অপ্রশস্ত সড়কে ঈদযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ
বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে গত এক বছরে যানবাহনের সংখ্যা দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেলেও প্রশস্ত হয়নি সড়ক। প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এর ফলে এ বছর সড়ক পথে ঈদ যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। গত তিন মাসে এ মহাসড়কে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ১৪ জন। আহত বা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে শতাধিক।
২০২৩ সালে একনেকের বৈঠকে বরিশাল-ভাঙ্গা মহাসড়কটির ৬ লেন প্রকল্প পাস হলেও সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সেই প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়। ফলে কবে নাগাদ এ মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত হবে এ নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সড়ক পথে যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচন হয়। নতুন নতুন উন্নত মানের বাস সংযুক্ত হওয়ার পাশাপাশি বাড়ানো হয় সেবার মান। কম সময়ে ও স্বল্প খরচে গন্তব্যে পৌঁছানোর সুযোগ হওয়ায় নৌ পথের পরিবর্তে সড়ক পথই বেছে নিয়েছে বরিশালসহ দক্ষিাঞ্চলের মানুষ। এ কারণে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে যাহবাহন ও যাত্রী সংখ্যা ২ থেকে ৩ গুণ বেড়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পরপরই ২ লেনের এ মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করার দাবি উঠলেও নানা জটিলতায় তা হয়নি। এই সড়কের বিভিন্ন অংশ অ-প্রশস্ত ও খানাখন্দকে পরিপূর্ণ হওয়ায় প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বরিশালের গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে গত তিন মাসে ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সময়ে মহাসড়কের শুধু গৌরনদী অংশে অন্তত ২৭টি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে আটজন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন অন্তত ৫৪ জন। একই সময়ে বরিশাল অংশে বিভিন্ন সময় সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৭ জন পথচারী নিহত ও ও ২০ জন আহত হয়েছেন বলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এ পরিস্থিতিতে ঈদে নিরাপদ যাত্রা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। ৬ লেন বাস্তবায়নের দাবিতে এরই মধ্যে দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনসহ আহতদের পাশাপাশি বরিশাল নগরীসহ গৌরনদী ও উজিরপুর উপজেলার সচেতন মানুষ মানববন্ধন করেছেন। বরিশাল ঢাকা মহাসড়কের ৬ লেন প্রকল্প বাতিলের প্রতিবাদে গত ১৯ জানুয়ারি রোববার বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে বরিশাল ঢাকা মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নীত করার দাবি জানান।
নিরাপদ সড়ক চাই গৌরনদী উপজেলা কমিটির সদস্য জহুরুল ইসলাম জহির জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর ব্যস্ততম এই মহাসড়কে গাড়ি ও যাত্রী সংখ্যা বাড়লেও সে তুলনায় মহাসড়ক প্রশস্ত করা হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা মহাসড়কটিকে অতিদ্রুত ৬ লেনে রূপান্তরসহ উপজেলা হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা চালুর দাবি জানাচ্ছি।
গৌরনদী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মো. বিপুল হোসেন জানান, বরিশাল থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কের গৌরনদী অংশ অনেক সরু। এ কারণে প্রায় সময়ই এখানে বিভিন্ন পরিবহন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বিদ্যুৎ কর্মকার বলেন, ঈদ যাত্রা নিরাপদ করতে বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার সড়কে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়ি আটক করতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।
গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুর রহমান জানান, অপ্রশস্ত সড়কে চালকদের বিবেকহীন প্রতিযোগিতা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিধি লঙ্ঘন করে ওভারটেকিং, যত্রতত্রভাবে মহাসড়কে গাড়ি পার্কিং ও সড়কের উপর অবৈধ ব্যবসা-বণিজ্যের কারণসহ বিভিন্ন কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।