হোম > সারা দেশ

পলাতক আওয়ামীদের গাড়ি যাচ্ছে আমলাদের সেবায়

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম

এমপি কোটায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৩০টি বিলাসবহুল গাড়ি এখন ব্যবহার করবেন সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিলামে বিক্রির পরিবর্তে গাড়িগুলো সরকারি পরিবহন অধিদপ্তরে হস্তান্তর করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

গত বুধবার বিকালে চিঠি পাওয়ার পর দাপ্তরিক কাজ শেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেডে থাকা গাড়িগুলো পরিবহন পুলে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে কাস্টম। তবে এক্ষেত্রে কিছু জটিলতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ অতীতে এ ধরনের সিদ্ধান্তের কোনো নজির নেই। নিলামে বিক্রি ছাড়া বিকল্প উপায়ে গাড়িগুলো ব্যবহার করায় ভবিষ্যতে আইনি জটিলতায় পড়ার শঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।

সূত্র জানিয়েছে, শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩৮টি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেন পতিত সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। এর মধ্যে ৩১টি গাড়ি ছাড় করার আগেই পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। এর পরপরই ভেঙে দেওয়া হয় সংসদ। ফলে গাড়িগুলো ছাড় করার আর কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ গাড়ি ছাড় করার আগে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে হলে স্পিকারের ইস্যু করা প্রত্যয়নপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় সেই সুযোগ হাতছাড়া হয় পলাতক মন্ত্রী-এমপি ও তাদের ওয়ারিশদের।

এদিকে বন্দরে খালাস হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য ছাড় করানোর যে বাধ্যবাধকতা আছে সেই সময়সীমাও পেরিয়ে যায়। ফলে নিলামের মাধ্যমে গাড়িগুলো বিক্রি করে জায়গা খালি করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে চিঠি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের তাগিদ আমলে নিয়ে নিলাম বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। নিয়মানুযায়ী ৩০০ থেকে ৮০০ শতাংশ শুল্ক ধরে জাপানে প্রস্তুত ২০২২ মডেলের এসব গাড়ির ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয় তিন কোটি থেকে ১৬ কোটি টাকা পর্যন্ত।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, কাস্টমকেন্দ্রিক নিলাম সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে বিলাসবহুল গাড়িগুলো পানির দামে কিনে নিতে। প্রথম নিলামে সিন্ডিকেট করে ৮ থেকে ১৬ কোটি টাকার গাড়ির দাম তোলা হয় এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। কাস্টমসের নিলাম নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথম নিলামে ভিত্তিমূল্যের ৬০ শতাংশ দাম উঠলে বিডারের অনুকূলে পণ্য সরবরাহ করার নিয়ম রয়েছে।

এছাড়া প্রথম নিলামে ভিত্তিমূল্যের নির্ধারিত দাম না উঠলে দ্বিতীয় নিলামের আয়োজন করার বিধান রয়েছে। প্রথম নিলাম থেকে দ্বিতীয় নিলামে বেশি দাম উঠলেই বিডারকে পণ্য সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে কাস্টম হাউস। এ নিয়মে প্রথম নিলামে যেই গাড়ির দাম এক লাখ টাকা উঠেছে দ্বিতীয় নিলামে এক লাখ এক টাকা উঠলে ওই বিডারকে সেই গাড়ি সরবরাহ করতে বাধ্য হবে কাস্টমস।

