হোম > সারা দেশ > সিলেট

লুনার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হান্নান

সিলেট-২

সাইফুর এম রেফুল, ওসমানীনগর (সিলেট)

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) আসনে উত্তাপ এখন তুঙ্গে। মাঠের চিত্র বলছে, এ আসনে বিএনপির তাহসিনা রুশদীর লুনার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যক্ষ আবদুল হান্নান। দলীয় শক্তি, সমর্থক সমাবেশ ও জনসংযোগের ব্যাপকতায় সিলেট-২ এখন দেশের অন্যতম আলোচিত আসনে পরিণত হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার মনোনয়ন স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে হুমায়ুন কবিরকে যুগ্ম মহাসচিব করার পরই লুনার মনোনয়ন নিশ্চিত হয়। হুমায়ুন দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব লুনাকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ হলেও মাঠপর্যায়ে দুই বলয়ের দূরত্ব রয়ে গেছে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাননি লুনা। এবারের নির্বাচনে কার্যত নতুন প্রার্থী হয়েও তিনি তৃণমূল থেকে কেন্দ্র, সব মহলেই চোখে পড়ার মতো গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সাধারণ মানুষের আলোচনায় এক স্লোগানই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, ‘লুনা এগিয়ে গেলে, সিলেট-২ এগিয়ে যাবে!’

তাহসিনা রুশদীর বলেন, আওয়ামী লীগ মাঠে নেই বলে প্রতিপক্ষ দুর্বল ভাবার সুযোগ নেই। দৃশ্যমান শক্তির সঙ্গে লড়াই করা সহজ, কিন্তু যারা ফজরের আগে কিংবা নিশিরাতে অদৃশ্যভাবে ভোট চাইতে যায়—তাদের মোকাবিলায় তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী একক প্রার্থী অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান এবারের নির্বাচনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন। দুইবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান এবার আরো গোছানো, পরিকল্পিত ও জনমুখী প্রচারযুদ্ধে নেমেছেন। মসজিদ–মাদরাসাকেন্দ্রিক সংগঠন, গরিব মানুষের সেবা, ফ্রি চিকিৎসা, সামাজিক কাজ, এসব তাকে আরো জনপ্রিয় করেছে। দেশ-বিদেশে তার ছাত্র-শিক্ষকের নেটওয়ার্ক বড় শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সনাতনী ভোটারদের মধ্যেও তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। তাদের মুখেই শোনা যাচ্ছে নতুন স্লোগান, এইবার হান্নানই শক্তি, এগিয়ে যাই সবাই! আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমি বিভাজন নয়, ঐক্য ও উন্নয়নের রাজনীতি চাই। গরিব ও প্রান্তিক মানুষের কল্যাণে আজীবন কাজ করে যেতে চাই। উন্নত শিক্ষা, চিকিৎসা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়াই আমার প্রতিশ্রুতি।

গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব জামান আহমদ সিদ্দিকী এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত। তাদের দল প্রথমবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। লন্ডন প্রবাসী জামান জানান, উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি মানুষ মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে। জনগণের ভালোবাসা ও প্রত্যাশাই আমাকে কাজ করার শক্তি দেয়। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের অংশগ্রহণ ও সমর্থনই দেশের প্রকৃত পরিবর্তনের ভিত্তি।

আলোচনায় রয়েছেন খেলাফত মজলিস বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলীও। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। তবে এবারের নির্বাচনে তার প্রচারণা আরো গোছানো, নিয়মিত ও চোখে পড়ার মতো।

গণফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুল হক এ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানান, আইন শাসন প্রতিষ্ঠা, ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে, অতীতের মতো এ আসনে আবারও গণফোরামের বিজয় নিশ্চিত হবে। অন্যদিকে খেলাফত মজলিসের ড. লুৎফুর রহমান, জমিয়তের মাওলানা এখলাছুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদের জামান সিদ্দিকী ও ইসলামী আন্দোলনের আমীর উদ্দীন, প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে বেশিরভাগই লন্ডনপ্রবাসী হওয়ায় এলাকায় তাদের উপস্থিতি দুর্বল। এদিকে গণঅভ্যুত্থানভিত্তিক নতুন রাজনৈতিক শক্তি এনসিপি দেশজুড়ে আলোচনায় থাকলেও সিলেট-২ আসনে এখনো কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি। একইভাবে প্রচারণায় নেই পতনোন্মুখ আওয়ামী লীগের শরিক জোট জাতীয় পার্টিও। এ আসনে বাংলাদেশ আঞ্জুমানে আল ইসলাহ থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চৌধুরী আলী আনহার শাহান। তবে মাঠে দলীয় তৎপরতা কিংবা নেতার দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপি ও জাতীয় পার্টির এই নিষ্ক্রিয়তা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রকে অনেকটাই ছোট করে এনেছে এবং সিলেট-২ আসনের ভোটের লড়াইকে আরো স্পষ্টভাবে বিএনপি–জামায়াতকেন্দ্রিক দ্বিমুখী প্রতিযোগিতায় রূপ দিয়েছে।

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী জমির আলী স্থানীয় জনগণের চোখে ‘সহজ-সরল’ ছাপ রেখে ভোটের মাঠে নামছেন। তবে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মাত্র ৫০০ ভোট পাওয়া এ প্রার্থীকে কেউ দারুণ সরল, আবার কেউ ‘ভোটের খেলায় নতুন ছকবাজ’ বলে মন্তব্য করেন।

সব মিলিয়ে সিলেট-২ আসনে অভিজ্ঞতা বনাম নতুনতার লড়াই, যেখানে কেন্দ্রবিন্দুতে বিএনপি ও জামায়াতের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ভোটের দিন যত ঘনাবে, প্রতিযোগিতা ততই তীব্র হবে—আর তখনই বোঝা যাবে, সিলেট-২ আসনের ভোট ঘর কার দখলে যাচ্ছে।

‘আমি কি কুমিল্লায় হজ করতে আসছি’, বলা সেই এএসপি বরখাস্ত

ঐতিহাসিক ধানুয়া কামালপুর হানাদারমুক্ত দিবস পালিত

ফেনসিডিলের বিকল্প হিসেবে ভারত থেকে ঢুকছে ‘চকো প্লাস’

দেবিদ্বার হানাদার মুক্ত দিবস আজ

হবিগঞ্জে পটকা ফোটানো নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৩০

প্রশ্ন হাতে পেয়েও বার্ষিক ইংরেজি পরীক্ষা নেননি প্রধান শিক্ষক

প্র‌তিবেশীর খাটের নিচ থেকে উদ্ধার তিন বছরের শিশুর লাশ

বিএনপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এককাট্টা মনোনয়নবঞ্চিতরা

আমাকে যদি ফাঁকি দেন, ফাঁকি দেবেন আল্লাহকে: বিএনপি প্রার্থী জসিম

বিএনপি নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক, নানা বিতর্কে আযম