প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন (ব্রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরপর থেকেই সরব হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, জোট ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী গ্রুপগুলো ইতোমধ্যে তাদের সাংগঠনিক কাঠামো ও প্যানেল গোছানোর কাজে ব্যস্ত।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা। এ নির্বাচনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে শুরু করে প্রতিটি অনুষদ, বিভাগ ও আবাসিক এলাকায় এখন নির্বাচনি আলোচনা। কে কোন সংগঠনের সম্ভাব্য প্রার্থী হবে, কারা নেতৃত্বে আসতে পারেন এসব নিয়েই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
গত মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬তম সিন্ডিকেট সভায় সদস্যদের সিদ্ধান্তে ছয় সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এদিকে নির্বাচন বাস্তবায়নের পরবর্তী কাজগুলো নির্বাচন কমিশনের করার কথা থাকলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার দায়িত্ব গ্রহণের অস্বীকৃতি জানানোর কথা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা ও হতাশা দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন বলেন, বেরোবির শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত শিক্ষার্থী সংসদ আমাদের সবার জন্য নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এখানকার পরিবেশটা একটু ভিন্ন। যেহেতু এখানে ছাত্ররাজনীতির ব্যাপারে একটা বিধিনিষেধ রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা প্যানেলের ক্ষেত্রে দলীয় বিষয়কে মুখ্যভাবে দেখছি না। অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয়, শিক্ষার্থীবান্ধব, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রয়েছে, মেধাবী এমন শিক্ষার্থীদের আমরা অগ্রাধিকার দেব। নির্বাচনে আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা আছে কি না সেটি দেখব। এক্ষেত্রে সিনিয়র-জুনিয়র মুখ্য বিষয় নয়।
তিনি বলেন, গঠনতন্ত্রে অনেক ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে। এটি নিয়ে প্রশাসন আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করলে এ জটিলতার সৃষ্টি হতো না।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সুমন সরকার বলেন, আপনারা দেখেছেন ডাকসু, জাকসুসহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ইনক্লুসিভ প্যানেল গঠন করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরাও ব্রাকসু নির্বাচনে একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল ঘোষণা করব। আমাদের প্যানেলে নারী নেতৃত্বসহ বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, অঞ্চল ও গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমাদের প্যানেলকে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলতে।
তিনি বলেন, আমরা প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সততা, দক্ষতা, দেশপ্রেম, নৈতিক চরিত্র, শিক্ষার্থীবান্ধব মানসিকতা, কাজের অভিজ্ঞতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলি এ বিষয়গুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেব। ইতঃপূর্বে যারা শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করেছেন, তারাও আমাদের প্যানেলে অগ্রাধিকার পাবেন। এছাড়া আমরা তরুণ, উদ্যমী ও সৃজনশীল নেতৃত্বকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেব, যেন ছাত্র সংসদ হয় সময়োপযোগী, আধুনিক ও কার্যকর।
তিনি আরো বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ বিষয়টি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ও হতাশাজনক। দায়িত্ব গ্রহণের আগেই তিনি পদত্যাগ করেন। এতে সাময়িকভাবে কিছু অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলেও আমরা হতাশ নই।