নিলাম সিন্ডিকেটের এ চালাকি ধরে ফেলে সরকার। দ্বিতীয় নিলামের আয়োজন না করেই বিলাসবহুল গাড়িগুলো নিজেদের অনুকূলে নিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবশেষে সে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বন্দরে পাঠানো হয়েছে।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, এনবিআরের কাস্টমস, রপ্তানি, বন্ড ও আইটি শাখার সদস্য কাজী মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিটি চট্টগ্রাম কাস্টমসে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পতিত সরকারের সাবেক মন্ত্রী এমপিদের ৩০টি গাড়ি দীর্ঘদিন পড়ে থেকে গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিলেও যথাযথ দাম না পাওয়ায় বিকল্প উপায়ে গাড়িগুলো ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার এইচএম কবীর জানান, বিগত সরকারের শেষ সময়ে আনা ৩৮টি গাড়ির মধ্যে সাতটি গাড়ি আমদানিকারকরা সরকার পতনের আগেই ছাড় করে নেন। বাকি ৩১টি গাড়ির মধ্যে একটি গাড়ির আমদানিকারক আদালতে মামলা করে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই গাড়ি কাস্টমসের জিম্মায় থাকবে। বাকি ৩০টি গাড়ি সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যানবাহন অধিদপ্তরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব দাপ্তরিক কাজ শেষ করে গাড়িগুলো পরিবহন পুলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে নিলাম ছাড়া বিকল্প উপায়ে নিষ্পত্তির বিধান আইনে থাকলেও তা কখনো ব্যবহার করা হয়নি। তাই এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আইনি কোনো জটিলতায় পড়ার শঙ্কা আছে কি নাÑতা খতিয়ে দেখতে আরো কিছুটা সময় লাগতে পারে।

সরকারের এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম কাস্টম বিডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব চৌধুরী। তার দাবি গাড়িগুলোর ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করার সময় বাজারমূল্য থেকে অনেক বেশি ধরেছিল কাস্টম হাউস। আর এ কারণেই নিয়ম রক্ষায় প্রথম নিলামে নামমাত্র দাম দিয়েছিলেন তারা। দ্বিতীয় নিলামে অবশ্যই ন্যায্য দাম দিত সবাই। সরকারের উচিত ছিল নির্বাহী অর্ডারে গাড়িগুলো না নিয়ে নিলামে অংশ নিয়ে কিনে নেওয়া। এতে নিয়মের ব্যত্যয় না হওয়ার পাশাপাশি বড় অঙ্কের রাজস্ব আয়ও হতো কাস্টমসের।

রিকন্ডিশন গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার সাবেক সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান, শুধু এমপি কোটার ৩০টি গাড়ি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা নয়, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আটকে আছে আরো কয়েকশ গাড়ি। যার একাংশ ইতিমধ্যে স্ক্র্যাপ হিসেবেও বিক্রি করা হয়েছে। তাই এমপি কোটার গাড়ির মতো অন্য গাড়িগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হলে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আমদানি করা সম্পদগুলো নষ্ট হতো না।

এই চালানে নিয়ে আসা গাড়ি সরকার পতনের ঠিক আগ মুহূর্তে ছাড় করে নিয়েছিলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং ব্যারিস্টার সুমনসহ অন্তত সাতজন পলাতক মন্ত্রী-এমপি। আর বাকি যাদের গাড়ি আটকে পড়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন—অভিনেত্রী তারানা হালিম, জান্নাত আরা হেনরী, ময়মনসিংহের আবদুল ওয়াহেদ, জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এস আল মামুন, বাঁশখালীর মুজিবুর রহমান, খুলনার এসএম কামাল হোসাইন, নওগাঁর সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, গাইবান্ধার শাহ সারোয়ার কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসএকে একরামুজ্জামান, নেত্রকোনার সাজ্জাদুল হাসান, ঝিনাইদহের নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, যশোরের তৌহিদুজ্জামান এবং সুনামগঞ্জের মুহাম্মদ সাদিক প্রমুখ।

কাদের আনিসুল জিয়াউল আজমের ব্যবসা বহাল

অবশেষে কাঠগড়ায় ১৫ আর্মি অফিসার

এমপি নেই, তবু ৪০ ভাগ ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব

ঐক্য চায় তৃণমূল, ভিন্ন হিসাব নেতাদের

খুনের রাজ্য তৈরি করেন আসাদুজ্জামান নূর

রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ডিসিদেরই রাখছে ইসি

বছরের শুরুতে মাধ্যমিকের বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা

গণহারে জামিন পাচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসররা

শাপলার বিরোধে শঙ্কায় গণতান্ত্রিক উত্তরণ

মেট্রোরেলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতার শঙ্কা