Ad T1

ভারতের হামলার কড়া জবাব পাকিস্তানের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫, ০৯: ৫১

পেহেলগাম হামলা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় হিন্দুত্ববাদী ভারত। এসব হামলায় পাকিস্তানে অন্তত ২৬ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হন। ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল বলে দিল্লি দাবি করলেও ইসলামাবাদ বলেছে, হামলা হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর ও মসজিদে।

কট্টর হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদির বাহিনীর হামলার পর কড়া জবাব দিয়েছে পাকিস্তানও। পাল্টা হামলায় ভারতে ১৫ জন নিহত হয়েছে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান দাবি করেছেÑ তারা ভারতের পাঁচটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এবং একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এ ছাড়া ভারতের একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর এবং কয়েকটি সীমান্ত চেকপোস্ট গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের পর নিজেদের বিচার-বিবেচনা অনুযায়ী ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ফলে হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশী দেশ দুটি পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বনেতারা দিল্লি ও ইসলামাবাদকে সংযম প্রদর্শনের আহবান জানিয়েছেন। খবর ডন, জিও নিউজ, সামা টিভি, আলজাজিরা ও বিবিসির।

পেহেলগামে হামলার পর থেকেই ভারত চেষ্টা করছিল পাকিস্তানের আগ্রাসনের বয়ান তৈরি করতে। সেভাবেই তারা পরিকল্পনা সাজাচ্ছিল। যদিও তারা তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারেনি। কিন্তু দেশটি প্রত্যাশিত সমর্থন না পেলেও রণহুঙ্কার বজায় রাখে। এরমধ্যে মঙ্গলবার কথিত সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে হামলার নামে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে ২৬ জন পাকিস্তানি নিহত এবং ৪৬ জন আহত হন।

ভারত বলছে, মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তান ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে তাদের হামলা চালানোর ঘটনা পেহেলগাম হামলাসহ ‘সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের নিরবচ্ছিন্ন প্রশ্রয়’-এর জবাব দিতেই।

দিল্লিতে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বুধবার সকালে এ কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’ বা পারিপার্শ্বিক ক্ষয়ক্ষতি যতটা কম রেখে শুধুমাত্র ‘সন্ত্রাসবাদী’ ঘাঁটি ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরেই এ হামলা চালানো হয়।

এ সময় ভারতের একাধিক বিমান ভূপাতিত করা হয়েছে বলে পাকিস্তান যে দাবি করেছে, সে ব্যাপারে ভারত কোনো মন্তব্য করেনি। অভিযানে ভারতের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, সে সম্পর্কেও কিছু বলা হয়নি।

পাকিস্তানের সেনা মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানিয়েছেন, ভারত তার দেশের ছয়টি জায়গায় ২৪টি স্থাপনায় বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর শারকিয়া, মুরদিক, শিয়ালকোট এবং শকরগড় ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের কোটলি ও মুজাফ্ফরাবাদে এসব হামলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ভারত পাকিস্তানের মসজিদগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। এটি মোদি সরকারের আমলে বেড়ে ওঠা সংকীর্ণ মানসিকতার প্রতিফলনÑ যেখানে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের টার্গেট করা হচ্ছে।

ভারতের হামলার প্রতিক্রিয়ায় কড়া জবাব দিয়েছে পাকিস্তানও। এসব হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লি। ভারতীয় সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন ৪৩ জন। এসব গোলাবর্ষণ হয়েছে ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুঞ্চ ও তাংদারে বেসামরিক এলাকায়।

লড়াই-পাল্টা লড়াইয়ের মধ্যেই ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন ভূপাতিত করার পাশাপাশি একটি ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার এবং অসংখ্য সীমান্ত চেকপোস্ট গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। এ ছাড়া সীমান্তে তীব্র গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে বলে জানানো হয় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক ব্রিফিংয়ে।

পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জানান, যুদ্ধবিমানের মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল, একটি রাশিয়ার তৈরি সু-৩০ ও অন্যটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান রয়েছে। সু-৩০ ও মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সোভিয়েত আমলে তৈরি।

এই জবাবেই শান্ত হচ্ছে না পাকিস্তান। ভারতের হামলার পর দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিজেদের বিচার-বিবেচনা অনুযায়ী ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকের পর দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।

পাকিস্তান ভারতের ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রতি শোক জানিয়েছে তারা। ভারতের হামলাকে ‘উসকানিমূলক ও কাপুরুষোচিত’ উল্লেখ করে ইসলামাবাদ বলেছে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের আগ্রাসন থেকে নিজ দেশের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করেছে।

ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক আকাশপথেও। এ সংঘাতের কারণে ইউরোপগামী অনেক ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন এবং এশিয়ার একাধিক এয়ারলাইনস তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে।

সামা টিভির খবরে বলা হয়, বুধবার ভারতজুড়ে ২০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং কমপক্ষে ১৮টি বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

সংঘাত যেন পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধে রূপ না নেয় সেজন্য প্রতিবেশী দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহবান জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। তবে গাজায় বর্বরতার জন্য অভিযুক্ত ইসরাইল সরাসরি ভারতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এটি লজ্জার। আমরা যখন ওভাল (অফিসের) দরজা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম তখনই আমরা এটি সম্পর্কে শুনেছিলাম। আমি আশা করি এটি খুব দ্রুত শেষ হবে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, আশা করি এ পরিস্থিতির দ্রুত শেষ হবে এবং ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্ব একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে যাবে।

প্রতিবেশী দুই দেশের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে ‘দুঃখ’ ও ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে চীন। দেশটি জানিয়েছে, চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ভারত ও পাকিস্তান এমন দুই প্রতিবেশী, যাদের আলাদা করা যায় না এবং তারা চীনেরও প্রতিবেশী। চীন সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, আমরা ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশকেই শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, শান্ত ও সংযত থাকা এবং পরিস্থিতি আরো জটিল করে তোলে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সংঘাতের বিষয়ে তারা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় সমাধানের পক্ষে এবং (রাশিয়া) আশা করে যে দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে চলমান মতবিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মুখপাত্র বলেছেন, নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে ভারতের সামরিক অভিযানের বিষয়ে মহাসচিব খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি দুই দেশকে সামরিক দিক থেকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহবান জানিয়েছেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের ভার বিশ্ব বহন করতে পারবে না।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারো দিল্লি ও ইসলামাবাদকে ‘সংযম প্রদর্শনের’ আহবান জানিয়েছেন।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত রুভেন আজার, যার দেশ গাজায় নির্মম গণহত্যা চালাচ্ছে।

এক্স হ্যান্ডেলে আজার লেখেন, ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে ইসরাইল। সন্ত্রাসীদের জানা উচিত, নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করে পার পেয়ে তাদের লুকানোর কোনো জায়গা নেই।

গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার মধ্যে এবার যুদ্ধে জড়াল দেশ দুটি। এর আগে দুই দেশই নিজেদের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা নেয়।

সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে ভারত। প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা স্থগিত, ভারতের বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ ও ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত