হোম > সারা দেশ > খুলনা

সুন্দরবনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বনদস্যু বাহিনী

তিন মাসে শতাধিক জেলে এবং বনজীবী অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার

খান আশিকুজ্জামান, মোংলা (বাগেরহাট)

সুন্দরবনে অস্ত্র হাতে বনদস্যুরা। বৃহস্পতিবারের তোলা। ছবি: আমার দেশ

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বনদস্যুরা। এই বনদস্যুদের অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং জেলেদের নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। বনজীবীরা জানিয়েছেন, রাতে-বাঁকে বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র দস্যুদের ঘোরাফেরা বাড়ছে। পুরোনো আত্মসমর্পণকারী দস্যুরা আবারও বনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন দলও। বর্তমানে দুলাভাই বাহিনীসহ প্রায় ২০টি বাহিনী সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

জানা গেছে, আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হয়নি বনদস্যুদের বড় একটি অংশের। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছিল। তারা জমা দেয় ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২২ হাজারের বেশি গুলি। এরপর ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সরকার সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করে। কয়েক বছর শান্তির পরিবেশ ফিরে এলেও ২০২৪ সালের আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে অন্তত ১৩ জন সাবেক দস্যু আবার অপরাধচক্রে যুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে বনদস্যুদের ২০ বাহিনী।

মুক্তিপণ দিয়ে ফেরা জেলে ও বনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সুন্দরবনে সক্রিয় বাহিনীগুলোর মধ্যে রয়েছে—আসাবুর বাহিনী, করিম শরীফ বাহিনী, আবদুল্লাহ বাহিনী, মঞ্জুর বাহিনী, দয়াল বাহিনী, রবি বাহিনী, দুলাভাই বাহিনী, রাঙ্গা বাহিনী, সুমন বাহিনী, আনারুল বাহিনী, হান্নান বাহিনী, আলিফ বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, দাদাভাই বাহিনী, ইলিয়াস বাহিনী, মজনু বাহিনীসহ একাধিক ছোট বাহিনী। প্রতিটি বাহিনীতে ১৫ থেকে ৪০ জন সদস্য আছে এবং সবার হাতেই দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র। জাহাঙ্গীর, দাদাভাই ও মঞ্জুর বাহিনী—যারা একসময় আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছি । বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ও শক্তিশালী বলে অভিযোগ।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় কারাগার থেকে পালানো কয়েকজন আসামি নতুন করে দস্যুতায় যোগ দিয়েছে। তার মধ্য রয়েছে সাতক্ষীরার আবদুল্লাহ তরফদার । নারী পাচার মামলায় কারাগারে ছিলেন । বর্তমানে এই বনদস্যু ১০–১২ জনের একটি দল নিয়ে সুন্দরবনে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। এই বনদস্যুদের মাধ্যমে গত এক বছরে কমপক্ষে ৩০০ জেলে ও বনজীবী অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শুধু গত তিন মাসেই জিম্মি হয়েছেন শতাধিক জেলে। অনেকে বিকাশ বা সোর্সের মাধ্যমে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছেন। বনজীবীদের দাবি, এখনো অন্তত ১৫–২০ জন জেলে বিভিন্ন বাহিনীর কাছে জিম্মি অবস্থায় আছেন।

সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে এসব দস্যুদের আধিপত্য বেশি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। মরাভোলা, আলীবান্দা, ধনচেবাড়িয়া, দুধমুখী, শ্যালা, পশুর ও আন্দারমানিক এলাকায় তাদের বিচরণ চোখে পড়ছে।

গডফাদার–সোর্সের শক্ত নেটওয়ার্ক জেলেদের অভিযোগ, বনের আশপাশের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি দস্যুদের গডফাদার ও মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। তারা মুক্তিপণ আদায় করে বাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয়। দস্যুদের দেওয়া বিশেষ ‘টোকেন’ থাকলে জেলে নৌকা নিরাপদে চলাচল করতে পারে। সাধারণত প্রতি নৌকায় ২০–৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। অপহৃত হলে মুক্তিপণ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত।

আত্মসমর্পণকারী কয়েকটি বাহিনীর প্রধান জানিয়েছেন, সমাজে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে না পারা, মামলা–হয়রানি এবং বেকারত্বের কারণেই তারা আবার অপরাধ জগতে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। তবে নিরাপত্তা, স্বীকৃতি ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পেলে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান। সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে দস্যুতার পুনরুত্থান উপকূলের অর্থনীতি ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় হুমকি। দ্রুত শক্ত অভিযান ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ছাড়া এই সমস্যা কমবে না।

মোংলা কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের লে. কমান্ডার আবরার হাসান জানান, গত এক বছরে ২৭টি অভিযানে ৪৪ দস্যু আটক, ৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি জিম্মি ৪৮ জেলেকে জীবিত ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, দস্যুদের অবস্থান চিহ্নিত করতে কাজ চলছে। বনরক্ষীদের টহল বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিতভাবে অভিযান চলছে।

মধুখালীতে দুই নদীভাঙনে ভিটামাটি ছাড়া পাঁচ শতাধিক পরিবার

শীতের আগমনে বোচাগঞ্জে খেজুর রস ও খাঁটি গুড়ের নানা উৎসব

আড়াই যুগ ধরে পরিত্যক্ত অর্ধশতাধিক ভবন, অপসারণে নেই উদ্যোগ

ফসলি জমি নষ্ট করে নদী খনন, প্রতিবাদে নীলফামারীতে মশাল মিছিল

ড্রাইভারে ‘জিম্মি’ কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ

আজ ৬ ডিসেম্বর নবাবগঞ্জ হানাদারমুক্ত দিবস

আগারগাঁও ও নারায়ণগঞ্জে গ্যাস বিস্ফোরণ, দগ্ধ ১০

সারা দেশে ইনসাফ-ন্যায়ের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে

‘তরে যেখানেই পাব, পা কেটে ফেলব’ উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়কের হুমকি

অভিযোগের তীর নওফেল সিন্ডিকেটের দিকে