শেখ পরিবারের বাগানবাড়ি এখন মাদকের আখড়া

নাসির আহমেদ, গাজীপুর
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ১২

গাজীপুরের কোনাবাড়ী শিল্প এলাকায় নির্মাণ করা হয় শেখ পরিবারের আড্ডাখানা। এ জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে তেলিরচালায় অন্তত ১০ একর জমিতে বানানো হয় শেখ হাসিনা ও রেহানার বাগানবাড়ি। বিশাল আকারের শান বাঁধানো পুকুরঘাট, সুইমিংপুল, খেলার মাঠ, বড় বড় গাছের বাগান, গাড়ি রাখার জন্য বিস্তীর্ণ পার্কিং ও অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স বাংলোসহ আরাম-আয়েশের সব উপকরণই ছিল। গত ৫ আগস্ট জনরোষে শেখ হাসিনার মসনদের সঙ্গে ধ্বংস হয়ে গেছে এ বাগানবাড়িও।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, তেলিরচালার বাগানবাড়িতে একান্তে সময় কাটাতেন শেখ হাসিনা, রেহানাসহ শেখ পরিবারের সদস্যরা। মাঝে মধ্যে সেখানে গোপন বৈঠক করতেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও। তাদের নিরাপত্তা ও স্থাপনা দেখভাল করার জন্য এই রিসোর্টের আশপাশে সারাক্ষণ কড়া পাহারা থাকত। নজরদারি চালাতেন গোয়েন্দা সদস্যরা। আর পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করতেন সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি এই গোপন আস্তানা থেকে আশপাশের পোশাক শিল্পের জুট ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করতেন।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও রেহানা ভারতে পালানোর পর জনরোষের শিকার হয় বাগানবাড়ি। সেখানে হামলা চালিয়ে অধিকাংশ স্থাপনা ভেঙে ফেলে বিক্ষুব্ধ জনতা। সুযোগ সন্ধানী কিছু মানুষ লুট করেছেন অনেক মূল্যবান সম্পদ। পুরো এলাকাটি পড়ে আছে বিরান। সেই থেকে সেখানে আস্তানা গেড়েছে মাদক কারবারিরা। নিয়মিত আড্ডা বসে নেশাখোরদের।

স্থানীয়রা জানান, ৫ তারিখের আগ পর্যন্ত এই বাগানবাড়ি নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকলেও ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর এটি জংলায় পরিণত হয়েছে। দিনের বেলা এলাকার শিশু-কিশোররা সেখানে খেলাধুলা করলেও সন্ধ্যা নামতে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা, অবাধে চলে পতিতাবৃত্তিসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ড। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি না থাকায় এটি অপরাধীদের জন্য রীতিমত অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।

এদিকে গাজীপুর শহরের পাশে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা ও মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির পাশে ফাওকাল এলাকায় অন্তত ২০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে শেখ রেহানার আরেক অত্যাধুনিক বিলাসবহুল বাগানবাড়ি। এটি তার দেবর ও শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিকীর নামে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। এখানেও আধুনিকতা ও জৌলুসের কমতি ছিল না। জনরোষ থেকে রক্ষা পায়নি এ আস্তানাও। বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় ভবনের অভ্যন্তরীণ সবই ধ্বংস হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ভেতরের আসবাবপত্রসহ সবকিছু। জনশূন্য এ বাগানবাড়ি যাতে করে মাদকসেবীদের আস্তানায় পরিণত না হয় সেজন্য এলাকাবাসী এর ফটকে ইটের গাঁথুনি দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে।

এ ছাড়া শহরের পাশে বাঙাল গাছ এলাকায় শেখ রেহানার ভাসুর রফিক সিদ্দিকীর নামে অন্তত শত বিঘা জমির ওপর স্থাপিত আরেকটি বিশাল আকারের বাংলোবাড়ি রয়েছে। শত শত কোটি টাকার এ স্থাপনাও গণবিক্ষোভে ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ফটকও বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকাবাসী।

গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় শেখ রেহানার বাগানবাড়ি বিষয়ে কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার মাহমুদ বলেন, ‘এগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি, তারা তাদের নিজস্ব কেয়ারটেকারের মাধ্যমে দেখভাল করবেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। নির্দেশনা পেলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় শেখ পরিবারের দুটি বাগানবাড়ি প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন বলেন, ‘এগুলোর বিষয়ে এসিল্যান্ডকে খোঁজখবর নিতে বলেছি। সবকিছু জেনেশুনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সম্পাদনা : আব্দুর রাজ্জাক

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত