বরিশাল-১
বরিশাল-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে মাঠপর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে বিভাজন দেখা দিয়েছে। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি জহির উদ্দীন স্বপন। কিন্তু তিনি এখনো মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বলে জানা গেছে। উল্টো তার অনুসারীরা মনোনয়নবঞ্চিত নেতার সমর্থকদের ওপর হামলা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে তার বিরুদ্ধে অনেক নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে ভোটের মাঠে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিরা।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, এই আসনে দলের একাধিক যোগ্য প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান, জহির উদ্দীন স্বপন ও আকন কুদ্দুসুর রহমানের জনপ্রিয়তা ছিল বেশি। যদিও দলীয় মনোনয়ন পান স্বপন। তবে দেশজুড়ে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাদের প্রতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ ছিল, মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মিলেমিশে নির্বাচনি মাঠে গণসংযোগে নামার। কিন্তু এই আসনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ মানা হচ্ছে না।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ৭ নভেম্বরের কর্মসূচি পালনের নামে নির্বাচনি জনসভা করেন বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া স্বপন। ওই সভায় দাওয়াত দেওয়া হয়নি মনোনয়নবঞ্চিত নেতা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আকন কুদ্দুসুর রহমান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল ও তাদের সমর্থকদের। বিষয়টি নিয়ে গত ১৭ বছর নির্যাতনের শিকার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে রাজনীতিতে অস্তিত্ব রক্ষায় আলাদা কর্মসূচি পালন করেছেন আব্দুস সোবাহানের সমর্থকরা।
এছাড়া সম্প্রতি আকন কুদ্দুসুর রহমানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া স্বপনের প্রতি তিনি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিএনপির আদর্শ ও রাজনীতির সঙ্গে জহির উদ্দিন স্বপন বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার পর তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্য করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে এখনো আমাদের ডাকা হয়নি। একবার তিনি আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেন, যখন সময় হবে তখন ডাকবেন। আসলে দলের আদর্শের প্রতি আনুগত্যশীল না হওয়ায় স্বপন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।
এদিকে গত বুধবার আকন কুদ্দুসুর রহমানের সমর্থক কলেজছাত্র সৈকত ইসলামের ওপর হামলা হয়েছে। তাকে আগৈলঝাড়া উপজেলার শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি কলেজ মাঠে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। তিনি ওই কলেজের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামলায় অংশ নেয় একই কলেজের শিক্ষার্থী সৌরভ পাইক, রাতুল পাইক, রাব্বি ফকির, জুনায়েত ফকির, হাসান ফকিরসহ আরো কয়েকজন। তারা সবাই স্বপনের সমর্থক।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে সরব ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এই আসন থেকে প্রায় ৭১ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। তিনি আমার দেশকে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি এখন পর্যন্ত আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এমনকি তিনি নির্বাচনি এলাকায় জনসভা ও কার্যালয় উদ্বোধন করেছেন, যার মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ পুরোপুরি লঙ্ঘিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, স্বপন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর আমাকে কিংবা আমার কোনো নেতাকর্মীদের কোনো কর্মসূচিতে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে গত ৭ নভেম্বর দলের সম্মান রক্ষার্থে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন উপলক্ষে আমার সমর্থিত বিএনপির নেতাকর্মীরা আগৈলঝাড়ায় আলোচনা সভা ও দোয়া-মিলাদের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করেন।
মনোনয়নবঞ্চিত অপর নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান আমার দেশকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ মানছেন না মনোনয়ন পাওয়া নেতা স্বপন। তার কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে তিনি আমাদের নির্বাচনে ইনভলভ করতে চাইছেন না। এতে দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে বরিশাল-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া জহির উদ্দিন স্বপনকে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু কোনো কল রিসিভ হয়নি।