হোম > আমার দেশ স্পেশাল

মৃত্যু বাড়াচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ের চিকিৎসা ঘাটতি

নিউমোনিয়া দিবস আজ

আজাদুল আদনান

শহর থেকে গ্রাম সব জায়গায় দ্রুত বাড়ছে নিউমোনিয়ার রোগী। স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসাব্যবস্থার দুর্বলতায় এই ভাইরাস থেকে মুক্তি মিলছে না শিশুদের। আক্রান্তদের অধিকাংশ স্থানীয় পর্যায়ের হলেও চিকিৎসা শহরকেন্দ্রিক। ফলে থামানো যাচ্ছে না প্রাণহানি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দেড় দশকে চিকিৎসাব্যবস্থার অনেক উন্নতি হলেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নিউমোনিয়ার সঠিক ব্যবস্থাপনা শতভাগ সক্ষমতা নেই। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে ত্রুটি রয়েছে। ফলে একদিকে বাড়ছে প্রাণহানি, অন্যদিকে জীবন বাঁচাতে ঢাকামুখী হচ্ছে মানুষ।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ সূচনা আশার ভবিষ্যৎ’।

দুই মাসের শিশু নুসরাত। হঠাৎ তীব্র জ্বর শুরু হলে নেওয়া হয় ভোলা সদর হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নুসরাতের নিউমোনিয়া শনাক্ত হয়। পরবর্তী সময়ে অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ঢাকার বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয় শিশুটিকে। অবস্থার আরো অবনতি হলে বেসরকারি একটি হাসপাতালেও নেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি নুসরাতকে।

বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটির জরিপ বলছে, প্রতি বছর লাখের বেশি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। যার ৫২ শতাংশই চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এছাড়া ৫০ ভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর নেই। এক-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অক্সিজেনের অন্যান্য উৎসও অনুপস্থিত। এতে সঠিক সময় চিকিৎসাকেন্দ্র না আসার কারণে মারা যায় ৪৫ শতাংশ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু।

শিশুদের চিকিৎসায় দেশের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যকেন্দ্র রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার শিশুকে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশই নিউমোনিয়ার। মৃত্যু হয়েছে অন্তত অর্ধশত শিশুর।

হাসপাতালটির পেডিয়াট্রিকস পালমনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান (কামরুল) আমার দেশকে বলেন, হাসপাতালে নিউমোনিয়া রোগীর অধিকাংশই শহরের বাইরে থেকে আসা। তারা খারাপ অবস্থা নিয়েই আসছে, ফলে সুস্থ হয়ে ফেরা কঠিন। এ কারণে মৃত্যুর বড় অংশ ঢাকার বাইরের রোগী।

তিনি আরো বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে আমাদের সমস্যা হলো- জ্বর, ঠান্ডা, কাশিতে আক্রান্ত হলেই বাচ্চাকে পল্লী চিকিৎসকদের কাছে নেওয়া হয়। অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হলে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হোন অভিভাবকরা। কিন্তু শিশুর হাইপক্সেমিয়া (অক্সিজেনের ঘাটতি) প্রতিরোধ করার মতো ব্যবস্থাপনা উপজেলা হাসপাতালে খুব একটা নেই। ফলে সংকটাপন্ন অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে পাঠালেও তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরিবহন ব্যবস্থা অত্যাধুনিক না হওয়ায় পথেই রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়। শেষে হাসপাতালে পৌঁছালেও রোগীর তুলনায় শয্যা কম থাকায় চিকিৎসা শুরুর আগেই চলে যায় নিউমোনিয়ার রোগী।

ডা. কামরুল বলেন, নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন শুরুর পর এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কমে এসেছিল। কিন্তু সেটির কাভারেজ কমে যাওয়ায় মূলত সমস্যা হচ্ছে। আবার বুস্টার ডোজ না দেওয়ায় একটা সময় পর একই শিশু পুনরায় আক্রান্ত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) তথ্যমতে, দেশে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে প্রায় ৭ দশমিক ৪ জন শিশু নিউমোনিয়ায় প্রাণ হারাচ্ছে। আক্রান্তদের মারাত্মক নিউমোনিয়ায় ভোগা ৪২ ভাগের রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি (হাইপক্সেমিয়া) থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ৯৫ শতাংশ হাসপাতালে নিউমোনিয়া চিকিৎসার সুব্যবস্থাপনা নেই। যে কারণে ফুসফুস সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে ৪২ শতাংশ চিকিৎসা নেওয়ার জন্য নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেওয়া হয়। অন্য কোনো চিকিৎসাসেবা না থাকায় ৩৪ শতাংশ শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয়। অভিভাবকদের অসেচতনতা এবং সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন মাপার যন্ত্রসহ নানা সংকটে দেশে পাঁচ বছর ধরে মৃত্যুর হার প্রায় একই।

আইসিডিডিআরবি’র মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানীয় আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো আগের তুলনায় বাড়লেও মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিউমোনিয়া নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশ অক্সিজেন সংকটে ভোগেন।

বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিকস পালমনোলজি ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান আমার দেশকে বলেন, নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর বড় কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার। দেখা যাচ্ছে ভাইরাল নিউমোনিয়া হলেও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। ফলে আক্রান্তকে সঠিক সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক দিলেও আর কাজ হয় না।

এ বিষয়ে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম বলেন, নিউমোনিয়ায় এত মৃত্যুর কারণ দেরি করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং দেরিতে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা। অনেক সময় বাবা-মা বুঝতে পারেন না, শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। যাদের ঠান্ডা কাঁশি হয় তাদের ৩০ শতাংশ হয় নিউমোনিয়ার জন্য।

শ্রম রপ্তানির আড়ালে রাশিয়ায় সৈনিক নিয়োগের সিন্ডিকেট

হাইকোর্টের রায়ে জটিল পরিস্থিতিতে ইসি

১৩ নভেম্বর কী হবে ঢাকায়, চিন্তায় কলকাতার আ.লীগ নেতারাও

পুড়ে অঙ্গার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী জুলহাস

দেশজুড়ে চোরাগোপ্তা হামলার পরিকল্পনা

নামসর্বস্ব সংগঠনের ব্যানারে ফের সক্রিয় ইসকন

অমিত শাহের বন্ধু পরিচয়ে দাদাগিরি আ.লীগ নেতার

আওয়ামীপন্থি সিবিএ নেতাদের পুনর্বাসনকেন্দ্র যমুনা অয়েল

ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একযোগে নাশকতা, সন্দেহে আ.লীগ

বিএনপিতে মনোনয়ন নিয়ে সংঘাত বাড়ছে