হোম > আমার দেশ স্পেশাল

ভারত আ.লীগ হাসিনা জড়িত, তাপস মূল সমন্বয়কারী

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন পেশ

স্টাফ রিপোর্টার

ঢাকার পিলখানায় বিডিআর-এর নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডে দলগতভাবে জড়িত আওয়ামী লীগ। এর মূল সমন্বয়কারী ছিলেন দলটির তৎকালীন এমপি শেখ ফজলে নূর তাপস। বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত ও বর্বরতম হত্যাকাণ্ড। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হত্যাকাণ্ডের সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন।

তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের ভূমিকা নিয়েও তদন্তে প্রশ্নে উঠেছে। ওই ঘটনায় ভারতের সরাসরি জড়িত থাকার শক্তিশালী প্রমাণও পাওয়া গেছে। দেশটির হুমকির কারণে ঘটনার পর পিলখানায় অভিযান পরিচালনা করা যায়নি। এ সম্পর্কে জেনারেল মইন তার সাক্ষ্যে জানিয়েছেন, তখন পিলখানায় সেনা ‘অভিযান চালাতে গেলে ভারত বাংলাদেশের ওপর হামলা চালাবে’ এই হুমকি ছিল।

বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রোববার কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান ও অন্যান্য সদস্য যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কমিশন তাদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

বিডিআর বিদ্রোহের পরিকল্পনাটি দীর্ঘমেয়াদি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়ান-ইলেভেনের সময়কালে বিডিআরের ডাল-ভাত কর্মসূচিতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর জোয়ানদের ক্ষোভ, প্রেষণে সেনা কর্মকর্তাদের বিডিআরে দায়িত্ব পালনের বিরোধিতা, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিরোধে ওই বিদ্রোহ হয়। এর সঙ্গে প্রতিবেশী ভারতের ইন্ধন ছিল বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা এবং ১৭ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। ওই ঘটনায় দুটি মামলায় বিডিআর সদস্যদের সাজা হলেও নেপথ্যের নায়করা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। এসব রহস্য উদঘাটন ও দোষীদের চিহ্নিত করতেই এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।

প্রতিবেদন গ্রহণকালে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতি দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকারে ছিল। আপনারা সত্য উদ্ঘাটনে যে ভূমিকা রেখেছেন, জাতি তা স্মরণে রাখবে। এই প্রতিবেদনে শিক্ষণীয় বহু বিষয় এসেছে। এটি জাতির জন্য মূল্যবান সম্পদ হয়ে থাকবে।

প্রধান উপদেষ্টা জাতির পক্ষ থেকে কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইতিহাসের এই ভয়াবহতম ঘটনা নিয়ে জাতির অনেক প্রশ্ন ছিল, এই কাজের মধ্য দিয়ে সেসব প্রশ্নের অবসান ঘটবে।

কমিশনপ্রধান ফজলুর রহমান বলেন, তদন্তকাজ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ত্রুটিমুক্ত করার স্বার্থে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রাখা হয়েছে। আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখন ১৬ বছর আগের ওই ঘটনার বহু আলামত ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকে বিদেশেও চলে গেছেন।

তদন্ত প্রক্রিয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ফজলুর রহমান বলেন, আমরা দুটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছি। সাক্ষীদের ডাকলাম, আমরা কারো কারো ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বক্তব্য শুনেছিÑযতক্ষণ তিনি বলতে চেয়েছেন। যারা তদন্তে জড়িত ছিলেন, তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাদের তদন্তের রিপোর্ট কালেক্ট করেছি, অন্যান্য এলিমেন্টও কালেক্ট করেছি।

কমিশনপ্রধান বলেন, এই তদন্তের মাধ্যমে বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনমনে থাকা সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে, উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে কার কী ভূমিকা ছিল। কেন সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে থাকল, অ্যাকশন নিল না।

তিনি বলেন, তদন্তে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে বহিঃশক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততা ও তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সরাসরি জড়িত থাকার শক্তিশালী প্রমাণ মিলেছে।

এ সময় কমিশনের ফাইন্ডিংস সম্পর্কে কমিশন সদস্য জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, তারা এই ঘটনার কিছু বাহ্যিক ও প্রকৃত কারণ বের করেছেন।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের রক্ষা করতে আওয়ামী লীগ সরাসরি ভূমিকা রেখেছে। তারা ২০-২৫ জনের একটি মিছিল নিয়ে পিলখানায় ঢুকেছে এবং বের হওয়ার সময় সেই মিছিলে দুই শতাধিক মানুষ ছিল। পুরো ঘটনাটি সংঘটিত করার ক্ষেত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছিল।

তিনি এ ঘটনার দায় নিরূপণের ক্ষেত্রে বলেন, দায় তৎকালীন সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সেনাপ্রধানেরও ছিল। এ ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও র‍্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও রয়েছে চরম ব্যর্থতা। ওই ঘটনার সময় কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং কয়েকজন সাংবাদিকের ভূমিকাও ছিল অপেশাদার।

জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের সময় যমুনায় (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন) যেসব বিডিআর সদস্যের সঙ্গে শেখ হাসিনা বৈঠক করেছেন, তাদের সঠিক নাম-পরিচয় ও তথ্য সংরক্ষণ করা হয়নি।

কমিশন তাদের প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করে, যাতে ভবিষ্যতে বাহিনীগুলোতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায় এবং এ ঘটনার ভিকটিমরা ন‍্যায়বিচার পায়।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের নেতৃত্বে প্যারালাল সেনা কমান্ড তৈরি করেছিলেন সাবেক ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে তারিক সিদ্দিক ও তার সহযোগীরা এই হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য সব ধরনের তৎপরতা চালায়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার সময় কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কিন্তু তাদের বের হয়ে যাওয়ার কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। দুবাইয়ে একটা বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করে এদের পার করে দেওয়া হয় বলে জানা যায়। তবে তারিক সিদ্দিকের ওই প্যারালাল কমান্ডের চাপে ওই সময় দুটি কমিটি গঠিত হলেও সিভিল অ্যাভিয়েশনের কেউ এ নিয়ে মুখ খোলেনি বা অব রেকর্ডেড ওই ফ্লাইটের অপারেশনকে বাধা দিতে পারেনি।

একইভাবে আরো কিছু ভারতীয় নাগরিকের চলে যাওয়ার রেকর্ড আছে, তবে ঢোকার রেকর্ড নেই বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

সন্ধ্যার ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনসহ ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, মির্জা আজম, আসাদুজ্জামান নূর ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক বিডিআর সদস্য তোরাব আলী ও তার ছেলে লেদার লিটন বিডিআর হত্যাকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

ঘটনার সময় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ একাধিকবার অল্প লোকের মিছিল নিয়ে বিডিআর প্রিমিসিসে (পিলখানার ভেতর) ঢুকেছে। কিন্তু বড় মিছিল নিয়ে বের হয়ে এসেছে। প্রকৃত অপরাধী বিডিআর সদস্যদের এভাবেই বের করে এনেছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের বিচারও দাবি করেছে কমিশন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে জঙ্গিতত্ত্ব আবিষ্কার করেছিল। সাংবাদিক মুন্নি সাহা, জ ই মামুন ও মনজুরুল আহসান বুলবুলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তৎকালীন সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদধারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটি গঠন করার বিষয়টিও প্রতিবেদনে স্থান পায় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে তার ব্যর্থতার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য ৩৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। মোট ২৪৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ১৪ জন শহীদ পরিবারের সদস্য, রাজনীতিক ১০ জন, অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টা, অসামরিক কর্মকর্তা চারজন, পুলিশ কর্মকর্তা ২২ জন, বেসামরিক ব্যক্তি ৯ জন, সাবেক ও বর্তমান বিজিবি সদস্য ২২ জন, হত্যাকাণ্ডে কারাগারে আটক ২৬ জন ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী। এছাড়া ১৩০ সামরিক কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তার মধ্যে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও রয়েছেন। বর্তমান সেনাপ্রধান তখন ৪৬ ব্রিগেডে কর্মরত ছিলেন।

ঘটনার তদন্তে ভিডিও রেকর্ডিং ৬০০ ঘণ্টা, বিভিন্ন ধরনের ছবি ৮০০টি, খবরে প্রকাশিত সংবাদ ২১৫টি, চিঠি আদান-প্রদান ৯০৫টি, সেনাবাহিনী পরিচালিত তদন্ত আদালতের প্রতিবেদন, তৎকালীন জাতীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, তৎকালীন বিডিআরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

সাক্ষ্যতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে তদন্ত কমিশন জানতে চায়, তৎকালীন সেনাপ্রধান কেন সেনা অভিযান চালাননি। জবাবে তারা বলেন, সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ তাদের বলেছিলেনÑপিলখানায় সেনাবাহিনী মুভ করলে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বাংলাদেশের ওপর অ্যাটাক করবে।

জানা গেছে, বর্তমান তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ না করার একটি চাপ ছিল। তবে প্রতিবেদন প্রকাশে কমিশন তার অবস্থানে অনড় ছিল। রিপোর্ট প্রকাশ না করা হলে কয়েকজন সদস্য নোট অব ডিসেন্ট দেবেন বলে জানিয়েছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়ে কমিশনের সদস্য মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার (অব.), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান বীরপ্রতীক (অব.), যুগ্ম সচিব মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ (অব.), ডিআইজি (অব.) ড. এম আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ খান চন্দন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ ও স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি।

জুলাই সনদের নোট অব ডিসেন্টের ভবিষ্যৎ কী

অনিরাপদ সাবমেরিন ক্যাবলের অনুমোদনে সামিট গ্রুপের চাপ

খালেদা জিয়ার লাগানো কাঁঠালিচাঁপার গাছে হাসিনার কোপ

ম্যালেরিয়াবাহী মশার পেটে ৩১০ কোটি টাকা, সুখবর নেই নির্মূলে

দখল-দূষণ সংক্রমণে দুর্বিষহ রাজধানীর নাগরিক জীবন

জামায়াত জোটের শীর্ষ নেতারা প্রার্থী হবেন যেসব আসনে

আইএফআইসির খেলাপি ঋণ ১০ থেকে বেড়ে ৬১ শতাংশ

অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের শিশুরা

প্রবর্তক সংঘের দখলে বনের দেড় হাজার কোটি টাকার জমি

ইউজিসির তদন্তে আটকা আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে জনবল নিয়োগ