স্পেনে ক্রীড়া সেন্টারে নামাজে নিষেধাজ্ঞা, মুসলিমদের ক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২১: ৫১

স্পেনের দক্ষিণ-পূর্ব একটি শহর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি খেলাধুলার মাঠ ও স্পোর্টস সেন্টারে ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন নিষিদ্ধ করেছে। এ সিদ্ধান্ত মূলত স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিদ্ধান্তটি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন স্পেনের বামপন্থী সরকারও। খবর আলজাজিরার।

স্পেনের অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী এলমা সাঈজ শুক্রবার এই সিদ্ধান্তকে ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দেন। তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে আহ্বান জানান, তারা যেন এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং নাগরিকদের কাছে ক্ষমা চায়।

বিজ্ঞাপন

এই নিষেধাজ্ঞা পাশ করেছে হুমিল্লা শহরের মধ্য-ডানপন্থী পপুলার পার্টির নেতৃত্বাধীন পৌরসভা। এই শহরের মুসলিম বাসিন্দারা কয়েক বছর ধরে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছিলেন স্থানীয় স্পোর্টস সেন্টারগুলোতে। এখন সেসব জায়গায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব প্রথমে দিয়েছিল কট্টর-ডানপন্থী দল ভক্স। পরে কিছু সংশোধনীর মাধ্যমে প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়। মুরসিয়া অঞ্চলের ভক্স দল এক্স (টুইটার)–এ এক পোস্টে লেখে, ‘স্পেন চিরকালই খ্রিষ্টীয় শিকড়ের দেশ ছিল, এবং তাই থাকবে!’

তবে শহরের মেয়র সেভে গঞ্জালেজ স্পেনের জনপ্রিয় পত্রিকা এল পাইস–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, এই সিদ্ধান্ত কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে নেওয়া হয়নি। বরং তারা এমন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দিচ্ছেন, যেগুলো শহরের নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরে।

তবে স্পেনে ইসলামিক কমিউনিটিগুলোর ইউনিয়নের সেক্রেটারি মোহাম্মদ এল গাইদৌনি এই সিদ্ধান্তকে স্পষ্টভাবে ‘প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামবিদ্বেষ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি কড়া ভাষায় সমালোচনা করে বলেন, মুসলিম ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে শহরের সংস্কৃতির বাইরের বিষয় বলে অভিহিত করাটাই ভুল এবং বৈষম্যমূলক।

এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা স্পেনের সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি, কারণ স্পেন ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারকে সমর্থন করে।

মন্ত্রী সাঈজ আরো বলেন, এই সিদ্ধান্ত এমনসব নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যারা বছরের পর বছর ধরে আমাদের শহরগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছেন, সমাজে অবদান রেখেছেন এবং পুরোপুরি একীভূত হয়েছেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসলামবিদ্বেষবিরোধী বিশেষ দূত মিগুয়েল মোরাতিনোস এই সিদ্ধান্তে ‘বিস্মিত’ এবং ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, স্পেনের কিছু অঞ্চলে যেভাবে বিদেশি-বিরোধী ও ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য বাড়ছে, তা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।

প্রসঙ্গত, ইউরোপের আরেক দেশ ইতালি গত বছর উত্তর-পূর্ব একটি বৃহৎ শিল্প বন্দর শহর মনফালকোনে, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি অভিবাসী বাস করেন, সেখানে ডানপন্থী মেয়র আনা মারিয়া সিসিন্ট একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নামাজ নিষিদ্ধ করেছিলেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত