হোম > সারা দেশ > বরিশাল

বরিশালে বিএনপি নেতাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি

নথুল্লাবাদ ও রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড

নিকুঞ্জ বালা পলাশ, বরিশাল

বরিশাল মহানগরের কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ ও রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড এখন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দখলে। প্রতিদিন চাঁদা ওঠে লক্ষাধিক টাকা। চাঁদার বৃহৎ একটি অংশ পান শীর্ষ নেতারা।

আর শুধু বাসস্ট্যান্ডই নয়, বিভিন্ন বাজার দখল, পোর্ট রোড, স্পিড বোট ঘাট, বালুমহাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আবাসিক হোটেল দখল করে রামরাজত্ব কায়েম করেছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। দখল হওয়া অধিকাংশ স্থাপনা-প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ১৭ বছর আওয়ামী লীগ নেতারা নিয়ন্ত্রণ করত।

বিএনপির এসব দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে লোক দেখানো পদক্ষেপ নিতে দেখা গেলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। এ নিয়ে খোদ বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেই রয়েছে চরম ক্ষোভ আর অসন্তোষ।

সূত্র জানায়, বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে জনবহুল কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে ১শ’ ৭৪টি লোকাল বাস চলাচল করছে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৫শ’ বাস চলাচল করে থাকে। তবে ঈদ বা দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন বড় ছুটিতে অসংখ্য পরিবহন চলাচল করে এ বাসস্ট্যান্ড থেকে।

৫ আগস্টের আগে এ বাসস্ট্যান্ড মালিক গ্রুপ ও শ্রমিক ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণে ছিল সাবেক মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের ঘনিষ্ঠ যুবলীগ নেতা অসীম দেওয়ানের। তিনি বাস মালিক গ্রুপের সর্বশেষ সভাপতি ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তিনিসহ কমিটির অন্য অধিকাংশ সদস্য পলাতক রয়েছেন।

এ সুযোগে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ারের ভাই মো. মোশারফ হোসেন নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণে নেন। মূলত এটি এখন সরোয়ার গ্রুপের নেতাকর্মীদের দখলে রয়েছে।

সূত্র আরো জানান, বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন মোশারেফ হোসেন। বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনে তার কোনো পদ-পদবী নেই। তার বড় পরিচয় তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ারের ভাই। এ কারণে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী তার বিপক্ষে কোনো কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ সুযোগে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ জনের মাধ্যমে পুরো বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বাস মালিক জানান, প্রতিবার একটি বাসের ছেড়ে যাওয়া, কাউন্টার চার্জ, নতুন পরিবহনের অনুমতি, দূরপাল্লার পরিবহনের চাঁদা এবং পার্কিং খাতসহ নানান খাতে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা আয় আসে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে। উত্তোলনকৃত চাঁদার বৃহৎ একটি অংশ পান শীর্ষ নেতারা।

অভিযোগ আছে কখনো কখনো পুরোটাই নিয়ে নেন তিনি। যে কারণে বাসস্ট্যান্ডগুলো যার নিয়ন্ত্রণে থাকে তিনি পেয়ে যান আলাদীনের চেরাগ। তাই এর নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন দলের শীর্ষ নেতারা।

বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাসস্ট্যান্ড দখল নিয়ে একাধিকবার হামলা পাল্টা হামলা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটেছে। তবে গত ১ বছরে এ পর্যন্ত বরিশালে দখল নিয়ে বিএনপির বিবদমান গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।

অপর এক সূত্র জানিয়েছে, আ.লীগ সরকার পতনের পর বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ারের ভাই মোশারফের নেতৃত্বে কাউনিয়া এলাকার বাবলা রিপন, বৈদ্যপাড়া শামিমসহ ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি গ্রুপ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে চাঁদা তুলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক বলেছেন, বাসস্ট্যান্ড ও বাজারগুলোতে চাঁদা দিতেই হবে। শুধু সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদা উত্তোলনের মানুষগুলোর পরিবর্তন হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাঁদার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে মোশারফ হোসেন বলেন, নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ঠিকই তবে তিনি কোনো চাঁদাবাজি করছেন না। পুলিশ ও সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে তাই কার সাহস চাঁদাবাজি করবে? তিনি বলেন, গত ৪/৫ বছর আগে তার গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। গত ১৩ আগস্ট নতুন করে সদস্য হবার জন্য বাস ক্রয় করেছেন এবং সদস্য পদ অর্জন করেছেন। এজন্য তিনি মালিক সমিতিকে ১ লাখ টাকা ডোনেশনও দিয়েছেন।

এদিকে নগরীর আরেক ব্যস্ততম রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড তিন বছর মেয়াদি কমিটি বাদ দিয়ে নিজেই কমিটি গঠন করেছেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। কমিটি গঠনের পর থেকেই শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ওরফে নাতি কামাল, সেলিম সরদার, আলম, আলামিন, সাদ্দাম ও কবিরসহ ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ প্রতিটি গাড়ি থেকে চাঁদা তুলছেন।

শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা আবুল কালাম জিয়াউদ্দিন সিকদারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে তার নেতৃত্বেই চলছে রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডে চাঁদা উত্তোলন কার্যক্রম।

সূত্র জানায়, রুপাতলী বাস মালিক সমিতির ১১১টি বাস থেকে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা উঠানো হয়। এছাড়া বরগুনা, পাথরঘাটা, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার দূরপাল্লার রুটে প্রতিদিন ৪ শতাধিক পরিবহন চলাচল করছে। এসব পরিবহন থেকেও আদায় করা হচ্ছে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা। সব মিলিয়ে এ বাসস্ট্যান্ড থেকেও প্রতিদিন অর্ধ লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তোলা হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।

জিয়াউদ্দিন সিকদার বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাছরিনের একটি বাস চলছে রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে।

পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে নাছরিন বলেন, আমি কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নই। আমার একটি বাস রয়েছে। সে কারণে সদস্য হওয়ার জন্য আমি আবেদন জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু জিয়াউদ্দীন সিকদার আমার আবেদনপত্রটি গায়েব করে ফেলেছেন যাতে আমি সদস্য হতে না পারি।

তিনি বলেন, জিয়াউদ্দীন সিকদার শুধু রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডই দখলে নেননি, তিনি আলামিনের নামে পোর্টরোড মাছের আড়ৎ, স্পিড বোট ঘাট, বালুমহাল, সার ঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে দখল বাণিজ্য ও মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। তিনি টাকার বিনিময়ে ৪৭ জনের নাম মামলা থেকে বাদ দিয়েছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির সিনিয়র সদস্য সচিব জিয়াউদ্দীন সিকদার তার বিরুদ্ধে আনিত চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো মিথ্যা বানোয়াট।

খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য বিভিন্ন স্থানে দোয়া মাহফিল

সিলেট রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সেলিম, সেক্রেটারি মাহবুব

শেরপুরে ১ লাখ ৫৭ হাজার জাল টাকাসহ গ্রেপ্তার ৩

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে সকলের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে

দ্রুত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে: স্বাস্থ্যের ডিজি

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ফেনীতে আমার দেশ পাঠক মেলার উদ্যোগে দোয়া

লালমনিরহাটে গ্রাম আদালত বিষয়ে কর্মশালা

ভুল অপারেশনে মৃত্যুর অভিযোগে মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি

মেহেরপুরে ১০ স্বর্ণের বার উদ্ধার, ভারতীয়সহ আটক ২

‘খালেদা জিয়াকে দেশের প্রয়োজনে হায়াত বাড়িয়ে দাও’