হোম > আমার দেশ স্পেশাল

ভারতীয় গোয়েন্দা নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা তাপসের অফিসে

বিশেষ প্রতিনিধি

পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সেনা হত্যাযজ্ঞের তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে ঘুরেফিরে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজা ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের নামই বেশি এসেছে। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এই স্বাধীন তদন্ত কমিশন তাপসের সংশ্লিষ্টতার আদ্যোপান্ত খুঁজে বের করেছে। তদন্তের আগে গণমাধ্যমের রিপোর্টেও তাপস ছিলেন আলোচিত।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের আগে ভারতীয় পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর পুরো পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয় এবং সমন্বয়ের জন্য তাপসের অফিস ও বাসায় একাধিক বৈঠক হয়। তাপসের অফিসে এ রকম এক বৈঠকে বসেই ভারতীয় গোয়েন্দাদের নিয়ে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। ভারতীয় কমান্ডো ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ২৪ জন পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত কমিশন তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।

ভারতে পলাতক শেখ হাসিনা ব্যারিস্টার তাপসের ফুপু। শেখ পরিবারের আরেকজন প্রভাবশালী সদস্য বর্তমানে পলাতক শেখ সেলিমও এই পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন বলে তদন্ত কমিশন সাক্ষ্যপ্রমাণে নিশ্চিত হয়েছে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজও এই পরিকল্পনার কথা জানতেন।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসেন। এরপর পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন করা হয়। এর আগে রৌমারী, বড়াইবাড়ী ও পদুয়া সীমান্তে বিডিআরের হাতে ভারতীয় বিএসএফ সদস্যদের হত্যার প্রতিশোধ, সেনা মনোবল ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশের ওপর আধিপত্য বিস্তারের বাসনা নিয়ে সুপরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয় বলে কমিশন মনে করে।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পদুয়া ও রৌমারীর যুদ্ধ বিডিআরের ইতিহাসে শৌর্য, বীর্য ও বীরত্ব প্রদর্শনের অবিস্মরণীয় একটি ঘটনা। ওই খণ্ডযুদ্ধে বিএসএফের যে শোচনীয় ও লজ্জাজনক পরাজয় ঘটে, ভারত কখনোই তা মেনে নিতে পারেনি।

পিলখানায় সংঘটিত বর্বর হত্যাকাণ্ড তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন প্রায় ১১ মাস তদন্ত শেষে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করে। এই কমিশনের প্রধান হলেন মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।

তদন্ত কমিশনের ৩৬০ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যারিস্টার তাপসের বাসায় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের উপস্থিতিতে বিডিআর সদস্যদের একাধিক বৈঠক হয়। একটি বৈঠকে অফিসারদের জিম্মি করার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়, পরে তা পরিবর্তন করে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমের উপস্থিতিতে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার ২৪ জনের একটি দল বৈঠকে অংশ নেয়। সেখানে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তাপসকে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টদের নিরাপদে পালিয়ে যেতে সহায়তার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একাধিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, লেদার লিটন ও তোরাব আলী। এসব পরিকল্পনা সম্পর্কে ৪৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের সিও কর্নেল শামস অবগত ছিলেন এবং তাপস তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সিদ্ধান্তের অনুমোদন নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন।

সাধারণ বিডিআর সদস্যদের ডাল-ভাত কর্মসূচি নিয়ে ক্ষোভকে উসকে দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহ সৃষ্টি করার মাধ্যমে মূল পরিকল্পনা দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করা হয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিডিআরের কিছু সদস্যের সঙ্গে শেখ তাপস, শেখ সেলিমসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। বাসা, অফিস, মসজিদেও এ রকম কিছু বৈঠক হয় বলে সাক্ষ্যপ্রমাণে বেরিয়ে এসেছে। বাস্তবায়ন ও হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যে বিডিআর সদস্যদের মধ্যে বিপুল অর্থ বিতরণ করা হয়েছিল।

তদন্তে উঠে আসে, সংসদ সদস্য গোলাম রেজা ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে পিলখানা এলাকায় আলাউদ্দিন নাসিম, সাবেক এমপি মোর্শেদ, শেখ সেলিম ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তাকে দেখেছেন।

