হোম > আমার দেশ স্পেশাল

মহান আল্লাহকে নিয়ে আবুল সরকারের ধৃষ্টতায় বাড়ছে ক্ষোভ

ইসমাঈল হোসাইন সোহেল, ঢাকা ও মো. আকরাম হোসেন, মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার চরতিল্লী গ্রামে বাউল শিল্পী আবুল সরকারের আলিশান বাড়ি, ইনসেটে বিতর্কিত শিল্পী। ছবি: আমার দেশ

ঘটনা গত ৪ নভেম্বরের। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জাবরা খালা পাগলির মেলামঞ্চে গান পরিবেশনকালে আল্লাহ ও ইসলাম সম্পর্কে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করে বসেন বাউল আবুল সরকার। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হলে দেশজুড়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তখন থেকেই তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে আসছেন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও স্থানীয় জনসাধারণ।

পরে ঘিওর বন্দর মসজিদের ইমাম মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে আবুল সরকারের বিরুদ্ধে গত ২০ নভেম্বর একটি মামলা করেন। একই দিনে মাদারীপুরে গানের একটি আসর থেকে ডিবি পুলিশ তাকে আটক করে। ওই দিন বিকালে মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে সোপর্দ করা হলে বিচারক জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

তবে আবুল সরকারের ওই ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন দেশের ধর্মপ্রাণ ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষজন। নির্বাচনের আগে এটিতে পতিত ফ্যাসিবাদী ও তাদের দোসরদের ইন্ধন থাকতে পারে বলেও শঙ্কা করছেন অনেকে। তবে জনরোষ সৃষ্টি হওয়ার আগেই এই বাউল শিল্পীকে গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল বলে মনে করেন তারা। আর এজন্য দেশের আইনেও কোনো বাধা ছিল না।

আইন অনুযায়ী, ইচ্ছাকৃত ও বিদ্বেষপূর্ণভাবে কোনো শ্রেণির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধর্মকে বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ভয়েস অব লয়ার্সের (বাংলাদেশ) প্রধান সমন্বয়ক আশরাফ-উজ-জামান আমার দেশকে বলেন, আবুল সরকারের কটূক্তি স্পষ্টভাবে ধর্ম অবমাননা। এটি দণ্ডবিধি ২৯৫/এ অনুযায়ী একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাকে যেকোনো সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করতে পারত। সেটি তদন্ত চলার আগে হোক কিংবা পরে; এমনকি তদন্ত চলাকালীনও তাকে গ্রেপ্তার করা যেত।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী মনে করেন, আবুল সরকারকে সময়মতো গ্রেপ্তারে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব ছিল। সেই সঙ্গে তার হঠাৎ করে এই ধর্মবিদ্বেষকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন তিনি।

জানতে চাইলে ইসলামাবাদী আমার দেশকে বলেন, বাংলাদেশে একটা স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। নির্বাচনমুখী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পতিত ফ্যাসিবাদের আমলের একটা নতুন ষড়যন্ত্র উসকে দেওয়া এক ধরনের কৌশল। এ সময় বাউলরা আল্লাহ ও ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলবে এবং মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে উসকে দেবে। ধর্মপ্রাণ মানুষ যখন এ নিয়ে প্রতিবাদমুখর হবে তখন তারা বলবে—এই দেশ জঙ্গিবাদের আখড়া হয়ে গেছে; এখানে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। এগুলো করে পরিবেশ নষ্ট করা, নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এনে জনগণকে উসকে দিয়ে একটি অনৈক্য ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।

ইসলামি পণ্ডিতদের মতে, আবুল সরকার যে চারটি বাক্য সামনে এনে মহান স্রষ্টা আল্লাহকে নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলেছেন, সেগুলো তার ধর্মীয় জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচয় বহন করে। যেই ব্যক্তি ধর্মীয় ব্যাপারে ন্যূনতম জ্ঞান রাখে না, তার ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেওয়াটাও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ।

মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ওই বাউল প্রথমে যেটা বলেছেন সেটা সরাসরি কুফরি। সে কুফরি করবে আর ঈমানদাররা প্রতিবাদ করতে পারবে না, রাষ্ট্রকে তো এমন দায়িত্ব কেউ দেয়নি। বরং রাষ্ট্রের উচিত ছিল এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া।

তবে এই ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলার পরও সরকার উল্টো তাকে গ্রেপ্তার না করে অনেক দিন নির্বিকার ছিল। পরে তীব্র জনরোষের মুখে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন হেফাজতে ইসলামের এই নেতা। তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসন বরং বাউলদের পক্ষে গিয়ে আলেম-ওলামাদের হয়রানি করেছে। এই জায়গায় যদি প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করে তাহলে সারা দেশের আলেম-ওলামারা প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তুলবে। দেশ যদি উত্তাল হয়, তাহলে প্রশাসন কি এটাকে সামাল দিতে পারবে?

মূলত আবুল সরকার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে নিয়ে এই ধৃষ্টতাপূর্ণ কটূক্তি করে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করে তুলেছেন বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ধর্মপ্রাণ মানুষ। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মুফতি আবদুল হান্নান বলেন, ‘সারা দেশেই কমবেশি অশান্তি ছিল। কিন্তু আমাদের মানিকগঞ্জ জেলায় শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছিল। এই শান্ত জেলাকে অশান্ত করে তুলেছে আবুল সরকার। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

গত ২৩ নভেম্বর সকালে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের সমর্থকরা মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেন। একই সময় আবুল সরকারের শাস্তির দাবিতে জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামারা পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ রফিক সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিজয় মেলার মাঠের সামনে সমবেত হয়। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সেই সমাবেশের পাশেই আবুল সরকারের কিছু সমর্থকরা মানববন্ধনের প্রস্তুতি নিতে জড়ো হচ্ছিলেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আবুল সরকার সমর্থকদের তিনজন এবং দুজন আলেম আহত হন।

জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইমস অ্যান্ড অবস) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মহান আল্লাহকে নিয়ে করা বাউলশিল্পী আবুল সরকারের একটি মন্তব্যের জেরে সাধারণ মুসল্লিদের মাঝে উত্তেজনা তৈরি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বাউল সমর্থক ও স্থানীয় জনতার মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। তবে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার পর থেকে চরতিল্লী গ্রামে আবুল সরকারের বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। তবে এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

বড় ভূমিকম্প মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ

বিএনপির কাছে দ্রুত আসন বণ্টনের সিদ্ধান্ত চায় মিত্ররা

বিচারের বাইরেই থাকছে বিদ্যুৎ খাতের রাঘব বোয়ালরা

ভূমিকম্প আতঙ্কে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের

নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রাখতে কৌশল প্রণয়ন করছে ইসি

নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হচ্ছে আন্ডারওয়ার্ল্ড

গ্রামীণফোনে ভারতীয় নাগরিকদের আধিপত্য

খুলে যাচ্ছে ফল্ট লাইনের প্লেট উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে দেশ

জুলাই বিপ্লব বানচালে র-এর ‘অপারেশন ডেল্টা সেভেন’

রাজধানীতেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ৬ লাখ, অতি ঝুঁকিতে ৩২১