ইসরাইলি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক বিদেশে কীভাবে কাজ করে?

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৫, ১৪: ৪৭

বিভিন্ন সময় বিদেশের মাটিতে টার্গেট করে চালানো বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর নাম এসেছে। বিশেষ করে এসেছে তাদের গোয়েন্দা তৎপরতার গল্প।

ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার প্রথমদিনেই ইরানে বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। তবে এ ধরণের হামলা এটিই প্রথম নয়।

বিজ্ঞাপন

২০২৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন লেবাননের ইরানপন্থি শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ'র প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ।

২০২৪ সালের এপ্রিলে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কূটনৈতিক ভবনকেও লক্ষ্যবস্তু করেছিল ইসরাইল এবং এই হামলায় ইরানি বিপ্লবী গার্ড ও অন্যান্য কর্মীসহ মোট ১৩ জন নিহত হন।

ওই বছর জুলাই মাসে আরেক হামলায় ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ে তেহরানে নিহত হন।

যদিও ইসরাইল এই হত্যার দায় স্বীকার করেনি।

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন ওঠে—ইসরাইল কীভাবে তার শত্রুদের বিরুদ্ধে এত সফল অভিযান চালাতে পারে? ইসরাইলি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে? তাদের কী ধরণের সক্ষমতা রয়েছে?

প্রধান দুই ইউনিট

মোসাদ:

মোসাদ গঠিত হয় ইসরাইল প্রতিষ্ঠার প্রায় দেড় বছর পর, ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে।

তাদের কাজ ইসরাইলকে বাইরের হুমকি থেকে রক্ষা করা। এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যই ছিল ইসরাইলের অস্তিত্ব নিরাপদ রাখা।

শাবাক বা শিন বেট:

শাবাক বা শিন বেট গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে।

এই গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্ব হলো দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

আমান

আমান হলো ইসরাইলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা, যা প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাধারণ সদর দপ্তরের অধীনে কাজ করে।

এই সংস্থার মূল কাজ হলো তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে সামরিক কমান্ডকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করা।

ইসরাইলে গোয়েন্দা সংস্থার ইতিহাস ইসরাইলের অস্তিত্বের চেয়েও পুরনো।

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ‘শাই’ নামে একটি গোয়েন্দা সংস্থা এখানে কাজ করত, যা ছিল ইহুদি আধা-সামরিক সংগঠন ’হাগানাহ’-এর গোয়েন্দা শাখা।

ইসরাইল সৃষ্টির পর ‘আমান’ তৈরি করা হয় হাগানাহর ধারণার ওপর ভিত্তি করে।

আমান বেশ কয়েকটি ইউনিট নিয়ে গঠিত, তবে ৮২০০, ৯৯০০ এবং ৫০৪ হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। যারা গাজায় ইসরাইলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এই ইউনিটগুলোর দায়িত্ব হলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরান থেকে আসা গোয়েন্দা ও সামরিক হুমকি শনাক্ত করা।

ইউনিট ৮২০০

ইউনিট ৮২০০-কে ইসরাইলি গোয়েন্দা ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে ধরা হয় এবং এই ইউনিটের মাধ্যমেই ইসরাইলি সেনাবাহিনী ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তাদের গোয়েন্দা তৎপরতা পরিচালনা করে।

ইউনিট ৮২০০ ইসরাইলের সব অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তারা সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে কাজ করে।

ইউনিট ৮২০০-কে দেওয়া দায়িত্বসমূহ:

  • যোগাযোগ ব্যবস্থার ওয়্যারট্যাপিং (গোপনে আড়ি পাতা)।
  • গোয়েন্দা ও সামরিক তথ্য ডিকোড করা।
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেট থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।
  • সাইবার হুমকির শনাক্তকরণ।
  • গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ইলেকট্রনিক ও সাইবার ডিভাইস তৈরি করা।

ইউনিট ৮২০০ গোপন তথ্য পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে কাজ করা ব্যক্তি ও দলগুলোকেও ব্যবহার করে।

এই ইউনিট গঠিত হয় ১৯৫২ সালে এবং প্রথম নাম ছিল 'সেকেন্ড ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস ইউনিট' অর্থাৎ, 'দ্বিতীয় গোয়েন্দা পরিষেবা ইউনিট'। পরে এই ইউনিটকে ৮৪৮ বা ৫১৫ নামেও ডাকা হতো।

ইউনিট ৯৯০০

যদি ইউনিট ৮২০০-কে ইসরাইলের ’কান’ বলা হয়, তাহলে ইউনিট ৯৯০০-কে তার ’চোখ’ বলা যেতে পারে।

এই ইউনিটের দায়িত্ব হলো ছবি ও ভিডিও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা। এজন্য এই ইউনিট স্যাটেলাইট, গোয়েন্দা বিমান ও ড্রোন ব্যবহার করে।

এসব ছবি ও ভিডিওর তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে সেনা কমান্ডার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের কাছে রিপোর্ট পৌঁছে দেয়াও এই ইউনিটের দায়িত্ব।

তথ্য অনুযায়ী, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইরানকে পর্যবেক্ষণ করাও ইউনিট ৯৯০০-এর দায়িত্ব। যা ইসরাইলের গোয়েন্দা স্যাটেলাইট 'হরাইজন ১৩' দিয়ে করা হয়।

ইউনিট ৫০৪

ইউনিট ৫০৪ গঠন করা হয়েছে মানুষের গোয়েন্দা তথ্য (হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স) সংগ্রহের জন্য।

এই ইউনিটের প্রধান দায়িত্ব হলো দেশের ভেতরের হুমকিগুলো নজরে রাখা, তবে এর পাশাপাশি এই ইউনিট ইসরাইলের সীমান্তের বাইরেও গুপ্তচর নিয়োগ করে।

এই ইউনিটে কাজ করা সৈন্য ও গোয়েন্দারা গাজাসহ অন্যান্য দেশেও সক্রিয়।

ব্রাঞ্চ ৫৪

২০২৩ সালের জুনে ইসরাইলি মিডিয়া জানায়, ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে নতুন একটি গোয়েন্দা ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার কাজ হবে ইরান এবং "পাসদারান-ই-ইনকিলাব" (ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী)-এর সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া।

এই গোয়েন্দা ইউনিটের একটি অংশ ইরানের সেই স্থানগুলো শনাক্ত করে, যেখানে যুদ্ধ শুরু হলে আক্রমণ চালানো যাবে।

ইরানের ওপর সাম্প্রতিক হামলায় ইসরায়েলের এই গোয়েন্দা ইউনিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত