হোম > সারা দেশ > রংপুর

গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ না পেয়ে ক্ষুব্ধ রোগীরা

শামিম উল হক শাহীন, গাইবান্ধা

গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা । প্রতিদিন রোগীদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন রোগীরা।

জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে ৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে যাত্রা শুরু করে গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতাল। সময়ের চাহিদা মেটাতে একাধিকবার শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ এটি ২৫০ শয্যার মর্যাদা পায়। কিন্তু সেটি কেবল কাগজে-কলমে। সরকারি ঘোষণায় ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও বাস্তবে ১০০ শয্যারও কম রয়েছে । বাস্তবে নেই চিকিৎসক, নেই যন্ত্রপাতি, নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। গাইবান্ধার মানুষের চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল এই প্রতিষ্ঠানটি আজ যেন ‘রেফার সেন্টারে’ পরিণত হয়েছে। গত ছয় মাসে ছয়টি বিভাগে প্রায় ১ হাজার ৬০০ রোগীকে রেফার্ড করেছে হাসপাতালটি। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই গাইনি, শিশু, মহিলা, স্ক্যান, ডায়রিয়া ও পুরুষ বিভাগ থেকে রেফার করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬৮ জন রোগী। প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ জন রোগী রংপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। তবে রেফার্ডের তথ্য সংরক্ষণের কোনো রেকর্ড নেই জরুরি বিভাগে। সিনিয়র নার্স মোজাম্মেল হক সরকার বলেন, ‘রোগী রেফার করলেও কোনো তথ্য রাখা হয় না। সুযোগই থাকে না। এছাড়া মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২০০ রোগীর। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে গাইবান্ধাবাসী পাচ্ছেন না চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালটির জনবল, যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো এখনো ১০০ শয্যার কাঠামোতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অথচ সরকারি কাগজে এটি এখন ২৫০ শয্যার । ১০০ শয্যার হিসেবে এখানে প্রয়োজন ৪৩ জন চিকিৎসক, কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ১৮ জন। চক্ষু, কার্ডিওলজিস্ট, শিশু, চর্ম, ইএনটি, অর্থোপেডিক্স প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগেই নেই উপযুক্ত চিকিৎসক। জনবল সংকটের পাশাপাশি নেই পর্যাপ্ত নার্স, ওয়ার্ডবয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ল্যাব টেকনিশিয়ান। প্রশাসনিক ও সহায়ক পদেও রয়েছে ৬৩টি শূন্য পদ। ময়লা-আবর্জনা দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রোগীরা ।

জানা গেছে, হাসপাতাল ভবন নির্মাণে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হলেও তার দরজা এখনো খোলেনি । ৯তলা নতুন ভবনটি ২০২২ সালে হস্তান্তর হলেও তিন বছরেও চালু হয়নি। জনবল ও যন্ত্রপাতি না থাকায় অত্যাধুনিক ভবনটি রয়ে গেছে অচল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ একসঙ্গে ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে টিকিট নিতে হয় । চিকিৎসকের সামনে লম্বা লাইন, চিৎকার-চ্যাঁচামেচি, গুমোট গন্ধ-সেখানে অসুস্থতা যেন আরো বাড়ে। বহির্বিভাগের ফার্মেসিতে নারী-পুরুষের আলাদা লাইন নেই, ওষুধের সংকটও প্রকট। শয্যা সংকটে রোগীরা আশ্রয় নিচ্ছেন নিচতলা ও বারান্দার মেঝেতে। ওয়ার্ডে, করিডোরে, প্রতিটি কোণায় ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ি। শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য। হাসপাতালে আসা রোগী নুরুল ইসলাম বলেন, একটা টিকিটের জন্য ঘণ্টা দাঁড়িয়ে, এরপর আবার চিকিৎসকের জন্য দুই ঘণ্টা। নার্সিং সুপারভাইজার বললেন, ‘মেডিসিন, কার্ডিয়াক, গাইনি, শিশু- প্রায় সব রোগীই রেফার্ড হয়। কারণ ডাক্তার নেই। চিকিৎসাও নেই। বর্তমানে হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে আছেন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. তাহেরা খাতুন। তিনিও পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র যাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন।

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুব হোসেনকে ঘুস-দুর্নীতির অভিযোগে ২০২৪ সালে ওএসডি করা হয়। তার স্থলে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন ডা. মিজানুর রহমান। তিনি দায়িত্ব পালনে অপারগতায় হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়কের অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন সিভিল সার্জন ডা. রফিকুজ্জামান।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসিফ উর রহমান বলেন, ‘ভবন বুঝে পেয়েছি, কিন্তু কোনো চিকিৎসক, যন্ত্রপাতি বা সহযোগী কর্মী নেই। হলরুমে ইন্টেরিয়র, সাউন্ড প্রতিরোধক ব্যবস্থা করা হয়নি। ১০০ শয্যা অনুযায়ী হাসপাতালে ১৭৭টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৪৩টি । পদ সৃষ্টি করতে হবে আরো ১৩৪টি। আর ২৫০ শয্যার হাসপাতালে স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী জনবল প্রয়োজন ৩৮৮ জন । নতুন করে পদ সৃষ্টি করতে হবে আরো ২৭১টি পদ।

গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা. রফিকুজ্জামান আমার দেশকে বলেন, প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালটির জন্য তৈরি হওয়া ৯তলা নতুন ভবন ২০২২ সালে হস্তান্তর হলেও তিন বছরেও চালু হয়নি। জনবল ও যন্ত্রপাতি না থাকায় অত্যাধুনিক ভবনটি রয়ে গেছে অচল। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। অবহেলিত গাইবান্ধা জেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবার বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে জরুরিভাবে যতদ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

খুনি হাসিনা আমাকে বিনা দোষে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারতে চেয়েছিল

দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার

সাঘাটায় হাফেজ শিক্ষার্থীদের পাগড়ি পরালেন বিএনপির প্রার্থী

উত্তরা ইপিজেডে বন্ধ কোম্পানি চালুর দাবিতে শ্রমিকদের মানববন্ধন

রেলওয়ের জায়গায় বহুতল ভবন, বিএনপি নেতাসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা

চিলমারীতে স্কুলের রাস্তা বন্ধ গাছতলায় পাঠদান

তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রিতে

তরুণদের মুখোমুখি জামায়াতের প্রার্থী ব্যারিস্টার সালেহী

অন্যায়-দুর্নীতি দূর করতেই ইসলামের নির্দেশনা গ্রহণ জরুরি: আনোয়ারুল

নাকে খত দিয়ে তওবা করতে বলায় বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে নেতাদের সংবাদ সম্মেলন