হোম > আমার দেশ স্পেশাল

মেট্রোস্টেশনে মেলে প্রাথমিক চিকিৎসা, জানেন না যাত্রীরা

আজাদুল আদনান

ঢাকা মেট্রোরেল যাত্রীদের নিরাপত্তায় প্রতিটি স্টেশনে রয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসাকক্ষ। দুর্ঘটনা, হঠাৎ অসুস্থতা কিংবা জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সেবার সুযোগ থাকলেও এ বিষয়ে জানেন না অধিকাংশ যাত্রী। প্রচারের অভাব ও প্রশিক্ষিত জনবল না থাকায় কার্যত নীরবেই চলছে এ সেবা। ফলে অনেক যাত্রী প্রয়োজনের সময়ও এ সেবা না পেয়ে ছুটছেন হাসপাতালে।

তিন বছর আগে চালু হওয়া ঢাকা মেট্রোরেল এখন রাজধানীর গণপরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার লাইনের ১৬টি স্টেশনের প্রতিটিতেই রয়েছে ‘ফার্স্ট এইড রুম’ বা প্রাথমিক চিকিৎসাকক্ষ। মেট্রোতে যাতায়াতকালে দুর্ঘটনায় আহত বা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া যাত্রীদের তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে নেওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্রাম ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে এসব কক্ষে।

মেট্রোরেল চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার মানুষ এসব প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে সেবা নিয়েছেন। এমনকি একবার ট্রেনে ভ্রমণকালে প্রসববেদনা ওঠা এক প্রসূতিকে আগারগাঁও স্টেশনের চিকিৎসা কেন্দ্রে সফলভাবে সন্তান প্রসব করানোর ঘটনাও রয়েছে।

তবে এত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের বড় একটি অংশই এ সেবার কথা জানেন না। কারণ, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নেই তেমন কোনো প্রচার। ট্রেনে নিয়মিতভাবে গন্তব্য, স্টেশন ও যাত্রা-সংক্রান্ত ঘোষণা থাকলেও অসুস্থ হলে কোথায় প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া যাবে—সে বিষয়ে কোনো ঘোষণা বা দৃশ্যমান নির্দেশনা নেই।

সরেজমিনে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত অন্তত ছয়টি স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি স্টেশনে ফার্স্ট এইড রুম থাকলেও যাত্রীরা তা জানতে পারেন কেবল নিজ উদ্যোগে আনসার সদস্য বা স্টাফদের জিজ্ঞেস করলে। এ বিষয়ে আলাদা করে বড় কোনো সাইনবোর্ড বা ঘোষণার কোনো ব্যবস্থা নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালুর পর যেভাবে এটির প্রচারের প্রয়োজন ছিল, তাতে ঘাটতি দেখা গেছে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্য সহকারী কিংবা ফার্মাসিস্টের কোনো পদ নেই। নেই কোনো প্রশিক্ষিত জনবলও। স্টেশনের সাধারণ কর্মীরাই এই সেবা দিয়ে থাকেন। নির্দিষ্ট জনবল না থাকায় প্রচারেও গুরুত্ব নেই কর্তৃপক্ষের।

চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ মানুষ এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিয়েছেন, সে তথ্য জানাতে পারেনি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, প্রতিটি স্টেশনে গড়ে মাসে ১০ থেকে ১৫ জন যাত্রী এ সেবা নেন। সে অনুযায়ী ১৬টি স্টেশনে মাসে প্রায় তিন হাজার মানুষ সেবা নিয়ে থাকেন। তবে বাস্তবে কিছু স্টেশনে এই সংখ্যা আরো বেশি। আগারগাঁও, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মতিঝিল স্টেশনের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, এসব স্টেশনে গড়ে মাসে ৪০ জনের বেশি যাত্রী সেবা নেন।

স্টেশন কন্ট্রোলারদের মতে, প্রশিক্ষিত জনবল না থাকাই মূল সমস্যা। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী কিংবা ফার্মাসিস্ট— এমন কোনো পদই নেই। স্টেশনের সাধারণ কর্মীরাই সীমিত জ্ঞান দিয়ে মাথা ঘোরা, কেটে যাওয়া বা পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় ন্যূনতম সেবা দেন। জটিল হলে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো ছাড়া উপায় থাকে না।

গরম ও রমজান মাসে অসুস্থ যাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায় বলে জানান তারা। বিশেষ করে নারী যাত্রীদের মধ্যে মাথা ঘোরা ও দুর্বলতার সমস্যা বেশি দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে অবস্থা গুরুতর হলেও প্রশিক্ষিত জনবল না থাকায় যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।

