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতা থেকে সরাতে তারা দুজন একসাথে কাজ করেছেন। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
কিন্তু আগামীতে দেশটি কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়েই এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। বিশেষ করে সুদানের ভবিষ্যৎ এবং দেশটির বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব নিয়ে তারা ভিন্ন অবস্থান নেন।
ধারণা করা হয়, দুই নেতাই তাদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব বজায় রাখতে চাওয়ায় দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
তাদের দ্বন্দ্বের পেছনে অন্যতম ইস্যু ছিল আরএসএফের এক লাখের বেশি সেনাকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার প্রশ্নে। এই সেনাদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হলে নতুন বাহিনীকে কে নেতৃত্ব দেবেন, সেটি নিয়েও দ্বন্দ্ব শুরু হয় দুই নেতার মধ্যে।
দুই নেতার মধ্যে এমন উত্তেজনা চলাকালে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে আরএসএফ সেনাদের সুদানের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তকে সেনাবাহিনী হুমকি হিসেবে দেখে। যার ধারাবাহিকতায় সে বছরের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়।
কিছুদিনের মধ্যেই আরএসএফের সেনারা রাজধানী খার্তুমের একটা বড় অংশ দখল করে নেয়। সেনাবাহিনী প্রায় দুই বছর পর, ২০২৫ সালের মে মাসে খার্তুমের দখল ফিরে পায়।
আরএসএফ যোদ্ধা কারা
এই আধা-সামরিক বাহিনীটি গঠিত হয় ২০১৩ সালে, যাদের নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এই বাহিনীর মূলে রয়েছে জানজাওয়িদ মিলিশিয়া গ্রুপ, যারা দাফুরের বিদ্রোহীদের নিষ্ঠুরভাবে দমন করেছে। এই গ্রুপের নেতা ছিলেন জেনারেল দাগালো।

আন্তর্জাতিক নিন্দা ও সমালোচনা সত্ত্বেও ওমর আল-বশির এই গ্রুপটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি আধা-সামরিক বাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দেন, যার নামকরণ করা হয় বর্ডার ইন্টেলিজেন্স ইউনিটস।
পরে এই গ্রুপটির সদস্যরা সুদানের গোয়েন্দা বিভাগের অংশ হয়ে ওঠে। আরো কয়েক বছর পর ওমর আল-বশির আরএসএফ বাহিনী গঠন করেন। তিনি নিজে এই বাহিনীর কার্যক্রম তদারকি করলেও এর প্রধান ছিলেন জেনারেল দাগালো।
এই দাগালো পরে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আল-বশিরকে উৎখাতের পর সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বাধীন সরকারে তিনি উপ-প্রধানের দায়িত্ব নেন।
জেনারেল দাগালো পরে আরএসএফকে একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলেন। এর মধ্য দিয়ে খুব দ্রুত তার ক্ষমতার উত্থান ঘটতে শুরু করে।
আরএসএফ বাহিনী ইয়েমেন ও লিবিয়ার সংঘাতেও জড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, সুদানের বেশ কয়েকটি সোনার খনিতেও তারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
এই বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালে ১২০ জনেরও বেশি প্রতিবাদকারীকে হত্যা করা।
দেশটির সেনাবাহিনীর বাইরে এমন শক্তিশালী একটি বাহিনীর উপস্থিতিকেও সুদানের অস্থিতিশীলতার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ বছরের জুনের শুরুতে আরএসএফ সুদানের সীমান্তের লিবিয়া ও মিসর-সংলগ্ন অঞ্চল দখল করে।
এরপর অক্টোবরের শেষদিকে এল-ফাশের অঞ্চলের দখল নেওয়ার মাধ্যমে দারফুরের প্রায় শতভাগ ও পার্শ্ববর্তী কোর্দোফান অঞ্চলের সিংহভাগের ওপর দখল প্রতিষ্ঠা করে।
এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, আরএসএফ সুদানের বড় একটি অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সুদানে আরেকটি সরকার প্রতিষ্ঠা করার দাবি করছে। এর ফলে সুদান দ্বিতীয়বার বিভক্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এর আগে ২০১১ সালে সুদান ভেঙে দক্ষিণ সুদান নামে একটি আলাদা দেশ তৈরি হয়।
সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে কী
সুদানের উত্তর আর পূর্বের অধিকাংশ অঞ্চল সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। ধারণা করা হয়, সুদানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে মিসর। সুদানের সেনাবাহিনীকে মিসরের সমর্থনের কারণ হিসেবে মনে করা হয়, দুই দেশের সীমান্তে সংযোগ আর নীল নদ ঘিরে দুই দেশের অর্থনৈতিক নির্ভরতা।

সেনাপ্রধান জেনারেল বুরহান লোহিত সাগরে অবস্থিত পোর্ট সুদানকে তার প্রধান ঘাঁটি ও জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
তবে পোর্ট সুদান শহর হিসেবে একেবারেই নিরাপদ নয়। আরএসএফ এ বছরের মার্চ মাসে সেখানে ভয়াবহ ড্রোন হামলা করেছে।
মার্চেই আরএসএফের হাত থেকে দারফুর শহর পুনর্দখল করে সেনাবাহিনী। যদিও সেনাবাহিনী যখন দারফুরের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়, তখন শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এর কিছুদিনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা গেজিরাও সেনাবাহিনী দখলে নেয়। কিন্তু অক্টোবরের শেষদিকে দারফুরের শহরাঞ্চল এল-ফাশের আরএসএফ সেনাদের দখলে যাওয়াকে সেনাবাহিনীর বড় পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সুদানে কি গণহত্যা চলছে
দারফুরের বহু মানুষ বিশ্বাস করে যে আরএসএফ ও তাদের সাথে জোটবদ্ধ মিলিশিয়া গোষ্ঠী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত অঞ্চলটিকে আরবশাসিত একটি এলাকায় পরিণত করতে চায়।
গত বছরের মার্চে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এমনও তথ্য দিয়েছে যে সশস্ত্র সেনারা এক বছর বয়সী শিশুদেরও ধর্ষণ করেছে এবং যৌন নির্যাতন করেছে। এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয় শিশুদের অনেকে আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছে।
এ ছাড়া গত বছরের মার্চেই দারফুরের স্থানীয় মাসালিট গোষ্ঠী ও আরব নয়, এমন কিছু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরএসএফ ও তাদের সশস্ত্র জোটসঙ্গীরা গণহত্যা চালানোর চেষ্টা চালিয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ওই অঞ্চলে করা জাতিসংঘের তদন্তে উঠে আসে যে আরএসএফের গণহত্যা ছাড়াও সুদানের সেনাবাহিনীও ব্যাপক মাত্রায় যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত।
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে এমন বক্তব্যও রয়েছে যে আরএসএফ সেনারা যৌন আক্রমণের সময় অনারব নারীদের উদ্দেশে এমন মন্তব্য করেছেন যে তাদের গর্ভে জোরপূর্বক ‘আরব সন্তান’ দেওয়া হবে।
এখন এল-ফাশের অঞ্চল থেকে আসা সহিংসতা ও গণহত্যার যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ওই অঞ্চলে থাকা প্রায় আড়াই লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই আড়াই লাখ মানুষের একটা বড় অংশ জাতিগভাবে আরব নয়।
সুদানের অবস্থান কোথায়
সুদান উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ এবং আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম দেশগুলোর একটি। সুদানের আয়তন প্রায় ১৯ লাখ বর্গ কিলোমিটার।
সুদানের সাথে সাতটি দেশের সীমান্ত রয়েছে, পাশাপাশি লোহিত সাগরের সাথেও এর সীমানা রয়েছে। সুদানের মধ্য দিয়ে নীল নদও প্রবাহিত হয়।
এসব কারণে কৌশলগত দিক থেকে সুদান আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। সুদানের জনসংখ্যার সিংহভাগ মুসলিম এবং ভাষা আরবি ও ইংরেজি।
গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সুদান বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি ছিল। যদিও এটি বিশ্বের অন্যতম স্বর্ণ উৎপাদনকারী দেশ। সুদানের ৪ কোটি ৬০ লাখ নাগরিকের গড় বার্ষিক আয় ৭৫০ ডলারেরও কম।
দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাত এই পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করেছে। সুদানের অর্থমন্ত্রী গত বছরে এক বিবৃতিতে জানান, রাষ্ট্রীয় আয় ৮০ শতাংশের মতো কমে গেছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা

দেশের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে ২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হয় সশস্ত্র সংঘাত।
দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান ওই সংঘাতে সুদানজুড়ে দেড় লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
সম্প্রতি উত্তর দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশের শহর আরএসএফ বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর সেখানে তারা গণহত্যা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘের ভাষ্য, বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট চলছে সুদানে।
সুদানে কেন এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো, তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
সুদানে কেন গৃহযুদ্ধ
সুদানে এখন যে গৃহযুদ্ধ চলছে, তার শুরুটা হয়েছিল ২০১৯ সালে। তিন দশক ধরে প্রেসিডেন্ট থাকা ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্য দিয়ে এর সূত্রপাত।
১৯৮৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সুদানের ক্ষমতায় আসা ওমর আল-বশিরকে পদ থেকে সরাতে ২০১৯ সালে সুদানে বিপুল মাত্রায় বিক্ষোভ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের পতন ঘটায়। দেশের ক্ষমতায় আসে সেনাবাহিনী। তবে সাধারণ মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে।
বিক্ষোভের মুখে সেনাবাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে সরকার প্রতিষ্ঠা হয়, কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবরে আরেকটি অভ্যুত্থানে ওই সরকারও ক্ষমতাচ্যুত হয়।
ওই অভ্যুত্থানের পেছনে মূলত যে দুজন ব্যক্তি ছিলেন, তারাই সুদানে চলমান সংঘাতের পেছনে রয়েছেন। তারা হলেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো।
জেনারেল আল-বুরহান সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং সে কারণে তিনিই দেশটির প্রেসিডেন্ট।
অন্যদিকে দেশটির উপ-নেতা জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো কুখ্যাত আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফের কমান্ডার। তিনি হেমেডটি নামেই বেশি পরিচিত।
অল্প কিছুদিন আগেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতা থেকে সরাতে তারা দুজন একসাথে কাজ করেছেন। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
কিন্তু আগামীতে দেশটি কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়েই এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। বিশেষ করে সুদানের ভবিষ্যৎ এবং দেশটির বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব নিয়ে তারা ভিন্ন অবস্থান নেন।
ধারণা করা হয়, দুই নেতাই তাদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব বজায় রাখতে চাওয়ায় দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
তাদের দ্বন্দ্বের পেছনে অন্যতম ইস্যু ছিল আরএসএফের এক লাখের বেশি সেনাকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার প্রশ্নে। এই সেনাদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হলে নতুন বাহিনীকে কে নেতৃত্ব দেবেন, সেটি নিয়েও দ্বন্দ্ব শুরু হয় দুই নেতার মধ্যে।
দুই নেতার মধ্যে এমন উত্তেজনা চলাকালে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে আরএসএফ সেনাদের সুদানের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তকে সেনাবাহিনী হুমকি হিসেবে দেখে। যার ধারাবাহিকতায় সে বছরের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়।
কিছুদিনের মধ্যেই আরএসএফের সেনারা রাজধানী খার্তুমের একটা বড় অংশ দখল করে নেয়। সেনাবাহিনী প্রায় দুই বছর পর, ২০২৫ সালের মে মাসে খার্তুমের দখল ফিরে পায়।
আরএসএফ যোদ্ধা কারা
এই আধা-সামরিক বাহিনীটি গঠিত হয় ২০১৩ সালে, যাদের নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এই বাহিনীর মূলে রয়েছে জানজাওয়িদ মিলিশিয়া গ্রুপ, যারা দাফুরের বিদ্রোহীদের নিষ্ঠুরভাবে দমন করেছে। এই গ্রুপের নেতা ছিলেন জেনারেল দাগালো।

আন্তর্জাতিক নিন্দা ও সমালোচনা সত্ত্বেও ওমর আল-বশির এই গ্রুপটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি আধা-সামরিক বাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দেন, যার নামকরণ করা হয় বর্ডার ইন্টেলিজেন্স ইউনিটস।
পরে এই গ্রুপটির সদস্যরা সুদানের গোয়েন্দা বিভাগের অংশ হয়ে ওঠে। আরো কয়েক বছর পর ওমর আল-বশির আরএসএফ বাহিনী গঠন করেন। তিনি নিজে এই বাহিনীর কার্যক্রম তদারকি করলেও এর প্রধান ছিলেন জেনারেল দাগালো।
এই দাগালো পরে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আল-বশিরকে উৎখাতের পর সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বাধীন সরকারে তিনি উপ-প্রধানের দায়িত্ব নেন।
জেনারেল দাগালো পরে আরএসএফকে একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলেন। এর মধ্য দিয়ে খুব দ্রুত তার ক্ষমতার উত্থান ঘটতে শুরু করে।
আরএসএফ বাহিনী ইয়েমেন ও লিবিয়ার সংঘাতেও জড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, সুদানের বেশ কয়েকটি সোনার খনিতেও তারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
এই বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালে ১২০ জনেরও বেশি প্রতিবাদকারীকে হত্যা করা।
দেশটির সেনাবাহিনীর বাইরে এমন শক্তিশালী একটি বাহিনীর উপস্থিতিকেও সুদানের অস্থিতিশীলতার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ বছরের জুনের শুরুতে আরএসএফ সুদানের সীমান্তের লিবিয়া ও মিসর-সংলগ্ন অঞ্চল দখল করে।
এরপর অক্টোবরের শেষদিকে এল-ফাশের অঞ্চলের দখল নেওয়ার মাধ্যমে দারফুরের প্রায় শতভাগ ও পার্শ্ববর্তী কোর্দোফান অঞ্চলের সিংহভাগের ওপর দখল প্রতিষ্ঠা করে।
এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, আরএসএফ সুদানের বড় একটি অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সুদানে আরেকটি সরকার প্রতিষ্ঠা করার দাবি করছে। এর ফলে সুদান দ্বিতীয়বার বিভক্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এর আগে ২০১১ সালে সুদান ভেঙে দক্ষিণ সুদান নামে একটি আলাদা দেশ তৈরি হয়।
সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে কী
সুদানের উত্তর আর পূর্বের অধিকাংশ অঞ্চল সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। ধারণা করা হয়, সুদানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে মিসর। সুদানের সেনাবাহিনীকে মিসরের সমর্থনের কারণ হিসেবে মনে করা হয়, দুই দেশের সীমান্তে সংযোগ আর নীল নদ ঘিরে দুই দেশের অর্থনৈতিক নির্ভরতা।

সেনাপ্রধান জেনারেল বুরহান লোহিত সাগরে অবস্থিত পোর্ট সুদানকে তার প্রধান ঘাঁটি ও জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
তবে পোর্ট সুদান শহর হিসেবে একেবারেই নিরাপদ নয়। আরএসএফ এ বছরের মার্চ মাসে সেখানে ভয়াবহ ড্রোন হামলা করেছে।
মার্চেই আরএসএফের হাত থেকে দারফুর শহর পুনর্দখল করে সেনাবাহিনী। যদিও সেনাবাহিনী যখন দারফুরের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়, তখন শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এর কিছুদিনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা গেজিরাও সেনাবাহিনী দখলে নেয়। কিন্তু অক্টোবরের শেষদিকে দারফুরের শহরাঞ্চল এল-ফাশের আরএসএফ সেনাদের দখলে যাওয়াকে সেনাবাহিনীর বড় পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সুদানে কি গণহত্যা চলছে
দারফুরের বহু মানুষ বিশ্বাস করে যে আরএসএফ ও তাদের সাথে জোটবদ্ধ মিলিশিয়া গোষ্ঠী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত অঞ্চলটিকে আরবশাসিত একটি এলাকায় পরিণত করতে চায়।
