চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার পুরানগড় ইউনিয়নে যুবদল নেতা মোহাম্মদ ইসমাইল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তার দেওয়া হলফনামায় ইউনিয়ন পর্যায়ের চার আওয়ামী লীগ নেতা ইতোমধ্যে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। অভিযোগ, তাদের কাছ থেকে চার লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি আদালতে হলফনামা দেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, তাদের আসামি নয় উল্লেখ করে মিথ্যা হলফনামা দেওয়ায় বিচারক তাকে লঘু দণ্ডও দিয়েছেন। একই সঙ্গে এমন কাজের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য সতর্ক করেছেন।
অভিযুক্ত ইসমাইল উদ্দিন পুরানগড় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বর্তমানে ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক পদ প্রত্যাশী বলে ব্যানারে দাবি করেন।
জানা যায়, গত বছরের ৪ আগস্ট ইসমাইল তার বাড়ির সামনে ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে গ্রামীণ সড়কে অবরোধ করেন। ওইদিন আওয়ামী লীগ নেতারা তার বাড়ির কিছু টিন খুলে ফেলে ও পাথর নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় ৫ সেপ্টেম্বর তিনি ৬৯ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি এবং অজ্ঞাতনামা ৫০ জনকে আসামি করে সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় চুরি, চাঁদা, শ্লীলতাহানি, জখম, ক্ষতি সাধনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় তিনি ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের আসামি করেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। শুধু তাই নয় মামলা দায়েরের পর থেকে আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন।
চলতি বছরের মার্চ ও মে মাসে তিনি চারজনকে হলফনামা দিয়ে জামিনে ছাড়িয়ে আনেন। তার দেওয়া কয়েকটি হলফনামা আমার দেশ’র হাতে এসেছে। এতে তিনি উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আতাউল ইসলাম চৌধুরীকে নির্দোষ দাবি করে উল্লেখ করেন তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। একইভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রাশেদুল করিম চৌধুরী উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক উপজেলা শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন মান্নান ও উপজেলা যুবলীগ নেতা মো. বাবরকেও হলফনামা দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন। সব কটিতে তারা কেউই রাজনীতিতে জড়িত নেই বলে দাবি করেন।
এদিকে তার এসব কর্মকাণ্ডে দলও বিব্রত। উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক উপজেলা যুবদল দক্ষিণ জেলা যুবদলের কাছে তার বিরুদ্ধে লিখিত নালিশও দিয়েছেন। এতে বলা হয়, যুবদলের সক্রিয় কর্মী মোহাম্মদ ইসমাইল উদ্দিন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তিনি চাঁদাবাজি, টপসয়েলের মাটি কাটা, সাঙ্গু নদী থেকে বালু উত্তোলন ও মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এতে আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের চারজন নেতাকে টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনার অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়াও নিজ দলের কর্মী আবদুল গফুরকে বিনা দোষে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ এসেছে বলে উল্লেখ করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
সাতকানিয়ার পুরানগড় ইউনিয়ন বিএনপির নেতা জসিম উদ্দিন আমার দেশকে জানান, ইসমাইলের বিরুদ্ধে ব্যাপক মামলাবাজির অভিযোগ পাচ্ছি আমরা। চার নেতার কাছ থেকে চার লাখ আরেক নেতার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়েছে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে। শুধু তাই নয় টাকার বিনিময়ে পুলিশের কাছ থেকে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ছাড়িয়ে এনেছে জোরপূবর্ক।
উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী রাজিব আমার দেশকে জানান, তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্যসহ হয়রানির এসব অভিযোগ আমরা পেয়েছি। আমরা দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা সংগঠনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
জানতে চাইলে সাতকানিয়া থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম আমার দেশকে জানান, ইসমাইলের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা আওয়ামী লীগ নেতাদের মামলার তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠাই। অথচ তিনি গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। এছাড়াও কিছু চাঁদাবাজি, বালু উত্তোলনের অভিযোগ এসেছে তার বিরুদ্ধে। আমরা সেগুলো খতিয়ে দেখব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদল নেতা ইসমাইল উদ্দিন এ প্রতিবেদকের প্রশ্ন শুনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।