হোম > সারা দেশ > চট্টগ্রাম

পতিত এমপি-মন্ত্রীদের বিলাসী গাড়ি পানির দামে কিনতে চায় চক্র

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি মন্ত্রীদের নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৩০টি বিলাসবহুল গাড়ি পানির দামে কিনে নেয়ার অপতৎপরতা শুরু করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ১২ থেকে ১৬ কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল এসব গাড়ির দাম হাঁকা হয়েছে মাত্র এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। এত কম দাম দেখে চোখ কপালে উঠেছে কাস্টমস কর্মকর্তাদের। আইনের অপপ্রয়োগ করে যাতে চক্রটি পানির দামে গাড়িগুলো হাতিয়ে নিতে না পারে সে ব্যাপারে এনবিআরের নির্দেশনা চেয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ।

কাস্টমস সূত্র জানায়, গত বছর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যায় সাবেক প্রধামমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের সব মন্ত্রী এমপি। যে দু’একজন পালাতে পারেননি তারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করছেন। গত বছর জুলাইয়ে যখন তীব্র আন্দোলন চলছিলো ঠিক সেই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কার সেডে খালাসের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল পতিত সরকারের মন্ত্রী এমপিদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা প্রায় অর্ধশত বিলাসবহুল গাড়ি। দাপ্তরিক কাজ শেষ করে কয়েকটি গাড়ি খালাস নিলেও আটকে যায় ৩১টি বিলাসবহুল গাড়ি। সাড়ে ৩ হাজর থেকে সাড়ে ছয় হাজার সিসি’র এসব গাড়ির বাজারমূল্য ১২ কোটি থেকে ১৬ কোটি টাকা পর্যন্ত। এরমধ্যে একটি গাড়ি আমদানি কারকের অনুকূলে বরাদ্দ পেতে আদালতে মামলা করা হয়েছে। বাকি ৩০টি গাড়ি নির্ধারিত সময়ে খালাস নেয়ার উদ্যোগ নেয়নি কেউ।

গাড়ি ফেলে পালিয়ে যাওয়া মন্ত্রী এমপিদের তালিকায় রয়েছে, তারানা হালিম, আব্দুল ওয়াহেদ, আবুল কালাম আজাদ, এস আল মামুন, মুজিবুর রহমান, এসএম কামাল হোসাইন, সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, শাহ সারোয়ার কবির, এস এ কে একরামুজ্জামান, সাজ্জাদুল হাসান, নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, মোহাম্মদ তৌহিদুজ্জামান ও মুহাম্মদ সাদিকসহ ৩১ জন মন্ত্রী এমপির গাড়ি রয়েছে বন্দরের সেডে।

বন্দরের আইন অনুযায়ী, যে কোনো আমদানি পণ্য জাহাজ থেকে নামার চার দিনের মধ্যে আমদানি কারক রাজস্ব পরিশোধসহ আনুসাঙ্গীক কাজগুলো শেষ করতে পারলে স্টোর রেন্ট ছাড়াই পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবে। কিন্তু চার দিন পেরিয়ে গেলে পর্যায়ক্রমে স্টোররেন্ট বাড়বে। কিন্তু অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য বুঝে নিতে হবে। ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি নিতে না পারলে বাই পেপার কাস্টমসে হস্তান্তর করবে নিলামের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে দেয়ার জন্য।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে এমপি মন্ত্রীদের নামে আনা ৩০ টি গাড়ি কাস্টমসকে হস্তান্তর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর দাফতরিক কাজ শেষ করে ইতিমধ্যে গাড়িগুলো নিলামেও তুলেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। বাংলাদেশ ও জাপানের বাজার অনুযায়ী গাড়িগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয় ১২ থেকে ১৬ কোটি টাকা পর্যন্ত। নিলামে গাড়িগুলোর ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয় ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। নিলামের নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত দামের ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিড করলে প্রথম নিলামেই বিডারের বিপরীতে গাড়ি হস্তান্তর করতে পারে কাস্টমস। চাহিদা অনুযায়ী দাম না উঠলে দ্বিতীয়বার নিলাম ডাকতে হবে কাস্টমসকে। দ্বিতীয় নিলামে প্রথম নিলামের চেয়ে বেশি দাম উঠলে বিডারের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আইনের এই ধারার অপব্যবহার করেই গড়ে ওঠে কাস্টমস কেন্দ্রিক নিলাম সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটই প্রথমে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে। তারপর নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট করে নির্ধারিত দামের অনেক কমে পণ্য কিনে নেয়।

ওই সিন্ডিকেটই এবার হাত বাড়িয়েছে মন্ত্রী এমপিদের জন্য আনা বিলাসবহুল ওইসব গাড়ির দিকে। প্রথম নিলামে ৩০ টি ব্রান্ড নিউ বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে ৯টির বিপরীতে কোন টেন্ডারই জমা পড়েনি। একটি গাড়ি দাম উঠেছে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বাকি ২০ টি গাড়ির দাম দেয়া হয়েছে ১ থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে। যা দেখে চোখ কপালে উঠেছে কাস্টমস কর্মকর্তাদের। আইন অনুযায়ী প্রথম নিলামে যে গাড়ির দাম এক লাখ টাকা উঠেছে দ্বিতীয় নিলামে সেই গাড়ি এক লাখ এক টাকা উঠলে কাস্টমস ওই বিডারকে গাড়ি ডেলিভারি দিতে বাধ্য। তাই তড়িঘড়ি করে দ্বিতীয় নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার (নিলাম) সাকিব হাসান জানান, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা গাড়িগুলো বিক্রি করে কমপক্ষে ১৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ছিল কাস্টম হাউজের। কিন্তু নিলামের বাস্তবতা দেখে কাস্টমসের সবাই বিস্মিত। এই বাস্তবতায় গাড়িগুলো নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান আইনে নিলাম প্রক্রিয়া এগিয়ে গেছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাবে কাস্টমস হাউজ। তাই এগুলো নিয়ে নতুন করে চিন্তা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ কমিশনার সাইদুল ইসলাম জানান, বর্তমান নিয়মে গাড়িগুলো বিক্রি করলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে সরকার। তাই এনবিআরের কাছে গাড়িগুলো ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করার স্বার্থে বিকল্প নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। যাতে করে ভিত্তিমুল্যের ৬০ শতাংশ না হলেও অন্তত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশে বিক্রি করা যায়।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের একজন কর্মকর্তা জানান, এভাবে নিলামের মাধ্যমে বিলাসবহুল গাড়িগুলোর ন্যায্য দাম পাওয়া সম্ভব নয়। এর বিপরীতে সরকারি বিভিন্ন দফতর প্রতিবছর যে গাড়ি কেনে নির্দিষ্ট একটি দাম ধরে সরকারি সংস্থার মধ্যে বিক্রি করার বিধান চালু করলে দুই কুলই রক্ষা হবে। পতিত সরকারের এমপি মন্ত্রীদের গাড়িগুলো সেই প্রক্রিয়ায় বিক্রি করার ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনা করছে সরকার। ইতিমধ্যে ৫ টি গাড়ি ন্যায্য দামে কিনতে আবেদন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। আবেদনটি নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ঘুরে এনবিআরে বিবেচনার জন্য রয়েছে।

গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডা’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জানান, একটি সিন্ডিকেটের কাছে পুরো নিলাম প্রক্রিয়া জিম্মি রয়েছে। ওই সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ নিলামে অংশ নিলেও নানান অজুহাতে কাস্টমস তাদের অনুকূলে গাড়ি হস্তান্তর করে না। আর এই কারণেই প্রকৃত ব্যবসায়ীরা কেউ নিলামে অংশ নেয় না। কাস্টমস কেন্দ্রিক সিন্ডিকেটই একাধিকবার নিলাম করে গাড়ি ছাড়িয়ে নেয়। এতে রাজস্ব হারায় সরকার। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করতে হলে পুরো নিলাম প্রক্রিয়া সংস্কার করতে হবে।

খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য বিভিন্ন স্থানে দোয়া মাহফিল

সিলেট রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সেলিম, সেক্রেটারি মাহবুব

শেরপুরে ১ লাখ ৫৭ হাজার জাল টাকাসহ গ্রেপ্তার ৩

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে সকলের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে

দ্রুত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে: স্বাস্থ্যের ডিজি

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ফেনীতে আমার দেশ পাঠক মেলার উদ্যোগে দোয়া

লালমনিরহাটে গ্রাম আদালত বিষয়ে কর্মশালা

ভুল অপারেশনে মৃত্যুর অভিযোগে মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি

মেহেরপুরে ১০ স্বর্ণের বার উদ্ধার, ভারতীয়সহ আটক ২

‘খালেদা জিয়াকে দেশের প্রয়োজনে হায়াত বাড়িয়ে দাও’