জানা গেছে, দক্ষ জনবল না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা সেন্টারের প্রচারে গুরুত্ব দিতে আগ্রহী নয় কর্তৃপক্ষ। কারণ, এতে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা আরো বাড়বে। প্রশিক্ষিত নির্দিষ্ট জনবল দেওয়ার আবেদন জানানো হলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

গত ১৫ ডিসেম্বর শেওড়াপাড়া থেকে মতিঝিল যাচ্ছিলেন ইকরাম হোসেন। মাস তিনেক ধরে মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী তিনি। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হলে স্টেশনে যে প্রাথমিক চিকিৎসা মেলে, সে সম্পর্কে জানেন না এই যাত্রী। তিনি আমার দেশকে বলেন—‘গন্তব্য, স্টেশন, এমনকি মালামাল ভুলে না যাওয়ার ঘোষণাও শুনি। কিন্তু অসুস্থ হলে কোথায় চিকিৎসা পাওয়া যাবে—এমন কোনো তথ্য কখনো শুনিনি। এ ব্যাপারে কোনো সাইনবোর্ড না থাকায় যাত্রীদের জানারও কোনো সুযোগ নেই।’

একই দিন মিরপুর-১০ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে নেমেই অসুস্থতা বোধ করেন রাসেল সরকার (২৫)। প্রায় ১৫ মিনিট স্টেশনে বিশ্রাম নেন। কিন্তু জানা না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে কোনো ধরনের সেবা নিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘স্টেশনে যে ন্যূনতম চিকিৎসা, বিশ্রামের ব্যবস্থা আছে, তা আমার জানা ছিল না। ফলে যাত্রীছাউনিতেই বসে থাকতে হয়েছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছি।’

গত মঙ্গলবার কয়েকটি স্টেশনের প্রাথমিক চিকিৎসাকক্ষে গিয়ে রোগীর শয্যা থেকে শুরু করে গজ, ফিতা, ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ, মলম, প্যারাসিটামল, কাঁচি, চেয়ার-টেবিল ও স্ট্রেচার দেখা যায়। তবে সেবাদানকারী প্রশিক্ষিত কাউকে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ট্রেনে ভ্রমণকালে এক নারীর প্রসব বেদনা উঠলে এক নারী ডাক্তার ও স্কাউট সদস্যদের সহায়তায় আগারগাঁও স্টেশনের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে সফলভাবে বাচ্চা প্রসব করানো হয়। ফলে এসব স্টেশনে অন্তত স্বাস্থ্য সহকারী পদে লোক রাখার পরামর্শ জনস্বাস্থ্যবিদদের।

মতিঝিল স্টেশনের কন্ট্রোলার জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমাদের সেবা দেওয়ার মতো দক্ষ জনবল নেই। মাথা ঘোরা, পড়ে যাওয়া, কেটে যাওয়ার মতো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক আমাদের স্টাফরা ন্যূনতম সেবা দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে পাঠান।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের কন্ট্রোলার আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘যে হারে মানুষ সেবা নিতে আসে, তাতে প্রশিক্ষিত জনবল খুবই জরুরি। সেটি না থাকায় প্রচারে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। গরম ও রমজান মাসে প্রচুর মানুষ সেবা নিতে আসে। যাত্রীরা যে ধরনের জটিলতা নিয়ে আসেন, তাতে প্রতিটি স্টেশনে অন্তত একজন করে নার্স থাকা জরুরি বলে মনে করি।’

এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ আমার দেশকে বলেন, ফার্স্ট এইডে যে ধরনের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়োজন, তা রয়েছে। আলাদা করে চিকিৎসক বা নার্স নেই। বড় ধরনের জটিলতা সাধারণত দেখা দেয় না। তাই আলাদা প্রচারের প্রয়োজন মনে করা হয়নি।

তিনি আরো জানান, হার্ট অ্যাটাকসহ জরুরি পরিস্থিতিতে সিপিআর দেওয়ার সক্ষমতা তৈরিতে স্টেশন স্টাফদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

হিন্দুত্ববাদী ভারতের কপট মাইনরিটি কার্ড

সাজানো চার্জশিটে বছরের পর বছর জেলে ধুঁকছেন বহু আলেম

কামালের দাপটে ছেলে জ্যোতিরও বিপুল অবৈধ সম্পদ

পাঠ্যবই পরিমার্জনে গুরুত্ব পেল জুলাই বিপ্লব

চালু হচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত বাণিজ্যিক আদালত, প্রস্তুতি সম্পন্ন

বিশাল সংবর্ধনায় আজ ফিরছেন তারেক রহমান

জামায়াতকে হাতে রেখে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় এনসিপি

বাংলাদেশ মিশন ঘিরে হিন্দু জঙ্গিদের তাণ্ডব

কৃষক লীগ ক্যাডারের কারবার চালান স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা

চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে হামলার দাবি গুজব