হোম > সারা দেশ > চট্টগ্রাম

অভিযোগের তীর নওফেল সিন্ডিকেটের দিকে

চট্টগ্রামে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো

সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী

চট্টগ্রামে অবৈধ সিগারেট ও নকল ব্যান্ডরোলবিরোধী অভিযানের পর কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় তদন্তসংশ্লিষ্টদের নজর এখন এক প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দিকে। কাস্টমসের বিশেষ টাস্কফোর্সের অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকা এ সিন্ডিকেটটির নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

হামলার শিকার কর্মকর্তাদের দাবি, আগেই হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এরপর তাদের কয়েকদিন ধরে অনুসরণও করা হচ্ছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সিডিএ আবাসিক এলাকায় তাদের গাড়ি থামিয়ে হামলা চালানো হয়। ফলে এখন অনিরাপত্তায় ভুগছেন তারা।

হামলার শিকার দুই কর্মকর্তার একজন রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান আমার দেশকে জানান, আমরা নিয়মিত কার্যক্রম শেষ করে বের হওয়ার সময় হঠাৎ দুদিক থেকে মোটরসাইকেলে থাকা কয়েকজন আমাদের পথরোধ করে। প্রথমে গালিগালাজ, তারপর কোনো সুযোগ না দিয়েই হামলা শুরু করে।

আসাদুজ্জামানের দাবি, আমাদের ওপর নজরদারি চলছিল। ঘটনার ধরন দেখে এখন নিশ্চিত হচ্ছি, এটি ছিল পরিকল্পিত।

কারা নজরদারি করছিল জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা কারো নাম উল্লেখ করেননি। তবে তিনি বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অবৈধ চালান আটকের ঘটনায় একটি চক্রের নাম সামনে এসেছে। সেই কারণে চক্রটি আমাদের গতিবিধি লক্ষ্য করছিল। আমরা জানতাম চাপ আসতে পারে, কিন্তু এভাবে সশস্ত্র হামলা করবে ভাবিনি। হামলার পর থেকে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় দিন পার করছি।

হামলার শিকার অপর কর্মকর্তা হলেন—সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) বদরুল আরেফিন।তদন্তসূত্রে উঠে এসেছে, চট্টগ্রামের অবৈধ সিগারেট সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নওফেল এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন ও তার ভাই। গত ২৫ নভেম্বর পটিয়া কাস্টমস টিম প্রায় সাত লাখ অবৈধ বিড়ি-সিগারেট জব্দ করে। মে মাসেও প্রায় ৩০ কোটি টাকার নকল ও অবৈধ সিগারেট জব্দ করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সিন্ডিকেট কর্মকর্তাদের ‘খুন’ করার পরিকল্পনা নেয়।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, দেশের অবৈধ সিগারেট বাজারের বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ও তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো নামে দুটি কোম্পানি। এ দুটি কোম্পানি ছাড়াও আরো নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির মালিকানায় আছে লিটন ও তার ভাই। আর এটির অঘোষিত নিয়ন্ত্রক নওফেল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর পর তারাও পালিয়ে যান। বহুদিন ধরে কোম্পানিগুলো নকল ব্যান্ড রোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) তদন্তেও একই তথ্য পাওয়া গেছে।

কাস্টমসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, কাস্টমসের ধারাবাহিক অভিযানে নওফেল–লিটন চক্রের অবৈধ সিগারেটের বাজার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত চার মাসে বিপুল পরিমাণ নকল সিগারেট ও কাঁচামাল জব্দ হয়, যা সিন্ডিকেটকে ক্ষিপ্ত করে তুলেছে। কর্মকর্তারা শুধু গুদাম থেকে পণ্য ধরেননি, বরং বিভিন্ন কোম্পানির আমদানি নথি, ব্যাংক হিসাব এবং চালানের অসংগতি মিলিয়ে পুরো নেটওয়ার্ক উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। সিআইসি, শুল্ক গোয়েন্দা এবং কাস্টমস—এ তিনদিকের তথ্য যখন মিলে যায়, তখন পরিষ্কার হয়ে ওঠে একই গোষ্ঠী একই কাঁচামাল আমদানি করে বাজারে নকল সিগারেট ছড়াচ্ছে।

কাস্টমস কর্মকর্তারা আরো জনান, অভিযানের ফলে সিন্ডিকেটের ভেতরে ধারণা তৈরি হয় যে, কাগজ–প্রমাণ আর আড়াল করা সম্ভব নয়। তাই তারা ভয় দেখিয়ে বা সরিয়ে দিয়ে অভিযান থামানোর পথ বেছে নেয়। এক মাস আগে কর্মকর্তাদের ফোনে হুমকি দেওয়া হয়। গত কিছুদিন ধরে অচেনা মোটরসাইকেলে তাদের অনুসরণ করা হচ্ছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সকালে সিডিএ আবাসিক এলাকায় সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। গোয়েন্দাদের মতে, এটি সরাসরি হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হামলা ছিল।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে আরো বড় চিত্র। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কাঁচামাল আমদানিতে মালয়েশিয়া-দুবাই রুট, আর বিতরণে কক্সবাজার-টেকনাফ রুট ব্যবহারের তথ্য মিলেছে। নকল বিদেশি ব্র্যান্ডের সিগারেট বাজারে ছড়ানো ও ব্যান্ড রোল জালিয়াতির সঙ্গে সীমান্তভিত্তিক চক্র জড়িত থাকার প্রমাণও মিলেছে। ফলে কাস্টমস কর্মকর্তারা শুধু স্থানীয় সিন্ডিকেট নয়, আন্তর্জাতিক চোরাচালান নেটওয়ার্কেরও চোখের কাঁটা হয়ে উঠেছেন।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের মুখপাত্র এইচএম কবির আমার দেশকে বলেন, অবৈধ সিগারেট সিন্ডিকেটকে ঘিরে যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও পাচার–নেটওয়ার্ক সক্রিয় আছে, তা আমরা আগে এতটা বড় পরিসরে দেখিনি। আমাদের কর্মকর্তারা নিয়মিত ঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। সাম্প্রতিক সশস্ত্র হামলা প্রমাণ করে এদের ব্যবসায় আঘাত করলে তারা ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার পথেও নামতে পারে। তবু কাস্টমস পিছু হটবে না। তদন্ত ও অভিযান আগের চেয়ে আরো বাড়ানো হবে।

তিনি আরো বলেন, অভিযানে সামনের সারিতে ছিলেন হামলার শিকার ওই দুই কর্মকর্তা। ফলে তাদের থামাতেই এই হামলা চালানো হয়।

ডবলমুরিং থানার ওসি বাবুল আজাদ আমার দেশকে বলেন, যারা হামলায় জড়িত তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। আমরা মামলাও নিয়েছি। জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

মধুখালীতে দুই নদীভাঙনে ভিটামাটি ছাড়া পাঁচ শতাধিক পরিবার

শীতের আগমনে বোচাগঞ্জে খেজুর রস ও খাঁটি গুড়ের নানা উৎসব

আড়াই যুগ ধরে পরিত্যক্ত অর্ধশতাধিক ভবন, অপসারণে নেই উদ্যোগ

ফসলি জমি নষ্ট করে নদী খনন, প্রতিবাদে নীলফামারীতে মশাল মিছিল

ড্রাইভারে ‘জিম্মি’ কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ

আজ ৬ ডিসেম্বর নবাবগঞ্জ হানাদারমুক্ত দিবস

আগারগাঁও ও নারায়ণগঞ্জে গ্যাস বিস্ফোরণ, দগ্ধ ১০

সারা দেশে ইনসাফ-ন্যায়ের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে

‘তরে যেখানেই পাব, পা কেটে ফেলব’ উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়কের হুমকি

কালের সাক্ষী জকিগঞ্জ জমিদার বাড়ি