বকশীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স ও জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালের কার্যক্রম। এটি নামমাত্র ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও মূলত ৩১ শয্যার আদলে চলছে চিকিৎসাসেবা। নেই প্রয়োজনীয় জনবল, ক্ষোভ প্রকাশ করছে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতারা।
জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর ২০১৩ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। হাসপাতালটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট খাতা কলমে থাকলেও এর চিকিৎসাসেবা তো দূরের কথা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ভবনও নেই।
জামালপুর জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই উপজেলার মানুষের চিকিৎসাসেবার মাধ্যম বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা শ্রীবরদী, রাজীবপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ-ছয়শ রোগী সেবা নিতে আসেন এখানে। এত অধিকসংখ্যক রোগীর বিপরীতে হাসপাতালটির চিকিৎসক পদ মোট ১০টি থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন।
প্রয়োজনীয় ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় দীর্ঘদিন ধরে রোগীরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নেই কোনো রোগ নির্ণয় বা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন সচল ও অপারেশন থিয়েটার (ও.টি) প্রস্তুত থাকলেও প্রয়োজনীয় ডাক্তার না থাকায় এসব সেবা কার্যত বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া মেডিসিন, চর্ম, চক্ষু, ডায়াবেটিস ও গ্যাস্ট্রোলজিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় প্রতিদিন শত শত মহিলা রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও প্রশাসনিক জটিলতায় এখনো ৩১ শয্যার কার্যক্রমই চলমান রয়েছে। বর্তমানে এই হাসপাতালে চরম আকারে চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে কর্মচারী সংকটও। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে জুনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনি, জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি চিকিৎসকের পদ। এছাড়া নেই ওয়ার্ডবয়, নিরাপত্তাকর্মী, নাইট গার্ড ও আয়া সব মিলিয়ে হাসপাতালটি চলছে বেহাল অবস্থায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন থিয়েটার (ও.টি) ও রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জাম আল্ট্রাসনোগ্রাম বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে কার্যত বন্ধ রয়েছে। এছাড়া নোংরা পরিবেশে চলছে স্বাস্থ্যসেবা, ওয়ার্ড ও টয়লেটসহ পুরো হাসপাতালজুড়ে রয়েছে অপরিষ্কার- অপরিচ্ছন্নতায় । পাঁচজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদ থাকলেও পাঁচটি পদই শূন্য রয়েছে। রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ থাকলেও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না । ভর্তিকৃত রোগীদের মাঝে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, রোগীর পাশে ২৪ ঘণ্টায় ডাক্তার আসে মাত্র একবার।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম বলেন, এই হাসপাতালে বকশীগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার রোগীরাও চিকিৎসা নিতে আসে। ফলে প্রতিদিন কয়েকশ রোগীর ভিড় থাকে আউটডোর ও জরুরি বিভাগে। মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে এতগুলো রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া আমাদের জন্য কষ্টের। তবু আমরা সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন।