হোম > সারা দেশ > চট্টগ্রাম

প্রতি পাঁচ হাসপাতালের চারটিই অবৈধ চট্টগ্রামে

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের অধিকাংশ ক্লিনিকেরই নেই অনুমোদিত অপারেশন থিয়েটার, নেই জীবাণুমুক্ত পরিবেশ বা সংবেদনশীল যন্ত্রপাতি। অথচ বিভিন্ন উপজেলা এবং নগরীর অলিগলিতে থাকা শত শত ক্লিনিকে নিয়মিত চলছে সিজারিয়ান, গলব্লাডার, অ্যাপেন্ডিক্স ও হার্নিয়া সার্জারি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামে প্রায় এক হাজার ৪০২টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু আছে। অথচ বৈধ লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ২০০টির। অর্থাৎ প্রতি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটিই চলছে অবৈধভাবে।

অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসক ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স নেই, অপারেশন থিয়েটার নেই, এমনকি লাইসেন্সও নেই। তবু চালু আছে দিনের পর দিন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান পাঁচ-দশ বছর ধরে অবাধে চলছে লাইসেন্স ছাড়াই। অথচ অজানা কারণে চোখ বন্ধ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন চকবাজার, মুরাদপুর, হালিশহর ও অক্সিজেন এলাকার ১০টি বেসরকারি ক্লিনিকে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশেরই কোনো নিবন্ধিত সার্জন নেই। কিছু ক্লিনিকে সপ্তাহে একদিন চিকিৎসক এসে অপারেশন করেন। বাকি দিনগুলো অপারেশন করান ‘সিনিয়র টেকনিশিয়ান’ পরিচয়ে থাকা ব্যক্তি।

একটি ক্লিনিকে কর্মরত একজন জানান, আমরা নিয়মিত সিজার করি। ডাক্তার স্যার সব সময় থাকেন না। যেদিন অপারেশন হয়, সেদিন তিনি আসেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মানুযায়ী, কোনো ক্লিনিক অপারেশন চালু করতে চাইলে তাদের ওটি সেটআপ, ইঞ্জিনিয়ারিং নকশা, অ্যানেস্থেশিয়া ব্যবস্থাপনা এবং প্রশিক্ষিত জনবলসংক্রান্ত যাচাই পাস করতে হয়। অথচ বাস্তবে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের ৮০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান এসব শর্তের একটিও মানে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, লাইসেন্স নবায়নের জন্য যেসব মানদণ্ড পূরণ করতে হয়, যেমন- এমবিবিএস চিকিৎসক, জরুরি বিভাগ, ওটি, নার্সিংসেবা, অগ্নিনির্বাপণ ও আবর্জনা ব্যবস্থাপনা- তার একটিও মেলে না অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, অনেক সময় আমরা অভিযানে গিয়ে দেখি একটি ক্লিনিকেরও ওটিতে নেই বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, নেই কোনো হিটল্যাম্প বা জীবাণুনাশক সিস্টেম। অথচ সেখানে সপ্তাহে ১০টি সিজার হচ্ছে।

নগরীর খুলশী এলাকার আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তি জানান, তার ছোট ভাইয়ের গলব্লাডার অপারেশনের পর হঠাৎ রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ক্লিনিকে রক্তের ব্যবস্থা ছিল না। বাইরে থেকে রক্ত আনতে আনতেই তার ভাই মারা যায়। কিন্তু মৃত্যুর পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ‘প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে’ মর্মে স্বাক্ষর আদায় করে পরিবারের সদস্যদের বের করে দেয়।

চট্টগ্রাম শহরের পাশাপাশি রাউজান, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলায় চালু আছে এমন শতাধিক ক্লিনিক, যেগুলোর বিরুদ্ধে রয়েছে অপারেশনপরবর্তী মৃত্যু, ইনফেকশন ও ভুল চিকিৎসার অসংখ্য অভিযোগ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায় এসব প্রতিষ্ঠানের নামই নেই। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় কার্যক্রম চালিয়ে আসছে দিনের পর দিন।

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। যেসব হাসপাতাল-ক্লিনিক অবৈধ, সেগুলোর মধ্যে বেশকিছু বন্ধও করে দিয়েছি।

জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা অভিযানে গেলে মাঝপথে ফোন আসে, কারো রাজনৈতিক পরিচয় থাকে। কখনো কখনো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সিলগালা করি। কয়েকদিন পর দেখেছি সেগুলো আবার চালু হয়েছে।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, অধিকাংশ অবৈধ ক্লিনিকেই নেই নিবন্ধিত চিকিৎসক। সাইনবোর্ডে বড় বড় করে এমবিবিএস, ডিজিও-এমডি লেখা থাকলেও ভেতরে ঢুকলে চিকিৎসকের দেখা পাওয়া দুষ্কর। কোনো ক্লিনিকে সপ্তাহে মাত্র একদিন দেখা দেন একজন চিকিৎসক। কোথাও আবার চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে চালানো হচ্ছে পুরো ক্লিনিক।

অনেক জায়গায় নেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স বা ওটি অ্যাসিস্ট্যান্ট। নার্সের দায়িত্ব পালন করছেন ওষুধ বিক্রেতা এবং ওটি চালাচ্ছেন নবীন টেকনিশিয়ান, যাদের কারো কারো নেই কোনো ধরনের চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণের সনদ। ফলে রোগীর জরুরি অবস্থা সামাল দিতে গিয়ে ভুল চিকিৎসা, অতিরিক্ত ইনজেকশন বা ভুল ওষুধ প্রয়োগের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।

বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো অপারেশন থিয়েটার না থাকলেও সেখানে গাইনোকোলজি অপারেশন ও সিজারিয়ান চালু আছে। জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ এ ধরনের অস্ত্রোপচারে প্রয়োজন হয় সংবেদনশীল যন্ত্রপাতি, অভিজ্ঞ সার্জন ও নির্দিষ্ট শারীরিক প্রস্তুতি, যা এসব অবৈধ ক্লিনিকে প্রায়ই অনুপস্থিত।

এসব প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার অবস্থাও ভয়াবহ। অধিকাংশেরই নেই কোনো ফায়ার লাইসেন্স, নেই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বা জরুরি নির্গমনের ব্যবস্থা। একটি ক্লিনিকের ছাদে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা, সিঁড়িঘরে রোগীর বেড বসানো অথবা বিদ্যুতের তারে ওষুধ ঝুলিয়ে রাখার চিত্র চোখে পড়ে। এমনকি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও চলছে ভয়াবহ অনিয়ম। ইউরিন বা ব্ল্যাড রিপোর্টে প্রায়ই ভুল ধরা পড়ছে। একই রোগী তিনটি আলাদা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে তিন ধরনের রিপোর্ট পেয়েছেন- এমন উদাহরণও অহরহ।

খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য বিভিন্ন স্থানে দোয়া মাহফিল

সিলেট রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সেলিম, সেক্রেটারি মাহবুব

শেরপুরে ১ লাখ ৫৭ হাজার জাল টাকাসহ গ্রেপ্তার ৩

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে সকলের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে

দ্রুত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে: স্বাস্থ্যের ডিজি

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ফেনীতে আমার দেশ পাঠক মেলার উদ্যোগে দোয়া

লালমনিরহাটে গ্রাম আদালত বিষয়ে কর্মশালা

ভুল অপারেশনে মৃত্যুর অভিযোগে মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি

মেহেরপুরে ১০ স্বর্ণের বার উদ্ধার, ভারতীয়সহ আটক ২

‘খালেদা জিয়াকে দেশের প্রয়োজনে হায়াত বাড়িয়ে দাও’