রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি পরিতোষ চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সহ জ্যেষ্ঠ নেতৃত্ববৃন্দকে উদ্দেশ্য করে নাকে খত দিয়ে তওবা করে তার কাছে ফিরে আসার ‘কটূক্তিপূর্ণ ও শিষ্টাচার বহির্ভূত’ বক্তব্য প্রদানের তীব্র প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি।
শনিবার বিকেলে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির পার্টি অফিসে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক পরিষদ চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আজিজুল হক লিখিত প্রতিবাদে বলা হয়, দলীয় পদ থেকে কয়েক মাস আগে বহিষ্কৃত হওয়া সত্ত্বেও মোহাম্মদ আলী সরকার বারবার সংগঠনের মূল নেতৃত্বের প্রতি বিতর্কিত বক্তব্য প্রদান করে দলীয় নেতা কমীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।
অবিলম্বে তাকে দলীয় মনোনয়ন ও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। দাবি পূরণ না হলে কঠিন কর্মসূচি দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
লিখিত বক্তব্যে বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এম আজিজুল হক অভিযোগ করে বলেন, গত ২০ নভেম্বর মোহাম্মদ আলী সরকার তার নিজস্ব বাসভবনে একটি ‘সাংবাদিক সম্মেলন’ ডেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম সহ নেতৃত্ববৃন্দ সম্পর্কে আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন।
যা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে বিএনপির ভাব মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। মোহাম্মদ আলী সরকার উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ববৃন্দ দালাল বলে সম্বোধন করায় গণমাধ্যমে ব্যক্তি নয় দলকে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। তিনি শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবে কথা বলার পাশাপাশি সাংবাদিকদের বলেন যে, বিএনপির নেতারা মোহাম্মদ আলী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে তার ডাকে না আসলে তাদের মুখে থুতু দেন। তারা ঠেলায় পড়ে নাকে খত দিয়ে তওবা করে বাধ্য হয়ে আমার কাছে আসতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই বাধ্য হয়ে মোহাম্মদ আলীর ধানের শীষে ভোট দিতে হবে।
আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, একজন দায়িত্বশীল ও সম্মানিত নেতার মুখ থেকে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাষা এমন কথাবার্তা তার মারমুখী ভঙ্গিমা এবং আচরণ চরম অপ্রত্যাশিত। এই ধরনের কটূক্তিপূর্ণ বক্তব্য উপজেলা বিএনপির তৃণমূল থেকে শুরু করে সকল নেতাকর্মীকে গভীরভাবে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ করেছে। দলের একজন মনোনীত প্রার্থী হয়ে তিনি বারবার ঐক্যের বদলে বিভেদ সৃষ্টি করছেন। তাই হাই কমান্ডের কাছে তার মনোনয়ন বাতিল করে নতুন করে যে কাউকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ স্পষ্ট করে জানান, মোহাম্মদ আলী সরকার ইতিপূর্বে একবার দল থেকে প্রাথমিক সদস্যপদ হারান। বারবার তিনি দলীয় হাইকমান্ডকে বিভ্রান্ত করে এই ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা অবিলম্বে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে মোহাম্মদ আলী সরকারের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং রংপুর-২ আসনের মনোনয়ন বাতিলের জন্য জোর আবেদন জানাচ্ছি।
বারবার এমন আচরণ চলতে থাকলে দলীয় শৃঙ্খলা চরমভাবে বিঘ্নিত হবে এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। অবিলম্বে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আমরা আরও কঠোর সাংগঠনিক কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
আজিজুল ইসলাম বলেন, যারা মনোনয়ন প্রার্থী ছিল তাদের উদ্দেশ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশনা দিয়েছেন যারাই মনোনয়ন পাবে তারা যেন মনোনয়ন প্রত্যাশী ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে নিজেকে সাক্ষাৎ করে দলের স্বার্থে কোনো বিরোধ থাকলে মিলিয়ে নেবে। কিন্তু মোহাম্মদ আলী সরকার মনোনয়ন পেয়েই আজকে এমপি না হয়ে দলে যে বিভেদ সৃষ্টি করে অন্য দলের লোকজনকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন তার আভাস তিনি ইতিমধ্যেই মিডিয়ার সামনে দিয়েছেন। তাই তাকে বহিষ্কার করে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে বিএনপির নেতাকর্মীরা তার পাশে থেকে ধানের শীষ মার্কাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের হাতে এই আসনটি তুলে দেবে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি রায়হান হাবিব জানান, বিএনপির এই সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কোন্দল এখন প্রকাশ্যে আসায় সাধারণ নেতাকর্মীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
বিএনপি নেতা রশিদুল ইসলাম লেবু জানান, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার যে কুরুচিপূর্ণ এবং অশালীন কথা বলে দলকে বিভেদ সৃষ্টি করে নেতাকর্মীদেরকে আলাদা করে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন সে কারণে তাকে দল থেকে আবারো বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে হাইকমান্ডের কাছে দেয়া আল্টিমেটাম বাস্তবায়ন করার জন্য নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ সময় বদরগঞ্জ উপজেলার দশটি ইউনিয়নের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।