হোম > সারা দেশ > ঢাকা

কদমতলীতে বিএনপি-আ.লীগ মিলেমিশে চাঁদাবাজি

রাকিব হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ

ঢাকার দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর নয়াবাজার থেকে কদমতলী গোলচত্বর এলাকা চাঁদাবাজদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। মাত্র এক কিলোমিটারের এই এলাকা থেকে প্রতি মাসে চাঁদা উঠানো হয় কোটি টাকার উপরে। ফুটপাত থেকে শুরু করে সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান, পরিবহন সেক্টর, হাসপাতাল ও রেস্তোরাঁ থেকে চাঁদা উঠানো হয়। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একসঙ্গে চাঁদাবাজি করে। অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধেও। বদলির ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের পছন্দের তালিকায় থাকে এই এলাকা।

জানা যায়, ঢাকার উপকণ্ঠে হলেও এক সময় ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল কদমতলী গোলচত্বর এলাকা। পরবর্তী সময়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু নির্মাণের পর রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হয়। ফলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি এবং বাসা ভাড়া কম হওয়ায় নিম্নআয়ের লোকজন কেরানীগঞ্জে বসবাসে ভিড় জমায়। বর্তমানে কদমতলীর চারদিকে এক কিলোমিটারের মধ্যে ২০ লাখ লোক বসবাস করেন। এসব লোককে লক্ষ্য করে ওই এলাকায় গড়ে উঠেছে ইবনেসিনা হাসপাতালসহ ১৫টি বেসরকারি হাসপাতাল, বিভিন্ন ব্যাংকের ২০ শাখা, ঢাকার সব নামিদামি রেস্তোরাঁ এবং লায়ন মার্কেটসহ নানাবিধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একাধিক অপরাধচক্র। যারা নিয়ন্ত্রণ করছে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পরিবহন সেক্টর, সিএনজি, ভ্যান গাড়ি, অটো রিকশা ও ফুটপাত।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কদমতলী ব্রিজের ঢালে ৩২টি ফলের দোকান থেকে মাসে আদায় হয় প্রায় ১.৯২ লাখ টাকা। ৫৭টি চোরাই মোবাইল দোকান থেকে আসে ৫.১৩ লাখ টাকা। ৭৫টি ফুচকা, চা-পান ও ফাস্টফুড দোকান থেকে ৩.৪২ লাখ টাকা। এছাড়া ডাকপাড়া রোডে অবস্থিত ২০টি দোকান থেকে মাসিক ১.৮০ লাখ টাকা চাঁদা উঠানো হয়।

তানাকা পেট্রোল পাম্প থেকে ইমামবাড়ী স্কুল পর্যন্ত ভাসমান দোকান সংখ্যা ২০৯টি, যেখান থেকে মাসে চাঁদা আদায় হয় প্রায় ১২.৫৪ লাখ টাকা। ঢাকার লাইনের সিএনজি, বাইক, পাঠাও, প্রাইভেটকার এবং মাইক্রোবাস থেকে আসে মাসে প্রায় ১.১০ লাখ টাকা।

তবে চাঁদাবাজির মূল উৎস পরিবহন খাত। বিআরটিসির ৭০টি গাড়ি থেকে প্রতিদিন ২৫০ টাকা করে আদায় হয়, যা মাসে দাঁড়ায় ৫.২৫ লাখ টাকায়। তিনটি পরিবহন কোম্পানির (আব্দুল্লাহপুর, নগর, দিশারী) ২০০টির বেশি গাড়ি থেকে আদায় হয় প্রায় ১৮ লাখ টাকা। ১৪০টি সিএনজি থেকে মাসে তোলা হয় ৭.৭০ লাখ টাকা।

সেতুতে চলা ২১৮টি ভ্যানের প্রতিটির এন্ট্রি ফি ২৭০০ টাকা এবং সাপ্তাহিক চাঁদা ২৭০০ টাকা, যার মাধ্যমে মাসে আদায় হয় ২৩.৫৪ লাখ টাকা। এছাড়া তিন শতাধিক অটোরিকশা থেকে আসে ২৫.২০ লাখ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভ্যান চালক বলেন, গাড়ি না চালালেও অগ্রিম দেওয়া ২৭০০ টাকা ফেরত পাওয়া যায় না।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য মতে, দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর নয়াবাজার প্রান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে কোতোয়ালি থানা বিএনপির সভাপতি হায়দার আলী বাবলা । এছাড়া কদমতলী সাইট নিয়ন্ত্রণ করছে আগানগর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল হাসান সানি। এই দুই রাজনৈতিক নেতার নেতৃত্বে কাজ করছে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি চাঁদা তোলার সিন্ডিকেট।

যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিএনপি কর্মী রানা, আগানগর ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি রাজিব, সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম, যুবলীগ কর্মী ফর্মা আরিফ ও রিচার্ড, লোকমান, নোয়াখাইল্লা কামাল, পিচ্চি আলামিন, বিল্লাল, কাইল্লা পলাশ, জাফর খান, আলমগীর, স্বেচ্ছাসেবক দলের যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক সোনাই, আমির, খায়রুল ইসলাম সবুজ, মেহেদী হাসান শুভ, রহিম ও সিমা আক্তার।

এছাড়া হাবিবুল হাসান সানি চাঁদা তোলেন কদমতলী ডিপজলের গলির বউবাজার থেকে। তিনি প্রতিদিন ২০৯টি দোকান থেকে মাসে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন। তার বিরুদ্ধে জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে ।

অন্যদিকে, ভ্যান গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করছে মাইনুদ্দিন ও শাকিল নামে দুই ব্যক্তি। কদমতলী থেকে ঢাকার লাইনের সিএনজি থেকে চাঁদা আদায় করছে আওয়ামী লীগ কর্মী লোকমান ও শহীদ।

চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে ডিবি ঢাকা দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ মজিবর রহমানের বিরুদ্ধেও। ওই এলাকায় চলাচলরত ৯০০ সিএনজি থেকে তিনি চাঁদা উঠান। প্রতিটি গাড়ি থেকে গড়ে মাসিক ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা চাঁদা নেন তিনি। তার পক্ষে চাঁদা তোলেন পুলিশের সোর্স শহীদ।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে সেতু দিয়ে উল্টো পথে সিএনজি, ভ্যান, অটো রিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সিএনজি আটকের পরে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে সেটি ছেড়ে দেন। সম্প্রতি এই অফিসারের সিলেট রেঞ্জে বদলি হলেও উপর মহল ম্যানেজ করে এখানে থেকে যান তিনি।

এ ব্যাপারে ট্রাফিক ঢাকা দক্ষিণ (কেরানীগঞ্জ) ট্রাফিক ইনচার্জ মুজিবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কদমতলী গোলচত্বর খুলে দেওয়ায় এখন আর গাড়ি উল্টা পথে চলে না । এ সময় তিনি সিএনজি, ভ্যান গাড়ি থেকে মাসিক চাঁদা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন । তার নামে পুলিশের ইনফর্মার শহীদ যদি কোনো চাঁদা আদায় করে তাহলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

তিনি বলেন, যারা চাঁদা আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে ৪৪ জনকে আটক করে জেলে পাঠিয়েছে।

সিলেটে বদলির ব্যাপারে টিআই মজিবর বলেন, সিলেট রেঞ্জে বদলি তালিকায় আমার নাম ছিল পরে বদলি স্থগিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানা বিএনপির সভাপতি হায়দার আলী চাঁদা তোলার কথা স্বীকার করে আমার দেশকে বলেন, যারা চাঁদা তোলেন তারা আমার লোক নয়। বুড়িগঙ্গা সেতুতে কেরানীগঞ্জ, বংশাল ও কোতোয়ালি থানার কিছু লোক চাঁদা আদায় করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য বিভিন্ন স্থানে দোয়া মাহফিল

সিলেট রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সেলিম, সেক্রেটারি মাহবুব

শেরপুরে ১ লাখ ৫৭ হাজার জাল টাকাসহ গ্রেপ্তার ৩

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে সকলের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে

দ্রুত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে: স্বাস্থ্যের ডিজি

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ফেনীতে আমার দেশ পাঠক মেলার উদ্যোগে দোয়া

লালমনিরহাটে গ্রাম আদালত বিষয়ে কর্মশালা

ভুল অপারেশনে মৃত্যুর অভিযোগে মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি

মেহেরপুরে ১০ স্বর্ণের বার উদ্ধার, ভারতীয়সহ আটক ২

‘খালেদা জিয়াকে দেশের প্রয়োজনে হায়াত বাড়িয়ে দাও’