ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ক্ষমতা জিনিসটাই খারাপ, রাজনীতি আরো খারাপ। ক্ষমতার রাজনীতিতে নোংরামি থাকবেই, হত্যা–সংঘাত থাকবেই। পৃথিবীর ইতিহাসে, মানবসভ্যতার ইতিহাসেও তাই দেখা যায়। এর মধ্যে যতটা সহনশীল, শান্তিময় ও ভালোবাসাময় পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি—ততটাই আমরা ভালো থাকব, আমাদের সন্তানরাও ভালো থাকবে। এসব বিষয় নিয়ে সবার ভাবা উচিত।’
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে জেলা আইনজীবী সমিতির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় জেলার বিভিন্ন স্তরের আইনজীবীরা অংশ নেন। তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইন–আদালতের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধার এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের ভূমিকা নিয়ে মতামত তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার ও আইনের শাসন রক্ষায় আইনজীবীদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার ও আইনের শাসন রক্ষায় আইনজীবীরা সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।’ জাতীয়তাবাদী শক্তির এ ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা জানেন, ৫ আগস্টের পরে রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তনের জন্য বর্তমান সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। সর্বপ্রথম এখানে দুই কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। এই ব্যবস্থার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছি। আমরা দেখেছি, বহুদিন ক্ষমতায় থাকলে স্বেচ্ছাচারিতা চলে আসে। তাই আমরা চেয়েছি, দুই টার্মের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে আমরা ভারসাম্য এনেছি। বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করার কথাও বলেছি। এসব করতে পারলে রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তন আসবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে বলুন আর যেভাবেই বলুন—আমি আশাবাদী মানুষ। জেলের পর জেলে গেছি, কিন্তু আপনাদের ছেড়ে যাইনি। আমার এখন ৭৮ বছর বয়স। মানুষের একটি সময়ে তার মেধা, কর্মক্ষমতা ও মননশীলতা কমতে থাকে। সে কারণেই আমি মনে করি, এটাই আমার শেষ নির্বাচন। আমরা ৭১-এ যুদ্ধ করেছি; এখন নতুন পরিবর্তন এসেছে, সেটাকে গ্রহণ করতে হবে। নতুন ধারণা এসেছে—নতুনদের ভাষা, চিন্তা বুঝতে হবে। তারা কী বলতে চায় বুঝে তবেই সমন্বয় সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন আমি নাকি সমঝোতায় বিশ্বাসী। আর কতদিন যুদ্ধ করব, আর কতদিন মারামারি করব? আর কতদিন হিংসা–বিদ্বেষে থাকব?’
তিনি আরো জানান, ‘৫ তারিখে হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে বললাম—এখন আপনার কিছু বলা দরকার।
তিনি বললেন, এখন আর প্রতিহিংসা নয়, প্রতিশোধ নয়। আসুন আমরা সবাই মিলে একটি ভালোবাসার দেশ গড়ে তুলি।’
মতবিনিময় সভায় জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমীন, সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন জয়, সাধারণ সম্পাদক মকদুম সাব্বির, পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিমসহ আইনজীবী সমিতির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।