উত্তরাঞ্চলের দীর্ঘতম নৌপথ চিলমারী-রৌমারী রুটে ফেরি চলাচল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এই ফেরিপথে ফেরি সচল থাকার পরিবর্তে অচল থাকছে বেশি দিন। বারবার ড্রেজিং করেও ফেরি সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বাড়ছে যাত্রীদের ভোগান্তি।
জানা গেছে, গত দুই বছরে ফেরি চলেছে মাত্র ৪০৬ দিন। বাকি ৩৬৮ দিন ফেরি বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রী ও চালকদের। ফলে বিকল্প পথে ঘুরে যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছেন পরিবহন চালকরা। এতে সময়, খরচ ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক, ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিকরা। ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য সংকট, অন্যদিকে ঘাট ব্যবস্থাপনার স্থবিরতায় ফেরি সার্ভিস কার্যকরভাবে চালু রাখা যাচ্ছে না। বারবার ড্রেজিং করেও লাভ হচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিএর তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী-রৌমারী রুটে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনের পর থেকে এই রুটে কুঞ্জলতা ও বেগম সুফিয়া কামাল নামে দুটি ফেরি যুক্ত করা হয়। পরে বেগম সুফিয়া কামাল নামের ফেরি সরিয়ে কদম নামের আরেকটি ফেরি ঘাটে যুক্ত করা হয়। এর পর থেকে ফেরি কুঞ্জলতা ও কদম নিয়মিত পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ি পারাপার করছে। চিলমারী ঘাটের লিপিবদ্ধ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ফেরি চালু হওয়ার পর এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১০৪ দিনে ফেরি চলেছে ৯৭ দিন। এ সময়ে গাড়ি পারাপার হয়েছে ২ হাজার ৮৮৫টি।
বিআইডব্লিউটিএ’র চিলমারী ফেরিঘাটের ম্যানেজার প্রফুল্ল চৌহান বলেন, ‘ফেরি নিয়মিত চালু রাখতে না পারলে তো বিড়ম্বনা রয়েছে। তবে আমরা বন্ধের আগের দিন পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর মোটর মালিক সমিতিকে অবহিত করে দিই।’ রেল, নৌ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নাহিদ হাসান বলেন, ‘এই ঘাটে সমস্যা দীর্ঘদিনের। ঘাট কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি।
মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের চিলমারী উপজেলা শাখার সভাপতি সোহেল মিয়া বলেন, ‘চিলমারী ফেরিঘাট অচল থাকায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহন উভয় খাতেই বড় ক্ষতি হচ্ছে। বিকল্প পথে ঘুরে যেতে সময় ও খরচ দুটোই বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে কৃষি ও ব্যবসার ওপর।’ তিনি আরো বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদের এই অংশে নিয়মিত নাব্যসংকট দেখা দেয়। ঘাট এলাকায় নিয়মিত ড্রেজিং কিংবা বিকল্প নৌপথ উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হলে এই সমস্যা কাটবে না।’ বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘চিলমারী ফেরিপথ প্রায় ২৭ কিলোমিটার। বাংলাদেশে এত দীর্ঘ ফেরি পথ আর কোথাও নেই। ফেরি চলাচল নিয়মিত করতে অব্যাহত ড্রেজিং প্রয়োজন। কিন্তু স্থানীয়রা তাদের পাড় ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায় প্রায়ই ড্রেজিং করতে দেন না।’ তিনি আরো জানান, ‘বর্তমানে সরকারিভাবে দুটি ড্রেজার ও বেসরকারিভাবে দুটিসহ মোট চারটি ড্রেজার ফেরিরুট চালু রাখতে কাজ করছে, ড্রেজারের সংখ্যা আরো বাড়ানো গেলে ফেরিরুট নিয়মিত চালু রাখা যাবে।’