
রকীবুল হক

নিরীহ আলেম হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক মাওলানা যুবায়ের আহমাদ রাজধানীর লালবাগ মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি ইসলামি রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তিনি নানাভাবে বাধাবিঘ্ন ও পিটুনির শিকার হন।
পুলিশের গ্রেপ্তারের হাত থেকেও রেহাই পাননি ইসলামী ঐক্যজোটের এই সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। বিনা অপরাধে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে তাকে জড়ানো হয় জঙ্গি-সন্ত্রাসীসংশ্লিষ্ট ছয় মামলায়। ছয় মাস জেলে কাটাতে হয় তাকে।
এমনকি ২১ দিন রিমান্ডের নামে মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হন হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি মাওলানা যুবায়ের আহমাদ। গ্রেপ্তারের তিন মাস পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জেলে থাকার কারণে মাদরাসার চাকরি থেকেও তাকে বাদ দেয় কর্তৃপক্ষ।
আওয়ামী সরকার যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই দেশের আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে বলে জানান মাওলানা যুবায়ের আহমাদ। আমার দেশকে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসেই জুলুম-নির্যাতন করে এ দেশ শাসনের চিন্তা করে।
তারা আলেম-ওলামাদের ওপর জুলুম-নিপীড়নের পাশাপাশি মাদরাসা-মসজিদ বন্ধের চেষ্টা চালায়। এভাবে তারা ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার চিন্তা করেছিল। কিন্তু জনগণ তাদের জুলুমের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ায় দ্বিতীয়বার আর ক্ষমতায় আসতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় টার্মে ক্ষমতায় এসে জুলুমের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে ক্ষমতায় থাকার চিন্তা করেন। সে অনুযায়ী ১৫ বছর জুলুম করে মনে করছিল যে আমি টিকে গেছি। কিন্তু জুলুমেরও তো একসময় শেষ আছে। আল্লাহ জালেমকে ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। সেই অবস্থাটাই হয়েছে গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে। তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে পতিত আওয়ামী সরকার আলেম-ওলামাদের ওপর এত জুলুম করেছে, যা আগে কেউ দেখেছে বলে মনে হয় না।
যুবায়ের আহমাদ বলেন, বিগত সরকারের সময়ে মুফতি আমিনীকে একাধিকবার জেলে নেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় তার মৃত্যুবরণ হয়। সেই আমিনীকে দমানোর জন্য কি না করেছে সরকার? তার ছেলেকে গুম করেছে, জেলে নিয়ে কষ্ট দিয়েছে। তারপরও তিনি দমেননি।
শাপলা চত্বরের ঘটনায় শত শত মানুষ হতাহত হয়েছে উল্লেখ করে হেফাজতের এই নেতা বলেন, সে সময় হত্যাকাণ্ড নিয়ে শেখ হাসিনা ব্যঙ্গ করেন। বলেনÑ ওরা রক্ত মেখে শুয়ে ছিল, যখন পুলিশ খোঁচা দিয়েছে, তখন উঠে দৌড় দিয়েছে। নিষ্ঠুরতার একটা সীমা থাকা দরকার। মানুষ যেখানে আহত-নিহত হয়েছেন, সেখানে তিনি এভাবে আলেম-ওলামাদের দমন-পীড়ন করেন।
এ প্রসঙ্গে যুবায়ের আহমাদ জানান, সেদিন পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মতিঝিলের একটি মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন তার ছেলে। রাতে খবর পেয়ে তাকে উদ্ধারের জন্য পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সেখানে যান।
পথে দেখতে পান, বায়তুল মোকাররমের আশপাশের এলাকায় রক্তে রঞ্জিত রাস্তায় সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে পানি দিয়ে পরিষ্কার করছে। ময়লার একটি গাড়ির পেছন দিকে ময়লার সঙ্গে রক্ত ঝরছিল আর ছেঁড়া পাঞ্জাবি-টুপি ছিল। মতিঝিলের শাপলা চত্বরের পাশের একটি মসজিদে গিয়ে দেখি বহু আহত ব্যক্তি কাতরাচ্ছে। ছেলে ছাড়াও আহত কয়েকজনকে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি।
২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলন ঘিরে আলেম-ওলামাদের ব্যাপকহারে ধরপাকড় চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একপর্যায়ে গ্রেপ্তার হন মাওলানা যুবায়ের আহমাদ।
গ্রেপ্তারের সময়কার দৃশ্য মনে করে তিনি বলেন, রমজানের ৪ তারিখে লালবাগ কেল্লার মোড়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রথমে তাকে নেওয়া হয় ডিবিতে। পরে আদালতের মাধ্যমে সেখানে ২১ দিনের মতো রিমান্ডে নেওয়া হয় এই আলেমকে।
রিমান্ড শেষে তাকে নেওয়া হয় কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে। পরে নেওয়া হয় কাশিমপুর কারাগারে। এভাবে দীর্ঘ ছয় মাস তাকে জেলে বন্দি করে রাখা হয়। রিমান্ডে মানসিক নির্যাতনসহ চরম কষ্টের মধ্য দিয়ে এই সময়গুলো পার করেন তিনি।
যুবায়ের আহমাদ জানান, ‘রমজান মাসে বাসায় ইফতারির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। আমিও ইফতার তৈরিতে সহযোগিতা করছিলাম। মাগরিবের আগে হঠাৎ আমার বাসায় নক করে ডিবি পুলিশ। বাসার সামনে পুলিশের গাড়ি দেখে রাস্তার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ভিড় করেন। নক করার পর দরজা খুলতেই দেখি ডিবি পুলিশের কয়েকজন সদস্য।
তারা পরিচয় দিয়ে বলেন, আমাদের সঙ্গে আপানকে যেতে হবে। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলামÑ আমার কোনো ওয়ারেন্ট আছে কি না, কেন আটক করা হচ্ছে? তারা বলল এত কথা বলার সুযোগ নেই, আপনি পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে যান। ওরা একটা অ্যাগ্রেসিভ আচরণ করেন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন একজন হিন্দু অফিসার। খুব তাড়াতাড়িই আমাকে বের হতে হলো। সেখান থেকে সোজা ডিবি অফিসে নিয়ে রাখা হয়।
ডিবি অফিসে নিয়ে ইফতারের পর তাকে বসিয়ে রাখা হয়। একপর্যায়ে তার আত্মীয় মাওলানা জসিম উদ্দিনের সন্ধান চান। তিনি বাসার নম্বর না দিলেও এলাকার নাম বলেন। পরে তাকেও আনতে যায় পুলিশ।
যুবায়ের আহমাদ বলেন, ডিবিতে একজন অফিসার তার বিস্তারিত তথ্য নেন। একপর্যায়ে তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে ফোনে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গারদে নেওয়া হলে সেখানে গ্রেপ্তার করে আনা আরও অনেক আলেমের সঙ্গে দেখা হয় তার।
আগে থেকে কোনো মামলা না থাকলেও ডিবিতে নিয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসীসংক্রান্ত ছয়টি মামলা দেওয়া হয় মাওলানা যুবায়ের আহমাদের বিরুদ্ধে। একের পর এক বিভিন্ন থানায় ২১ দিন রিমান্ডে ছিলেন তিনি। রিমান্ডে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, কত দিন ধরে তিনি রাজনীতি করেন। কোথায় থাকেন, কেমনে চলেন? এসব রাজনীতি করেন কেন? মানুষ মারার রাজনীতি কেন করেন ইত্যাদি। এভাবে শারীরিক নির্যাতন না করলেও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেন তাকে। এ সময় গালাগাল-খারাপ ব্যবহার করা হয়।
জেলজীবন সম্পর্কে এই আলেম বলেন, জেলে গিয়ে প্রথমে খুব খারাপ লাগছিল। কারণ তিনি প্রথমবারের মতো জেলে যান। তাকে জেলের জঙ্গি বিল্ডিংয়ে রাখা হয়। কাশিমপুরে থাকাকালে তাদের সঙ্গে চোর-বাটপার ও ছিনতাইকারীদেরও রাখা হয়। জেলে ঢোকানোর আগে অন্যদের সঙ্গে আলেম-ওলামাদেরও পায়ের ওপর ভর দিয়ে লাইন করে বসতে বলা হয়। তারপর একজন একজন করে পুরো শরীর তল্লাশি করে। পরে এক এক করে জেলের ভেতরে ঢোকানো হয়।
কারাগারে সাধারণ কয়েদিদের মতো কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়নি এই আলেমকে। অন্যরা টেলিফোন সুবিধা ও বাইরের খাবার কেনার সুযোগ পেলেও, তার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। অন্যান্য সেলের বন্দিরা প্রতি সপ্তাহে কথা বলার সুযোগ পেলেও তিনি তা পাননি। তিন মাস পর্যন্ত তার পরিবারের কোনো খোঁজখবর নিতে পারেননি তিনি। পরিবার কিছুই জানতে পারেনি। চার মাসের মাথায় পরিবার খবর পায় যে তিনি কাশিমপুরে আছেন।
দীর্ঘ চেষ্টার পর পর্যায়ক্রমে ছয়টি মামলায় জামিন পান তিনি। এ প্রসঙ্গে যুবায়ের আহমাদ বলেন, ‘আমি একাই ছিলাম উপার্জনকারী ব্যক্তি। জেলে যাওয়ার কারণে ছয় মাস পরিবারের সদস্যদের খুব কষ্ট হয়ে গেছে। জমানো টাকা খরচ করে সংসার চালিয়েছে পরিবার।
আইন-আদালত করতে গিয়েও অনেকটা নিঃস্ব হয়ে যান তারা। এদিকে জেলে যাওয়ার কারণে লালবাগ মাদরাসার শিক্ষক পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর সেই কর্মস্থল ফিরে পাই। তিনি বলেন, আমি আলোচিত কেউ ছিলাম না, আমাকে গ্রেপ্তার করা হবেÑ এটা কখনো মনেই করিনি। কারণ আমি অনেকটা নিরীহ ছিলাম।
অনেক মানুষ শেখ হাসিনার পতন দেখার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। সবাই হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন। মনে করছিলেনÑ এই জুলুম-নির্যাতনে মনে হয় শেষ হবে না। আসলে জুলুমের মাত্রা যখন বাড়ে, আল্লাহর সাহায্য তখনই আসে, যেমন এবার এসেছে। এমনই মন্তব্য করেন জেল-জুলুমের শিকার এই আলেম।
এসব জুলুম-নির্যাতনে জড়িতদের যথাযথভাবে আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত বলে মনে করেন মাওলানা যুবায়ের আহমাদ। তিনি বলেন, তারা যেভাবে গুম, খুন, অত্যাচার করেছে, তাতে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনোই সুযোগ নেই। বরং তাদের ফাঁসি ছাড়া আর কোনো বিচার এ জাতি মেনে নেবে বলে মনে হয় না। এই বিচার করলে ফ্যাসিবাদীদের কেউ মুক্তি পাবে বলে মনে করি না।
এমবি

নিরীহ আলেম হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক মাওলানা যুবায়ের আহমাদ রাজধানীর লালবাগ মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি ইসলামি রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তিনি নানাভাবে বাধাবিঘ্ন ও পিটুনির শিকার হন।
পুলিশের গ্রেপ্তারের হাত থেকেও রেহাই পাননি ইসলামী ঐক্যজোটের এই সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। বিনা অপরাধে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে তাকে জড়ানো হয় জঙ্গি-সন্ত্রাসীসংশ্লিষ্ট ছয় মামলায়। ছয় মাস জেলে কাটাতে হয় তাকে।
এমনকি ২১ দিন রিমান্ডের নামে মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হন হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি মাওলানা যুবায়ের আহমাদ। গ্রেপ্তারের তিন মাস পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জেলে থাকার কারণে মাদরাসার চাকরি থেকেও তাকে বাদ দেয় কর্তৃপক্ষ।
আওয়ামী সরকার যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই দেশের আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে বলে জানান মাওলানা যুবায়ের আহমাদ। আমার দেশকে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসেই জুলুম-নির্যাতন করে এ দেশ শাসনের চিন্তা করে।
তারা আলেম-ওলামাদের ওপর জুলুম-নিপীড়নের পাশাপাশি মাদরাসা-মসজিদ বন্ধের চেষ্টা চালায়। এভাবে তারা ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার চিন্তা করেছিল। কিন্তু জনগণ তাদের জুলুমের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ায় দ্বিতীয়বার আর ক্ষমতায় আসতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় টার্মে ক্ষমতায় এসে জুলুমের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে ক্ষমতায় থাকার চিন্তা করেন। সে অনুযায়ী ১৫ বছর জুলুম করে মনে করছিল যে আমি টিকে গেছি। কিন্তু জুলুমেরও তো একসময় শেষ আছে। আল্লাহ জালেমকে ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। সেই অবস্থাটাই হয়েছে গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে। তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে পতিত আওয়ামী সরকার আলেম-ওলামাদের ওপর এত জুলুম করেছে, যা আগে কেউ দেখেছে বলে মনে হয় না।
যুবায়ের আহমাদ বলেন, বিগত সরকারের সময়ে মুফতি আমিনীকে একাধিকবার জেলে নেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় তার মৃত্যুবরণ হয়। সেই আমিনীকে দমানোর জন্য কি না করেছে সরকার? তার ছেলেকে গুম করেছে, জেলে নিয়ে কষ্ট দিয়েছে। তারপরও তিনি দমেননি।
শাপলা চত্বরের ঘটনায় শত শত মানুষ হতাহত হয়েছে উল্লেখ করে হেফাজতের এই নেতা বলেন, সে সময় হত্যাকাণ্ড নিয়ে শেখ হাসিনা ব্যঙ্গ করেন। বলেনÑ ওরা রক্ত মেখে শুয়ে ছিল, যখন পুলিশ খোঁচা দিয়েছে, তখন উঠে দৌড় দিয়েছে। নিষ্ঠুরতার একটা সীমা থাকা দরকার। মানুষ যেখানে আহত-নিহত হয়েছেন, সেখানে তিনি এভাবে আলেম-ওলামাদের দমন-পীড়ন করেন।
এ প্রসঙ্গে যুবায়ের আহমাদ জানান, সেদিন পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মতিঝিলের একটি মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন তার ছেলে। রাতে খবর পেয়ে তাকে উদ্ধারের জন্য পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সেখানে যান।
পথে দেখতে পান, বায়তুল মোকাররমের আশপাশের এলাকায় রক্তে রঞ্জিত রাস্তায় সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে পানি দিয়ে পরিষ্কার করছে। ময়লার একটি গাড়ির পেছন দিকে ময়লার সঙ্গে রক্ত ঝরছিল আর ছেঁড়া পাঞ্জাবি-টুপি ছিল। মতিঝিলের শাপলা চত্বরের পাশের একটি মসজিদে গিয়ে দেখি বহু আহত ব্যক্তি কাতরাচ্ছে। ছেলে ছাড়াও আহত কয়েকজনকে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি।
২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলন ঘিরে আলেম-ওলামাদের ব্যাপকহারে ধরপাকড় চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একপর্যায়ে গ্রেপ্তার হন মাওলানা যুবায়ের আহমাদ।
গ্রেপ্তারের সময়কার দৃশ্য মনে করে তিনি বলেন, রমজানের ৪ তারিখে লালবাগ কেল্লার মোড়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রথমে তাকে নেওয়া হয় ডিবিতে। পরে আদালতের মাধ্যমে সেখানে ২১ দিনের মতো রিমান্ডে নেওয়া হয় এই আলেমকে।
রিমান্ড শেষে তাকে নেওয়া হয় কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে। পরে নেওয়া হয় কাশিমপুর কারাগারে। এভাবে দীর্ঘ ছয় মাস তাকে জেলে বন্দি করে রাখা হয়। রিমান্ডে মানসিক নির্যাতনসহ চরম কষ্টের মধ্য দিয়ে এই সময়গুলো পার করেন তিনি।
যুবায়ের আহমাদ জানান, ‘রমজান মাসে বাসায় ইফতারির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। আমিও ইফতার তৈরিতে সহযোগিতা করছিলাম। মাগরিবের আগে হঠাৎ আমার বাসায় নক করে ডিবি পুলিশ। বাসার সামনে পুলিশের গাড়ি দেখে রাস্তার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ভিড় করেন। নক করার পর দরজা খুলতেই দেখি ডিবি পুলিশের কয়েকজন সদস্য।
তারা পরিচয় দিয়ে বলেন, আমাদের সঙ্গে আপানকে যেতে হবে। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলামÑ আমার কোনো ওয়ারেন্ট আছে কি না, কেন আটক করা হচ্ছে? তারা বলল এত কথা বলার সুযোগ নেই, আপনি পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে যান। ওরা একটা অ্যাগ্রেসিভ আচরণ করেন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন একজন হিন্দু অফিসার। খুব তাড়াতাড়িই আমাকে বের হতে হলো। সেখান থেকে সোজা ডিবি অফিসে নিয়ে রাখা হয়।
ডিবি অফিসে নিয়ে ইফতারের পর তাকে বসিয়ে রাখা হয়। একপর্যায়ে তার আত্মীয় মাওলানা জসিম উদ্দিনের সন্ধান চান। তিনি বাসার নম্বর না দিলেও এলাকার নাম বলেন। পরে তাকেও আনতে যায় পুলিশ।
যুবায়ের আহমাদ বলেন, ডিবিতে একজন অফিসার তার বিস্তারিত তথ্য নেন। একপর্যায়ে তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে ফোনে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গারদে নেওয়া হলে সেখানে গ্রেপ্তার করে আনা আরও অনেক আলেমের সঙ্গে দেখা হয় তার।
আগে থেকে কোনো মামলা না থাকলেও ডিবিতে নিয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসীসংক্রান্ত ছয়টি মামলা দেওয়া হয় মাওলানা যুবায়ের আহমাদের বিরুদ্ধে। একের পর এক বিভিন্ন থানায় ২১ দিন রিমান্ডে ছিলেন তিনি। রিমান্ডে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, কত দিন ধরে তিনি রাজনীতি করেন। কোথায় থাকেন, কেমনে চলেন? এসব রাজনীতি করেন কেন? মানুষ মারার রাজনীতি কেন করেন ইত্যাদি। এভাবে শারীরিক নির্যাতন না করলেও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেন তাকে। এ সময় গালাগাল-খারাপ ব্যবহার করা হয়।
জেলজীবন সম্পর্কে এই আলেম বলেন, জেলে গিয়ে প্রথমে খুব খারাপ লাগছিল। কারণ তিনি প্রথমবারের মতো জেলে যান। তাকে জেলের জঙ্গি বিল্ডিংয়ে রাখা হয়। কাশিমপুরে থাকাকালে তাদের সঙ্গে চোর-বাটপার ও ছিনতাইকারীদেরও রাখা হয়। জেলে ঢোকানোর আগে অন্যদের সঙ্গে আলেম-ওলামাদেরও পায়ের ওপর ভর দিয়ে লাইন করে বসতে বলা হয়। তারপর একজন একজন করে পুরো শরীর তল্লাশি করে। পরে এক এক করে জেলের ভেতরে ঢোকানো হয়।
কারাগারে সাধারণ কয়েদিদের মতো কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়নি এই আলেমকে। অন্যরা টেলিফোন সুবিধা ও বাইরের খাবার কেনার সুযোগ পেলেও, তার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। অন্যান্য সেলের বন্দিরা প্রতি সপ্তাহে কথা বলার সুযোগ পেলেও তিনি তা পাননি। তিন মাস পর্যন্ত তার পরিবারের কোনো খোঁজখবর নিতে পারেননি তিনি। পরিবার কিছুই জানতে পারেনি। চার মাসের মাথায় পরিবার খবর পায় যে তিনি কাশিমপুরে আছেন।
দীর্ঘ চেষ্টার পর পর্যায়ক্রমে ছয়টি মামলায় জামিন পান তিনি। এ প্রসঙ্গে যুবায়ের আহমাদ বলেন, ‘আমি একাই ছিলাম উপার্জনকারী ব্যক্তি। জেলে যাওয়ার কারণে ছয় মাস পরিবারের সদস্যদের খুব কষ্ট হয়ে গেছে। জমানো টাকা খরচ করে সংসার চালিয়েছে পরিবার।
আইন-আদালত করতে গিয়েও অনেকটা নিঃস্ব হয়ে যান তারা। এদিকে জেলে যাওয়ার কারণে লালবাগ মাদরাসার শিক্ষক পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর সেই কর্মস্থল ফিরে পাই। তিনি বলেন, আমি আলোচিত কেউ ছিলাম না, আমাকে গ্রেপ্তার করা হবেÑ এটা কখনো মনেই করিনি। কারণ আমি অনেকটা নিরীহ ছিলাম।
অনেক মানুষ শেখ হাসিনার পতন দেখার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। সবাই হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন। মনে করছিলেনÑ এই জুলুম-নির্যাতনে মনে হয় শেষ হবে না। আসলে জুলুমের মাত্রা যখন বাড়ে, আল্লাহর সাহায্য তখনই আসে, যেমন এবার এসেছে। এমনই মন্তব্য করেন জেল-জুলুমের শিকার এই আলেম।
এসব জুলুম-নির্যাতনে জড়িতদের যথাযথভাবে আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত বলে মনে করেন মাওলানা যুবায়ের আহমাদ। তিনি বলেন, তারা যেভাবে গুম, খুন, অত্যাচার করেছে, তাতে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনোই সুযোগ নেই। বরং তাদের ফাঁসি ছাড়া আর কোনো বিচার এ জাতি মেনে নেবে বলে মনে হয় না। এই বিচার করলে ফ্যাসিবাদীদের কেউ মুক্তি পাবে বলে মনে করি না।
এমবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
নীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
১৭ ঘণ্টা আগে
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
২ দিন আগে
বছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
২ দিন আগে