হোম > আমার দেশ স্পেশাল

ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের নিরাপত্তা সুরক্ষায় ইসির ১৫ চ্যালেঞ্জ

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

গাজী শাহনেওয়াজ

ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটদানের ব্যবস্থা করা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের প্রধান শর্ত। এর জন্য প্রয়োজন ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের নিরাপত্তা সুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ। নির্বাচনে নিয়োজিত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এ বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব। বিগত আওয়ামী আমলে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা ছিল অত্যন্ত নাজুক ও অরক্ষিত। সেখান থেকে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে পরিস্থিতি উত্তরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এএমএম নাসিরউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।

অতীত অভিজ্ঞতা ও অভিযোগের আলোকে ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের নিরাপত্তাহীনতা ইস্যুতে কাজ করতে গিয়ে প্রায় ১৫ ধরনের চ্যালেঞ্জ খুঁজে পেয়েছে ইসি। এগুলোকে গ্রহণযোগ্য ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্তরায় বলে চিহ্নিত করেছে কমিশন এবং সেগুলো মোকাবিলায় জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।

ইসির প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভোটকেন্দ্র ঘিরে অনিয়ম বন্ধে চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে ভোট চলাকালীন বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য দুটি ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে একটি হলো টেন্ডার্ড ভোট (একজনের ভোট অন্যজন দিয়ে দেওয়া) এবং অপরটি আপত্তিকৃত ভোট (এমন ভোট যা কোনো কারণে বৈধ নয় এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রিজাইডিং অফিসারের দ্বারা আপত্তি জানানো হয়)।

অন্য চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে অক্ষম ভোটারের ভোট দান, অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের কেন্দ্র পরিদর্শন, নির্বাচনি অনিয়মের কারণে ভোট গ্রহণ বন্ধ ঘোষণা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের সমন্বয় করে পরিচালনা করা, ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দীর মধ্যে অপেক্ষমাণ ভোটারদের ভোটদানের ব্যবস্থা করা।

এছাড়া ভোট গণনা কক্ষে উপস্থিত অনুমোদিত ব্যক্তিদের নিরপেক্ষ অবস্থানে রাখার ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বর করা, ভোটের ফলাফল বিবরণী কপি, ব্যালট পেপারের হিসাব প্রস্তুত করা ও বিশেষ খামে ডাকে পাঠানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা, ভোট গণনায় অনিয়ম বা ত্রুটি কিংবা অভিযোগ উঠলে ভোট পুনঃগণনা করা।

এর পাশাপাশি প্রার্থীরা ভোট পর্যবেক্ষণে এলে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরের পরিবেশ বজায় রাখতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া, কেন্দ্রের নিরাপত্তা সুরক্ষায় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রভাবমুক্ত রাখা এবং সুষ্ঠু, অবাধ ও নির্বিঘ্নে ভোটদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভোটকেন্দ্রের সীমাবদ্ধতা, পর্যাপ্ত কক্ষ না থাকা, পানি, ওয়াশরুম, রাস্তা, বিদ্যুৎ, খাওয়া-দাওয়া ও আসবাসপত্রের অপ্রতুলতা।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ভোটব্যবস্থা কেন্দ্রিক সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধান করা জরুরি। কমিশনও তা কাটিয়ে একটা ভালো ভোট আয়োজনের চেষ্টা করছে। এমনকি ভোটের দিনে কীভাবে চ্যালেঞ্জগুলো সামলাতে হবে, সে সংক্রান্ত কিছু কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে তার আলোকে নির্বাচনের কর্মকর্তাদের দিক-নির্দেশনা প্রদানের চিন্তা করছে কমিশন।

ইসি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ভোটগ্রহণ শুরু থেকে ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়। অন্যথায় তুচ্ছ ইস্যুতে কেন্দ্রে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার শঙ্কা থাকে। এক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার (প্রিসাইডিং অফিসার) সব ধরনের চাপ মোকাবিলা করে কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা সমুন্নত রেখে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হয়।

তবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ক্ষেত্রবিশেষে ভোট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। তাই কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন সাপেক্ষে একজন কর্মকর্তাকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে ইসির নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির বেশিরভাগ কর্মকর্তা মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, বিষয়টি কমিশন পর্যায়ে আলোচনা হতে পারে। বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে তার অতীত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে ওই কর্মকর্তা আরো জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের জন্য ভোটকেন্দ্রের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

একই সঙ্গে, অভিযোগহীনভাবে ভোটগ্রহণ শুরু করাটা জরুরি। অনুরূপভাবে, ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, প্রার্থী ও প্রার্থীর এজেন্ট এবং সর্বোপরি ভোটারদের প্রবেশাধিকারে শৃঙ্খলা বজায় রাখা অবশ্যক।

এছাড়া ভোটকেন্দ্রের সম্ভাব্য কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে; সেগুলো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে কৌশলী পন্থায় মোকাবিলা করতে হয়। ভোটকেন্দ্রের নির্বাচনি অনিয়ম সংক্রান্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, প্রার্থীর নির্বাচনি এজেন্ট ও ভোটারদের অভিযোগগুলোর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে তৎপর থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়গুলো কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হলে তখনই সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে ইসির ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ কারণ তাদের অধীনে নির্বাচনি কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেন।

অপর একজন কর্মকর্তা জানান, বিগত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালনের জন্য অনেক কর্মকর্তাকে উৎসাহিত হতে দেখেছি। কেন্দ্রের দায়িত্ব পাওয়া মানেই নানা আর্থিক সুবিধা মিলত এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা না হওয়ার জন্য অনেকেই তদবির করছেন। এসব বিষয়েও কমিশনের নজর দেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।

এদিকে, ভোটকেন্দ্র নিশ্ছিদ্র রাখতে ইসির আরো আরেকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে ইসির এক নথির তথ্য থেকে জানা গেছে। তা হলো ভোটকেন্দ্রের আশপাশে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির বাড়ি থাকলে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য এক ধরনের চাপ থাকে। এক্ষেত্রে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিলে ওই কেন্দ্রটিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এটাও সুষ্ঠু ভোটের অন্তরায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভোট কর্মকর্তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা।

তাই নির্বাচন কমিশন এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের একটা সমন্বিত দিক-নির্দেশনা দেওয়ার কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করেছে। তা পর্যালোচনা করে আরো বেশকিছু নির্দেশনা পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা একটি। এই ব্যবস্থাপনার মধ্যে ভোট গ্রহণের জন্য স্কুল-কলেজের উপযুক্ত কক্ষগুলো ভোটকেন্দ্রের কক্ষ হিসেবে নির্বাচিত করার ব্যবস্থা করা। ভোট গ্রহণের কক্ষে কোথায় ব্যালট বাক্স রাখা হবে ও গোপন কক্ষ কোথায় হবে তা নির্ধারণ করার সক্ষমতা অর্জন করা।

এছাড়া ভোট শুরু হওয়ার পর ভোটকেন্দ্রে কারা প্রবেশ করতে পারবে, তার তালিকা ভোটকেন্দ্রে টাঙানোর ব্যবস্থা করা। সর্বশেষ ভোটের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা অর্থাৎ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ঠিক করার দিকে বিশেষ নজর রাখার ওপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

ভোটকেন্দ্রে প্রাপ্ত অভিযোগের ধরনে বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ঢুকতে না দেওয়া ও এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার অভিযোগ হরহামেশায় ঘটে থাকে। এবার যাতে এ ধরনের অভিযোগ না ওঠে সে ব্যাপারে কমিশন থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের কঠোর বার্তা দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

একই সঙ্গে, গোপন বুথে নজরদারি বৃদ্ধি, জাল ভোট দেওয়া বন্ধ করা, ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের প্রভাবিত করা প্রতিহত করা, কেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, নির্বাচনি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যাতে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ না ওঠে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা, সাংবাদিকদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা প্রদান না করা, ভোট কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের বাধা দেওয়া হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ যাতে না ওঠে, সে ব্যাপারে তাদের নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

নির্বাচনের এসব ত্রুটিগুলো সম্পর্কে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের অবহিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একইভাবে, এসব সংকট তাৎক্ষণিক দেখা দিলে কর্মকর্তারা তা কীভাবে সামলাবেন সে বিষয়ে ইসি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

ভারত ছেড়ে এবার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে কামাল

বাংলাদেশ নিয়ে এখন আশাবাদী ৮০% নাগরিক

সিন্ডিকেট এবার ধরাশায়ী, ভারত সীমান্তে পচছে বিপুল পেঁয়াজ

আওয়ামী প্রধান বিচারপতি ওবায়দুলের যত অপকর্ম

জুলাই সনদের নোট অব ডিসেন্টের ভবিষ্যৎ কী

ভারত আ.লীগ হাসিনা জড়িত, তাপস মূল সমন্বয়কারী

অনিরাপদ সাবমেরিন ক্যাবলের অনুমোদনে সামিট গ্রুপের চাপ

খালেদা জিয়ার লাগানো কাঁঠালিচাঁপার গাছে হাসিনার কোপ

ম্যালেরিয়াবাহী মশার পেটে ৩১০ কোটি টাকা, সুখবর নেই নির্মূলে

দখল-দূষণ সংক্রমণে দুর্বিষহ রাজধানীর নাগরিক জীবন