প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সূত্র বলেছে, বিদ্রোহ শুরুর পর ক্যাপ্টেন তানভীর হায়দার নূর স্ত্রীকে পিলখানায় ভারতীয় এনএসজি (ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড) সদস্যদের উপস্থিতির কথা জানান। তার স্ত্রী তাসনুভা মাহা জানান, তিনি বিডিআরের পোশাক পরা তিনজনকে হিন্দিতে গালাগাল করতে শোনেন। সেদিন পিলখানায় হিন্দি, পশ্চিমবঙ্গীয় টানে বাংলা এবং অচেনা ভাষায় কথোপকথন শোনার কথা একাধিক সাক্ষী জানিয়েছেন।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ২৪ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮২৭ জন ভারতীয় পাসপোর্টধারী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তাদের মধ্যে ৬৫ জনের বহির্গমনের তথ্য পাওয়া যায়নি। একই সময়ে ১ হাজার ২২১ জনের বহির্গমনের তথ্য থাকলেও ৫৭ জনের আগমনের কোনো রেকর্ড ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। বিষয়টি আরো তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে কমিশন প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে। বিদেশি ভাষা শোনা, বহিরাগতদের পলায়ন, কল তালিকায় বিদেশি নম্বর, ক্যাপ্টেন তানভীরের শেষ কথোপকথনসহ বিভিন্ন তথ্যকে কমিশন প্রতিবেদনে ভারতের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

কমিশনের প্রতিবেদনের ৭২ নম্বর অনুচ্ছেদের বিদেশি সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে ভারতের সংশ্লিষ্টতা এবং এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কারা-কীভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, তার বিস্তারিত উঠে আসে।

ক. ২০০৮ সালের জুন মাসে, আনুমানিক ১ থেকে ৬ বা ৮ তারিখের মধ্যে, মেজর নাসির নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার বরিশালে ডিজিএফআইয়ের লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুস সালামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুস সালামের সঙ্গে দেখা করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় মেজর নাসির লে. কর্নেল সালামের সঙ্গে দেখা করেন এবং দুটি বই উপহার দিয়ে নিম্নলিখিত তথ্য দিয়েছিলেন—

“মেজর নাসির জানান, তিনি সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরেছেন। একই এয়ারক্রাফটে তিনি আওয়ামী লীগের কিছু শীর্ষ নেতাকে দেখেছেন, যারা ভারতের বারাসাতে ‘র’-এর সঙ্গে বৈঠক করে ফিরছিলেন। সেখানে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহসহ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি বড় ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা করেছে। তাদের বক্তব্য ছিল, আগামী ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে সেনাবাহিনী যেন নৈতিকভাবে দাঁড়াতে না পারে, সেভাবে আঘাত হানার পরিকল্পনা তারা করছে।” লে. কর্নেল সালাম সঙ্গে সঙ্গে ডিজিএফআইয়ের ডিরেক্টর সিআইবি ব্রিগেডিয়ার বারীকে বিষয়টি অবহিত করেছিলেন; কিন্তু তিনি বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো লে. কর্নেল সালামকে তিরস্কার করেছিলেন। (সূত্র : সাক্ষী নম্বর : ৫৭)

খ. ২০০৮ সালের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি মেজর (অব.) নাসির উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি কলকাতা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করেন। প্রথমবার সেখানে গেলে মেজর নাসিরকে তার ভিসার জন্য ডিফেন্স উইংয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরের দিন মেজর নাসির হাইকমিশনে আবার যান, রিসিপশনে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করেন। তারপর তাকে বলা হয়, আগে নিরাজ শ্রীবাস্তবের সঙ্গে দেখা করতে হবে। প্রথম সাক্ষাৎটি ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। দিল্লি থেকে আসা তরুণ কর্মকর্তা মেজর নাসিরকে বিস্কুট ও কফি অফার করেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অর্ধঘণ্টা আলোচনা করেন এবং মেজর নাসিরকে পরের দিন আসতে বলেন। দ্বিতীয় দিন তিনি কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আবেগপ্রবণ এবং পাকিস্তানের দর্শন অনুসরণ করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্মি, নেভি ও এয়ার ফোর্সের ডকট্রিন পাকিস্তানের সঙ্গে একই। এরপর তিনি মেজর নাসিরকে পদুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। মেজর নাসির বলেন, তিনি আমেরিকায় অবস্থান করার কারণে কিছু জানেন না। নিরাজ শ্রীবাস্তব বলেন, Padua-তে বিডিআর ১৬-১৭ জন বিএসএফ সদস্যকে হত্যা করেছে। এটি ছিল একটি গুরুতর উসকানিমূলক ঘটনা। তিনি বলেন, ‘Padua will not go unchallenged and unpunished.’ ২০০৮ সালে আরেকবার এক উচ্চপদস্থ ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে মেজর নাসিরের দেখা হয়। তিনি মাসটি স্মরণ করতে পারেননি, তবে ঘটনাগুলো সবই ২০০৮ সালের মধ্যে হয়েছিল। (সূত্র : সাক্ষী নম্বর : ৯৫) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানা যায়, Mr. Niraj Srivastava ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে Minister পদবিতে নিয়োজিত ছিলেন। (সূত্র : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পত্র নম্বর : ১৯.০০.০০০০.৭৩০.২৮.৩৭.২৫-২৩১৯, তারিখ ২২ অক্টোবর ২০২৫, সংযোজনী : ৫৩)

গ. ঘটনা-পূর্ব ষড়যন্ত্রে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ এবং শেখ সেলিমের উপস্থিতিতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ২৪ জনের একটি কিলার গ্রুপের সঙ্গে বৈঠক হয়। নায়েক শহীদুর রহমান তার ঘনিষ্ঠ তোরাব আলীর (অন্যতম মূল ষড়যন্ত্রকারী, পরে জেলখানায় মৃত) বরাতে বলেন, ‘ভারতীয়দের সঙ্গে বৈঠকের পরে পুরো পরিকল্পনা সাজানো হয় এবং সমন্বয় করার জন্য শেখ ফজলে নূর তাপসের বাসায় বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিল নানক, মির্জা আজম, ফজলে নূর তাপস, শেখ সেলিম, লেদার লিটন এবং তোরাব আলী। সেখানে যখন জানানো হয় যে অফিসারদের হত্যা করা হবে, তখন তোরাব আলী সেখানে আপত্তি করেন। তিনি বলেন, অফিসারদের হত্যা করা যাবে না। তখন শেখ সেলিম তাকে মুরব্বি সম্বোধন করে বলেন, ‘আপনার তো বয়স হয়েছে। আপনার আর এর মধ্যে থাকার দরকার নেই। আপনার ছেলে (লেদার লিটন) আমাদের সঙ্গে থাকলেই হবে।’ (সূত্র : কয়েদি সাক্ষী নম্বর : ৩০)

ঘ. ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সকাল পৌনে ১০টা থেকে ১০টায় পিলখানা এলাকায় সাবেক এমপি মোর্শেদ, শেখ সেলিম কিছু ‘র’-এর সদস্যের উপস্থিতি দেখা যায়। এই ‘র’-এর সদস্যরা সাক্ষী এমপি গোলাম রেজার রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে তার পূর্বপরিচিত ছিলেন। সাবেক এমপি গোলাম রেজা তার সাক্ষ্যে বলেন, ‘এরপর আমি দ্রুত নর্দান মেডিকেল কলেজের দিকে যাই। সেখানে আলাউদ্দিন নাসিম, সাবেক এমপি মোর্শেদ, শেখ সেলিম এবং ‘র’-এর চার-পাঁচজনকে দেখলাম, যাদের আমি আগে থেকেই চিনতাম।’ (সূত্র : রাজনৈতিক সাক্ষী নম্বর : ০১)

ঙ. ক্যাপ্টেন তানভীর হায়দার নূরের স্ত্রী তাসনুভা মাহা ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর ক্যাপ্টেন তানভীরের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার সময় ক্যাপ্টেন তানভীর তাকে পিলখানার ভেতরে ভারতীয় সংস্থা National Security Guard (NSG) of India-এর নাম বলেন। বেগম তাসনুভার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘২৫ তারিখ তানভীরের সঙ্গে যখন আমার শেষ কথা হচ্ছে, তখন আমি ছিলাম খাটের নিচে। বাচ্চাদের নিয়ে তখন আমি লুকিয়ে ছিলাম, সেখান থেকে আমি আবার ওয়ারড্রবের মধ্যে লুকাই, কারণ বুঝতে পারছিলাম পাশেই কোথাও বিডিআর সদস্যরা ঘোরাফেরা করছেন। তানভীরের সঙ্গে শেষ ফোনালাপে তানভীর আমাকে বলেন, লীগের নেতারা অন্য পোশাকে এসেছেন। ওর মুখে আমি এনএসজি নিয়ে কিছু কথা শুনেছি। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না যে এনএসজি কী ও আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। আমি দুবার তাকে জিজ্ঞেস করেছি, এনএসজি কী? তখন একপর্যায়ে তিনি বেশ বিরক্ত হয়ে বলেন, Indians! Indians’.

এছাড়া বেগম তাসনুভা মাহা বলেন, তিনি চুল বড় তিনজনকে বিডিআরের টি-শার্ট ও স্যান্ডেল পরা অবস্থায় দেখেছেন, যারা তাকে হিন্দিতে গালাগাল করেছে এবং তার সন্তানদের ‘পাকিস্তানি লাডলা’ বলেছে। (সূত্র : শহীদ পরিবার সাক্ষী নম্বর : ১২)

চ. ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পিলখানার ভেতরে বিভিন্ন সময় হিন্দিতে, পশ্চিমবঙ্গের উচ্চারণে বাংলা ভাষায়, বাংলা নয় এমন ভাষা এবং ইংরেজিতে কথা বলতে শোনা গেছে। নায়েক শহীদুর, সিপাহি সেলিম, পিলখানা কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মরহুম সিদ্দিকুর রহমান, সিপাহি শাহাদাত, সাক্ষী তাসনুভা মাহা (শহীদ ক্যাপ্টেন তানভীরের স্ত্রী) সিপাহি আব্দুল মতিন স্বচক্ষে হিন্দি ভাষী এবং বাংলা নয় এমন ভাষাভাষী বহিরাগত ব্যক্তিদের বিডিআরের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় ২৫ তারিখ হত্যাকাণ্ড চলাকালীন সময়ে এবং তার অব্যবহিত পরে পিলখানার অভ্যন্তরে দেখেছেন—

১. নায়েক শহীদুরের ভাষ্যমতে, “তখন সকাল প্রায় ১০.১৫ থেকে ১০.৩০-এর মতো বাজে। দেখি তিন নম্বর গেটের দিকে ৫-৬ জন ব্যক্তি বিডিআর সৈনিকের পোশাক পরা লোক দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে বলল—‘ইধার আও’। তাদের বলার ভাষাটা ছিল কমান্ড ভয়েসের মতো। আমি হতচকিত হয়ে যাই। আমি তাদের গালি দিয়ে বলি, ‘একটা গন্ডগোল হইসে, আর তোরা ভাষাও বদলায় ফেলসিস। আমার র‍্যাংক চোখে পড়ে না তোদের!’ তখন তারা নিজেরা কিছু কথা বলাবলি করছিল এবং সেগুলো হিন্দি ভাষাতেই বলাবলি করছিল। এদের মধ্যে অন্তত একজন বাঙালি ছিল। আমি বলতে শুনি, একজন আমাকে দেখিয়ে বলল, ‘হি ইজ এ ভেরি ক্লেভার ম্যান।” (সূত্র : কয়েদি সাক্ষী নম্বর : ৩০)

২. সিপাহি সেলিম বলেন, ‘আমি গুলি করলেও সেগুলো তাদের গায়ে লাগেনি। এরপর আমি গড়িয়ে গড়িয়ে পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে রাস্তায় যাই এবং সেখানে সেই অস্ত্রধারীদের দেখতে পাই। সেখানে দেখি যে তাদের মুখ বাঁধা থাকলেও তাদের চুল সিভিলিয়ানদের মতো লম্বা, বিডিআর কাটিং না এবং তারা হিন্দিতে কথা বলছে। সেখানে প্রায় এ রকম ৮-১০ জন অস্ত্রধারী ব্যক্তি ছিল।’ (সূত্র : কয়েদি সাক্ষী নম্বর : ২০)

৩. হেফাজতে মৃত্যুবরণকারী পিলখানা মসজিদের ইমাম সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী কামরুন নাহার শিরিন তার স্বামীর বরাতে বলেন, ‘আমাকে আমার স্বামী বলেছেন, এ রকম সময় উত্তরদিক থেকে একটি গাড়ি (পিকআপ) এসে দরবারের পশ্চিম গেটে দাঁড়িয়েছে। ওই গাড়ি থেকে প্রচুর সৈনিক অস্ত্রসহ নামে। এই সৈনিকদের হিন্দিতে এবং ইংলিশে কথা বলতে আমার স্বামী শুনেছেন। তারা অন্য সৈনিকদের গুলি করার জন্য কমান্ড করছিল। হিন্দি এবং ইংলিশে ওই সৈনিকরা কী কী বলেছে, সেটাও তিনি আমাকে বলেছিলেন কিন্তু এখন আমার মনে নেই।’ (সূত্র : বিডিআর সাক্ষী নম্বর : ০৩)

৪. সিপাহি শাহাদাতের দেওয়া তথ্যমতে, ‘২৫ তারিখ সকাল আনুমানিক ১০.৩০ থেকে ১১.৩০-এর মধ্যে আমি তিনজন ব্যক্তিকে ওই পথ ধরে দেয়াল টপকে পিলখানার বাইরে চলে যেতে দেখি। এদের পরনে বিডিআরের পোশাক পরিহিত থাকলেও, পায়ে বুট জুতা ছিল না। প্যারেড এবং বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে আমাদের সবার চুল জিরো সাইজ করা থাকলেও এদের চুল সিভিলিয়ানদের মতো ছিল। তবে এদের মুখ বাঁধা ছিল। যেটি আমার আরো দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তা হলো, তারা এমন একটি ভাষায় কথা বলছিল, যেটি মাঝে মাঝে আমার হিন্দি মনে হয়েছে, আবার মনে হয়েছে ঠিক হিন্দিও না। সেটি যে বাংলা ভাষা না, আমি নিশ্চিত। হিন্দি ভাষা আমি বলতে না পারলেও বুঝতে পারি। তারা একটি অদ্ভুত ভাষায় কথা বলতে বলতে চলে গেল। মনে হচ্ছিল হিন্দি আবার হিন্দিও না, এমন ভাষাতেও তারা কথা বলেছে।’ (সূত্র : কয়েদি সাক্ষী নম্বর : ২১)

৫. সিপাহি আব্দুল মতিন বলেন, “মিছিলটি ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান করে এবং আনুমানিক ১০০ থেকে ১৫০ জনের মতো লোকসংখ্যা ছিল। মিছিলের সঙ্গে মিশে দুজন ব্যক্তি উচ্চ স্বরে ‘জয় হিন্দ’ বলছিলেন। ওই দুজনের গায়ে বিডিআর পোশাক ছিল এবং তাদের হাতে এসএমজি অস্ত্র লক্ষ করলাম। তাদের পোশাক কেমোফ্লেজ গেজি ছিল এবং তাদের চেহারা ও ভাষা থেকে আমি বুঝলাম তারা স্থানীয় নয়, কারণ তারা হিন্দি ভাষায় কথা বলছিল।’ (সূত্র : কয়েদি সাক্ষী নম্বর : ২৪)

ছ. লে. কর্নেল তাসনিম, মেজর মুনির, সিপাহি আইয়ুব হিন্দি ভাষা, পশ্চিমবঙ্গের টানে বাংলা ভাষা এবং বাংলা বা হিন্দি নয় অপরিচিত ভাষার কথোপকথন শুনেছেন—

১. লে. কর্নেল তাসনিম বলেন, “পরে রাত সাড়ে ৭টায় একটি পিকআপে দন্ডায়মান দুজন লোক সিগন্যাল সেক্টর অফিসের সামনে মেগাফোনে সৈনিকদের উদ্বুদ্ধ করতে লাগল। তাদের চুল কাঁধ পর্যন্ত লম্বা, ভাষা পশ্চিমবঙ্গের মতো। তারা বলছিল, ‘আর্মির বিরুদ্ধে লড়বো, ঐক্যবদ্ধ থাকো’। উল্লেখ্য, বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে শতভাগ বিডিআর সদস্যের চুল কাটা নিশ্চিত করা হয়েছিল।” (সূত্র : সাক্ষী নম্বর : ৫৪)

২. মেজর সৈয়দ মনিরুল আলম বলেন, ‘রাতে দরবার হলের ফলস সিলিংয়ে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় আমি নিজ কানে এমন ভাষা শুনেছি, যা বাংলা, হিন্দি বা চায়নিজ ছিল না, সম্ভবত চাকমা, তবে আমি নিশ্চিত না। এটা সাব-কন্টিনেন্টেরও কোনো ভাষা হতে পারে।’ (সূত্র : সাক্ষী নম্বর : ৯২)

৩. সিপাহি আইয়ুব বলেন, ‘আমি স্মল আর্মস কোয়ালিফাইড, অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে আমার খুব ভালো ধারণা ছিল। তাই তৎক্ষণাৎ আমি ওদের অস্ত্র দেখেই বুঝতে পেরেছি যে এখানে বহিরাগত লোকজনও আছে। প্রচণ্ড গোলাগুলি করতে করতে দরবার হল ঘিরে ফেলেছিল। আমি দূর থেকে তাদের কিছু কথাও শুনেছিলাম। সেগুলো বাংলা ছিল কিন্তু আমার মনে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দিকের বাংলা টানে তারা কথা বলছিল।’ (সূত্র : কয়েদি সাক্ষী নম্বর : ১৭)

জ. ক্যাপ্টেন শাহনাজ ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে ১৮ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে Search and Rescue Operation-এ অংশগ্রহণ করতে গিয়ে পিলখানা দরবার হলের কাঠে একটি ব্যবহার করা সাবমেশিন গানে (এসএমজি) নজলের সঙ্গে গেরিলা বাহিনীর স্টাইলে বাঁধা একটি বিদেশি স্লিং দেখেন। স্লিংটি ছিল সেনাবাহিনীর মতো জলপাই রঙের এবং তার ওপর Dark Olive রঙের বড় ইংরেজি হরফে ‘TIGER’ লেখা। তার জানা মতে, এ ধরনের স্লিং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অথবা বিডিআর ব্যবহার করে না। গঠন, স্লিংয়ের পুরুত্ব এবং স্লিংটি বাঁধার কৌশল দেখে তার কাছে মনে হয়েছিল এটি অন্য কোনো বিদেশি উৎসের হতে পারে। (সূত্র : সাক্ষী নম্বর : ১০১)

ঝ. ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে গোলাম রেজা (প্রাক্তন এমপি) পিলখানার ভেতরে ও বাইরে কিছু লোককে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখেন কিছু মানুষ ছোট ছোট টিনের ঘরে লাইফ জ্যাকেটগুলো খুলে রেখে পালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের দেখে এমপি গোলাম রেজার মনে হয়েছিল, তারা দেশের কেউ নয়। (সূত্র : রাজনৈতিক সাক্ষী নম্বর : ০১)

ঞ. তোরাব আলীর মোবাইল ফোনে ভারত এবং সিঙ্গাপুরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় হাইকমিশনে ওই টেলিফোনের গ্রাহকদের পরিচয় জানার জন্য চিঠি লেখা হয়েছিল কিন্তু উত্তর পাওয়া যায়নি। (প্রাপ্ত সিডিআর মোবাইল রিপোর্ট দ্রষ্টব্য) মোবাইল ফোন ব্যবহাকারী সম্পর্কে ডিজিএফআই থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে অর্থবহ কোনো কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। (সূত্র : সংযোজনী : ৫৪)

ট. বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে বিএসএফের যোগাযোগ হয়েছে এবং সেনাবাহিনী আক্রমণ শুরু করলে বিএসএফের সহায়তায় ভারতে চলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। (সূত্র : সেনা তদন্ত প্রতিবেদন, পৃষ্ঠা নম্বর : ৭৬৯)

ঠ. ভারত বাংলাদেশে সামরিক অভিযান চালাবে বলে এসআইঅ্যান্ডটির শিক্ষার্থীদের মেজর জেনারেল তারেক এবং লে. জেনারেল মামুন খালেদ কর্তৃক হুমকি দেওয়া হয়েছিল। (সূত্র : সাক্ষী নম্বর : ৪৭)

ড. তৎকালীন সিজিএস লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিনা ইবনে জামালী ১১ ডিভিশনের জিওসির কাছ থেকে এই মর্মে একটি তথ্য পান, ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করছে। তারা একটি প্যারাট্রুপার বাহিনীও প্রস্তুত রেখেছে এই জন্য যে, আমাদের সেনাবাহিনী যদি অভিযান পরিচালনা করে, তাহলে তারা শেখ হাসিনাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে। (সূত্র : সাক্ষী নম্বর : ৫) মেজর জেনারেল মুহম্মদ ফেরদৌস মিয়া, জিওসি ১১ পদাতিক ডিভিশনের ভাষ্যমতে সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সেনা সমাবেশের তথ্যে এফআইইউ সম্ভবত এনএসআই এবং ডিজিএফআই কাছ থেকে শুনেছিল। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সৈন্য সমাবেশের তথ্য তিনি যদি শুনে থাকেন, তবে অবশ্যই তিনি সেটা সেনা সদরে জানিয়েছিলেন। তবে বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। (সূত্র : সাক্ষী নম্বর : ১৩)

ঢ. তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মঈন উ আহমেদের ভাষ্যমতে, ‘আমি ‘ওড়া’ ‘ওড়া’ খবর পাচ্ছিলাম যে if anything goes wrong, এ রকমটি হতে পারে (সশস্ত্র বাহিনী সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে ভারত বাংলাদেশে সামরিক অভিযান চালাবে)। যদি তারা (ভারতীয় বাহিনী) আসত, তাহলে ১৯৭১-এর পর যেমন ফেরত চলে গিয়েছিল, এবার এলে আর ফিরে যেত না। এবার ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অভিযান চালালে Things would have been different। গবেষক অভিনাষ পালিওয়াল ও তার প্রবন্ধে এটাই বলেছেন। এটা আমাদের জন্য would have been very very bad। তিনি দুটো আর্টিকেল লিখেছেন এ বিষয়ে, দুটোই আমার কাছে আছে।’ (সূত্র : সাক্ষী নম্বর : ০১)

ণ. যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের বিখ্যাত স্কুল অব আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের (এসওএএস) শিক্ষক অভিনাষ পালিওয়াল অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস কর্তৃক ২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘India’s Near East : A New History’ গ্রন্থের ২৮৬ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন—

The recently elected prime minister Hasina, who also held the defence portfolio, felt threatened and couldn’t count on the army’s support. ‘She asked India for help … and that’s why we were there’, awaiting orders and ‘preparing for all eventualities when we touch down in Dhaka’, remembers Sandhu.

