আওয়ামী দোসরদের পদায়নে বিক্ষুব্ধ শিক্ষক নেতারা
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক দুই মেয়রের অনুচর হিসেবে পরিচিত দুই শিক্ষককে প্রমোশন দিয়ে পদায়ন করার আদেশের খবরে তীব্র অসন্তোষ ও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বরিশালের শিক্ষক নেতারা। এদের মধ্যে ছাত্র আন্দোলনের মুখে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নতুন মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
একইভাবে বরিশাল বিএম কলেজের ইতিহাস বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ড. ফাতেমা হেরেনকে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের সচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী ড. দ্বীপু মনির বান্ধবীকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ঘোর সমর্থক হওয়ার পরও কি করে তাদের প্রমোশন দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের আদেশ দেওয়া হলো এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ ও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। তবে কি সরকারের উচ্চ মহলে থাকা আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা এসব কলকাঠি নাড়ছেন!
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের এক শিক্ষক বলেন, বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. এহতেসাম উল হক বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুচর ছিলেন। যোগদানের পর থেকে সাবেক মেয়রের সাথে সম্পর্কের কারণে বিভিন্ন সময়ে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেছেন।
তিনি আরও বিএম কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ফাতেমা হেরেন সাবেক মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তবে পাঁচ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তারা নিজেদেরকে আওয়ামী বিরোধী সাজতে তৎপরত ছিল। অবশেষে তারা সফল হয়েছেন।
তা না হলে মাউশির ডিজি পদে তারা পদায়ন পেলেন কীভাবে। ‘এ বিষয়ে বরিশাল শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোটের আহ্বায়ক অধ্যাপিকা ফারহানা তিথী বলেন, এতোদিন যারা আওয়ামী লীগের এমপি মন্ত্রীদের সাথে মিলে মিশে কাজ করেছে আওয়ামী লীগের পতনের পর তারা এখন ভোল পাল্টিয়ে এন্ট্রি আওয়ামী লীগ সাজার চেষ্টা করছেন। মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদে থাকা আওয়ামী লীগের একটি চক্র তাদেরকেই প্রমোশনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। যাদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম সেই আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাদের চেয়ার অদল বদল করা হচ্ছে। প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। সচিবরা আমাদের কোন কথাই শুনছেন না। তিনি বলেন, বরিশাল
বিএম কলেজের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষক ফাতেমা হেরেন ছিলেন সাবেক মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের সহযোগী। তাকে প্রমোশন দিয়ে বরিশাল বোর্ডের সচিব করা হয়েছে। একইভাবে বরিশাল মডেল স্কুলের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী দ্বীপু মনির বান্ধবী ড. সুচিত্রা শারমিনকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরা আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা। আজ বুধবার ৫ ফ্রেব্রুয়ারী মধ্যে মাউশির মহাপরিচালকসহ আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাদের প্রত্যাহার করা না হলে ৬ ফ্রেব্রুয়ারী শিক্ষা ভবন ঘেরাও করা হবে এবং পরবর্তীতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস সেলিম ভূইয়া) এর বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সহ সাহিত্য সম্পাদক মো : নুরুল হক বলেন, স্বৈরাচারের দোসরদের পদায়ন করার বিষয় নিয়ে আমরা হতাশ। বরিশাল মডেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আন্দোলনরত ছাত্রদের হুমকি ধামকি প্রদান করেছিলেন। সাদিক আব্দুল্লাহর কাছের লোক ছিল। এরপরও তিনি মাউশির মহাপরিচালক হলেন। এসব ঘটনার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কর্মসূচির সাথে আমরা একাত্মতা পোষণ করছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি বাকশিস এর বরিশাল মহানগর শাখার সভাপতি ও জাতীয় পার্টির নেতা অধ্যাপক মহসীন উল ইসলাম হাবুল বলেন, উচ্চপদস্থ কিছু কিছু কর্মকর্তার তদবিরের কারণে অন্তর্বর্তী সরকার কোন তথ্য না নিয়েই বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী দোসরদের পদায়ন করছে। কিছু কিছু বিএনপি ও জামাতের নেতাদের তদবিরের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদ উৎখাতের পরিবর্তে তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। এতে ৫ আগস্টের অর্জন রক্ষা করা সম্ভব নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
এমএস