গত বছরের মার্চে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এমনও তথ্য দিয়েছে যে সশস্ত্র সেনারা এক বছর বয়সী শিশুদেরও ধর্ষণ করেছে এবং যৌন নির্যাতন করেছে। এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয় শিশুদের অনেকে আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছে।
এ ছাড়া গত বছরের মার্চেই দারফুরের স্থানীয় মাসালিট গোষ্ঠী ও আরব নয়, এমন কিছু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরএসএফ ও তাদের সশস্ত্র জোটসঙ্গীরা গণহত্যা চালানোর চেষ্টা চালিয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ওই অঞ্চলে করা জাতিসংঘের তদন্তে উঠে আসে যে আরএসএফের গণহত্যা ছাড়াও সুদানের সেনাবাহিনীও ব্যাপক মাত্রায় যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত।
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে এমন বক্তব্যও রয়েছে যে আরএসএফ সেনারা যৌন আক্রমণের সময় অনারব নারীদের উদ্দেশে এমন মন্তব্য করেছেন যে তাদের গর্ভে জোরপূর্বক ‘আরব সন্তান’ দেওয়া হবে।
এখন এল-ফাশের অঞ্চল থেকে আসা সহিংসতা ও গণহত্যার যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ওই অঞ্চলে থাকা প্রায় আড়াই লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই আড়াই লাখ মানুষের একটা বড় অংশ জাতিগভাবে আরব নয়।
সুদানের অবস্থান কোথায়
সুদান উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ এবং আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম দেশগুলোর একটি। সুদানের আয়তন প্রায় ১৯ লাখ বর্গ কিলোমিটার।
সুদানের সাথে সাতটি দেশের সীমান্ত রয়েছে, পাশাপাশি লোহিত সাগরের সাথেও এর সীমানা রয়েছে। সুদানের মধ্য দিয়ে নীল নদও প্রবাহিত হয়।
এসব কারণে কৌশলগত দিক থেকে সুদান আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। সুদানের জনসংখ্যার সিংহভাগ মুসলিম এবং ভাষা আরবি ও ইংরেজি।
গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সুদান বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি ছিল। যদিও এটি বিশ্বের অন্যতম স্বর্ণ উৎপাদনকারী দেশ। সুদানের ৪ কোটি ৬০ লাখ নাগরিকের গড় বার্ষিক আয় ৭৫০ ডলারেরও কম।
দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাত এই পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করেছে। সুদানের অর্থমন্ত্রী গত বছরে এক বিবৃতিতে জানান, রাষ্ট্রীয় আয় ৮০ শতাংশের মতো কমে গেছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা

শনিবার (১ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের ওপর চালানো ‘বৃহৎ হত্যাযজ্ঞ’ পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে নাইজেরিয়াকে দেওয়া সব ধরনের সাহায্য ও সহায়তা বন্ধ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
৮ মিনিট আগে
হাকান ফিদান বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার শান্তি আলোচনা চালিয়ে যেতে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দেশটি এর আগের তিন দফা আলোচনায় আয়োজক ছিল এবং বন্দি বিনিময়সহ বেশ কিছু মানবিক উদ্যোগেও সহায়তা দিয়েছে। দুই পক্ষের সঙ্গেই গঠনমূলক সংলাপ বজায় রেখে তুরস্ক ‘ইস্তাম্বুল প্রক্রিয়া’র মাধ্যমে তাদের আলোচনার
৩২ মিনিট আগে
দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (APEC) সম্মেলন শেষে দেশে ফিরে সংসদ ভেঙে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি।
১ ঘণ্টা আগে
“হলুদ রেখা” বলতে গাজার সেই অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে, যেখান থেকে ইসরাইলি বাহিনী ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির অধীনে সরে গেছে। এটি কোনো বাস্তব সীমারেখা নয়, বরং একটি কাল্পনিক রেখা, যা গাজা শহরের দক্ষিণ থেকে খান ইউনিসের উত্তরের মধ্যে দিয়ে চলে কার্যত গাজাকে দুই ভাগে ভাগ করেছে।
১ ঘণ্টা আগে