“Shortly after the killings began, Hasina called her closest ally in New Delhi, top Congress leader and recently appointed finance minister Pranab Mukherjee. Upon hearing what was going on, Mukherjee promised ‘to be responsive’. The ‘SOS’ from Dhaka triggered the mobilisation of paratroopers, and prompted foreign secretary Shivshankar Menon to urgently engage with American, British, Japanese, and Chinese envoys to lobby support for Hasina.”

“Apart from Kalaikunda, paratroopers were mobilised in Jorhat and Agartala. If the order came, Indian troops would enter Bangladesh from all three sides. The aim was to secure the Zia International Airport (renamed Hazrat Shahjalal International Airport) and the Tejgaon airport. Subsequently, the paratroopers would wrest control of Ganabhaban, prime minister’s residence, and evacuate Hasina to safety. The Brigade commander overseeing the operation began distributing ‘first line’ ammunition meant for use during active combat.”

ত. অভিনাষ পালিওয়াল বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর উদ্ধৃতি দিয়ে একই পৃষ্ঠায় লিখেছেন—

“Pinak Ranjan Chakravarty, India’s high commissioner to Dhaka (2007-10) who has family origins in Bangladesh and called Hasina ‘Aapa’ (elder sister) out of respect, says that ‘we did put some forces on alert, and conveyed to Hasina that we’re worried about her safety.”

থ. বাংলাদেশের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মঈন উ আহমেদ জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সম্মুখে তার প্রদত্ত সাক্ষ্যে অভিনাষ পালিওয়ালের ওপরে বর্ণিত উদ্ধৃতিগুলো দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেছেন এবং এই উক্তিগুলো রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

দ. অভিনাষ পালিওয়াল একই গ্রন্থের ২৮৭ পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, ‘I was told by those who were closer to power that Gen. Moeen was asked not to use force otherwise Indian paratroopers will drop in Dhaka within one hour’, says Touhid Hussain, then Bangladesh’s foreign secretary.

এ বিষয়ে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন কর্তৃক প্রেরিত লিখিত প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন নিম্নে উল্লিখিত উত্তর প্রদান করেন, the sentence that is quoted in Paliwal’s book is correct. While the BDR killing took place, I was attending a SAARC meeting in Colombo. Few months later, when I was already shunted out to Foreign Service Academy, I asked casually someone close to power, why the army chief did not take steps to save his officers. He said what I told Paliwal.

ধ. ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে পিলখানায় বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পরপরই শেখ হাসিনা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিকে ফোন করেন এবং তার সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক সহায়তা চান। শেখ হাসিনাকে প্রণব মুখার্জি আশ্বাস দেন যে তাকে (শেখ হাসিনাকে) সব ধরনের সহায়তা করা হবে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শিবশংকর মেনন শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য যুক্তরাজ্য, চীন এবং জাপান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। (সূত্র : দ্য হিন্দু (ভারতীয়), ২২ নভেম্বর ২০২১ এবং আমার দেশ, ২৮ মার্চ ২০১১, সংযোজনী : ৫৫)

ন. বাংলাদেশ পুলিশ ইমিগ্রেশন প্রশাসন শাখার তথ্য অনুযায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পর্যন্ত সময়ে ভারতীয় পাসপোর্টধারী এবং বিদেশি পাসপোর্টধারী ভারতীয় নাগরিকের বাংলাদেশ আগমন এবং বহির্গমনের তথ্য নিম্নরূপ—

১. ২৪-২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ভারতীয় পাসপোর্টধারী এবং বিদেশি পাসপোর্টধারী ভারতীয় নাগরিকের বাংলাদেশ আগমন : ৮২৭ জন আগমন করেছে, তার মধ্যে ৬৫ জনের বহির্গমনের তথ্য পাওয়া যায়নি।

২. ২৪-২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ভারতীয় পাসপোর্টধারী এবং বিদেশি পাসপোর্টধারী ভারতীয় নাগরিকের বাংলাদেশ থেকে বহির্গমন : ১২২১ জন বহির্গমন করেছে, তার মধ্যে ৫৭ জনের আগমনের তথ্য পাওয়া যায়নি। (সূত্র : বাংলাদেশ পুলিশ ইমিগ্রেশন প্রশাসন শাখা স্পেশাল ব্রাঞ্চ স্মারক নম্বর : ৪৪.০১.০০০০.০৮৬.০০৪.২৫/১৩১১, তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, সংযোজনী : ৫৬)

প. সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের সহায়তায় বিডিআরকে পুনর্গঠন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে যাতে আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী গড়ে তোলা যায়, সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিডিআরকে পুনর্গঠন করে তাদের প্রশিক্ষণসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রতিবেশী দেশগুলোর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, বন্ধুপ্রতিম দেশের সহায়তা নিতে কোনো সমস্যা নেই।’ (সূত্র : দৈনিক যুগান্তর ৬ মে ২০০৯ এবং bdnews24.com uploaded on 5 May 2009)

ফ. ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টা-১১টার দিকে পিলখানার গেট খুলে যায় এবং ভেতর থেকে কয়েকটা মাইক্রোবাস বেরিয়ে আম্বালা পার হয়ে চলে যায়। লে. কর্নেল রওশনুল ফিরোজ (অব.) ভেবেছিলেন তার আটকে পড়া ফ্যামিলি ওই মাইক্রোবাসে চলে যাচ্ছে। দ্বিতীয় মাইক্রোবাসটি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লে. কর্নেল রওশনুল ফিরোজ মাইক্রোবাসের দরজা ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে খুলে ফেলেন এবং মাইক্রোবাসটির ভেতরে আলো জ্বলে ওঠে। ভেতরে ছয়-সাতজন লোককে দেখতে পান তিনি। তাদের মাথা ওড়না বা চাদর দিয়ে মোড়ানো ছিল। লে. কর্নেল রওশনুল ফিরোজ তার স্ত্রী এবং বাচ্চার নাম ধরে ডাকাডাকি করতে থাকেন এবং মাইক্রোর ভেতরের পেছনের প্রথম সিটে ট্র্যাক স্যুট পরা জলপাই বা ধূসর কালারের গেঞ্জি গায়ে একজন মোটা গোঁফের লোককে বসা অবস্থায় দেখেন। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ওই লোক লে. কর্নেল রওশনুল ফিরোজকে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলেন ‘হু’? আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘হু’? এরপর জিজ্ঞেস করেন ‘হু আর ইউ’? এরপর তিনবার চিৎকার করে বলেন, ‘ক্লোজ’ ‘ক্লোজ’ ‘ক্লোজ’। মুখ ঢাকা অবস্থায়ও লে. কর্নেল রওশনুল ফিরোজ দুজনকে দেখে বুঝতে পারেন তারা পুরুষ লোক এবং বেশ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং তার মনে হয়েছিল তিনি কোনো মিলিটারি পারসন। মাইক্রোবাসের গ্লাস কালো ছিল। লে. কর্নেল রওশনুল ফিরোজ সেকেন্ড বা থার্ড মাইক্রোবাসটাকে ধরেছিলেন। তার আগে আরো একটা বা দুটি মাইক্রোবাস চলে গেছে। গাড়িগুলো ১০টা বা সাড়ে ১০টা বা ১১টার দিকে বের হয়েছে। গাড়ির লোকজনকে অন্তত বাংলাদেশি লোক বলে লে. কর্নেল রওশনুল ফিরোজের মনে হয়নি।’ (সূত্র : সাক্ষী নম্বর : ৬৬)

ব. ১৬ মার্চ ২০০৯-এ India Today-তে প্রকাশিত ‘More than a Mutiny’ নামক এক প্রবন্ধে সৌরভ শুকলা লেখেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ ভারত শেখ হাসিনাকে উদ্ধার করার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে। ত্রিপুরায় একটি সম্মুখবর্তী বিমানবাহিনী ঘাঁটিতে দুটি এবং কলকাতায় একটি কমান্ডো প্লাটুন, সে জন্য প্রস্তুত রাখা হয়। (সূত্র : সংযোজনী : ৫৭)

সক্রিয় হচ্ছে আলোচিত কয়েকটি ‘কিংস পার্টি’

ভারত ছেড়ে এবার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে কামাল

ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের নিরাপত্তা সুরক্ষায় ইসির ১৫ চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ নিয়ে এখন আশাবাদী ৮০% নাগরিক

সিন্ডিকেট এবার ধরাশায়ী, ভারত সীমান্তে পচছে বিপুল পেঁয়াজ

আওয়ামী প্রধান বিচারপতি ওবায়দুলের যত অপকর্ম

জুলাই সনদের নোট অব ডিসেন্টের ভবিষ্যৎ কী

ভারত আ.লীগ হাসিনা জড়িত, তাপস মূল সমন্বয়কারী

অনিরাপদ সাবমেরিন ক্যাবলের অনুমোদনে সামিট গ্রুপের চাপ

খালেদা জিয়ার লাগানো কাঁঠালিচাঁপার গাছে হাসিনার কোপ