সাত বিট অফিস পেরোতে ৮ হাজার টাকা
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সরকারি গাড়িচালক রঞ্জন কুমার মজুমদারের কাছে যেন জিম্মি হয়ে পড়েছে স্থানীয় বনবিভাগ। তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটা, গাছ কাটা, বালু উত্তোলন ও ফার্নিচার কারবারিদের ‘লাইন পাস’ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভাগের অভিযানের গোপন তথ্য পাচার করাসহ অপরাধীদের থেকে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনেক কর্মকর্তাও রীতিমতো তাকে ভয় করে চলেন।
জানা গেছে, রঞ্জন কুমার মজুমদার প্রায় ১৭ বছর ধরে দক্ষিণ বন বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তার গাড়িচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বনবিভাগের অভ্যন্তরীণ সূত্রের দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে একই জায়গায় থাকার সুবাদে তিনি জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের সক্রিয় চোরাচালানি ও কাঠ-বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিভাগীয় কোনো অভিযান শুরুর আগেই তিনি সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দেন, ফলে অনেক অভিযান ব্যর্থ হয়।
সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের হাতে আসা একটি অডিও ক্লিপে শোনা যায়, ঈদগাঁও থেকে একটি কাঠবোঝাই ট্রাক টেকনাফ যাওয়ার কথা উল্লেখ করে রঞ্জন কুমার মজুমদার বলছেন, গাড়িটি রামু রাজারকুল, মরিচ্যা, উখিয়া রেঞ্জ, উখিয়ার ঘাট, থাইংখালী ও হোয়াইক্যংসহ মোট ৭টি বিট ও রেঞ্জ অফিস অতিক্রম করবে। এসব জায়গায় ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করা তার দায়িত্ব বলেও অডিওতে উল্লেখ রয়েছে।
অডিও রেকর্ড অনুযায়ী, এসব রুট অতিক্রমের জন্য আট হাজার টাকা লাগবে বলে দাবি করেন রঞ্জন। একই সঙ্গে শাহপরী হাইওয়ে ও হোয়াইক্যং হাইওয়ে রুটও চাইলে তিনি ম্যানেজ করে দিতে পারবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, রঞ্জন মজুমদার ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন স্টাফ, বাগান পাহারাদার, ফরেস্ট গার্ড ও বনকর্মী সবার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। কেউ তার কথামতো না চললে বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
দক্ষিণ বনবিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রঞ্জন ড্রাইভার কক্সবাজার বনবিভাগকে কার্যত জিম্মি করে রেখেছে। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে বদলি করার হুমকি দেওয়া হয়। রঞ্জন এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে, অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীও তার আচরণ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পান।
তিনি আরো দাবি করেন, রঞ্জন কুমার মজুমদারের সঙ্গে এলাকায় প্রভাবশালী কাঠ ব্যবসায়ীর যোগাযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকটি অভিযানের আগে তথ্য ফাঁস হওয়ার পেছনেও তার ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া অনেক সময় রাত্রিকালীন টহলের রুট পরিবর্তন, গাড়ি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া-না দেওয়া, অথবা জরুরি সময়ে গাড়ি পাওয়া-না-পাওয়া এসব ক্ষেত্রেও তিনি প্রভাব বিস্তার করেন। এতে মাঠপর্যায়ের কাজে ব্যাঘাত ঘটে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ অভিযান স্থগিত হয়ে যায়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গাড়িচালক রঞ্জন কুমার মজুমদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সত্য নয়। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই। অডিও রেকর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন কল বিচ্ছিন্ন করে দেন।
স্পেশাল দায়িত্বে থাকা ডেপুটি রেঞ্জার গাজী শফিউল আলম বলেন, আমরা আপাতত অভিযান পরিচালনা করছি না। তবে গাড়িচালক রঞ্জন কুমার মজুমদার খারাপ লোক। তার এমন কাজ করার নজির রয়েছে।
দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল-মামুন জানান, আমি এই দপ্তরে দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র ৭-৮ দিন হলো। রঞ্জন কুমার মজুমদার বা অডিও রেকর্ড বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। অনিয়মের বিষয়ে কোনো তথ্যও পাইনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।